বিজ্ঞাপন

‘যুদ্ধাপরাধীদের সন্তানদের হাতে দেশের পতাকা দেখতে চাই না ‘

December 14, 2018 | 3:46 pm

।। জাকিয়া আহমেদ, স্পেশাল করেসপন্ডেন্ট ।। 

বিজ্ঞাপন

ঢাকা: একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে উল্লেখযোগ্য সংখ্যক তরুণ ভোটার প্রথমবার ভোট দিচ্ছেন। শহীদ সন্তানরা বলছেন, মুক্তিযুদ্ধে ৩০ লাখ মানুষ জীবন দিয়েছিলেন ভবিষ্যতের বাংলাদেশের জন্য। তাদের রক্তের প্রতি আমাদের ঋণ আছে। আর সে কারণেই তরুণরা তাদের ঋণের প্রতি শ্রদ্ধা জানাবে, মুক্তিযুদ্ধের চেতনার প্রতি কমিটেড থাকবে, মুক্তিযুদ্ধের পক্ষের শক্তির সঙ্গে থাকবে এবং কথা বলবে শহীদদের রক্তের সঙ্গী হয়ে। আমরা চাই আগামী নির্বাচনেও তরুণরা অবশ্যই মুক্তিযুদ্ধের পক্ষে ভোট দেবে।

‘নতুন ভোটার, তরুণ ভোট, মুক্তিযুদ্ধের পক্ষে হোক’-এই মূলমন্ত্রে এবার তরুণ ভোটারদের উদ্বুদ্ধ হতে অনুরোধ জানিয়েছেন শহীদ সন্তানরা। তারা বলছেন, মানবতাবিরোধীদের সন্তানদের হাতে তারা বাংলাদেশের পতাকা দেখতে চান না, স্বাধীন বাংলাদেশের সংসদের স্বাধীনতার বিপক্ষ শক্তিদের ক্ষমতায় দেখতে চান না।

একাত্তরের মানবতাবিরোধী অপরাধী, জঙ্গিবাদে মদতদাতা ও চিহ্নিত সন্ত্রাসীসহ বিতর্কিত ব্যক্তিদের একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে ধানের শীষে মনোনয়ন দিয়ে বিতর্কের মুখে পড়েছে বিএনপিসহ তাদের নতুন রাজনৈতিক জোট -জাতীয় ঐক্যফ্রন্ট। ভোটার ও সচেতন নাগরিকদের মধ্যে এ নিয়ে চলছে নানা আলোচনা-সমালোচনা।

বিজ্ঞাপন

এবারের নির্বাচনে প্রার্থীদের মধ্যে সরাসরি মানবতাবিরোধী অপরাধের দায়ে অভিযুক্ত ব্যক্তি যেমন আছেন, তেমনি আছেন একই অপরাধে দণ্ডিতদের ভাই কিংবা সন্তান।

এ বিষয়ে শহীদ আলতাফ মাহমুদের কন্যা শাওন মাহমুদ সারাবাংলাকে বলেন, ‘আমাকে একটি স্বাধীন দেশ দিয়ে গিয়েছেন আমার বাবা আলতাফ মাহমুদ। তার মেয়ে হিসেবে আমি খুব আশাবাদী ।’

বিজ্ঞাপন

আমি হাল ছাড়তে শিখিনি মন্তব্য করে শাওন মাহমুদ বলেন, ‘এবারের নির্বাচনে বিএনপি থেকে যুদ্ধাপরধীদের সন্তান বা যুদ্ধাপরাধীদের নির্বাচন করার জায়গা করে দিয়েছে –এগুলো নিয়ে আমি কখনই ভয় পাই না।’

মুক্তিযুদ্ধকে যারা জন্মসূত্রে হিসেবে ধারণ করে, জাতীর পিতার ৭ মার্চের ভাষণকে যারা স্বাধীনতার বীজমন্ত্র বলে মনে করে যেসব তরুণরা, তারা কখনও যুদ্ধাপরাধীদের সন্তানদের এমন কোনো জায়গায় দেখতে চায় না যেখানে তারা আবার ক্ষমতার বড়াই করে বেড়াবে।

তিনি বলেন, ‘আমার পুরোপুরি আস্থা রয়েছে তরুণদের প্রতি, তারা কখনওই কোনও ভুল সিদ্ধান্ত নেয়নি-এবারের নির্বাচনেও নেবে না।’

একটি আদর্শের জন্য শহীদ বুদ্ধিজীবীরা জীবন দিয়েছিলেন। শহীদ চিকিৎসক ডা. আলীম চৌধুরীর কন্যা ডা. নুজহাত চৌধুরী সারাবাংলাকে বলেন, ‘যারা স্বাধীনতার শত্রু ছিল, তাদেরকে আমরা এখনও সমূলে নির্মূল করতে পারিনি-যেটা প্রয়োজন ছিল। কোনও যুদ্ধের পরাজিত শক্তিকে সে দেশের মাটিতে রাজনীতি করতে দেওয়া হয় না। কোনও যুদ্ধে পরাজিত শক্তির বিষ এত বছর ধরে দিয়ে যাচ্ছে-এরকম ঘটনা আর কোথাও নেই-এক বাংলাদেশ ছাড়া।’

বিজ্ঞাপন

কিন্তু তরুণদের প্রতি পূর্ণ আস্থা রয়েছে জানিয়ে নুজহাত চৌধুরী বলেন, ‘তারা মুক্তিযুদ্ধের প্রতি শ্রদ্ধা জানাবে, মুক্তিযুদ্ধের চেতনার প্রতি কমিটেড থাকবে, মুক্তিযুদ্ধের পক্ষের শক্তির সঙ্গে থাকবে এবং কথা বলবে শহীদদের রক্তের সঙ্গী হয়ে।’

আমরা চাই আগামী নির্বাচনেও তাদের ভোটটি অবশ্যই মুক্তিযুদ্ধের পক্ষে হবে। ‘নতুন ভোটার, তরুণ ভোট, মুক্তিযুদ্ধের পক্ষে হোক’-এই মূলমন্ত্রে এবার তরুণ ভোটারদের উদ্বুদ্ধ হওয়ার আহ্বান জানিয়েছেন তিনি।

লেখক, সাহিত্যিক ও চলচ্চিত্রকার জহির রায়হানের ছেলে অনল রায়হান বলেন, ‘আমার কাছে বাংলাদেশ বাবারই প্রতিচ্ছবি। বাবার মৃতদেহটা আমরা খুঁজে পাইনি, আমাদের বাবাদের যারা আমাদের কাছ থেকে কেড়ে নিয়েছেন-তাদের সন্তানদের হাতে বাংলাদেশের আবার ক্ষমতায়ন দেখতে চাই না। যুদ্ধাপরাধীরা যেন আর ক্ষমতায় আসতে না পারে-এটাই তরুণদের কাছে আমাদের চাওয়া, শহীদ সন্তানদের চাওয়া।’

শহীদ মুনীর চৌধুরীর ছেলে আসিফ মুনীর সারাবাংলাকে বলেন, ‘মুক্তিযুদ্ধে ৩০ লাখ শহীদ হয়েছিলেন এবং তাদের মধ্যে আমাদের বাবারা ছিলেন। তাদের তালিকা করে সংঘবদ্ধভাবে হত্যাকাণ্ড হয়েছিল তার সঙ্গে বাংলাদেশে যারা যুদ্ধাপরাধী তারা সরাসরি সম্পৃক্ত ছিল। বুদ্ধিজীবীদের নির্মমভাবে হত্যার সঙ্গে কোথাও কোথাও তারা সরাসরি যুক্ত ছিল, আর কোনও কোনও ক্ষেত্রে তারা চিহ্নিত করে দিয়েছে, দেখিয়ে দিয়েছে পাকিস্তানিদেরকে।’

কাজেই এরা দেশের শত্রু-এরা স্বাধীনতার বিপক্ষে ছিল । তাদের সন্তানরাও একই পথে চলছে মন্তব্য করে আসিফ মুনীর বলেন, ‘কোনও প্রমাণ নেই, তাদের এমন কোনও প্রমাণ দেখিনি যে এরা তাদের ভুল শিকার করেছে,তারা দেশের জন্য, দেশের ভালোর জন্য কাজ করছে।’

জামায়াতে ইসলামীর সঙ্গে যারা সরাসরি জড়িত অথবা যারা স্বাধীনতা বিরোধী তারা বিভিন্ন রাজনৈতিক সংগঠনের মধ্যেও ‍ঢুকে গিয়েছে জানিয়ে আসিফ মুনীর বলেন, ‘এটা তাদের সুদূরপ্রসারী পরিকল্পনার অংশ বলেই আমি বিশ্বাস করি। কাজেই তাদের সেই চক্রান্ত তরুণ প্রজন্মকে বুঝতে হবে। সেটা বোঝানোর জন্য আমরা শহীদ সন্তানরা আছি। এমনকি আমাদের বাবাদের যারা কাছের মানুষ ছিলেন তারাও বোঝাতে পারবেন, বলতে পারবেন।’

মানবতাবিরোধী অভিযোগ অভিযুক্ত, প্রমাণিত, দণ্ড পাওয়া কারও সঙ্গে কোনো ব্যক্তিগত স্বার্থ নেই জানিয়ে তিনি বলেন, ‘আমাদের স্বার্থ-দেশের স্বার্থ। তরুণ প্রজন্ম দেশের স্বার্থেই ভোট দেবে বলেই আমি বিশ্বাস করি। একাত্তরে মানবতাবিরোধী -গোলাম আযম, নিজামী, সাঈদী, মুজাহিদ থেকে শুরু করে বিদেশে থাকা চৌধুরী মঈনুদ্দিন, আশরাফুজ্জামান সহ আরও যারা রয়েছে তারা সবসময় দম্ভভরে বলেছে তারা দেশবিরোধী কোনো কর্মকাণ্ড করেনি। যাদের বিরুদ্ধে রায় কার্যকর হয়েছে তারাও শেষ মুহূর্ত পর্যন্ত বলেছে তারা কোনো ভুল করেননি।’

যদি কোনোভাবে এই ‍যুদ্ধাপরাধী বা তাদের সন্তানরা নির্বাচিত হয়ে আসেন তাহলে সেটা বাংলাদেশের স্বাধীনতাকে অপমান করা হবে, শহীদদেরকে অপমান করা হবে বলেন আসিফ মুনীর।

তিনি বলেন, ‘দেশকে অপমান করা মানে সেই অপমান আমার লাগবে। কাজেই তরুণদের এটুকু চিন্তা করতে হবে-আমি দেশকে লজ্জা দেওয়ার মতো ভোট দেব কী না। কোনওভাবেই যুদ্ধাপরধাীদের সন্তানদেরকে মনে করার কারণ নেই যে তারা দেশপ্রেমী মানুষ, তারা তাদের বিশ্বাসঘাতক পিতাদের উত্তরসূরী এবং তাদের আদর্শই তারা লালন করে-যোগ করেন তিনি। যাদের রায় কার্যকর হয়েছে-তাদের সন্তান বা তারা  ভুল স্বীকার করেনি। তাদের সন্তানরাও তাদের পথেই গিয়েছে, তারা ভুল শিকার করেনি। মন্ত্রীর পদে যুদ্ধাপরাধীরা বসেছে, সংসদে যুদ্ধাপরাধীরা বসছে -এটা চূড়ান্ত লজ্জার ঘটনা এবং আমরা এর পুনরাবৃত্তি চাই না।’

সারাবাংলা/জেএ/জেডএফ 

Tags: , ,

বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন