বিজ্ঞাপন

তুমুল আপত্তির মুখে পাস হলো ব্যাংক-কোম্পানি সংশোধিত বিল!

January 16, 2018 | 7:58 pm

স্পেশাল করেসপন্ডেন্ট

বিজ্ঞাপন

সংসদে তুমুল আপত্তির পরও পাস হলো ব্যাংক-কোম্পানি সংশোধিত বিল ২০১৭। মঙ্গলবার সন্ধ্যায় অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিত ১৯৯১ সালে প্রণয়ন করা ব্যাংক-কোম্পানি আইনে আরও সংশোধন এনে সংসদ অধিবেশনে উত্থাপন করেন।

সংসদে আনা বিলটির ওপর আলোচনায় অংশ নিয়ে সিলেট-৫ আসনের সংসদ সদস্য সেলিম উদ্দিন বলেন, সংশোধনী আনা বিলটিতে জনস্বার্থের বিষয়টি ভাবা হয়নি। শুধুমাত্র পরিচালক বদল ইস্যুতে এই বিলটিতে পাঁচবার সংশোধন করা হয়েছে- এতে আমরা বিস্মিত হয়েছি।

অর্থমন্ত্রীকে চিন্তা প্রসারিত করার পরামর্শ দিয়ে ময়মনসিংহের সংসদ সদস্য ফখরুল ইমাম বলেন, আপনাকে বোঝানোর কিছু নেই। আপনি দেশ প্রেমের জায়গা থেকে কথা বলেন- এটাও আমরা বুঝতে পারি। অর্থমন্ত্রী, আপনাকে শুধু একটা কথা বলতে চাই- চিন্তা প্রসারিত করুন। এই যুগে এসে পরিচালনা পর্ষদ দিয়ে ব্যাংক চালাতে চাইলে ব্যাংকগুলো আরও নিচে চলে যাবে। ব্যাংক কোম্পানি আইনের বাইরে নয়। লিগ্যাল এনটিটি অনুযায়ী, ব্যাংক নিজেই তার মালিক। কমপ্লায়েন্স ব্যাংক স্বয়ংক্রিয়ভাবে চলবে। এই বিলটি পাস হলে একদিকে যেমন দুর্নীতি বাড়বে, অন্যদিকে স্পন্সর ডিরেক্টররা লাভবান হবেন, বাকিরা বঞ্চিত হবে।

বিজ্ঞাপন

বগুড়ার সংসদ সদস্য নুরুল ইসলাম ওমর বলেন, সংশোধনী এলে একাধিক পরিচালক পর্যায়ক্রমে একই জায়গায় ৯ বছর থাকতে পারবে। আমাদের পূর্ব অভিজ্ঞতা, একই পদে কোনো কর্মকর্তা থাকলে- আধিপত্য বিস্তার করতে দেখা যায়। এমনিতেই আমাদের ব্যাংকিং খাতে অনিয়ম দেখা যাচ্ছে। আমানতকারীরা বঞ্চিত হচ্ছে। অন্যদিকে ব্যাংক মালিকদের লাভ কমানো হয়নি।

কুমিল্লার সদস্য নুরুল ইসলাম বলেন, খেলাপি ঋণের পরিমাণ দেড় লাখ টাকায় এসে দাঁড়িয়েছে। মানুষ বুঝে গেছে ঋণ নিলে তা ফেরৎ দিতে হয় না। আমরা মনে করি, বাংলাদেশ ব্যাংক এসব অনিয়মের বিরুদ্ধে কোনো অ্যাকশন নিতে পারছে না। ব্যাংকিং খাতকে সমূলে ধ্বংস করে দিতে এই বিল। পারিবারিকভাবে পরিচালকদের ব্যাংকের মালিক করে দেওয়া হচ্ছে।

আলোচকরা আরও বলেন, এটা শুধু আমাদের না- দেশবাসীর উদ্বেগ। পরিচালকদের সংখ্যা বাড়ানো হচ্ছে, তাদের পরিবারের লোকজন ঋণ পাবে। এতে ব্যাংকে লুটপাট আরও বাড়বে। প্রধানমন্ত্রী যে সুনাম অর্জন করেছে, তা নষ্ট হয়ে যাবে। পরিচালকরা নিজের ব্যাংক থেকে ঋণ নেন, নিজের নামে নেন- আত্মীয়দের নামে নেন। কখনো কখনো অন্য ব্যাংকের চেয়ারম্যানের সঙ্গে সম্পর্ক করে ঋণ নেন।

বিজ্ঞাপন

মন্তব্যের পরে অর্থমন্ত্রী, সরকার দেড় বছর ধরে বিবেচনা করেছে বিলটির বিষয়ে। এতদিন পরে বিষয়টি কেবিনেটে আলোচিত হয়। সংসদীয় স্থায়ী কমিটি বিবেচনা করেছে। অনেক প্রশ্নের জবাব দিতে হয়েছে। তারপরে আর যাচাই-বাছাইয়ের দরকার আছে বলে আমার মনে হয় না।

সন্ধ্যা ৭টা ৪০ মিনিটে অর্থমন্ত্রী এই বক্তব্য দেওয়ার পরই বিলের সমর্থনে থাকা সদস্যরা দাঁড়িয়ে পড়েন। ডেপুটি স্পিকার ফজলে রাব্বী মিয়া বলেন, আলোচনার মধ্য ভাগে রুলস অব প্রসেজার অনুযায়ী আপনাদের ফ্লোর দেওয়া যাবে না। এতে সংসদ সদস্যরা উত্তেজিত হয়ে পড়েন। ডেপুটি স্পিকারও উত্তেজিত হয়ে পড়েন। তিনি তাদের বসতে অনুরোধ জানিয়ে বলেন, সংসদের বিধান মানবেন না- তা হতে পারে না।

এরপর না ভোট জয়যুক্ত হওয়ায় জনমত যাচাই ও বাছাই কমিটিতে পাঠানোর প্রস্তাব নাকোচ হয়ে যায়।

বিলে সংশোধন প্রস্তাব আনা সংসদ সদস্যরা অনুপস্থিত থাকায় অর্থমন্ত্রী আনা বিলটিই পাস হয়। এদিন বিকেল সাড়ে ৪টায় স্পিকার শিরীন শারমিন চৌধুরীর সভাপতিত্বে সংসদ অধিবেশন শুরু হয়।

বিজ্ঞাপন

সারাবাংলা/এটি

আপত্তি থাকলেও ব্যাংক কোম্পানি আইন পাস হবে : অর্থমন্ত্রী

বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন