December 29, 2018 | 7:30 pm
।। আন্তর্জাতিক ডেস্ক ।।
ঢাকা: একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের আগে জামায়াত প্রশ্নে দলের অবস্থান পরিষ্কার করেছেন বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর।
জিয়া অরফানেজ ট্রাস্ট দুর্নীতি মামলায় দলের চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার সাজা হওয়ার পর নতুন করে চাপে পড়ে বিএনপি। এর আগেই বিদেশে পারি জমিয়েছেন বিএনপি’র বর্তমান ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান।
একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে গণফোরাম সভাপতি ড. কামাল নেতৃত্বাধীন জোট জাতীয় ঐক্যফ্রন্টে যোগ দেয় বিএনপি। সম্প্রতি ব্যাংককে ভারতের ক্ষমতাসীন ভারতীয় জনতা পার্টির (বিজেপি) সঙ্গে বৈঠকে বসতে চেয়েছিল বিএনপি। তবে ভারতীয় নেতাদের পক্ষ থেকে সাড়া পাওয়া না যাওয়ায় শেষ পর্যন্ত ব্যর্থ হয় বিএনপি’র উদ্যোগ।
ভারতীয় গণমাধ্যম দ্য ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেসকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে মির্জা ফখরুল ইসলাম জানিয়েছেন, আমি বাংলাদেশের জনগণের প্রতিনিধিত্ব করি। আমরা একটি উদারপন্থী গণতান্ত্রিক রাজনৈতিক দল। আমরা অর্থনৈতিক উন্নয়ন, সামাজিক ও অর্থনৈতিক অগ্রগতি আনার লক্ষ্য নিয়ে এগুচ্ছি। তবে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ হচ্ছে, আমরা গণতন্ত্রে বিশ্বাস করি। ১৯৯১ সালে জেনারেল এইচ এম এরশাদের শাসনামলের অবসান ঘটার পর বাংলাদেশে গণতন্ত্রের নতুন সূচনা ঘটায় বিএনপি।
জামায়াত প্রসঙ্গে বিএনপির এই শীর্ষ নেতা বলেন, আমাকে যখন জামায়াত প্রসঙ্গে জিজ্ঞেস করা হয় আমি বলি- দেখুন বিএনপি আর জামায়াত এক নয়। বিএনপি ইসলামি আইনে বিশ্বাস করে না। মৌলবাদে বিশ্বাস করে না। জামায়াত নিয়ে আমাদের কোনো মোহ নেই।
চলতি বছর রাজনৈতিক দল হিসেবে জামায়াতের নিবন্ধন বাতিল করে নির্বাচন কমিশন। কিন্তু ঐক্যফ্রন্টের অংশ হিসেবে বিএনপির মনোনয়ন নিয়ে নির্বাচনে লড়ছে জামায়াতের ২২ নেতা।
ফখরুল বলেন, জামায়াতের সঙ্গে কৌশলগত কারণে জোট করা হয়েছে। তাদের সঙ্গে নিয়ে এমন ৫০ আসনে আমরা সুবিধা পাব, যেখানে প্রতিদ্বন্দ্বিতা ও লড়াই বেশি। আমাদের ছাড়া তারা মাত্র তিন আসনে লড়তে পারবে।
জামায়াত ভবিষ্যৎ সরকারের অংশ হবে কি না- জবাবে তিনি বলেন, কোনোভাবেই না।
ফখরুল বলেন, আমরা দেশের বাইরে ভারতীয় নেতাদের সঙ্গে দেখা করার চেষ্টা করেছি। ভারতীয় হাই কমিশনারের সঙ্গে তিনবার দেখা করেছি। কিন্তু ভারতীয় কূটনীতিকরা বিএনপির নেতাদের সঙ্গে দেখা করতে আগ্রহ দেখায়নি। কারণ তারা ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের সঙ্গে সম্পর্ক খারাপ করতে চায় না।
তিনি বলেন, আমরা ভারতের সঙ্গে বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্কে গড়তে চাই। আমাদের সম্পর্কে তাদের যে ধারণা- তাতে পরিবর্তন আনতে চাই। আমরা সাম্প্রদায়িকতা ও মৌলবাদীতায় বিশ্বাস করি না। বিএনপি ভারতবিরোধী, এটা ভুল। এটা আওয়ামী লীগের অপপ্রচারের অংশ। আমরা ভারতের সঙ্গে সম্পর্ক গড়ার চেষ্টা করছি। আমাদের চেয়ারপারসন ২০১২ সালে দিল্লি সফর করেন। ২০১৪ সালে বিজেপি ক্ষমতায় আসার পর আমরা ভাবলাম হয়তো কিছু পরিবর্তন আসবে। নরেন্দ্র মোদির সঙ্গে বেগম জিয়ার বেশ ভালো বৈঠক হয়েছিল, কিন্তু এরপর আর কিছু হয়নি।
তিনি আরও বলেন, আমরা হতাশ হয়েছিলাম। আমরা বিজেপির সাধারণ সম্পাদক রাম মাধবের সঙ্গে ব্যাংককে চলতি বছর একটি বৈঠক করতে চেয়েছিলাম। কিন্তু তাদের পক্ষে থেকে সাড়া মেলেনি।
বিজেপি একটি ডানপন্থী দল। সেখানে আরএসএস’ও রয়েছে। কিন্তু আমাদের তাদের সঙ্গে যোগাযোগ করতে কোনো সমস্যা নেই। আমি জানি না ভারত কেন আওয়ামী লীগ সরকারের অপকর্মগুলো এড়িয়ে যায়। তারা নির্যাতন করেছে, গুম করেছে। আম জনতা ভারতকে দুষছে। তাদের মধ্যে এমন ধারণা প্রচলিত যে, ভারত আওয়ামী লীগকে সাহায্য করছে। তারা আওয়ামী লীগকে পছন্দ করে না। কিন্তু কেবল ভারতের কারণে, তারা এখনও টিকে আছে। ভারতই তাদের শক্তিশালী করে তুলেছে।
ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেসকে দেওয়া সাক্ষাৎকারে নির্বাচনি প্রচারণা নিয়ে ফখরুল বলেন, কোনো প্রচারণা নেই, এটা আতঙ্কের রাজকতা চলছে, তাও আবার রাষ্ট্র পরিচালিত আতঙ্ক।
ফখরুল তার বক্তব্যে ক্ষমতাসীন দলের পুলিশ বাহিনীর ব্যবহার নিয়ে অভিযোগ করেন। বলেন, ভয়াবহ অবস্থা। আমি কখনও ভাবিনি এমন পরিস্থিতি সৃষ্টি হতে পারে।
জিয়া পরিবার ছাড়া বিএনপিকে কল্পনা করা অসম্ভব। আমাদের মূল এজেন্ডা হচ্ছে, ভোট দেওয়ার অধিকার ও স্বাধীনভাবে বাঁচার অধিকার নিশ্চিত করা। যাতে বিনা অপরাধে পুলিশ কাউকে উঠিয়ে নিতে না পারে। খালেদা জিয়া একজন সত্যিকারের সহজাত দক্ষতা সম্পন্ন নেত্রী। নির্বাচনে জয়ী হলে প্রথম অগ্রাধিকার হবে বেগম জিয়াকে কারাগার থেকে বের করা, বলেন ফখরুল।
প্রধানমন্ত্রী হতে চান কি না জানতে চাইলে তিনি বলেন, প্রধানমন্ত্রী হওয়ার কোনো উচ্চাকাঙ্ক্ষা আমার নেই। দলের নেতারা আমায় যা করতে বলবেন, আমি তাই করব।
সারাবাংলা/আরএ/এটি