বিজ্ঞাপন

৪ আসনের ৩৭ প্রার্থীকে ভোট দেবেন ঢাবি আবাসিক শিক্ষার্থীরা

December 26, 2018 | 3:22 pm

।। তুহিন সাইফুল, স্টাফ করেসপন্ডেন্ট ।।

বিজ্ঞাপন

ঢাকা: একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের আর মাত্র তিন দিন বাকি। প্রার্থীরা শেষ মুহূর্তের প্রচারণায় ব্যস্ত, শেষবারের মতো মিলিয়ে নিচ্ছেন আইনপ্রণেতা বনে যাওয়ার স্বপ্নের ছক। ভোটারদের মধ্যেও ছড়িয়ে পড়েছে উৎসবের আমেজ। ভোট উৎসবের এই বিশাল আয়োজনে চুপ করে বসে নেই প্রাচ্যের অক্সফোর্ড খ্যাত ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ও। চারটি নির্বাচনি আসনে ভাগ হয়ে যাওয়া এই শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে প্রতিদিনই প্রচারণা চালাচ্ছেন বিভিন্ন প্রতীকের প্রার্থীরা।

ঢাকা-৭, ঢাকা-৮, ঢাকা-১০ ও ঢাকা-১২ আসনের এক বা একাধিক ওয়ার্ড পড়েছে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় এলাকায়। সব মিলিয়ে এই আসনে প্রার্থীর সংখ্যা ৩৭। তাদেরই ভোট দেওয়ার জন্য প্রস্তুত ঢাবির আবাসিক শিক্ষক-শিক্ষার্থী, কর্মকর্তা-কর্মচারীরা।

এই এলাকাটিতে সবচেয়ে বেশি প্রচারণা চালাচ্ছেন ঢাকা-৮ আসনে আওয়ামী লীগের নেতৃত্বাধীন মহাজোটের প্রার্থী রাশেদ খান মেমন। নিয়মিতই তিনি আসছেন ছাত্র-শিক্ষক কেন্দ্রে (টিএসসি), বক্তৃতা দেওয়ার পাশাপাশি ভোটারদের সঙ্গে মতবিনিময়ও করছেন ওয়ার্কাস পার্টির এই দলনেতা। মেননের পক্ষে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রলীগও ব্যাপক প্রচারণা চালাচ্ছে।

বিজ্ঞাপন

ঢাকা-৮ নির্বাচনি এলাকার ২০ ও ২১ নম্বর ওয়ার্ড দু’টি রয়েছে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে। এই আসনে সর্বশেষ দুই জাতীয় নির্বাচনে বিজয়ী হয়েছেন মহাজোটের রাশেদ খান মেনন। অন্যদিকে, ১৯৯১ ও ২০০১ সালের জাতীয় নির্বাচনে এই এলাকা থেকে নির্বাচিত হয়েছিলেন বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল বিএনপির মির্জা আব্বাস। তখন অবশ্য আসনটি ছিল ঢাকা-৬। মির্জা আব্বাস এই আসনে এবারও হেভিওয়েট প্রার্থী হিসেবে অংশ নিচ্ছেন। তবে এখন পর্যন্ত  ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় এলাকায় তার কোনো প্রচারণা দেখা যায়নি। এলাকায় নেই তার কোনো পোস্টারও। এর বাইরে মহাজোটের শরিক দল জাতীয় পার্টির প্রার্থীও রয়েছে আসনটিতে। লাঙ্গল প্রতীকে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন মো. ইউনুস আলী আকন্দ। তার মতো এই আসনের আরও ১১ জন প্রার্থীরও প্রচারণা তেমন একটা চোখে পড়ছে না।

বিশ্ববিদ্যালয়ের ঠিক পাশ ঘেঁষে পলাশী, আজিমপুর, ঢাবি অধিভুক্ত ইডেন কলেজ ও গার্হস্থ্য অর্থনীতি কলেজ রয়েছে ঢাকা-৭ আসনে। আসনটি থেকে সংসদে যেতে এবার প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন আওয়ামী লীগের প্রার্থী হাজী সেলিম, অন্যদিকে ঐক্যফ্রন্টের প্রার্থী গণফোরামের মোস্তফা মোহসীন মন্টু। নৌকা প্রতীকে হাজী সেলিম গোটা এলাকা চষে বেড়ালেও এখন পর্যন্ত ধানের শীষে মোস্তফা মোহসীন মন্টুকে কোনো প্রচারণায় দেখা যায়নি। ঢাকা বিশ্ববিদ্যলয়ের প্রচুর কর্মকর্তা ও কর্মচারী এই আসনটির ভোটার। এছাড়াও তৃতীয় ও চতুর্থ শ্রেণির কর্মচারী কলোনিটিও রয়েছে ঢাকা-৭ আসনে।

ঢাকা-৭ আসন থেকে হাজী সেলিম দুই বার (১৯৯৬ ও ২০১৪) সংসদ সদস্য নির্বাচিত হলেও মোস্তফা মোহসীন জিতেননি একবারও। ১৯৯১ সালে তিনি হেরেছেন নৌকা প্রতীক নিয়ে। এরপর এবারই প্রথম নির্বাচন করার টিকিট পেয়েছেন গণফোরামের এই শীর্ষ নেতা। এই আসনেও রয়েছেন বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের আরও ৯ প্রার্থী। তাদের প্রচার-প্রচারণাতেও নেই তেমন কোনো গতি।

বিজ্ঞাপন

ঢাকা-১০ আসনের ১৮ নম্বর ওয়ার্ডটিতে রয়েছে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের বঙ্গমাতা ফজিলাতুন্নেসা হল, সমাজকল্যান ইনস্টিটিউট, কুয়েত মৈত্রী হল, শাহনেওয়াজ ছাত্র হোস্টেল ও ঢাবি অধিভুক্ত ঢাকা কলেজ।

এলাকাটিতে নৌকা প্রতীকে নির্বাচন করছেন বঙ্গবন্ধুর দৌহিত্র শেখ ফজলে নূর তাপস। তার সঙ্গে ধানের শীষ প্রতীক নিয়ে লড়ছেন বিএনপি নেতা আব্দুল মান্নান। স্বৈরাচারের পতনের পর দু’জনেই দু’বার করে আইনপ্রণেতা নির্বাচিত হয়েছেন। ২০০৮ সালে এই এলাকা থেকে (তখন ছিল ঢাকা-১২) তাপস নির্বাচিত হলেও আব্দুল মান্নান দু’বারই জিতেছেন ঢাকা-১০ আসন থেকে। একই আসনে ১৯৯৬ সালে নৌকার প্রার্থী এইচ বি এম ইকবালের কাছে হেরেছিলেন মান্নান।

ঢাকা-১০ আসনে দারুণ প্রচারণা চালাচ্ছেন তাপস। তাকে নিয়ে বাঁধা বিভিন্ন গান প্রচার শুরু হওয়ার প্রথম দিন থেকেই বাজছে আসনটিতে। কর্মীরা বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ পয়েন্টে বুথ বসিয়ে ভোটারদের দৃষ্টি আকর্ষণ করছেন। তাপস নিজেও সশরীরে যাচ্ছেন ভোটারদের দুয়ারে দুয়ারে। অল্প হলেও বিএনপি প্রার্থী আব্দুল মান্নানের কর্মীরাও ভালো প্রচারণা চালাচ্ছেন। তবে বিশ্ববিদ্যালয় এলাকায় এখনও তার পোস্টার চোখে পড়েনি কারও।

এই আসনেও রয়েছে লাঙ্গল প্রতীকে জাতীয় পার্টির প্রার্থী। দলের পক্ষ থেকে লড়ছেন মো. হেলাল উদ্দিন। রয়েছেন আরও তিন প্রার্থী। প্রচার-প্রচারণা বা পোস্টারে অবশ্য তাদের উপস্থিতি ঠাহর করা কঠিন।

বিজ্ঞাপন

এদিকে, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে আইবিএ হোস্টেল পড়েছে ঢাকা-১২ আসনে। এই আসনে নৌকা প্রতীক নিয়ে লড়ছেন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খাঁন কামাল। ঢাকা-১১ আসনে ২০০৮ সালে প্রথমবার নির্বাচন করেন তিনি। এক লাখ ৩০ হাজার ৪২৪ ভোট পেয়ে বিএনপির শাহাবউদ্দীনকে পরাজিত করে জাতীয় সংসদের টিকিট পান তিনি। এরপর ২০১৪ সালে ঢাকা-১২ থেকে বিনাপ্রতিদ্বন্দ্বিতায় বিজয়ী হন, রাষ্ট্রের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের দায়িত্বও পান।

আসনটি থেকে বিএনপি প্রতীকে প্রথমবারের মতো নির্বাচন করছেন যুবদল নেতা সাইফুল ইসলাম নীরব। প্রচারণাতেও তিনি নীরব। তবে আসাদুজ্জামান খাঁন কামালের কর্মীরা ঢাকার গুরুত্বপূর্ণ এই এলাকায় নির্বচনি প্রচারণায় বেশ সরব। বাংলাদেশ সরকারের প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়সহ তিন বাহিনীর গুরুত্বপূর্ণ স্থাপনাগুলো রয়েছে এই আসনে। ফলে দুই দলই এই আসনটি থেকে নিজেদের প্রার্থীকে জিতিয়ে আনতে চাইছে।

এই আসনে গণতান্ত্রিক বাম মোর্চার প্রার্থী গণসংহতি আন্দোলনের জোনায়েদ সাকীও রয়েছেন আলোচনায়। ধানের শীষের পোস্টার-প্রচারণা তেমন না থাকলেও কোদাল মার্কায় জোনায়েদ সাকীর বেশকিছু পোস্টার রয়েছে, নিয়মিত গণসংযোগও করছেন তিনি। আসনটিতে লাঙ্গলের প্রার্থী জাতীয় পার্টির মো. নাসির উদ্দিন সরকার অবশ্য তেমন সক্রিয় নন প্রচার-প্রচারণায়। তার মতো বাকি তিন প্রার্থীর মধ্যে হাতপাখা প্রতীকে ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশের মোহাম্মদ শওকত আলী হাওলাদার ছাড়া বাকিদেরও খুব একটা দেখা যাচ্ছে না নির্বাচনের মাঠে।

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় তথা জ্ঞানচর্চার সবচেয়ে অভিজাত এই তীর্থস্থানের আবাসিক ছাত্র, শিক্ষক, কর্মকর্তা ও কর্মচারীরা ভোট দেবেন মোট চারটি আসনে প্রতিদ্বন্দ্বী ৩৭ প্রার্থীকে। মজার বিষয়, ৩৭ প্রার্থীর সবাই কোনো না কোনো রাজনৈতিক দল থেকে প্রার্থিতা পেয়েছেন। অর্থাৎ, চারটি আসনের কোনোটিতেই নেই স্বতন্ত্র কোনো প্রার্থী। তবে প্রার্থী ৩৭ জন হলেও চারটি আসনেই মহাজোট আর ঐক্যফ্রন্টের প্রার্থীদের মধ্যেই হবে মূল প্রতিদ্বন্দ্বিতা। নির্বাচনি প্রচার-প্রচারণাতেও রয়েছে তার ছাপ। চারটি আসনের নৌকার ব্যাপক প্রচারণার পাশাপাশি আর ধানের শীষ প্রতীকের কিছু প্রচারণা রয়েছে। অন্য মধ্যে ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশের প্রার্থীদের হাতপাখার পোস্টার চোখে পড়লেও বাকিদের উপস্থিতি একেবারেই সামান্য।

নির্বাচন যত এগিয়ে আসছে, ততই অন্যান্য এলাকার মতো রঙিন হচ্ছে এই চার আসনের নির্বাচনি উৎসব। এখন অপেক্ষা ৩০ ডিসেম্বরের। গণতান্ত্রিক ব্যবস্থার সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ মতামতটি জানা যাবে সেদিনই! পরবর্তী পাঁচ বছরে বাংলাদেশের ভবিষ্যত কেমন হবে, সেটিও নির্ধারিত হবে সেদিনের ফল থেকেই।

সারাবাংলা/টিএস/টিআর

Tags: , , , , ,

বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন