January 23, 2019 | 1:44 pm
এন্টারটেইনমেন্ট করেসপন্ডেন্ট ।।
বাংলা গানের ইতিহাসে আহমেদ ইমতিয়াজ বুলবুল এক কিংবদন্তীর নাম। বাংলা চলচ্চিত্রের গানেও তিনি অনন্য। তার কথায় এবং সংগীতায়োজনে অসংখ্য শ্রোতাপ্রিয় গানের সৃষ্টি হয়েছে। তার সুরে এ দেশের মানুষ অসংখ্যবার হেসেছে, কেঁদেছে আবার আবেগে চোরাস্রোতে উদ্বেলিতও হয়েছে।
যে মানুষটি বাংলা চলচ্চিত্রের গানকে এতোটা ঋদ্ধ করেছেন, তাকে শেষ শ্রদ্ধা জানাতে শহীদ মিনারে আসেননি বাংলা চলচ্চিত্রের কেউ। বুধবার সকালে আহমেদ ইমতিয়াজ বুলবুলকে শ্রদ্ধা নিবেদন করে বাঙালি জাতি। রাষ্ট্রের পক্ষ থেকে দেওয়া হয় গার্ড অফ অনার। শ্রদ্ধা জানান রাষ্ট্রপতি, প্রধানমন্ত্রী, জীবিত মুক্তিযোদ্ধা, শিক্ষক, ছাত্রসহ এদেশের সকল শ্রেণীপেশার মানুষ। এদের ভীড়ে ছিলেন না কেবল চলচ্চিত্রাঙ্গনের মানুষ।
চলচ্চিত্র পরিচালক সমিতির সভাপতি মুশফিকুর রহমান গুলজারের কাছে শহীদ মিনারে না যাওয়ার কারণ জানতে চাওয়া হলে সারাবাংলাকে তিনি জানান, আহমেদ ইমতিয়াজ বুলবুলের লাশ এফডিসিতে আনা হবে। এখানেই হবে তার দ্বিতীয় নামাজের জানাজা। আর একারণেই তারা শহীদ মিনারে ভীড় বাড়াতে চাননি।
‘শহীদ মিনারে যাওয়াটা উচিত ছিলো কিনা?’ এমন প্রশ্নের জবাবে গুলজার বলেন, ‘যাওয়াটা উচিত ছিলো অবশ্যই। আমরা শহীদ মিনারে গেলে ব্যাপারটা দেখতেও শোভন হতো। আসলে সেভাবে ভাবা হয়নি। আমরা সবাইকে এসএমস করে এফডিসিতে আসতে বলেছি। তাই এখানেই সিনেমার মানুষজন আসবেন। তবে আমাদের একটা দলের শহীদ মিনারেও যাওয়ার প্রয়োজন ছিলো।’
চলচ্চিত্র শিল্পী সমিতির সাধারণ সম্পাদক জায়েদ খান বলেছেন, ‘আমরা এমনিতেও শহীদ মিনারে যাই না। ওখানে সম্মিলিত সাংস্কৃতিক জোট আয়োজন করে, আমরা এফডিসিতে শোকসভার আয়োজন করি। আমরা এখানেই সারাজীবন শ্রদ্ধা নিবেদন করে এসেছি।’
জায়েদ খান আরও বলেন, ‘এফডিসিতে আমরা ফুল নিয়ে তৈরী হয়ে আছি। ওনার মরদেহ এলে আমরা এখানে জানাজা পড়বো। শহীদ মিনারে তো লোকজনের ভীড় থাকে, ধাক্কাধাক্কি থাকে। ওখানে কিছু বাজে অভিজ্ঞতা আছে আমাদের। এজন্য এফডিসিতেই আমরা স্বস্তিবোধ করি।’
চলচ্চিত্রের নেতৃত্বস্থানীয় কোন সংগঠনকে না দেখা গেলেও একসময়ের জনপ্রিয় চিত্রনায়ক শাকিল খান এসেছিলেন শহীদ মিনারে। তবে চলচ্চিত্রের মানুষ পরিচয়ে নয়, বঙ্গবন্ধু সাংস্কৃতিক জোটের প্রতিনিধি হয়ে বুলবুলকে শ্রদ্ধা জানিয়েছেন শাকিল। চলচ্চিত্রের লোকজন শহীদ মিনারে না আসায় শ্রদ্ধা নিবেদন শেষে সারাবাংলার কাছে বিস্ময়ও প্রকাশ করেছেন তিনি। এসময় নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক সাংস্কৃতিকর্মী প্রশ্ন করেন, ‘এফডিসিতে মরদেহ যাবে বলে শহীদ মিনারে আসা যাবে না?’
উল্লেখ্য, ‘আমার সারাদেহ খেয়ো গো মাটি’, ‘আমার বুকের মধ্যিখানে’, ‘আমি তোমারি প্রেমও ভিখারি’, ‘আমার গরুর গাড়িতে বৌ সাজিয়ে’, ‘বিদ্যালয় মোদের বিদ্যালয় এখানে সভ্যতারই ফুল ফোটানো হয়’, ‘অনেক সাধনার পরে আমি পেলাম তোমার মন’, ‘বাজারে যাচাই করে দেখিনি তো দাম, ‘আম্মাজান আম্মাজান’, ‘স্বামী আর স্ত্রী বানায় যে জন মিস্ত্রি’, ‘এই বুকে বইছে যমুনা’, ‘তুমি মোর জীবনের ভাবনা’সহ অসংখ্য শ্রোতাপ্রিয় চলচ্চিত্রের গানের সুরকার ও গীতিকার আহমেদ ইমতিয়াজ বুলবুল।
মঙ্গলবার ভোররাতে হৃদযন্ত্রের ক্রিয়া বন্ধ হয়ে মারা যান আধুনিক বাংলা গানের বুলবুল, বীর মুক্তিযোদ্ধা, সুরকার, গীতিকার ও সংগীত পরিচালক।
সারাবাংলা/টিএস/পিএম