বিজ্ঞাপন

দিল্লি সফর নিয়ে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের লুকোচুরি!

February 6, 2019 | 1:14 pm

।। এমএকে জিলানী, স্পেশাল করেসপন্ডেন্ট ।।

বিজ্ঞাপন

ঢাকা: দুই দেশের পঞ্চম যৌথ কনসালটেটিভ কমিশনের বৈঠকে ঢাকার পক্ষে নেতৃত্ব দিতে আজ বুধবার (৬ ফেব্রুয়ারি) সন্ধ্যায় নয়াদিল্লি সফরে যাচ্ছেন পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. এ কে আবদুল মোমেন। প্রধানমন্ত্রী পর্যায়ের পর যৌথ কনসালটেটিভ কমিশন দ্বিতীয় সর্বোচ্চ ফোরাম যেখানে দ্বিপাক্ষিক সব বিষয় নিয়ে আলোচনা ও গুরুত্বপূর্ণ সিদ্ধান্ত হয়। অথচ পররাষ্ট্রমন্ত্রীর এই নয়াদিল্লি সফর নিয়ে লুকোচুরি করছে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়। বলা হচ্ছে, এটি পররাষ্ট্রমন্ত্রীর পরিচিতমূলক সফর!

কূটনীতিকরা বলছেন, অতীতের যেকোনো সময়ের তুলনয় বাংলাদেশ-ভারত দ্বিপাক্ষিক সম্পর্কের খুব ভালো সময় যাচ্ছে— এ বিষয়ে কোনো সন্দেহ নেই। কিন্তু কয়েকমাস পর ভারতের লোকসভা নির্বাচন। সাধারণত এমন সময়ে কূটনীতিকরা সফরে যান না। তাই পররাষ্ট্রমন্ত্রীর এই সফর থেকে নতুন কোনো বার্তা আসতে পারে।

এদিকে, পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় ড. এ কে আবদুল মোমেনের ভারত সফর নিয়ে লুকোচুরি করছে। ভাবটা এমন যে এই সফর অত্যন্ত গোপনীয়, এ বিষয়ে জনসাধারণের জানার কোনো অধিকার নেই। পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় এই সফরকে মন্ত্রীর সঙ্গে ভারতীয় বন্ধুদের পরিচিতমূলক সফর বলে চালিয়ে দিচ্ছে। অথচ এই সফরে পঞ্চম যৌথ কনসালটেটিভ কমিশনের বৈঠকে ঢাকার পক্ষে নেতৃত্ব দিবেন ড. এ কে আবদুল মোমেন।

বিজ্ঞাপন

পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মহাপরিচালক তারেক মুহাম্মদের কাছে মঙ্গলবার (৫ ফেব্রুয়ারি) সফর সম্পর্কে জানতে চাইলে তিনি ভূত দেখার মতো চমকে উঠে বলেন, ‘অনেক ব্যস্ত, সময় নাই, এখন কিছু বলতে পারব না।’

ভারত সফরে পররাষ্ট্রমন্ত্রীর বৈঠকের আলোচ্য বিষয় সম্পর্কে জানতে চাইলে মহাপরিচালক তারেক মুহাম্মদ বলেন, ‘এটা কী এত সোজা! এত সহজেই ঠিক হয়ে যাবে! এখনও চূড়ান্ত হয়নি।’

এর আগে, পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. এ কে আবদুল মোমেন নিজেই জানিয়েছিলেন, পররাষ্ট্রমন্ত্রী হিসেবে নয়াদিল্লিই হবে তার প্রথম বিদেশ সফর। প্রসঙ্গত, ভারতের পররাষ্ট্রমন্ত্রী সুষমা স্বরাজও পররাষ্ট্রমন্ত্রী হওয়ার পর ঢাকায় প্রথম বিদেশ সফর করেন।

বিজ্ঞাপন

ঢাকা-নয়াদিল্লি কূটনৈতিক সূত্রগুলো বলছে, আবদুল মোমেনের এই সফরে যৌথ কনসালটেটিভ কমিশনের বৈঠকে অংশ নেওয়া ছাড়াও ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর সঙ্গে সাক্ষাৎ হবে পররাষ্ট্রমন্ত্রীর।

পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. এ কে আবদুল মোমেন এর আগে বলেছিলেন, ভারত আমাদের খুব কাছের বন্ধু। একাদশ সংসদের প্রধানমন্ত্রী পদে শেখ হাসিনা শপথ নেওয়ার পর ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি সবার আগে টেলিফোন করে শুভেচ্ছা জানিয়েছেন। পররাষ্ট্রমন্ত্রীর পদে নিয়োগ পাওয়ার পর ভারতের পররাষ্ট্রমন্ত্রী সুষমা স্বরাজও আমাকে অভিনন্দন জানিয়েছেন এবং নয়াদিল্লি সফরের আমন্ত্রণ জানিয়েছেন।

ঢাকার কূটনীতিকরা বলছেন, আসন্ন পঞ্চম যৌথ কনসালটেটিভ কমিশনের বৈঠকের প্রস্তুতি নিতে এরই মধ্যে আন্তঃমন্ত্রণালয় বৈঠক হয়েছে। ওই বৈঠকে ভারতের প্রেসক্রিপশন অনুযায়ী তিস্তার পানি বণ্টন চুক্তি বিষয়ের আলোচনা এই সফরে না তোলার জন্য কর্মকর্তারা পরামর্শ দিয়েছেন। পানি নিয়ে গঠিত দুই দেশের কমিটির পরবর্তী বৈঠকে তিস্তা নিয়ে আলোচনা করার পরামর্শ দিয়েছেন কর্মকর্তারা। কেননা, সামনে ভারতের লোকসভা নির্বাচন, এই সময়ে তিস্তা নিয়ে আলোচনা ভারতের সরকারকে কিছুটা বেকায়দায় ফেলতে পারে।

এদিকে, পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. এ কে আবদুল মোমেন বলেছেন, তিস্তার পানি বণ্টন চুক্তি আমাদের জন্য একটি গুরুত্বপূর্ণ ইস্যু। যতদিন এই ইস্যুতে সুরাহা না হচ্ছে, ততদিন আলোচনা চালিয়ে যাব। আসন্ন নয়াদিল্লি সফরেও তিস্তা নিয়ে আলোচনা করব।

বিজ্ঞাপন

ঢাকার কূটনীতিকরা আরও বলছেন, পররাষ্ট্রমন্ত্রীর আসন্ন সফরে ঢাকার পক্ষ থেকে রোহিঙ্গা, বাণিজ্য, যোগাযোগ, জ্বালানি, প্রতিরক্ষা খাতে গুরুত্ব দেওয়া হবে। পররাষ্ট্রমন্ত্রীর অগ্রাধিকার বিষয় হিসেবে অর্থনৈতিক কূটনীতির আওতায় ভারতের বেসরকারি খাতের আরও বিনিয়োগ চাইবে ঢাকা।

ভারতের বিনিয়োগকারীদের জন্য ঢাকা ও চট্টগ্রাম অর্থনৈতিক অঞ্চলে জমি বরাদ্দ, আরও ৬ থেকে ১০টি সীমান্ত হাট চালু, ভারতের উত্তর-পূর্বাঞ্চলীয় রাজ্যগুলোর উন্নয়নে বাংলাদেশের ভূখণ্ড ব্যবহার, বেনাপোল স্থলবন্দর উন্নয়নসহ একাধিক দ্বিপক্ষীয় বিষয়ে বৈঠকে দুই পররাষ্ট্রমন্ত্রী আলাপ করবেন।

কূটনৈতিক সূত্রে জানা গেছে, গত ২০১৭ সালে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ভারত সফরে দুই দেশের মধ্যে সর্বপ্রথম প্রতিরক্ষা সহযোগিতা নিয়ে সমাঝোতা স্মারক সই করা হয়। ওই সমাঝোতা স্মারক বাস্তবায়নে গত বছরের ৯ মে বাংলাদেশ ও ভারতের মধ্যে মোট তিনটি সমাঝোতা স্মারক সই হয়। এর আগে ২০১৭ সালের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ভারত সফরে বাংলাদেশের প্রতিরক্ষা খাতের উন্নয়নে ৫০ কোটি ডলার ঋণ দেওয়ার ঘোষণা দেয় ভারত। আসন্ন পররাষ্ট্রমন্ত্রীর সফরে প্রতিরক্ষা খাতের এই বিষয়েও আলোচনা হবে।

এর আগে, বাংলাদেশ-ভারত দুই দেশের সর্বশেষ যৌথ কনসালটেটিভ কমিশনের বৈঠক ২০১৭ সালের অক্টোবরে ঢাকায় অনুষ্ঠিত হয়।

সারাবাংলা/জেআইএল/টিআর

Tags: , , ,

বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন