বিজ্ঞাপন

পরিসংখ্যান সব নয়, এবার পাল্লা ভারীর পালা

December 8, 2018 | 1:11 pm

।। স্পোর্টস ডেস্ক ।।

বিজ্ঞাপন

সফরকারী ওয়েস্ট ইন্ডিজকে দুই ম্যাচের টেস্ট সিরিজে হোয়াইটওয়াশ করেছে স্বাগতিক বাংলাদেশ। এবার তিন ম্যাচের ওয়ানডে সিরিজে নামবে দুই দল। পরিসংখ্যানে মুখোমুখি লড়াইয়ে উইন্ডিজরা এগিয়ে থাকলেও আসন্ন সিরিজে ফেভারিট বাংলাদেশ। টেস্ট সিরিজেও পরিসংখ্যানে এগিয়ে ছিল ক্যারিবীয়ানরা। তবে, প্রত্যাশিত আর সহজ দুটি জয় তুলে নিয়েছিল টাইগাররা। নিজেদের মাটিতে ক্রমেই শক্তিশালী হয়ে ওঠা বাংলাদেশ এবার তিন ম্যাচের ওয়ানডে সিরিজটিও বগলদাবা করতে চায়। আরেকবার প্রমাণ করতে চায় ক্রিকেট যুদ্ধে পরিসংখ্যানই সব কিছু নয়, সেটা দলীয় হোক আর ব্যক্তিগত হোক।

১৯৯৯ সালের পর থেকে বাংলাদেশ মোট ৩১ ওয়ানডে ম্যাচে উইন্ডিজের মুখোমুখি হয়েছিল। যেখানে জয়ের পাল্লা ভারী ক্যারিবীয়ানদের দিকে। ২০ ম্যাচে জিতেছিল ভিভিয়ান রিচার্ডস, কোর্টনি ওয়ালস, কার্টলি অ্যামব্রোস, গ্যারি সোবার্স, ক্লাইভ লয়েড, গর্ডন গ্রিনিজদের উত্তরসূরিরা। বাংলাদেশ জিতেছিল ৯টি ম্যাচে। বাকি দুটি ম্যাচ পরিত্যক্ত হয়। এবার টাইগারদের সামনে জয়ের সংখ্যাটা দুই অঙ্কে নিয়ে যাওয়ার পালা। জয়ের পাল্লাটা আরেকটু ভারী করার পালা। ক্যারিবীয়ানরা ৬৮.৯৬ শতাংশ ম্যাচ জিতেছে, পক্ষান্তরে বাংলাদেশের জয়-পরাজয়ের হার ৩১.০৩ শতাংশ।

১৯৯৯ সালের ২১ মে প্রথমবারের মতো উইন্ডিজদের বিপক্ষে মাঠে নেমেছিল বাংলাদেশ। ডাবলিনের সে ম্যাচে বাংলাদেশ হেরেছিল ৭ উইকেটের ব্যবধানে। মুখোমুখি প্রথম ১৩ ম্যাচের কোনোটিতেই জেতা হয়নি লাল-সবুজদের। এর মধ্যে দুটি ম্যাচ কোনো ফল দেখেনি। একটি ২০০২ সালের ২৯ নভেম্বর চট্টগ্রামে, অপরটি ২০০৩ সালের ১৮ ফেব্রুয়ারি বেনোনিতে।

বিজ্ঞাপন

বাংলাদেশ ক্যারিবীয়ানদের বিপক্ষে প্রথম ওয়ানডে জেতার স্বাদ পায় দুই দলের মুখোমুখি লড়াইয়ের ১৪তম ম্যাচে। ২০০৯ সালের ২৬ জুলাই ডমিনিকার সে ম্যাচটি টাইগাররা জিতেছিল ৫২ রানের ব্যবধানে। শুধু তাই নয়, উইন্ডিজ সফরে সেবার তিন ম্যাচের তিনটিতেই জিতেছিল বাংলাদেশ। পরের দুটি ম্যাচে টাইগাররা জিতেছিল ৩ উইকেট এবং ৩ উইকেটের ব্যবধানে। এরপর থেকে দুই দলের ওয়ানডে ম্যাচে কেউ কাউকে ছেড়ে কথা বলেনি। সেবার ঘরের মাঠে ক্যারিবীয়ানরা হোয়াইটওয়াশ হলেও পরে টানা তিনটি ম্যাচে ক্যারিবীয়ানদের বিপক্ষে হারে বাংলাদেশ। ঘুরে দাঁড়াতে সময় লাগেনি। পরিসংখ্যানে দেখা যায়, আবারো টানা তিন ম্যাচে জিতেছিল টাইগাররা। এরপর আবারো জোড়া জয় তুলে নেয় উইন্ডিজ, পরের ম্যাচেই হারতে হয়। টানা আবারো তিন ম্যাচ জেতে ওয়েস্ট ইন্ডিজ।

কিন্তু, সবশেষ তিন ম্যাচের সিরিজে ক্যারিবীয়ানদের ঘরের মাঠে সিরিজ জিতে আসে বাংলাদেশ (২-১)। তিনটি ম্যাচেই জেতার সম্ভাবনা জেগেছিল। প্রথম ম্যাচে বাংলাদেশ ৪৮ রানে হারিয়ে দেয় ক্যারিবীয়ানদের। পরের ম্যাচে তীরে এসে তরী ডুবলে হারতে হয় মাত্র ৩ রানের ব্যবধানে। সিরিজ নির্ধারণী ম্যাচে মাশরাফির দল জেতে ১৮ রানের ব্যবধানে।

দুই দলের মুখোমুখি দেখায় ওয়েস্ট ইন্ডিজের দলীয় সর্বোচ্চ স্কোর ৩৩৮/৭, ২০১৪ সালের ২৪ আগস্ট। আর বাংলাদেশের ৩০১/৬, চলতি বছর ২৮ জুলাই। দুটি ম্যাচই ছিল সেন্ট কিটসে। দুই দলের সর্বনিম্ন দলীয় স্কোর কাছাকাছি। ২০১১ সালের ৪ মার্চ ঢাকায় ১৮.৫ ওভারে বাংলাদেশ গুটিয়ে গিয়েছিল মাত্র ৫৮ রানে। সে বছরের ১৮ অক্টোবর প্রতিশোধ তোলে টাইগাররা। চট্টগ্রামে ক্যারিবীয়ানদের ২২ ওভারে দলীয় ৬১ রানের গুটিয়ে দিয়েছিল বাংলাদেশ।

বিজ্ঞাপন

দুই দলের সর্বোচ্চ ব্যবধানের জয়ের (রান) দিকে খুব একটা পার্থক্য নেই। ২০১২ সালে খুলনায় ২৯৩ রানের টার্গেট দিয়ে বাংলাদেশ ১৬০ রানে হারিয়েছিল ওয়েস্ট ইন্ডিজকে। আর ২০১৪ সালে সেন্ট জর্জেসে বাংলাদেশকে ২৪৮ রানের টার্গেট দিয়ে ১৭৭ রানে হারিয়েছিল উইন্ডিজরা। উইকেটের দিক দিয়ে বাংলাদেশ ৮ উইকেটে জিতেছিল ২০১১ সালে। ২০০৬ সালে বাংলাদেশকে ১০ উইকেটে হারিয়েছিল ক্যারিবীয়ানরা। ২০১১ সালের ৪ মার্চ ৫৯ রানের টার্গেটে ব্যাটিংয়ে নেমে ওয়েস্ট ইন্ডিজ ২২৬ বল হাতে রেখেই জয় তুলে নিয়েছিল। আর একই বছর ১৮ অক্টোবর ৬২ রানের জয়ের টার্গেটে ব্যাটিংয়ে নেমে বাংলাদেশ জিতেছিল ১৮০ বল হাতে রেখে।

সর্বনিম্ন ব্যবধানে জয়ের দিক দিয়ে (রান) ওয়েস্ট ইন্ডিজ জিতেছিল মাত্র ৩ রানের ব্যবধানে, চলতি বছর ২৫ জুলাই। পরের ম্যাচে বাংলাদেশ জিতেছিল ১৮ রানের ব্যবধানে। ২০০৪ সালে কিংসটনে ক্যারিবীয়ানরা জিতেছিল ১ উইকেটের ব্যবধানে, আর বাংলাদেশ ২০১২ সালে জিতেছিল ২ উইকেটের ব্যবধানে। ২০০৪ সালে কিংসটনে স্বাগতিকরা ৫ বল হাতে রেখে জিতেছিল আর ২০০৯ সালে ডমিনিকায় বাংলাদেশ ৬ বল (১ ওভার) হাতে রেখে জয় তুলে নিয়েছিল।

দুই দলের হয়ে সর্বোচ্চ রান স্কোরার ক্রিস গেইল। যিনি এই সিরিজে উইন্ডিজ দলে নেই। ক্যারিবীয়ান এই হার্ডহিটার ওপেনার ২১ ম্যাচে করেছেন সর্বোচ্চ ৬৬১ রান। এবার তামিম ইকবালের সামনে সুযোগ থাকছে গেইলকে টপকে যাওয়ার। ১৯ ম্যাচে ৬২৩ রান করে এই তালিকায় দুইয়ে তামিম। সুযোগ থাকছে মুশফিকের সামনেও। ১৯ ম্যাচে ৬১৫ রান করে মুশফিক রয়েছেন গেইল-তামিমের পেছনে। ১৩ ম্যাচে মারলন স্যামুয়েলস করেছেন চতুর্থ সর্বোচ্চ ৫৩৩ রান। পাঁচে থাকা সাকিব ১২ ম্যাচে করেছেন ৪১২ রান। আর ছয়ে থাকা মাহমুদউল্লাহ রিয়াদ ১৪ ম্যাচে করেছেন ৪০৩ রান।

দুই দলের মুখোমুখি দেখায় সর্বোচ্চ দুইবার করে তিন অঙ্কের ঘরে যেতে পেরেছেন বাংলাদেশের ওপেনার এনামুল হক বিজয় এবং তামিম ইকবাল। দুই দলের আর কেউ দুবার সেঞ্চুরি পাননি। এবারের স্কোয়াডে থাকা ওয়েস্ট ইন্ডিজের শিমরন হেটমেয়ার একটি সেঞ্চুরি করেছেন। সবথেকে বেশিবার ফিফটি পেয়েছেন সাকিব, তামিম, স্যামুয়েলস আর গেইল। প্রত্যেকেই পেয়েছেন পাঁচটি করে ফিফটি। স্যামুয়েলস থাকলেও এই সিরিজে নেই গেইল। চারবার করে ফিফটি করেছেন সাবেক তারকা শিবনারায়ন চন্দরপল, টাইগারদের বর্তমান তারকা মাহমুদউল্লাহ এবং মুশফিক।

বিজ্ঞাপন

সর্বোচ্চ ছক্কা হাঁকানোয় শীর্ষে গেইল, বাংলাদেশের বিপক্ষে ২০ ছক্কা এসেছে তার ব্যাট থেকে। এবার সিরিজে না থাকা গেইল, কাইরন পোলার্ডকে (১৮টি ছক্কা) টপকে যাওয়ার সুযোগ থাকলে রভম্যান পাওয়েলের (১৭)। মাহমুদউল্লাহ হাঁকিয়েছেন ১০টি ছক্কা। দুই দলের মুখোমুখি সিরিজে সর্বোচ্চ ২৮৭ রান তামিমের দখলে। চলতি বছর তিন ম্যাচের সিরিজে তামিম দুটি সেঞ্চুরি আর একটি ফিফটিতে ১৪৩.৫০ গড়ে করেন ২৮৭ রান। এই সিরিজে না থাকা দিনেশ রামদিন দ্বিতীয় সর্বোচ্চ ২৭৭ রান করেছিলেন ২০১৪ সালের সিরিজে। ২০৭ রান নিয়ে তিনে আছেন শিমরন হেটমেয়ার আর ২০৪ রান নিয়ে চারে আছেন মুশফিক।

১৩ ম্যাচ খেলে সর্বোচ্চ ২৮ উইকেট আছে ক্যারিবীয়ান পেসার কেমার রোচের। আর ১৫ ম্যাচ খেলে দ্বিতীয় সর্বোচ্চ ১৯ উইকেট আছে এই সিরিজে না থাকা বাংলাদেশের স্পিনার আবদুর রাজ্জাকের দখলে। টাইগার দলপতি মাশরাফি ১২ ম্যাচে ১৮ উইকেট নিয়ে আছেন সর্বোচ্চ উইকেট শিকারির তালিকায় তিন নম্বরে। গ্লাভস হাতে উইকেটের পেছনে দায়িত্ব পালন করা মুশফিক সর্বোচ্চ ২৩টি ডিসমিসালে নাম লিখিয়েছেন। ২০টি ডিসমিসালে নাম লিখিয়েছেন ২০০৪ সালে ক্রিকেটকে বিদায় বলে দেওয়া রিডলি জ্যাকবস। সর্বোচ্চ ক্যাচ মুঠোবন্দি করায় এগিয়ে কাইরন পোলার্ড (১৫টি)। ১৫টি ক্যাচ নিয়েছেন ড্যারেন স্যামি, ১২টি ক্যাচ নিয়েছেন ক্রিস গেইল। তিনজনই এই সিরিজে নেই। চার ও পাঁচে থাকা মাহমুদউল্লাহ এবং তামিম নিয়েছেন ৯ ও ৭টি করে ক্যাচ।

পার্টনারশিপ:
প্রথম উইকেট: গেইল-হাইন্ডস- ১৯২ রান
দ্বিতীয় উইকেট: তামিম-সাকিব- ২০৭ রান
তৃতীয় উইকেট: ব্রাভো-রামদিন- ২৫৮ রান
চতুর্থ উইকেট: ব্রাভো-পোলার্ড- ১৩২ রান
পঞ্চম উইকেট: হেটমেয়ার-রভম্যান- ১০৩ রান
ষষ্ঠ উইকেট: রামদিন-পোলার্ড- ১৪৫ রান
সপ্তম উইকেট: পাইলট-দুর্জয়- ৭১ রান
অষ্টম উইকেট: নাসির-রাজ্জাক- ৪১ রান
নবম উইকেট: পাইলট-রফিক- অবিচ্ছিন্ন ৬২ রান
দশম উইকেট: বিশু-জোসেফ- অবিচ্ছিন্ন ৫৯ রান

বাংলাদেশের তিনটি একশ প্লাস জুটি:
ষষ্ঠ উইকেটে- অবিচ্ছিন্ন ১২৩ রান- আল শাহরিয়ার-পাইলট
তৃতীয় উইকেটে- ১৭৪ রান- বিজয়-মুশফিক
দ্বিতীয় উইকেটে- ২০৭ রান- তামিম-সাকিব

মিরপুর শের-ই-বাংলা জাতীয় ক্রিকেট স্টেডিয়ামে ৯ ডিসেম্বর সিরিজের প্রথম ওয়ানডে অনুষ্ঠিত হবে। একই মাঠে ১১ ডিসেম্বর হবে দ্বিতীয় ওয়ানডে। আর ১৪ ডিসেম্বর সিরিজের তৃতীয় ও শেষ ম্যাচটি হবে সিলেট আন্তর্জাতিক ক্রিকেট স্টেডিয়ামে। ওয়ানডে সিরিজের সবকটি ম্যাচই দিবা-রাত্রির।

ওয়েস্ট ইন্ডিজ ওয়ানডে স্কোয়াড:
রোভম্যান পাওয়েল (অধিনায়ক), মারলন স্যামুয়েলস, রোস্টন চেজ, দেবেন্দ্র বিশু, চন্দরপল হেমরাজ, শিমরন হেটমেয়ার, ড্যারেন ব্রাভো, শাই হোপ, কার্লোস ব্রাথওয়েইট, কেমো পল, কাইরন পাওয়েল, ফ্যাবিয়েন অ্যালেন, কেমার রোচ, সুনীল আমব্রিস, ওশানে থমাস।

বাংলাদেশের ১৬ সদস্যের স্কোয়াড:
মাশরাফি বিন মুর্তজা (অধিনায়ক), তামিম ইকবাল, ইমরুল কায়েস, সৌম্য সরকার, লিটন দাস, সাকিব আল হাসান, মুশফিকুর রহিম, মাহমুদউল্লাহ, রুবেল হোসেন, মোস্তাফিজুর রহমান, মেহেদী হাসান মিরাজ, নাজমুল ইসলাম অপু, মোহাম্মদ মিঠুন, সাইফ উদ্দিন, আবু হায়দার রনি এবং আরিফুল হক।

সারাবাংলা/এমআরপি

Tags: , ,

বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন