বিজ্ঞাপন

রিজার্ভ চুরির মামলা দায়ের, আসামি ফিলিপাইনের আরসিবিসি

February 1, 2019 | 8:32 am

।। গোলাম সামদানী, স্পেশাল করেসপন্ডেন্ট ।।

বিজ্ঞাপন

ঢাকা: তিন বছর আগে রিজার্ভ চুরির ঘটনায় যুক্তরাষ্ট্রের নিউইয়র্কের সাউদার্ন ডিস্ট্রিক্ট কোর্টে মামলা দায়ের করেছে বাংলাদেশ ব্যাংক। নিউইয়র্ক স্থানীয় সময় ৩১ জানুয়ারি, বৃহস্পতিবার রাত ৮টায় (বাংলাদেশ স্থানীয় সময় ১ ফেব্রুয়ারি, শুক্রবার সকাল ৭টা) মামলাটি দায়ের করা হয়। ফিলিপাইনের ম্যানিলাভিত্তিক রিজাল কমার্শিয়াল ব্যাংকিং করপোরেশনের (আরসিবিসি) বিরুদ্ধে দায়ের করা মামলায় আরসিবিসি সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তা এবং রিজার্ভ চুরির এই টাকা যাদের যাদের কাছে গিয়েছে তাদের আসামি করা হয়েছে। মামলায় ক্ষতিপূরণ হিসেবে রিজার্ভ থেকে চুরি হওয়া অর্থ এবং মামলা পরিচালনা ও এ সংক্রান্ত খরচ চাওয়া হয়েছে।

শুক্রবার সকালে সারাবাংলাকে এ তথ্য নিশ্চিত করেছে বাংলাদেশ ব্যাংকের ফিন্যান্সিয়াল ইন্টেলিজেন্স ইউনিটের (বিএফআইইউ) প্রধান আবু হেনা মো. রাজী হাসান।

তিনি বলেন, ‘রিজার্ভ চুরির ঘটনায় আজ শুক্রবার বাংলাদেশ সময় (১ ফেব্রুয়ারি) সকাল ৭ টায় এবং নিউইর্য্ক সময় রাত আটটায় যুক্তরাষ্ট্রের নিউইয়র্ক সাউদার্ন ডিস্ট্রিক্ট কোর্টে মামলা দায়ের করা হয়েছে।

বিজ্ঞাপন

রাজী হাসান বলেন, মামলাটি ফিলিপাইনের রিজাল কমার্শিয়াল ব্যাংকিং করপোরেশন (আরসিবিসি) বিরুদ্ধে দায়ের করা হয়েছে। ফিলিপাইনের মানি এক্সচেঞ্জ, ক্যাসিনোসহ যেসব স্থানে টাকা গেছে, সেসব প্রতিষ্ঠান ও সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাদের আসামি করা হয়েছে।

কী পরিমাণ অর্থ চুরির জন্য মামলা করা হয়েছে এবং ক্ষতিপূরণ চাওয়া হয়েছে কিনা- এমন প্রশ্নের জবাবে বিএফআইইউ প্রধান বলেন, আমাদের চুরি হওয়া অর্থের পাশাপাশি মামলা পরিচালনা ও এ সংক্রান্ত আইনি খরচসহ ক্ষতিপূরণ চাওয়া হয়েছে।

মামলা কত জনকে আসামি করা হয়েছে, এমন প্রশ্নের জবাবে রাজী হাসান বলেন, মামলায় আরসিবিসির সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তা এবং যাদের কাছে টাকা গেছে ও রয়েছে, তাদের আসামি করা হয়েছে। সেই সঙ্গে যেসব ফার্ম তাদের মালিক, সেসব ফার্মকেও আসামি করা হয়েছে।

বিজ্ঞাপন

আগামী রোববার (৩ ফেব্রুয়ারি) বিকেলে সংবাদ সম্মেলন করে এ বিষয়ে বিস্তারিত জানানো হবে বলে জানান আবু হেনা মো. রাজী হাসান।

বাংলাদেশ ব্যাংকের নির্বাহী পরিচালক ও মুখপাত্র সিরাজুল ইসলাম মামলা হওয়ার তথ্য নিশ্চিত করে সারাবাংলাকে বলেন, ‘শুক্রবার রাতে যুক্তরাষ্ট্রের সাউদার্ন ডিস্ট্রিক্ট কোর্টে মামলা করা হয়েছে। ফিলিপাইনের ম্যানিলাভিত্তিক আরসিবিসিকে আসামি করা হয়েছে এই মামলার।’

আরও পড়ুন- রিজার্ভ চুরি: ৩ বছরে মামলার অগ্রগতি কতদূর?

এর আগে, বৃহস্পতিবার (৩১ জানুয়ারি) বাংলাদেশ ব্যাংকের ফিন্যান্সিয়াল ইন্টেলিজেন্স ইউনিটের (বিএফআইইউ) প্রধান আবু হেনা মোহাম্মদ রাজি হাসান সারাবাংলাকে জানিয়েছিলেন, মামলাটি নিউইয়র্ক সময় ৩১ জানুয়ারি করা হবে। এটি বাংলাদেশ সময় বৃহস্পতিবার রাত ১২টাও হতে পারে, আবার শুক্রবারও (১ ফেব্রুয়ারি) হতে পারে।

বিজ্ঞাপন

আরও পড়ুন- রিজার্ভ চুরি: ৩ ফেব্রুয়ারির মধ্যে যুক্তরাষ্ট্রে মামলা

এর আগে, বুধবার বাংলাদেশ ব্যাংকের মুদ্রানীতি ঘোষণার সময় ৩০ জানুয়ারি মামলা করা হবে বলে জানিয়েছিলেন কেন্দ্রীয় ব্যাংক গভর্নর ফজলে কবির। তিনি জানান, এই মামলা করার সিদ্ধান্ত হয় গত রোববার (২৭ জানুয়ারি) বাংলাদেশ ব্যাংকের এক জরুরি সভায়। একইসঙ্গে সভায় বিএফআইইউ’কে মামলা দায়ের করার নির্দেশনা দেয় কেন্দ্রীয় ব্যাংক। বাংলাদেশ ব্যাংকের নির্দেশনা পেয়ে রোববার রাতেই তিন সদস্যর একটি প্রতিনিধি দল মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের উদ্দেশ্য ঢাকা ছাড়ে।

আরও পড়ুন- রিজার্ভ চুরি: ফিলিপাইনের ব্যাংক কর্মকর্তা দেগুইতোর কারাদণ্ড

কেন্দ্রীয় ব্যাংকের রিজার্ভ চুরির ঘটনা আগামী ৪ ফেব্রুয়ারি তিন বছর পূর্ণ হচ্ছে। যুক্তরাষ্ট্রের আইন অনুযায়ী, কোনো ঘটনার প্রতিকার পেতে হলে তিন বছরের মধ্যে মামলা করতে হবে। বাংলাদেশ সে অনুযায়ী প্রস্তুতি নিয়েছে। এ কারণে অর্থ মন্ত্রণালয়ের আর্থিক বিভাগের সচিব আসাদুল ইসলামের নেতৃত্বে চার সদস্যর একটি প্রতিনিধিদল বর্তমানে যুক্তরাষ্ট্রে অবস্থান করছেন। প্রতিনিধি দলের বাকি তিন সদস্য হলেন— বিএফআইইউ প্রধান ও বাংলাদেশ ব্যাংকের সাবেক ডেপুটি গর্ভনর আবু হেনা মো. রাজী হাসানসহ বাংলাদেশ ব্যাংকের আরও দুই কর্মকর্তা।

আরও পড়ুন- বাংলাদেশ ব্যাংকের রিজার্ভ চুরির মামলার প্রতিবেদন ১০ ফেব্রুয়ারি

উল্লেখ্য, ২০১৬ সালের ৪ ফেব্রুয়ারি বাংলাদেশ ব্যাংকের রিজার্ভ থেকে ১০ কোটি ১০ লাখ ডলার চুরি করে নেয় হ্যাকাররা। যুক্তরাষ্ট্রের ফেডারেল রিজার্ভ ব্যাংক থেকে সুইফট কোডের মাধ্যমে বাংলাদেশ ব্যাংক থেকে এই অর্থ চুরি করা হয়। চুরি হওয়া অর্থের মধ্যে শ্রীলঙ্কায় ২ কোটি ডলার এবং বাকি ৮ কোটি ১০ লাখ ডলার প্রথমে ফিলিপাইনের রাজধানী ম্যানিলায় অবস্থিত রিজাল কমার্শিয়াল ব্যাংকিং কর্পোরেশনের (আরসিবিসি) একটি শাখায় পাঠানো হয়। পরে এই অর্থ আরসিবিসি থেকে চলে যায় ফিলিপাইনের জুয়ার আসরে।

বাংলাদেশ ব্যাংকের রিজার্ভ থেকে ১০ কোটি ১০ লাখ ডলার চুরি হওয়ার ১০ মাসের মধ্যে ৩ কোটি ৪৫ লাখ ডলার ফেরত আনা হয়। এর মধ্যে রিজার্ভ চুরির ঘটনা প্রকাশ পাওয়ার আগেই ২০১৬ সালের ১৭ ফেব্রুয়ারি শ্রীলঙ্কা থেকে ২ কোটি ডলার ফেরত আনা হয়। একই বছরের ১২ নভেম্বর ফিলিপাইন থেকে আরও ১ কোটি ৪৫ লাখ ডলার ফেরত আনা হয়েছে। পরবর্তী ২ বছরের বেশি সময়ে আর কোনো টাকা উদ্ধার করা যায়নি। ফলে ফিলিপাইনে থাকা অবশিষ্ট ৬ কোটি ৬৪ লাখ ডলার (৫৫৭ কোটি টাকা) এখনও ফেরত আনা সম্ভব হয়নি। কবে আনা যাবে কিংবা আদৌ আনা যাবে কিনা, তা নিয়েও নিশ্চিত করে কেউ কিছু বলতে পারছেন না। তবে বাংলাদেশ ব্যাংক আশা করছে, যুক্তরাষ্ট্রের আদালতে মামলা করার মাধ্যমে এই অর্থ ফেরত পাওয়ার পথ তৈরি হলো।

সারাবাংলা/জিএস/টিআর

Tags: , , , , ,

বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন