বিজ্ঞাপন

৬৭ বছরেও মূল্যায়ন পাননি না.গঞ্জ বন্দরের ভাষাসৈনিকরা

February 8, 2019 | 10:42 am

।। আশিকুর রহমান হান্নান, ডিস্ট্রিক্ট করেসপন্ডেন্ট ।।

বিজ্ঞাপন

নারায়ণগঞ্জ: ভাষা আন্দোলনের ৬৭ বছর পেরিয়ে গেলেও এখনও অবমূল্যায়িত নারায়ণগঞ্জ বন্দরের ভাষাসৈনিকরা। দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে ভাষাসৈনিকদের নামানুসারে সড়ক, ব্রিজ, সেতু কিংবা বৃত্তি প্রদান করা হলেও বন্দরে ভাষা সৈনিকদের নামে সরকারি-বেসরকারি কোনো উদ্যোগ এখনও নেওয়া হয়নি। যে কারণে হারিয়ে যেতে বসেছে ভাষা সৈনিকদের বীরত্বগাঁথা।

জানা গেছে, সরকারি তালিকা অনুযায়ী নারায়ণগঞ্জ জেলার বন্দর থানা এলাকায় ৯ জন ভাষা সৈনিক রয়েছেন। তারা হলেন— নারায়ণগঞ্জ জেলা আওয়ামী লীগের প্রয়াত আহ্বায়ক মাহমুদ নগর এলাকার মফিজুল ইসলাম, সোনাকান্দা মৃধা বাড়ী এলাকার শফিউল্যাহ মৃধা, আহসান উল্যাহ মৃধা, আলহাজ্ব মোহাম্মদ হাসান, আলহাজ্ব এম এ আসগর, নবীগঞ্জ কদম রসুল এলাকার আসেক আলী মৃধা, খানবাড়ী এলাকার মরহুম ইউনুছ খান, মরহুম ফুল মিয়া চৌধুরী ও আলাউদ্দিন মিয়া।

ভাষাসৈনিকদের পরিবারের দাবি, ভাষা সৈনিকদের স্মৃতি সংরক্ষণের স্বার্থে তাদের নামানুসারে অন্তত বিভিন্ন সড়ক, সেতু কিংবা চত্বরের নামকরণ করা হোক। তাতে করে হয়তো নতুন প্রজন্মের কাছে ভাষাসৈনিকদের নাম ও তাদের অবদান পৌঁছে দেওয়া যাবে।

বিজ্ঞাপন

ভাষাসৈনিক আশেক আলী মৃধার পুত্র নারায়ণগঞ্জ মহানগর আওয়ামী লীগ নেতা হুমায়ুন মৃধা সারাবাংলাকে বলেন, ভাষাসৈনিকদের পরিবারের সদস্যরা নিরবে কাঁদে। তাদের প্রতি কারও কোনো মাথা ব্যথা নেই। প্রতিবছর ফেব্রুয়ারি মাস এলে সাংবাদিকরা একটু খোঁজ-খবর নেন। অথচ তাদের কারণেই আজ আমরা বাংলা ভাষায় কথা বলতে পারছি। তাদেরই যদি কোনো মূল্যায়ন করা না হয়, তাহলে এই ভাষার স্বার্থকতা কোথায়?

হুমায়ুন মৃধা আরও বলেন, ইতিহাস সংরক্ষণের স্বার্থে হলেও ভাষা সৈনিকদের নামে বন্দরের বিভিন্ন চত্বর কিংবা সড়কের নামকরণ করা উচিত। কেবল আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস নয়, সারাবছরই ভাষাসৈনিকদের অবদান চর্চা করা উচিত। ভাষার লড়াইয়ের সেই বীরদের স্বীকৃতি দেওয়া হোক।

বন্দরের আরেক ভাষাসৈনিক মরহুম শফিউল্লাহ মৃধার ছেলে সহিদুল হাসান মৃধা বলেন, ভাষাসৈনিকদের কোনো গুরুত্ব দেওয়া হচ্ছে না। অথচ ভাষাসৈনিকরা বায়ান্নতে ঝাঁপিয়ে না পড়লে আমাদের হয়তো উর্দু ভাষাতেই কথা বলতে হতো। তাছাড়া সেই ভাষা আন্দোলন থেকেই আমাদের স্বাধীনতা সংগ্রামেরও সূচনা।

বিজ্ঞাপন

ভাষাসৈনিক মফিজুল ইসলামের কনিষ্ঠ পুত্র মাহাবুবুল ইসলাম রাজন বলেন, অনেক ত্যাগ-তিতীক্ষার পর বাবার নাম সরকারি তালিকায় উঠেছে। এর বাইরে আর কিছুই হয়নি তার নামে। জীবদ্দশায়ও কোনো সম্মান পাননি তিনি। অন্য ভাষাসৈনিকদেরও ক্ষেত্রেও একই কথা প্রযোজ্য। এজন্যই কি আমার পিতাসহ ভাষাসৈনিকরা জীবন বাজি রেখে ভাষা আন্দালনে ঝাঁপিয়ে পড়েছিলেন?

মাহাবুবুল ইসলামের দাবি, অন্তত নারায়ণগঞ্জ সিটি করপোরেশনের কে এন সেন রোডটি যেন তার বাবার নামে নামকরণ করা হয়। অন্য ভাষাসৈনিকদের নামেও এমন সড়ক বা অন্যকিছুর নামকরণ করা হোক। তাতে ভাষাসৈনিকদের প্রতি যেমন শ্রদ্ধা জানানো হবে, তেমনি নতুন প্রজন্মও অন্তত তাদের নাম জানতে পারবে। আমরা ভাষাসৈনিক পরিবারগুলোও কিছুটা হলেও সান্ত্বনা পাব।

আরেক ভাষাসৈনিক আলহাজ্ব এম এ আসগরের কনিষ্ঠ পুত্র আলী আকরাম তারেক আক্ষেপ নিয়ে বলেন, আমার বাবা ও চাচা জীবন বাজি রেখে ভাষা আন্দোলনে শরিক হয়েছিল। কেবল ভাষা দিবস এলেই নামকাওয়াস্তে স্মরণ করা হয় তাদের। কিন্তু যারা ভাষার জন্য লড়াই করেছেন, তাদের জন্য সরকারিভাবেও আরও উদ্যোগ নেওয়া প্রয়োজন।

নারায়ণগঞ্জ-৫ আসনের সংসদ সদস্য মুক্তিযোদ্ধা এ কে এম সেলিম ওসমান, নারায়ণগঞ্জ সিটি করপোরেশনের মেয়র ডা. সেলিনা হায়াৎ আইভী ও নারায়ণগঞ্জের জেলা প্রশাসক রা‌ব্বি মিঞার কাছে বন্দরের ৯ ভাষাসৈনিক পরিবারের সদস্যদের দাবি, যেকোনো মূল্যে হলেও সিটি করপোরেশন অথবা উপজেলার যেখানেই হোক না কেন, ৯ ভাষাসৈনিকের নামে সড়ক ও চত্বরের নামকরণ করা হোক।

বিজ্ঞাপন

এ বিষয়ে জানতে চাইলে নারায়ণগঞ্জ-৫ (সদর-বন্দর) আসনের সংসদ সদস্য আলহাজ্ব এ কে এম সেলিম ওসমান সারাবাংলাকে ব‌লেন, খুব শিগগিরই ভাষাসৈনিকদের নামে বন্দর এলাকার বিভিন্ন সড়কের নামকরণ করা হ‌বে। বিষয়‌টি প্রক্রিয়াধীন র‌য়ে‌ছে।

সারাবাংলা/টিআর

Tags: , ,

বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন