বিজ্ঞাপন

জামায়াতকে ধানের শীষ দিয়ে বড় বিতর্কে বিএনপি!

December 1, 2018 | 7:27 pm

।। আসাদ জামান, স্পেশাল করেসপন্ডেন্ট ।।

বিজ্ঞাপন

ঢাকা: স্বাধীনতা বিরোধীদের সঙ্গে ‘চিরকালীন’ সম্পর্কের কারণে বিতর্ক কখনো পিছু ছাড়েনি বিএনপির। ক্ষমতা অথবা ক্ষমতার বাইরে— যেখানেই থাকুক দলটি, জামায়াত সম্পৃক্ততার কারণে বিতর্ক তাদের সঙ্গেই থেকেছে। তারপরও স্বাধীনতাবিরোধী শক্তি জামায়াত ছাড়েনি তারা। আসন্ন জাতীয় সংসদ নির্বাচনে জামায়াতকে ধানের শীষ প্রতীক দিয়ে এবার আরও বড় বিতর্কে পড়েছে বিএনপি।

বিএনপির পক্ষ থেকে আনুষ্ঠানিক ঘোষণা না দিলেও বিভিন্ন সূত্র থেকে নিশ্চিত হওয়া গেছে, একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে দীর্ঘদিনের রাজনৈতিক মিত্র জামায়াতকে ২৫টি আসন ছেড়ে দিচ্ছে দলটি। এ আসনগুলোতে ধানের শীষ প্রতীকে নির্বাচন করবে একাত্তরের পরাজিত শক্তি জামায়াত।

ধানের শীষ প্রতীকে ২৫টি সংসদীয় আসনে যারা মনোনয়ন পেয়েছেন, তারা হলেন- ঠাকুরগাঁও-২ মাওলানা আবদুল হাকিম, দিনাজপুর-১ মাওলানা মোহাম্মদ হানিফ, দিনাজপুর-৬ মোহাম্মদ আনোয়ারুল ইসলাম, নীলফামারী-২ মনিরুজ্জামান মন্টু, নীলফামারী-৩ মোহাম্মদ আজিজুল ইসলাম, রংপুর-৫ অধ্যাপক গোলাম রব্বানী, গাইবান্ধা-১ মাজেদুর রহমান সরকার, সিরাজগঞ্জ-৪ মাওলানা রফিকুল ইসলাম খান, পাবনা-৫ মাওলানা ইকবাল হুসাইন, ঝিনাইদহ-৩ অধ্যাপক মতিয়ার রহমান, যশোর-২ আবু সাঈদ মুহাম্মদ শাহাদাত হোসাইন, বাগেরহাট-৩ অ্যাডভোকেট আবদুল ওয়াদুদ, বাগেরহাট-৪ অধ্যাপক আবদুল আলীম, খুলনা-৫ অধ্যাপক মিয়াগোলাম পরওয়ার, খুলনা-৬ মাওলানা আবুল কালাম আযাদ, সাতক্ষীরা-২ মুহাদ্দিস আবদুল খালেক, সাতক্ষীরা-৩ মুফতি রবিউল বাশার, সাতক্ষীরা-৪ গাজী নজরুলইসলাম, পিরোজপুর-১ শামীম সাঈদী, ঢাকা-১৫ ডা. শফিকুর রহমান, সিলেট-৫ মাওলানা ফরিদ উদ্দিন চৌধুরী, সিলেট-৬ মাওলানা হাবিবুর রহমান, কুমিল্লা-১১ ডা. সৈয়দ আবদুল্লাহ মো. তাহের, চট্টগ্রাম ১৫ আ ন ম শামসুল ইসলাম ও কক্সবাজার-২ হামিদুর রহমান আযাদ।

বিজ্ঞাপন

দীর্ঘকালের সম্পর্কের সূত্রে ২০০১ ও ২০০৮ সালে অনুষ্ঠিত অষ্টম ও নবব জাতীয় সংসদ নির্বাচনে জামায়াতের সঙ্গে আসন ভাগাভাগি করে বিএনপি। ওই নির্বাচন দু’টিতে বিএনপির ছেড়ে দেওয়া আসনে দাড়িপাল্লা প্রতীকে নির্বাচন করে জামায়াত।
কিন্ত এবার নির্বাচন কমিশনে নিবন্ধন না থাকায় দলীয় প্রতীকে নির্বাচন করার সুযোগ পাচ্ছে না জামায়াত। তবে স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে স্বতন্ত্র প্রতীকে নির্বাচন করতে পারতেন জামায়াত নেতারা। কিন্তু বিএনপির সঙ্গে আসন সমঝোতার পাশাপাশি প্রতীক সমঝোতা হওয়ায় এখন তারা ধানের শীষ প্রতীকে প্রতিদ্বন্ধিতা করতে যাচ্ছে।

আর এই আসন ছেড়ে দেওয়ার পাশাপাশি প্রতীক ছেড়ে দেওয়ায় দলের নেতাকর্মী, সমর্থক ও শুভাকাঙ্ক্ষিদের প্রশ্নের মুখে পড়েছে বিএনপি। আর এসব প্রশ্নের উত্তর দিতে গিয়ে আরো বেশি তালগোল পাকিয়ে ফেলছেন দলটির শীর্ষ নেতারা।

মনোনয়ন জমা দেওয়ার পরের দিন নয়াপল্টন কার্যালয়ে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে সাংবাদিকদের এক প্রশ্নের জবাবে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য নজরুল ইসলাম খান বলেন, ‘জামায়াতে মুক্তিযোদ্ধাও আছে। তাহলে তাদেরকে ধানের শীষ দিতে বাধা কোথায়?’

বিজ্ঞাপন

পরের দিন গুলশান কার্যালয়ে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে সাংবাদিকদের একই প্রশ্নের জবাবে বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেছেন, ‘এখানে জামায়াত নেই। সবাই বিএনপি— ধানের শীষের সবাই বিএনপি।’

বিশ্লেষকরা বলছেন, জামায়াতের মতো একটি প্রতিক্রিয়াশীল ও স্বাধীনতাবিরোধী শক্তিকে দলীয় প্রতীক ‘ধানের শীষ’ দিয়ে বিএনপি স্বস্তিতে নেই। ভোটের রাজনীতিতে নিজেদের অস্তিত্ব রক্ষায় জোট শরিক জামায়াতকে ধানের শীষ দিয়ে তারা নিজেরাই পড়েছেন বিপাকে। সে কারণে, নানা মহল থেকে আসা প্রশ্নের যৌক্তিক উত্তর দিতে না পেরে এলোমেলো উত্তর দিচ্ছেন বিএনপির শীর্ষ নেতারা। এতে তাদের দুর্বলতা আরো বেশি করে প্রকাশ পাচ্ছে।’

এ প্রসঙ্গে জানতে চাইলে সাবেক তত্ত্বাবধায়ক সরকারের উপদেষ্টা এম হাফিজ উদ্দীন খান সারাবাংলাকে বলেন, ‘জামায়াতের সঙ্গে মূল ধারার রাজনৈতিক দলগুলোর যে কোনো ধরনের সম্পর্কই দোষের। সেখানে দলীয় প্রতীক ভাগাভাগি নিয়ে আলাদা করে কিছু বলার নেই। সবারই উচিত স্বাধীনতাবিরোধী দল হিসেব জামায়াতের সঙ্গে দূরত্ব বজায় রাখা।’

বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ড. খন্দকার মোশাররফ হোসেন সারাবাংলাকে বলেন, ’২০ দলীয় জোটের অনিবন্ধিত দলগুলো ধানের শীষ প্রতীকে নির্বাচন করবে— এটা জোটের সিদ্ধান্ত। বিষয়টি নিয়ে এত হৈ চৈ করার কী আছে?
সারাবাংলা/এজেড

বিজ্ঞাপন

বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন