বিজ্ঞাপন

শরিকদের খুশি করতে হবিগঞ্জে ৩ প্রার্থীর বিদায়, বিএনপিতে অষন্তোষ

December 11, 2018 | 2:30 pm

।। ডিস্ট্রিক্ট করেসপন্ডেন্ট ।।

বিজ্ঞাপন

হবিগঞ্জ: জোটের শরিকদলগুলোকে খুশি করতে গিয়ে হবিগঞ্জে বিএনপির তিন হেভিওয়েট প্রার্থীকে নির্বাচনি লড়াই থেকে বিদায় নিতে হয়েছে। আর এতে বিক্ষুব্ধ তৃণমূলের নেতাকর্মীরা। এমনকি জোটের শরিক খেলাফত মজলিসের এক প্রার্থীকে এলাকায় অবাঞ্ছিতও ঘোষণা করেছেন বিএনপির নেতাকর্মীরা।

ফলে জোটের নেতাকর্মীদের মধ্যেই বেজে উঠেছে অনৈক্যের সুর।

নির্বাচনে হবিগঞ্জ-১ আসনে ঐক্যফ্রন্টের প্রার্থী গণফোরামের ড. রেজা কিবরিয়া। তিনি এই আসন থেকে ধানের শীষ প্রতীকে নির্বাচনের প্রস্তুতি নিচ্ছেন। প্রতীক বরাদ্দ পাওয়ার পর প্রথমে ওই আসনের হেভিওয়েট প্রার্থী, সাবেক সংসদ সদস্য ও জেলা বিএনপির সিনিয়র সহ-সভাপতি শেখ সুজাতের বাসায় যাওয়ার চেষ্টা করলেও ওই বাসার ফটকে তালার কারণে তিনি শেখ সুজাতের সঙ্গে যোগাযোগ করতে পারেনি। অন্যদিকে কেন্দ্রীয় সাংগঠনিক সম্পাদক ডা. সাখাওয়াত হাসান চৌধুরী দলীয় মনোনয়ন পাওয়ার পরও তাকে শেষ মুহূর্তে চুড়ান্ত মনোনয়ন না দেওয়ায় তার নিজ কর্মী সমর্থকরা হতাশায় ভুগছেন।

বিজ্ঞাপন

২০১২ সালে আওয়ামী লীগ সরকার আমলে উপ-নির্বাচনে এমপি নির্বাচিত হন শেখ সুজাত মিয়া। এরপর তিনি নবীগঞ্জ-বাহুবল এলাকায় প্রতিটি নেতাকর্মীদের সঙ্গে নিয়ে সরকারে বিরুদ্ধে আন্দোলন সংগ্রাম কর্মসূচিতে অগ্রগণ্য ভূমিকা পালন করেন। নিজে লন্ডন প্রবাসি হলেও সার্বক্ষনিক দলীয় নেতাকর্মীদের সাথে যোগাযোগ রক্ষা করতেন তিনি। এলাকায় তার বেশ আধিপত্যও রয়েছে।

শুরুতে দলের পক্ষ থেকে নির্বাচনে শেখ সুজাত মিয়াকেই মনোনয়ন দেয়া হয়। কিন্তু হঠাৎ করে রাজনীতিতে আসা আওয়ামী লীগ সরকারের সাবেক অর্থমন্ত্রী শাহ এএমএস কিবরিয়ার ছেলে রেজা কিবরিয়া গণফোরামের প্রার্থী হওয়ায় উল্টে যায় হিসাব নিকাশ। রেজা কিবরিয়া পান ধানের শীষের হয়ে লড়াই করার টিকেট।

এ অবস্থায় হতাশ হয়ে পড়েছেন দলের নেতাকর্মীরা। তাদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেল, এক নেতা তাদের সংগঠিত করেছেন আর দলীয় মনোনয়ন পেয়েছেন সম্পূর্ণ আরেকজন। ফলে তারা হতাশ।

বিজ্ঞাপন

নবীগঞ্জ পৌর বিএনপির সাধারণ সম্পাদক পৌর মেয়র ছাবির আহমেদ চৌধুরী জানান, হবিগঞ্জ-১ আসনে প্রতিটি নেতাকর্মীর সঙ্গে অত্যন্ত নিবিড় সম্পর্ক ছিল শেখ সুজাতের। প্রবাসে থেকেও তিনি নিয়মতি নেতাকর্মীদের আপদে বিপদে পাশে থাকতেন। কিন্তু শরিকদের খুশি করতেই বাদ দেওয়া হয়েছে এই হেভিওয়েট নেতা। এ কারণেই তারা হতাশ।

হবিগঞ্জ-২ আসনে জেল থেকে দলীয় মনোনয়ন পেয়েছিলেন কেন্দ্রীয় বিএনপির সাংগঠনিক সম্পাদক ডা. সাখাওয়া হাসান জীবন। গত ১০ বছর ধরে এলাকায় দলকে সংগঠিত করেছেন তিনি। নির্বাচনের তফসিল ঘোষণার কিছুদিন আগেই তাকে ঢাকার ১০টি মামলায় কারাগারে যেতে হয়েছে। দীর্ঘ ৪২ দিন কারাবরণ শেষে গত ১ ডিসেম্বর জামিনে মুক্ত হন তিনি। এরপর এলাকায় ফিরে সিক্ত হন সাধারণ মানুষষের ভালোবাসায়।

কিন্তু গত ৮ ডিসেম্বর রাতে তাকে বাদ দিয়ে হবিগঞ্জ-২ আসনে খেলাফত মজিলেরর নায়েবে আমির আল্লামা আব্দুল বাছিত আজাদকে দলীয় মনোনয়ন দেয়া হয়। এরপর থেকেই দলীয় নেতাকর্মীরা ক্ষুব্ধ। বিএনপির অনেক নেতাকর্মী বলছেন, আব্দুল বাছিত আজাদকে কোনোদিন এলাকায় দেখা যায়নি, এমনকি ভোটাররাও তাকে চেনেন না। এমন লোককে দলীয় মনোনয়ন দেয়ার কারণে এই আসনে ধানের ধীষের জামানত বাজেয়াপ্ত হবে বলেও তাদের আশঙ্কা।

এ ব্যাপারে বানিয়াচং উপজেলা বিএনপির যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক ওয়ারিশ উদ্দিন খান বলেন,‘যাকে এলাকার লোকজন চেনেন না তাকে দলীয় মনোনয়ন দেয়ায় আমরা ক্ষুব্ধ ও হতাশ। যে মানুষটা দলের জন্য কারাবরণ করেছে তাকে বাদ দিয়ে শুধুমাত্র জোটের শরিকদের খুশি করতেই এ আসনে অপরিচিত একজনকে মনোনয়ন দেয়া হয়েছে।’

বিজ্ঞাপন

হবিগঞ্জ-৪ আসনে জেলা বিএনপির সভাপতি ও সাবেক সংসদ সদস্য সৈয়দ মো. ফয়সলকে বাদ দিয়ে শরিকদল খেলাফত মজিলের কেন্দ্রীয় মহাসচিব আহমেদ আব্দুল কাদেরকে দলীয় মনোনয়ন দেয়ায় ক্ষুব্ধ চুনারুঘাট ও মাধবপুর আসনের বিএনপির নেতাকর্মীরা। ইতিমধ্যে বিএনপির নেতাকর্মীরা আহমেদ আব্দুল কাদেরকে এলাকায় অবাঞ্ছিত ঘোষনা করেছেন। যে কারনে বিপাকে পড়েছেন শরীকদল খেলাফত মজলিসের সমর্থকরা।

এ ব্যাপারে মাধবপুর পৌর বিএনপির সাধারণ সম্পাদক আলা উদ্দিন আল রনি জানান, সৈয়দ ফয়সলকে বাদ দিয়ে খেলাফত মজলিসের প্রার্থী দেয়ায় দলীয় নেতাকর্মীরা ক্ষুব্ধ ও বিমর্ষ। তাই ইতিমধ্যে তাকে আমরা এলাকায় অবাঞ্ছিত ঘোষনা করেছি। যে কোন মূল্যে তাকে আমরা প্রতিরোধ করবো।

সারাবাংলা/এসএমএন

Tags: , , ,

বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন