আমজাদ হোসেন
December 22, 2018 | 5:06 pm
ফারুক, অভিনেতা
এমন গুণী মানুষ পাওয়া যায় না। এই কথা তিনি বেঁচে থাকতেই তাকে আমি বলেছি। পরিচালনার ক্ষেত্রেই শুধু নয়, চিত্রনাট্য ও সংলাপ লেখাতেও তিনি ছিলেন অতুলনীয়। সেটে বসে সংলাপ লিখতে পারতেন তিনি। ভিন্ন ভিন্ন অভিনয়শিল্পীর জন্য ভিন্নভাবে সংলাপ লিখতেন।
একবার কি হয়েছে, নয়নমনি সিনেমার জন্য ১৮ পৃষ্ঠার সংলাপ লিখে এনেছেন তিনি। সেটে বসে সেটা পড়ছিলেন আর ছিড়ে ফেলে দিচ্ছিলেন। এভাবে ছিড়তে ছিড়তে সংলাপ এসে দাঁড়ালো সাত পৃষ্ঠায়। তারপর সব রেডি করে শুরু হলো শুটিং।
আমি মনে মনে ভাবলাম, সাত পৃষ্ঠার সংলাপ বললে দর্শকদের বোরিং লাগতে পারে। কিন্তু এই কথা আমজাদ হোসেনকে বলি নাই। এমনকি শুটিংয়ের সময় লেখা সংলাপ না বলে, নিজের মতো করে সংলাপ বললাম। কিন্তু আমজাদ হোসেন আমাকে কিছু বললেন না। ডাবিংয়ের সময়ও তাই। আমজাদ হোসেনের সহকারি একসময় বলে উঠলো নায়ক তো লেখা সংলাপের কিছুই বলেননি। আমজাদ হোসেন বললেন, আমি জানি, কিন্তু তিনি যা বলেছেন সেটাই অনেক ভালো হয়েছে।
আমার আর তার যোগাযোগটা ছিল এমনই।
আমজাদ ভাই কিন্তু বেশ কিছুদিন অনেক কষ্ট করেছেন। বিশেষ করে অর্থের জন্য। আবার কিছু কিছু জায়গায় তাকে প্রকৃত সম্মান দেয়া হয়নি বলে আমার মনে হয়।
‘জীবন থেকে নেয়া’ ছবির জন্য জহির রায়হান সাহেব স্বীকৃতি পান, ঠিক আছে। কিন্তু সেই ছবির গল্পের জন্য আমজাদ হোসেনকেও স্বীকৃতি দেয়া উচিত।
মুশফিকুর রহমান গুলজার, পরিচালক ও চলচ্চিত্র পরিচালক সমিতির সভাপতি
আমজাদ হোসেন শুধু মেধাবি পরিচালকই শুধু নন, তিনি একজন চিত্রনাট্যকার, অভিনেতা, গীতিকার ও সাহিত্যিক। বহুমুখী গুণের অধিকারী তিনি। আমার পক্ষ থেকে আমাদের সমিতির পক্ষ থেকে তার প্রতি শ্রদ্ধা জানাচ্ছি। আমাদের চলচ্চিত্রের এখন যে অবস্থা, এমন সময়ে তার চলে যাওয়া আমাদের জন্য অপূরণীয় ক্ষতি। তিনি না থাকার অভাববোধ আমাদের করতে হবে দীর্ঘকাল। তার কাজ থেকে শিক্ষা নিয়ে আমাদের কাজ করতে হবে।
আমজাদ হোসেন একটি সিনেমার পরিকল্পনা করেছিলেন, প্রি-প্রোডাকশনের অনেক কাজ করেও ফেলেছিলেন, কিন্তু শুটিং শুরু করেননি। সেই কাজের কি হবে সেই সিদ্ধান্ত নেবে তার পরিবারের লোকজন।
তার স্মৃতির প্রতি শ্রদ্ধা জানিয়ে এফডিসিতে একটি ফ্লোর করা পরিকল্পনা আছে আমাদের। আমরা সেই প্রস্তাব দেব।
সোহানুর রহমান সোহান, চলচ্চিত্র পরিচালক
আমজাদ ভাইকে হারিয়ে মনে হচ্ছে আমরা নিজেরাই হারিয়ে গেছি। চলচ্চিত্র এখন বিপন্ন হওয়ার পথে। আমজাদ ভাই এমন সময়ে চলে গেলেন। মনে হচ্ছে আমরাও বিপন্ন হয়ে গেলাম।
তারানা হালিম, তথ্য প্রতিমন্ত্রী
একজন পুরুষ নির্মাতা হয়েও আমজাদ হোসেন তার ছবিতে তুলে ধরেছেন নারী জীবনের দুঃখ, কষ্ট, বঞ্চনা-যন্ত্রণা। গোলাপিএখন ট্রেনে, জন্ম থেকে জ্বলছি, সুন্দরী সিনেমায় তিনি দেখিয়েছেন কি করে একজন পুরুষ নির্মাতা হয়েও নারীর জীবনের গল্প তুলে ধরতে হয়। নবীন পরিচালক যারা আছেন তারা নিশ্চই তার কাজ থেকে শিক্ষা নেবেন।
আমি তথ্য মন্ত্রণালয়ের পক্ষ থেকে আমজাদ হোসেনের পরিবারের প্রতি সমবেদনা জানাচ্ছি।
সারাবাংলা/এএসজি/পিএ/পিএম