January 18, 2018 | 6:10 pm
স্টাফ করেসপন্ডেন্ট
এতোদিন ছিলেন ঘরের শত্রু বিভীষণ। এবার চন্ডিকা হাথুরুসিংহে নিজের ঘরে ফিরেছেন, তবে বধ করার ছক কষতে হচ্ছে তিন বছরের ঘর হয়ে যাওয়া দেশের সঙ্গে। কালকের ম্যাচে বাংলাদেশের প্রতিপক্ষ যতটা না শ্রীলঙ্কা, তার চেয়েও অনেক বেশি তো হাথুরুসিংহে। মাশরাফি বিন মুর্তজার সংবাদ সম্মেলনেও অনেকবার ঘুরেফিরে এলো সেই প্রসঙ্গ। মাশরাফি অবশ্য বার বারই বললেন, হাথুরুকে নিয়ে আলাদা কোনো ভাবনা নেই। এসব আর কোনো ব্যাপার নয়। কিন্তু আগের ম্যাচে যে সাহসটা দল দেখিয়েছে, সেটাই ধরে রাখতে চান।
প্রথমবার হাথুরুসিংহের মুখোমুখি বলেই হয়তো বার বার তার প্রসঙ্গ চলে এলো। তবে মাশরাফি জোর দিয়েই বললেন, ম্যাচ জেতাটাই তার কাছে আগে, ‘সত্যি কথা বলতে এসব তেমন কোনো ব্যাপার নয়। ম্যাচটা খেলতে হবে জিততে হবে, এটাই মনের কোণায় উঁকি দিচ্ছে। এর বাইরে কোনা সুযোগই নাই চিন্তা করার। চিন্তা করলে আরও বেশি চাপ আসে। আমার কাছে মনে হয় খেলার দিকেই সবার মনোযোগ থাকে। সেটাই আছে, আমরা যেন আরও ভালো খেলি। জিম্বাবুয়ের বিপক্ষে যেভাবে খেলেছি সেভাবে খেলি। ওইদিকেই সবাই ভাবছে। আর যেন এটাই হয়।’
হাথুরুর সঙ্গে সিনিয়র ক্রিকেটারদের যে খুব হৃদ্যতা ছিল না, শেষের দিকে সেটিও বোঝা যাচ্ছিল। বিসিবি সভাপতি নাজমুল হাসান পাপন তো তা সংবাদমাধ্যমের সামনেই বলেছেন। সেই হিসেবে তো দলের কি বাড়তি একটা চ্যালেঞ্জ, একটু বেশি তেঁতে থাকার কথা না? মাশরাফি কিন্তু এখানেও আলাদা করে চ্যালেঞ্জ দেখছেন না।
‘চ্যালেঞ্জ আসলে সব জায়গাতেই থাকে। হাথুরুসিংহে যখন এখানে ছিল তখন তার ওপরে এক রকম চ্যালেঞ্জ ছিল। হয়তো দক্ষিণ আফ্রিকায় আমরা পুরোটা হেরে আসার পর চ্যালেঞ্জটা আরও বেশি হত। আরও উপভোগ্য হত। তিনি হয়তো থাকেননি, তিনি শ্রীলঙ্কাকে বেছে নিয়েছেন। এখন তার আরেক রকম চ্যালেঞ্জ। চ্যালেঞ্জ তো সব সময় আমাদেরকেই নিতে হয়। এই চ্যালেঞ্জটা থাকছে, এখনও যে নাই তা না। আর আমরা এই টুর্নামেন্টটা যদি জিতিও পরের সিরিজে তো একই চাপ থাকবে। প্রত্যাশাও তৈরি হয়। আপনি যখন বাংলাদেশের হয়ে খেলবেন এই চ্যালেঞ্জ থাকবেই। এটা নতুন কিছু না। আমরা যে কখনো চাপ সামলাইনি এমন নয় বা এখন সামলাতে পারব না এমন না। এখন ব্যাপার হচ্ছে আমরা বাস্তবায়ন কেমন করি।’
কিন্তু থিলান সামারাবীরা, হিথ স্ট্রিকরা যতই বলুন, টি-টোয়েন্টির যুগে এখন আর গোপন করার কিছু নেই; সবাই সবার সবকিছু জানে। তারপরও হাথুরুসিংহে হুট করে বিদায় নিয়েছেন বলেই প্রশ্নটা চলে আসে, তার জন্য কি আলাদা করে কিছু পরিকল্পনা করছে? মাশরাফি এবারও ডিফেন্সিভ ফরোয়ার্ডে খেললেন।
‘আলাদা করে চমক দেওয়ার কিছু নেই। আমরা যেভাবে খেলতাম সেভাবেই খেলবো। হাথুরুসিংহে থাকতেও এখানে এসে বলতাম আমরা আত্মবিশ্বাস ও স্বাধীনতা নিয়ে ক্রিকেট খেলতে চাই। আপনি যদি দেখেন প্রায় তিন বছর পর বিজয় দলে এসে সে যেভাবে ক্রিকেট খেলেছে আমরা এটাই চাই। ভয়হীন ক্রিকেট খেলুক। অবশ্যই ওর জায়গা থেকে ওর রানটাকে বড় করার সুযোগ ছিল। কারণ লক্ষ্যটা এতো বড় ছিল না। আমাদের সেই চাপও ছিল না। তারপরও বিজয় যেভাবে ব্যাটিং করেছে আমরা শতভাগ তার পাশে থাকব। আমি বলতে চাচ্ছি এইগুলোই আপনাকে বড় বড় ম্যাচ বা ভালো ম্যাচ জিততে সহযোগিতা করবে। আর শুধু চিন্তা করলেই হয় না মাঠে তার প্রয়োগটাও খুব গুরুত্বপূর্ণ।’
নিজেদের সেই স্বাধীনতা নিয়ে খেলতে পারাটাই তাই অগ্রাধিকার পাচ্ছে মাশরাফির কাছে, ‘এতো সমালোচনা হয়েছে, ওই স্বাধীনতা নিয়ে মাঠে খেলতে পারব কি না সেটা বড় চ্যালেঞ্জ। এমন তো না একটা সিরিজের পর খেলা ভুলে গেছি। যে স্বাধীনতা নিয়ে আমরা শেষ দুই-আড়াই বছর খেলেছি, একটা সিরিজের পর এতো সমালোচনা। আমরা খুবই খুশি, বিজয় এসে ওই রোলটা প্লে করছে। তামিম নিজের খেলাটা খেলছে। মোস্তাফিজ আত্মবিশ্বাস পাচ্ছে। আমি যখন চার-পাঁচটি স্লিপ রেখেছি বোলার বলেছে রাখেন। এই যে মানসিকতা, সাহস এটা অনেক গুরুত্বপূর্ণ। এটা থাকলে অনেক কঠিন পরিস্থিতি থেকে বের হওয়া যায়। এর মধ্যেই উত্থান পতন থাকবে, খারাপ সময় যাবে। কিন্তু আমরা আমাদের ব্র্যান্ডটাই খেলতে চাই।’
সারাবাংলা/এএম/এমআরপি