বিজ্ঞাপন

নির্বাহী, আইন ও বিচার বিভাগ প্রতিদ্বন্দ্বী নয়, সহযোগী

December 2, 2017 | 9:29 am

সারাবাংলা প্রতিবেদক

বিজ্ঞাপন

রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদ বলেছেন, ‘মানুষের শেষ ভরসারস্থল হচ্ছে আদালত। আদালতের বিচারকরা পক্ষপাতহীন বিচার কাজ পরিচালনা করবেন-এটাই সবার কাছে প্রত্যাশিত।’ শনিবার রাজধানীর বঙ্গবন্ধু আন্তর্জাতিক সম্মেলন কেন্দ্রে দিনব্যাপী জাতীয় বিচার বিভাগীয় সম্মেলনের উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে তিনি এসব কথা বলেন।

রাষ্ট্রপতি বলেন, গণতান্ত্রিক সরকার ব্যবস্থায় রাষ্ট্রের ক্ষমতা ও দায়িত্ব তিনটি পৃথক অঙ্গ তথা নির্বাহী, আইন ও বিচার বিভাগের উপর ন্যস্ত থাকে। গণতন্ত্রে পূর্ণতা আনার জন্য তিনটি অঙ্গের পৃথক অস্তিত্ব অপরিহার্য। আর এ ধারণাই অষ্টাদশ শতাব্দীতে রাজনৈতিক দর্শন ও সংবিধান প্রণয়ণকে দারুনভাব প্রভাবিত করেছিল।

ন্যায়বিচার প্রাপ্তিকে মানুষের মৌলিক অধিকার উল্লেখ করে তিনি বলেন, ‘আমাদের দেশের সাধারণ মানুষ দরিদ্র, অশিক্ষা ও নানা জটিলতার কারণে অনেক সময় মৌলিক অধিকার থেকে বঞ্চিত হয়। সরকার দেশে আইনের শাসনের পাশাপাশি সুশাসন প্রতিষ্ঠার মাধ্যমে জনগণের প্রত্যাশা পূরণে বদ্ধপরিকর।’

বিজ্ঞাপন

বাংলাদেশের বিচার ব্যবস্থা গৌরবময় ঐতিহ্যের অধিকারি উল্লেখ করে রাষ্ট্রপতি আবদুল হামিদ বলেন, ‘সময়ের সঙ্গে তাল মিলিয়ে যুগোপযোগি সংস্কার না হওয়ায় বিচার ব্যবস্থায় এখনও অনেক সমস্যা বিদ্যমান রয়েছে।’

তিনি বলেন, ‘সনাতন পদ্ধতির আদালত ব্যবস্থাপনার পাশাপাশি আদালতের ভৌত অবকাঠামোর অপার্যাপ্ততা, পুরাতন স্থাপনার কারণে সুষ্ঠুভাবে বিচার কাজ পরিচালনা করা অনেক সময় কষ্টকর হয়ে পড়ে। অনেক জেলায় দুই বা তিনজন বিচারক একটি কক্ষ ভাগাভাগি করে বিচার কাজ পরিচালনা করছেন। ফলে বিচারকরা প্রত্যাশিত সংখ্যক বিচার কাজ সম্পন্ন করতে পারেন না।’

এ সংকট দূর করতে সরকার ইতোমধ্যে বিচারালয়ের অবকাঠামো নির্মাণে বিভিন্ন প্রকল্প গ্রহণ করেছে। এ সব প্রকল্প বাস্তবায়িত হলে বিচারালয়ের সংকট অচিরেই দূরিভূত হবে বলেও মনের করেন রাষ্ট্রপতি।

বিজ্ঞাপন

রাষ্ট্রপতি বলেন, ‘উন্নয়নের জন্য গণতন্ত্র ও সুশাসনের বিকল্প নেই। আর গণতন্ত্র ও সুশাসন প্রতিষ্ঠার জন্য নির্বাহী, আইন ও বিচার বিভাগের মধ্যে সম্পর্ক ও সমন্বয় খুবই জরুরি। তবে মনে রাখতে হবে কেউ কারো প্রতিদ্বন্দ্বী নয়, বরং সহযোগী। প্রতিটি বিভাগের সফলতার জন্য পারস্পারিক সহযোগিতা ও আস্থা একান্ত অপরিহার্য। এক্ষেত্রে দায়িত্ব পালনকালে মনে রাখতে হবে এক বিভাগের কর্মকা-ে যাতে অন্য বিভাগের কর্মকা- কোনভাবেই বাধা গ্রস্থ না হয় বা জাতীয় স্বার্থ বিঘিœত না হয়। সব বিভাগের কর্মকা-ে দেশ ও জনগণের কল্যাণকে অগ্রাধিকার দিতে হবে।’

তিনি বলেন, ‘আমাদের বিচার ব্যবস্থার প্রধান সমস্যা বিচারে বিলম্ব এবং মামলার জট। এ বিলম্বের কারণ বহুবিধ। বিচারে কাঙ্খিত গতি আনয়নের জন্য পর্যাপ্ত বিচার কক্ষ, বিচারকের শূন্য পদে নিয়োগ এবং বিচারক ও মামলার সংখ্যায় যুক্তিসংঙ্গত ভারসাম্য রক্ষা করা আবশ্যক।’

বিশেষ অতিথির বক্তব্যে আইনমন্ত্রী অ্যাডভোকেট আনিসুল হক বলেন, বর্তমান সরকার বিচার বিভাগের স্বাধীনতার উপর সর্বোচ্চ গুরুত্ব দিয়েছে।

তিনি বলেন, ‘যিনি বিজ্ঞ বিচারকদের নিয়োগবিধি প্রণয়ন করেন, বিচারকদের নিয়োগ দেন, তিনিই তাদের শৃঙ্খলাবিধি প্রণয়ন করবেন এটাই স্বাভাবিক। এই স্বাভাবিকতা ধারণ করেই আইন ও বিচার বিভাগ রাষ্ট্রপতির নির্দেশনা ও সিদ্ধান্তক্রমে অধনস্তন আদালতের বিচারকদের চাকরির আচরণ ও শৃঙ্খলাবিধির খসড়া প্রণয়ন করে। পরে তা সুপ্রিমকোর্টে পাঠানো হয়।’

বিজ্ঞাপন

দায়িত্বপ্রাপ্ত প্রধান বিচারপতি আবদুল ওয়াহহাব মিঞার সভাপতিত্বে সম্মেলনে আরও উপস্থিত ছিলেন, সুপ্রিমকোর্টের উভয় বিভাগের (আপিল ও হাইকোর্ট) বিচারপতি, আইন সচিব আবু সালেহ শেখ মো. জহিরুল হক।

এ ছাড়া সব জেলা ও দায়রা জজ, মহানগর দায়রা জজ, নির্বাচন কমিশনের যুগ্ম সচিব (আইন), দুর্নীতি দমন কমিশনের মহাপরিচালক (লিগ্যাল অ্যাইড প্রসিকিউশন), সংসদ সচিবালয়ের যুগ্ম সচিবসহ (আইন প্রণয়ন) বিচার বিভাগীয় কর্মকর্তারা অংশ নেন।

এবারের সম্মেলনের প্রতিপাদ্য বিয়ষ হলো ‘জাস্টিস ফর অল’ বা সবার জন্য ন্যায়বিচার।
সম্মেলনে বিচার বিভাগের সেবার মান উন্নয়ন, বিচার বিভাগের ডিজিটালাইজেশন, মামলার জট নিরসনে করণীয়সহ বিচার বিভাগের নানা সমস্যা ও সাফল্য নিয়েও আলোচনা-পর্যালোচনা করা হয়। এবার তৃতীয়বারের মতো বিচার বিভাগীয় সম্মেলনে অনুষ্ঠিত হয়।

সারাবাংলা/১৫২৬ ঘণ্টা, ডিসেম্বর ০২, ২০১৭

বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন