বিজ্ঞাপন

অনেক প্রথমে বাংলাদেশ

December 2, 2018 | 3:09 pm

।। মুশফিক পিয়াল, সিনিয়র নিউজরুম এডিটর ।।

বিজ্ঞাপন

সফরকারী ওয়েস্ট ইন্ডিজকে আরেকবার ধবলধোলাইয়ের স্বাদ দিয়েছে বাংলাদেশ। দুই ম্যাচ টেস্ট সিরিজের প্রথম ম্যাচে টাইগাররা জিতেছিল ৬৪ রানের ব্যবধানে। দ্বিতীয় টেস্টে ক্যারিবীয়ানদের ইনিংস ও ১৮৪ রানে হারিয়ে স্বাগতিকরা ২-০ তে সিরিজ নিজেদের করে নিয়েছে। তাতে প্রথমবার প্রতিপক্ষকে ইনিংস ব্যবধানে হারানোর স্বাদ পেয়েছে টাইগাররা। প্রতিপক্ষকে ইনিংস ব্যবধানে হারানোর স্বাদটাও বাংলাদেশের জন্য প্রথম।

এছাড়া, প্রথমবার প্রতিপক্ষকে ফলোঅন করায় সাকিব-মুশফিকরা। এর আগে অনেকবারই প্রতিপক্ষকে ফলোঅন করানোর সুযোগ পেলেও সেটি গ্রহণ করেনি টাইগাররা। এবারই সেটা প্রথম করে দেখালো বদলে যাওয়া বাংলাদেশ। আর নিজেদের ইনিংসে এই প্রথমবার বিরল এক রেকর্ডে নাম লেখায় বাংলাদেশের ইনিংস। ১১ ব্যাটসম্যানের প্রত্যেকের ডাবল ফিগারে যাওয়ার ঘটনা টেস্টের ইতিহাসে এ নিয়ে ঘটে মাত্র ১৪ বার। সেটি বাংলাদেশের জন্য প্রথম। এখানেই ‘প্রথম’ কিছু থেমে নেই। বিশেষজ্ঞ কোনো পেসার না নিয়ে এই প্রথম বাংলাদেশ একাদশ সাজিয়েছিল।

আরও আছে, প্রথম ইনিংসে ওয়েস্ট ইন্ডিজের প্রথম পাঁচ ব্যাটসম্যানের প্রত্যেককে বোল্ড করে বাংলাদেশ লিখে ফেলে অনন্য এক বিশ্ব রেকর্ড! টেস্ট ইতিহাসে এমন ঘটনা এর আগে সর্বশেষ ঘটেছিল ১৮৯০ সালে। ১২৮ বছর পর প্রথম আবার সেই ঘটনা ঘটল। টেস্ট ইতিহাসে এর আগে মাত্র দুবার এমনটা হয়েছে। প্রথমটি ১৮৭৯ সালে। বিশ শতকে একবারও না, একুশ শতকে প্রথম ঘটালো বাংলাদেশ।

বিজ্ঞাপন

না, এখানেই শেষ নয়। দুই টেস্টের সিরিজে এবারই প্রথম বাংলাদেশ প্রতিপক্ষের ৪০ উইকেটের সবগুলোই নিয়েছে স্পিনাররা। ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিপক্ষে দুই ম্যাচেই স্পিনার তাইজুল, মিরাজ, সাকিব এবং নাঈম উইকেট ভাগাভাগি করে নিয়েছেন। কদিন আগেই পাল্লেকেলেতে এক টেস্টে সর্বাধিক উইকেট শিকারের নতুন রেকর্ড সৃষ্টি করে স্পিনাররা। ম্যাচে মোট ৪০টি উইকেটের মধ্যে স্পিনারদের দখলে গেছে ৩৮টি উইকেট! যা টেস্ট ইতিহাসে নতুন রেকর্ড। এর আগে ১৯৬৯ সালে নাগপুরে ভারত-নিউজিল্যান্ড ম্যাচে স্পিনারদের সর্বোচ্চ উইকেট শিকার ছিল ৩৭টি। তার আগে দুই বার এক টেস্টে স্পিনারদের সর্বোচ্চ উইকেট শিকার ছিল ৩৫টি। ১৯৫৬ সালে কলকাতায় ভারত-অস্ট্রেলিয়া এবং ১৯৮৭ সালে বেঙ্গালুরুতে ভারত-পাকিস্তান ম্যাচে স্পিনাররা ৩৫ উইকেট শিকার করেছিলেন। ২০১৭ সালে মিরপুরে বাংলাদেশ বনাম অস্ট্রেলিয়ার মধ্যকার টেস্টটিও স্থান পেয়েছে স্পিনারদের আধিপত্যের ম্যাচের তালিকায়। ওই ম্যাচে দুই দলের স্পিনাররা নিয়েছিলেন ৩৪ উইকেট। ম্যাচটিতে ২০ রানে জেতে টাইগাররা। আগের বছর ইংল্যান্ডকে ১০৮ রানে হারিয়েছিল তারা। ওই ম্যাচে দুই দলের স্পিনাররা মিলে নিয়েছিলেন ৩২ উইকেট।

পাল্লেকেলেতে শ্রীলঙ্কা-ইংল্যান্ড ম্যাচের চার ইনিংসে ৩৮ উইকেট নিয়ে ৪৯ বছর আগের সেই রেকর্ড ছাড়িয়ে যায় স্পিনাররা। চট্টগ্রাম আর মিরপুর টেস্টে বাংলাদেশের স্পিনাররাই ওয়েস্ট ইন্ডিজের খেলা চার ইনিংসে ৪০ উইকেটের সবকটিই নিয়েছেন।

বিজ্ঞাপন

২০০৯ সালে ওয়েস্ট ইন্ডিজ সফরে দুই ম্যাচের সিরিজে স্বাগতিকদের হোয়াইটওয়াশ করেছিল বাংলাদেশ। ২০০৯ সালে ওয়েস্ট ইন্ডিজ সফরে প্রথম টেস্টে চোট পেয়েছিলেন অধিনায়ক মাশরাফি বিন মুর্তজা। তার বদলে নেতৃত্বভার পেয়ে ওয়েস্ট ইন্ডিজকে ধবলধোলাই করেছিলেন সাকিব। ৯ বছর পর ওয়েস্ট ইন্ডিজকে আবারও ধবলধোলাই করলো সাকিব-মুশফিক-মাহমুদউল্লাহরা। নিজেদের প্রথম ইনিংসে ৫০৮ রান করে বাংলাদেশ। ওয়েস্ট ইন্ডিজ ১১১ রানে অলআউট হয়। বাংলাদেশ প্রথমবারের মতো প্রতিপক্ষকে ফলোঅনে ব্যাটিংয়ে নামায়। দ্বিতীয় ইনিংসে ২১৩ রানে অলআউট হয় ক্যারিবীয়ানরা। তাতে বাংলাদেশ দ্বিতীয়বার হোয়াইটওয়াশ করে ক্যারিবীয়ানদের, প্রথমবার টেস্ট পরিবারের কোনো সদস্যের বিপক্ষে ইনিংস ব্যবধানে জয়ের স্বাদ নেয়।

এ পর্যন্ত বাংলাদেশ ১৩টি টেস্ট জিতলো। হারিয়েছে অস্ট্রেলিয়া, ইংল্যান্ড, শ্রীলঙ্কা, জিম্বাবুয়ে এবং ওয়েস্ট ইন্ডিজকে। এরমধ্যে জিম্বাবুয়েকে সর্বোচ্চ ছয়বার হারিয়েছে টাইগাররা। দ্বিতীয় সর্বোচ্চ জয় ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিপক্ষে, চারবার। একবার করে জিতেছে অস্ট্রেলিয়া, ইংল্যান্ড আর শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে। টেস্ট পরিবারের যাদের বিপক্ষে টেস্টে জিততে পারেনি তাদের মধ্যে দুইবার ভারতের বিপক্ষে, তিনবার নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষে, একবার পাকিস্তানের বিপক্ষে, দুইবার দক্ষিণ আফ্রিকার বিপক্ষে ড্র করেছে টাইগাররা। টেস্ট পরিবারের নতুন দুই সদস্য আফগানিস্তান এবং আয়ারল্যান্ডের বিপক্ষে এখনও খেলার সুযোগ হয়নি বাংলাদেশের।

ইনিংস ব্যবধানে এই প্রথম জিতলো বাংলাদেশ। তাতে সর্বোচ্চ ব্যবধানে জয়ের দিক দিয়ে এটাই শীর্ষে থাকবে। রানের দিক দিয়ে সর্বোচ্চ ব্যবধানের জয়টা এসেছিল ২০০৫ সালের জানুয়ারিতে, চট্টগ্রামে। সেবার জিম্বাবুয়েকে ২২৬ রানে হারিয়েছিল টাইগাররা। চলতি বছর নভেম্বরে ঢাকায় জিম্বাবুয়ের বিপক্ষে বাংলাদেশ জিতেছিল ২১৮ রানের ব্যবধানে। রানের দিক দিয়ে তৃতীয় সর্বোচ্চ ব্যবধানের জয়টি এসেছিল ২০১৪ সালের নভেম্বরে। সেবার চট্টগ্রাম টেস্টে জিম্বাবুয়েকে ১৮৬ রানে হারিয়েছিল টাইগাররা। তার আগের ম্যাচে খুলনায় একই প্রতিপক্ষকে হারিয়েছিল ১৬২ রানে। ২০১৩ সালের এপ্রিলে হারারে টেস্টে বাংলাদেশ ১৪৩ রানে হারিয়েছিল স্বাগতিকদের।

বিজ্ঞাপন

২০১৬ সালে ঢাকা টেস্টে ইংল্যান্ডের বিপক্ষে বাংলাদেশ জিতেছিল ১০৮ রানের ব্যবধানে। ২০০৯ সালের জুলাইয়ে কিংসটনে স্বাগতিক ওয়েস্ট ইন্ডিজকে ৯৫ রানে হারিয়ে দেয় বাংলাদেশ। আর এক ম্যাচ আগে সফরকারী ওয়েস্ট ইন্ডিজকে চট্টগ্রাম টেস্টে টাইগাররা হারিয়েছিল ৬৪ রানের ব্যবধানে। ২০১৭ সালে ঢাকা টেস্টে স্বাগতিক বাংলাদেশ ২০ রানে হারিয়েছিল অস্ট্রেলিয়াকে।

উইকেটের দিক দিয়ে বাংলাদেশের সর্বোচ্চ ব্যবধানের জয়টি ২০০৯ সালের জুলাইয়ে স্বাগতিক ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিপক্ষে। সেবার ক্যারিবীয়ানদের ঘরের মাটিতে টাইগাররা হারিয়েছিল ৪ উইকেটে। একই ব্যবধানে বাংলাদেশ কলম্বো টেস্টে ২০১৭ সালের মার্চে হারিয়েছিল স্বাগতিক শ্রীলঙ্কাকে। সেটি ছিল টাইগারদের শততম টেস্ট ম্যাচ। ২০১৪ সালের অক্টোবরে জিম্বাবুয়েকে ৩ উইকেটে হারিয়েছিল টাইগাররা। ১১২তম টেস্টে এসে বাংলাদেশ পেল ১৩তম জয়টি, যেটি বাংলাদেশের জন্য অনেক প্রথমের।

সারাবাংলা/এমআরপি

Tags:

বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন