বিজ্ঞাপন

বাণিজ্যমেলায় নকল মূল্য তালিকায় চলছে প্রতারণা!

January 18, 2019 | 7:24 pm

।। সাদ্দাম হোসাইন, স্টাফ করেসপন্ডেন্ট ।।

বিজ্ঞাপন

ঢাকা: ঢাকা আন্তর্জাতিক বাণিজ্যমেলায় (ডিআইটিএফ) নকল মূল্য তালিকার মাধ্যমে গ্রাহকদের সঙ্গে প্রতারণা করছে খাবারের হোটেলগুলো। মেলা কর্তৃপক্ষের নির্ধারিত মূল্য তালিকা নকল করে অভিনব কৌশলে এ প্রতারণা চলছে।

শুক্রবার (১৮ জানুয়ারি) সকাল সাড়ে দশটা থেকে দুপুর সোয়া ১টা পর্যন্ত এমন প্রতারণা করতে দেখা গেছে মেলায় অংশ নেওয়া প্রায় ৭টি খাবার হোটেলের কর্মচারী ও মালিকদের। অভিযোগ রয়েছে, নকল মূল্য তালিকার মাধ্যমে এমন প্রতারণা মেলা শুরুর পর থেকেই চললেও কোনো ব্যবস্থা নিচ্ছে না মেলা কর্তৃপক্ষ।

মেলায় হোটেল ও ফুড স্টলগুলোর জন্য বাংলাদেশ রপ্তানি ব্যুরোর (ইপিবি) সচিব ও উপ-সচিব স্বাক্ষরিত একটি নির্ধারিত মূল্য তালিকা দেওয়া হয়েছে। যে তালিকা মেলায় অংশ নেওয়া সকল হোটেল ও ফুড স্টলের জন্য সমানভাবে কার্যকর। কিন্তু মেলা কর্তৃপক্ষ কর্তৃক সরবরাহকৃত মূল্য তালিকাকে নকল করে সেটি ব্যবহার করছে হোটেল পরিচালক ও কর্মচারীরা।

বিজ্ঞাপন

মেলা কর্তৃপক্ষের মূল্য তালিকায় দেখা গেছে, প্রতিটি খাদ্যের জন্য হাফ এবং ফুল ক্যাটাগরিতে মূল্য নির্ধারণ করা হয়েছে। চিকেন বিরিয়ানির মূল্য নির্ধারণ করা হয়েছে হাফ ১৭০ টাকা এবং ফুল ৩২০ টাকা, মাটন কাচ্চি হাফ ২০০ এবং ফুল ৩৬০, বিফ তেহারী হাফ ১০০ এবং ফুল ১৫০, চিকেন ফ্রাইড রাইস হাফ ১৬০ এবং ফুল ২২০, বিফ ভুনা পাফ ১১০ এবং ফুল ১৯০।

এ সব মূল্য তালিকা মেলায় অংশ নেওয়া সকল হোটেল এবং ফুড স্টলগুলোকে মানতে বলা হয়েছে। না মানলে জরিমানাসহ প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণের কথাও উল্লেখ রয়েছে মূল্য তালিকায়। কিন্তু এমন তালিকাকে নকল করে দিব্যি হোটেল চালাচ্ছে মালিকরা।

বিজ্ঞাপন

নকল মূল্য তালিকায় দেখা যায়, মেলা কর্তৃপক্ষের সরবরাহকৃত প্রতিটি খাদ্যের হাফ এবং ফুল দুই ক্যাটাগরি থাকলেও নকল তালিকায় হাফ এবং ফুল কোনো ক্যাটাগরি না রেখে শুধুমাত্র পণ্যের নাম লিখে তার পাশে প্রতিটি খাদ্যের নির্দিষ্ট মূল্য লেখা হয়েছে।

যেসব মূল্য লেখা হয়েছে সেগুলো মেলা কর্তৃপক্ষের সরবরাহকৃত প্রকৃত মূল্য তালিকা। কিন্তু এ ক্ষেত্রে নকল তালিকায় সুকৌশলে হাফ এবং ফুল কোনো ক্যাটাগরি রাখা হয়নি। এতে গ্রাহকরা যখন হাফ মূল্যের খাদ্যের অর্ডার দিতে চাই তখন হোটেল পরিচালকরা ‘হাফ খেলে যে দাম, ফুল খেলেও সে দাম’ বলে গ্রাহকদেরকে বিভ্রান্ত করে। এতে গ্রাহকরা বন্ধু বান্ধব এবং পরিবার-পরিজন নিয়ে মেলায় এসে খাবার খেতে হোটেলে গিয়ে চরম বিভ্রান্তিকর পরিস্থির শিকার। এতে কেউ কেউ প্রতারণা হচ্ছে জেনেও কোনো প্রতিবাদ করতে পারেন না বন্ধুবান্ধবদের কাছে সম্মান চলে যাওয়ার ভয়ে।

সরেজমিনে দেখা যায়, মেলায় গৃহিণী বিরিয়ানি এন্ড কাবাব-২ ছাড়া বাকি অরিজিনাল হাজী বিরিয়ানি, ঐতিহ্যবাহী নান্না বিরিয়ানি এন্ড কাবাব হাউজ, হাজীর বিরিয়ানি ও কাবাব হাউজসহ সবকটি হোটেলে নকল মূল্য তালিকা সরবরাহ করছে ক্রেতাদেরকে। গৃহিণী বিরিয়ানি এন্ড কাবাব -২ হোটেলের প্রতিটি টেবিলে দেখা যায়, মেলা কর্তৃপক্ষের সরবরাহকৃত প্রকৃত মূল্য তালিকা রাখা হয়েছে। এতে ক্রেতারা তাদের পছন্দমত হাফ এবং ফুল মূল্যের খাদ্যের অর্ডার দিয়ে তা খাচ্ছেন। কিন্তু বাকি হোটেল গুলোর টেবিলে খাদ্যের কোনো মূল্য তালিকা রাখতে দেখা যায়নি।

আরও পড়ুন: ছুটির দিনে বাণিজ্যমেলায় কেনাবেচার ধুম

বিজ্ঞাপন

ফলে ক্রেতারা কোনো খাদ্যের অর্ডার দিতে চাইলে তাদেরকে মুখে খাবারের বিবরণ দেয় হোটেল কর্মচারীরা। এসময় কোনো কোনো ক্রেতা খাবারের মূল্য তালিকা দেখতে চাইলে তখন মালিকের টেবিল থেকে একটি মূল্য তালিকা এনে সেটি ক্রেতাকে দেখায়। কিন্তু ঐ তালিকায় খাদ্যের হাফ অথবা ফুল কোনো পরিমাণের মূল্য রাখা হয়েছে সেটি না থাকায় ক্রেতারা ঝগড়াও করতে দেখা গেছে কর্মচারীদের সঙ্গে।

সুমন নামের এক তরুণ বান্ধবী নিয়ে শুক্রবার ছুটির দিনে মেলায় ঘুরতে এসে ‘অরিজিনাল হাজীর বিরিয়ানি’  হোটেলে খেতে গেলেন। কিন্তু সেখানে খাবার অর্ডার নিয়ে কর্মচারীর সঙ্গে তাকে ঝগড়া করতে দেখা যায়। এসময় তিনি সারাবাংলাকে বলেন, এর আগের দুটি হোটেলেও একই অবস্থা কোনো হাফ মূল্যের খাবার নেই। সবাই বলছে হাফ খেলে যে দাম ফুল খেলেও সেই দাম। কিন্তু বাহিরে বড় ব্যানারে লেখা আছে হাফ এবং ফুল খাবারের মূল্য তালিকা।

এ বিষয়ে ওই হোটেলের পরিচালনাকারী মালিক মনির সর্দারের কাছে জানতে চাইলে তিনিও এ প্রতিবেদককে নানান যুক্তি দেখিয়ে ওই মূল্য তালিকা আসল বলে প্রমাণ করার চেষ্টা করেন। পরে যখন মেলা কর্তৃপক্ষের মূল্য তালিকা তাকে দেখানো হল তখন তিনি বলেন, এটা প্রিন্ট করার সময় মুছে গেছে। আবার নতুন করে করতে হবে।

এ বিষয়ে মেলার ভোক্তা অধিকার অধিদপ্তরের সহকারী পরিচালক মাসুম আরেফিনের সঙ্গে যোগাযোগ করলে তিনি সারাবাংলাকে বলেন, ‘গ্রাহকের সঙ্গে প্রতারণার অভিযোগ পেলে আমরা ব্যবস্থা নিই। গতকালও ৫০ হাজার টাকা জরিমানা করেছি। হোটেলের মূল্য তালিকার নকলের বিষয়ে এখনও আমরা কোনো অভিযোগ পাইনি। তবে অভিযোগ পেলে অবশ্যই ব্যবস্থা নেব। কিন্তু কেউ অভিযোগ না দিলে কি নিজেদের উদ্যোগে ব্যবস্থা নেয়া যায় কিনা এমন প্রশ্নে তিনি বলেন, অভিযোগ ছাড়া তাদেরকে দোষী প্রমাণ করতে সমস্যা হয়ে যায়। তাই অভিযোগ পেলেই বেশি ভালো।’

বাণিজ্যমেলার সদস্য সচিব আবদুর রউফ সারাবাংলাকে বলেন, ‘খাবারের আসল মূল্য তালিকা আমরা সরবরাহ করেছি। মেলা প্রাঙ্গণে স্থাপিত অস্থায়ীয় সচিবালয় কেন্দ্রেও মূল্য তালিকা রয়েছে। খাবারের দোকানগুলো যদি ক্রেতাদের নকল মূল্য তালিকা সরবরাহ করে থাকে তাহলে তাদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’

একই বিষয়ে জানতে চাইলে বাণিজ্য মেলার পরিচালক আবু হেনা মোরশেদ জামান সারাবাংলাকে বলেন, ‘আমি এ বিষয়ে অবহিত নই। আপনার কাছ থেকেই প্রথম জানলাম। আমাদের দেওয়া তালিকা টানানো নেই এমন দোকানগুলোকে প্রথমে সতর্ক করা হচ্ছে। আমাদের অভিযানের সময় ক্রেতাদের সাথেও কথা বলছি৷ সতর্ক করার পরও যদি কেউ না শুধরায় তাহলে তাদের জামানতের টাকা কেটে নেব। এরপরেও একই কাজ চলতে থাকলে সেসব স্টল বা প্যাভিলিয়ন বন্ধ করে দেব।’

এ প্রসঙ্গে জানতে চাইলে বাণিজ্য সচিব মফিজুল ইসলাম সারাবাংলাকে বলেন, ‘দোকানগুলোতে আমরা এখনই লোক পাঠাচ্ছি। দেখে যদি এমন প্রমাণ পাওয়া যায় অবশ্যই আমরা ব্যবস্থা নেব।’

সারাবাংলা/এসএইচ/ইএইচটি/এনএইচ

Tags: , ,

বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন