বিজ্ঞাপন

ইশতেহারে নিরাপত্তার প্রতিশ্রুতি চান পাহাড়ের নারীরা

December 13, 2018 | 8:31 am

।। প্রান্ত রনি, ডিস্ট্রিক্ট করেসপন্ডেন্ট ।।

বিজ্ঞাপন

রাঙামাটি: পাহাড়ের নারীরা সব সময়ই নির্যাতিত, নিপীড়িত ও অবহেলিত। প্রতিনিয়ত ধর্ষণ ও যৌন হয়রানির শিকার হয়ে এসেছে তারা। বর্তমান সময়ে তা যেন আরও বেড়েছে। চলতি বছরেই রাঙামাটিতে ১৫ জনেরও বেশি নারী ধর্ষণ, যৌন নির্যাতন ও হয়রানির শিকার হয়েছেন। তাই আসন্ন একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের ইশতেহারে পাহাড়ের নারীরা তাদের নিরাপত্তার দাবি জানিয়েছেন।

তারা বলছেন, সব রাজনৈতিক দলের নির্বাচনী ইশতেহারে নারী নিরাপত্তার বিষয়ে প্রতিশ্রুতি দেওয়া উচিত।

আগামী ৩০ ডিসেম্বর অনুষ্ঠিত হতে যাওয়া নির্বাচনে ইতোমধ্যে নির্বাচনী প্রতীক বরাদ্দ হয়েছে, প্রার্থীরাও ভোটারদের কাছে যাচ্ছেন, বিভিন্ন নির্বাচনী প্রতিশ্রুতি দিয়ে তারা ভোট চাইছেন। সারাদেশের মতো পার্বত্য জেলা রাঙামাটিতেও প্রার্থীরা চষে বেড়াচ্ছেন মাঠ-ঘাট। এর মধ্যে নির্বাচনকে কেন্দ্র করে ইশতেহার ঘোষণা করছে জাতীয় রাজনৈতিক দলগুলো। পাহাড়ের নারীরা বলছেন, সব রাজনৈতিক দলগুলোর ইশতেহারে যেন পার্বত্য এলাকার নারীদের নিরাপত্তার বিয়টি গুরুত্ব দিয়ে দেখা হয়, নারীদের নিরাপত্তার বিষয়ে তাদের প্রতিশ্রুতি দেওয়া উচিত।

বিজ্ঞাপন

এবারের নির্বাচনী রাঙামাটি আসনে মোট ভোটার ৪ লাখ ১৮ হাজার ২৪৮ জন। এর মধ্যে নারী ভোটার ১ লাখ ৯৭ হাজার ৮৫৩ জন ও পুরুষ ভোটার ২ লাখ ২০ হাজার ৩৯৫ জন। নারী ও নতুন ভোটারদের ভোট এখানে প্রার্থীদের কাছে বড় ফ্যাক্টর। পার্বত্য জেলা রাঙামাটিতে চাকমা, মারমা, ত্রিপুরা, পাংখোয়া, তঞ্চঙ্গ্যাসহ আরও কয়েকটি পাহাড়ি জনগোষ্ঠীর বসবাস। এই বিশাল জনগোষ্ঠীর অর্ধেকের বেশির ভাগই নারী। এখানকার নারীরা জুম চাষ, উদ্যোক্তা, পেশাজীবী, ব্যবসা, এনজিও কর্মীসহ পুরুষের পাশাপাশি অর্থনীতিতে সমান ভূমিকা রাখলেও পাহাড়ে নারীরা সব সময়ই নির্যাতিত। গণমাধ্যমে প্রায়ই সংবাদ হয় পাহাড়ে ধর্ষণের শিকার নারীরা, কিন্তু এ থেকে তারা মুক্তি চান, চান নিরাপত্তাও।

বাংলাদেশে এখনও নারীর নিরাপত্তা নিশ্চিত হয়নি মন্তব্য করে রাঙামাটি কলেজের ছাত্রী ঐশি ঘোষ তুলি বলেন, ‘একজন নারী হিসেবে আমি চাইবো রাজনৈতিক দলগুলো তাদের ইশতেহারে নারীদের নিরাপত্তার প্রতিশ্রুতি দিক।

শুভ সংঘের রাঙামাটি জেলার সাংগঠনিক সম্পাদক শুভ্রা দাশ বলেন, ‘সারাদেশেই গৃহবধূ থেকে শুরু করে স্কুল-কলেজের শিক্ষার্থী, পেশাজীবী নারীদের ঘরে, ঘরের বাইরে সব জায়গায় যৌন হয়রানি, নির্যাতনের শিকার হতে হচ্ছে, নারীর নিরাপত্তা খর্ব হয়েছে। তাই চাই নারীর নিরাপত্তার বিষয়টি রাজনৈতিক দলগুলোর ইশতেহারে বিশেষভাবে বিবেচনা করতে। কোনো নারী নির্যাতক যেন আইন প্রণেতা না হয়-সে বিষয়ে ইশতেহারে উল্লেখ থাকা উচিত বলে মনে করি, বলেন শুভ্রা দাশ।

বিজ্ঞাপন

হিমাওয়ান্তির নির্বাহী পরিচালক ও নারী নেত্রী টুকু তালুকদার বলেন, ‘প্রার্থীদের প্রতিশ্রুতি পূরণে সাধারণ ভোটারদের সচেতনতা মুখ্য বিষয়, এ ক্ষেত্রে ভোটারদের আরও সচেতন হবে। প্রার্থীরা যদি নির্বাচনে জয়ী হওয়ার পর ভোটারদের প্রতিশ্রুতি ভঙ্গ করে কিংবা পালন না করে। সেক্ষেত্রে জনপ্রতিনিধিদের তাদের সচেতন করতে হবে। কারণ, আমরা প্রতিশ্রুতি আদায়ে সচেতন থাকলে তারাও প্রতিশ্রুতি পালনে সচেতন হবে।

নারী অধিকার নিশ্চিত ও নিরাপত্তা বিষয়ে রাজনৈতিক দলের ইশতেহারে প্রতিশ্রুতি উল্লেখ করা দরকার বলে মন্তব্য করেছেন অ্যাডভোকেট সুস্মিতা চাকমা। সুস্মিতা বলেন, ‘যারা অপরাধ করেন, ধর্ষণ, নারী নির্যাতন, নারীদের হয়রানির সঙ্গে জড়িত তারা অপরাধীই। কিন্তু দেখা গেছে, যারাই এসব অপকর্ম করে থাকেন, তারা কোনো না কোনো ভাবেই বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের সঙ্গে সম্পৃক্ত। তাই আমি মনে করি নারী নিরাপত্তা, মানবাধিকার নিশ্চিত ও অপরাধীর শাস্তির ব্যাপারে ইশতেহারে এই বিষয়গুলো পরিষ্কারভাবে উল্লেখ করা প্রয়োজন।’

জাতীয় মানবাধিকার কমিশনের সাবেক সদস্য নিরূপা দেওয়ান বলেন, নির্বাচনী ইশতেহারতো ভোটারদের কাছে দেওয়া প্রার্থীদের প্রতিশ্রুতি, কিন্তু এই প্রতিশ্রুতি নির্বাচনে জয়ী হওয়ার পর পালন করে না জনপ্রতিনিধিরা। আর তাই প্রতিশ্রুতি ভঙ্গ করার পরও তাদেরকেও ভোট দেওয়ার বিষয়ে ভোটারদের সচেতন হতে পরামর্শ দেন নিরূপা দেওয়ান।

তিনি বলেন,  ‘যারা এসব অপকর্মেরসঙ্গে  জড়িত, তারা কোনো না কোনো রাজনৈতিক দলের সাথে সম্পৃক্তও। তাই আমি মনে করি, যেসব প্রার্থী অপরাধের সঙ্গে জড়িত, জনবিরোধী কার্যক্রমে জড়িত তাদের প্রার্থীরা না করা ও দল থেকে বহিষ্কার করা উচিত।’

বিজ্ঞাপন

সারাবাংলা/জেএ/এমআই

Tags: ,

বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন