বিজ্ঞাপন

সেই একাত্তরই এখন তার পুনর্বাসনের সিঁড়ি

February 18, 2019 | 9:52 pm

।। কবির য়াহমদ ।।

বিজ্ঞাপন

স্বাধীনতাবিরোধী দল জামায়াতে ইসলামীকে নিষিদ্ধের দাবি যখন আলোচনায়, তখনই সকল আলোচনা কেন্দ্রীভূত হয়েছে দলটির অভ্যন্তরীণ বিশৃঙ্খল পরিস্থিতি প্রকাশ্য হয়ে যাওয়ায়। সম্প্রতি জামায়াত থেকে একাধিক নেতা পদত্যাগ করেছেন। একজনকে বহিষ্কার করেছে দলটি। দলের আমির ও সেক্রেটারি জেনারেলের মধ্যকার দ্বন্দ্বও প্রকাশ্য বলে খবর বেরিয়েছে গণমাধ্যমে। এমন অবস্থায় নিষিদ্ধের আলোচনার চাইতে দলটির শৃঙ্খলা বিষয়ক আলোচনাই প্রাধান্য পাচ্ছে সকল মহলে।

গত এক দশক ধরে জামায়াতে ইসলামী তাদের রাজনৈতিক ইতিহাসের সবচেয়ে বিপর্যয়কর অবস্থার সম্মুখীন। পাকিস্তান ও বাংলাদেশ দুই আমলে একাধিকবার তাদের রাজনীতি নিষিদ্ধ হলেও এখনকার মতো নিষিদ্ধের গণদাবি আগে উচ্চারিত হয়েছে কি না, সন্দেহ। জামায়াতের বিপর্যয়কর পরিস্থিতির শুরু মূলত একাত্তরের মানবতাবিরোধী অপরাধের বিচারিক পর্যায় শুরুর পর। আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে (আইসিটি) মানবতাবিরোধী অপরাধীদের বিচার শুরু হলে একে একে দণ্ডিত হন জামায়াতের শীর্ষ নেতারা, যারা মুক্তিযুদ্ধের সময় দলীয় সিদ্ধান্তে পাকিস্তানি বাহিনীর সহযোগী হয়ে সারাদেশে মানবতাবিরোধী অপরাধে সম্পৃক্ত ছিলেন।

২০০৮ সালের জাতীয় সংসদ নির্বাচনের আগে বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ যুদ্ধাপরাধের বিচারের যে অঙ্গীকার করেছিল, তাতে দেশবাসী ব্যাপক সমর্থন দিয়ে দলটিকে ক্ষমতায় এনেছিল। সরকার গঠনের পর আওয়ামী লীগ প্রতিশ্রুতির বাস্তবায়ন শুরু করে বিচার প্রক্রিয়া শুরুর মাধ্যমে। শুরু থেকেই এই বিচার যুদ্ধাপরাধীপক্ষের রাজনৈতিক দল জামায়াতে ইসলামী ও তাদের রাজনৈতিক-আদর্শিক জোট বিএনপি কর্তৃক বিরোধিতার মুখে পড়লেও দেশবাসীর সমর্থন নিয়ে আওয়ামী লীগ এই বিচার অব্যাহত রাখে। জামায়াত-বিএনপি কেবল দেশেই নয়, দেশের বাইরেও এই বিচারের বিপক্ষে অপপ্রচার চালায়। বিদেশে নিজেরাই কেবল নয়, পেশাদার লবিস্ট ফার্ম নিয়োগ করে তারা। দেশ-বিদেশের অব্যাহত এই চাপ সত্ত্বেও মানবতাবিরোধী অপরাধের বিচার চলতে থাকে।

বিজ্ঞাপন

২০১০ সালে শুরু হওয়া এই বিচার প্রক্রিয়ায় প্রথম রায় আসে তিন বছরের মাথায়। যুদ্ধাপরাধী ও জামায়াত নেতা আব্দুল কাদের মোল্লা ২০১৩ সালে সালের ফেব্রুয়ারি যাবজ্জীবন দণ্ডপ্রাপ্ত হলে এই বিচার নিয়ে জেগে ওঠে দেশ। গণহত্যাকারীর শাস্তি যাবজ্জীবন— এমন রায়ে ক্ষোভে ফুঁসে ওঠে বিশেষত তরুণ সমাজ। শীর্ষ এই যুদ্ধাপরাধীর সর্বোচ্চ শাস্তির দাবিতে গণজাগরণ সৃষ্টি হয়। এই গণজাগরণ থেকে দাবি ওঠে, যুদ্ধাপরাধী সংগঠন জামায়াতে ইসলামীর রাজনীতি নিষিদ্ধের; জামায়াত নেতাদের মালিকাধীন প্রতিষ্ঠান বর্জনসহ এ সংশ্লিষ্ট দাবিগুলো। গণমানুষের এই দাবিগুলো সার্বজনীন দাবিতে পরিণত হয়। কেবল ঢাকার শাহবাগই নয়, পুরো দেশটাই হয়ে যায় একেকটা শাহবাগ। শাহবাগের আন্দোলনের সে ঢেউ মানুষের মধ্যে এমনভাবে সঞ্চারিত হয় যে এই ছয় বছর পরও এখনও মানুষ সেই চেতনা ধারণ করে। এখনও মানুষ জামায়াতের রাজনীতি নিষিদ্ধের কথা বলে, এখনও মানুষ চায় যুদ্ধাপরাধের বিচার অব্যাহত থাকুক।

২০১৩’র সেই গণজাগরণ মানুষকে একাত্তরে নিয়ে যায়। দেশের অধিকাংশ মানুষ একাত্ম ছিল গণজাগরণে ওঠা দাবিগুলোতে। তবে এই অধিকাংশের বাইরে কিছু লোক তখনও ছিল, এখনও আছে, যারা একাত্তরের গণহত্যার অংশীদারদের পক্ষের। জামায়াতে ইসলামীর নেতাকর্মী-সমর্থকই কেবল নয়, এর মধ্যে আছে বিএনপিরও অনেকেই যারা জামায়াত ও যুদ্ধাপরাধীদের বুকে আগলে রাখতে চায়। এরা সংখ্যায় কম হলেও আছে— এ তথ্য অস্বীকার করার উপায় নেই। এদের মধ্যেকার বড় নাম ব্যারিস্টার আব্দুর রাজ্জাক। গত ১৫ ফেব্রুয়ারি জামায়াত থেকে পদত্যাগের আগ পর্যন্ত তিনি ছিলেন দলটির সহকারী সেক্রেটারি জেনারেল। তার রাজনৈতিক জীবনের শুরু হয়েছিল জামায়াতে ইসলামী দিয়ে এবং টানা ৩০ বছর তিনি ছিলেন দলটির নানামুখী দায়িত্বে। তার দলীয়  এই পরিচিতি এতখানি আলোচনায় ছিল না, যতখানি আলোচনায় ছিল যুদ্ধাপরাধীদের প্রধান আইনজীবী হিসেবে। সারাদেশ যখন একাত্ম যুদ্ধাপরাধীদের সর্বোচ্চ শাস্তির দাবিতে, তখনও তিনি বছরের পর বছর তাদের আইনি সহায়তা দিয়ে গেছেন নিরবচ্ছিন্নভাবে।

ব্যারিস্টার আব্দুর রাজ্জাকের এই ভূমিকা ছিল তার আদর্শিক অবস্থান, রাজনৈতিক কর্মসূচি। একইসঙ্গে এটা ছিল একাত্তরের মুক্তিকামী মানুষের চেতনাবিরোধী, গণহত্যা-সম্ভ্রমহানির শিকার মানুষদের প্রতি অবিচার। তবু তিনি যুদ্ধাপরাধীদের পক্ষে ও বাংলাদেশের বিপক্ষে আইনি লড়াই চালিয়ে গেছেন। কেবল তাই নয়, তিনি পাকিস্তানি নাগরিক ও শীর্ষ যুদ্ধাপরাধী গোলাম আযমের নাগরিকত্ব মামলাও লড়েছেন, সাঈদী-নিজামি-মুজাহিদের মামলাও লড়েছেন।

বিজ্ঞাপন

কমপক্ষে ১০ জন যুদ্ধাপরাধীর পক্ষে মামলা লড়া এই আইনজীবী জামায়াত থেকে পদত্যাগ করেছেন। তার এই পদত্যাগের দীর্ঘ চিঠিতে তিনি যেসব কারণ বলেছেন তাতে উল্লেখ করেছেন— দলটিতে সংস্কার সাধনে তিনি ব্যর্থ হয়েছেন। তিনি ধর্মনিরপেক্ষতার কথা বলেছেন। একাত্তরের স্বাধীনতাবিরোধী ভূমিকার জন্য জামায়াতের ক্ষমা চাওয়া উচিত এবং এই ক্ষমা চাওয়ার বিষয়ে তিনি জামায়াতে অনেক চেষ্টা করেছেন বলেও তার দাবি। এটা ভূতের মুখে রাম নামের মতোই শোনায়। কারণ পদত্যাগের আগ মুহূর্ত পর্যন্ত তিনি জামায়াতের লোক ছিলেন এবং পদত্যাগ মুহূর্তের কথাগুলোও জামায়াত-বিরুদ্ধ বলে মনে হয় না। যার প্রমাণ পাওয়া যায় পদত্যাগে চিঠিতে উল্লেখ ১৩ নম্বর অংশে, যেখানে আব্দুর রাজ্জাক লিখেছেন— ‘পরিশেষে জামায়াত থেকে পদত্যাগের পূর্বমুহূর্তে একটি বিষয় বলা আমার দায়িত্ব মনে করছি। গত ১০ বছরে জামায়াত নেতারা অনেক ঘাত-প্রতিঘাত সহ্য করেছেন। তা এখনও অব্যাহত। এটি প্রশংসনীয় যে এই কঠিন ও বৈরী সময়েও ব্যাপক কষ্ট এবং অসীম ত্যাগ ও তিতীক্ষার মাধ্যমে জামায়াত নেতারা দলের ঐক্য বজায় রেখেছেন। দলের প্রতি তাদের নিষ্ঠা ও একাগ্রতা অনস্বীকার্য।’ তার এই বক্তব্য কী প্রমাণ করে? এক পদত্যাগী নেতা যখন দল থেকে পদত্যাগের মুহূর্তেও দলে ঐক্য আছে— এমন স্টেটমেন্ট দিয়ে যান, তখন তার এই পদত্যাগ কি আসলেও পদত্যাগ; নাকি কোনো কৌশলের অংশ?

কী হতে পারে সে কৌশল? কেনই বা এমন কৌশল? আর কৌশলে কেন ব্যারিস্টার আব্দুর রাজ্জাক? প্রশ্ন জাগছে এবং এই প্রশ্নগুলোরও উত্তর আছে!

সাম্প্রতিক সময়ে চরম দুঃসময়ে থাকা জামায়াতে ইসলামীর রাজনীতি নিষিদ্ধ হওয়ার পথে। জামায়াত নিষিদ্ধের গণদাবিকে সরকার ইতিবাচকভাবে নিয়েছে। প্রধানমন্ত্রী, আইনমন্ত্রীসহ সরকারের নীতিনির্ধারকদের বক্তব্যে সে ইঙ্গিত মিলছে। রাজনৈতিক দল হিসেবে জামায়াতে ইসলামীর নিবন্ধন হাইকোর্টের রায়ে বাতিল হয়েছে অনেক আগেই। একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের আগে নির্বাচন কমিশনও নিবন্ধন বাতিল সংক্রান্ত গেজেট প্রকাশ করেছে। এর আগে জামায়াতের দলীয় প্রতীকও বাতিল হয়েছে। একাত্তরে মানবতাবিরোধী অপরাধে জড়িত দলীয় সিদ্ধান্তে জড়িত থাকলেও প্রচলিত আইনে সংগঠন  হিসেবে জামায়াতের বিচারে যে আইনি সীমাবদ্ধতা ছিল, সেটা দূরীকরণে সরকারের দায়িত্বশীলরা কাজ শুরু করেছেন। আইনি এই সীমাবদ্ধতা দূর হলে সংগঠন হিসেবে জামায়াতের বিচারের পথ উন্মুক্ত হয়ে যাবে। সেক্ষেত্রে নির্বাহী আদেশের চাইতে বিচারিক রায়ে জামায়াতের রাজনীতি নিষিদ্ধ হওয়ার সম্ভাবনা থাকছে।  আর এই মুহূর্তে সরকার চাইছে আদালত বিষয়টি ফায়সালা করুক। কারণ শেখ হাসিনার নেতৃত্বাধীন আওয়ামী লীগ জামায়াতের রাজনীতির নিষিদ্ধের ব্যাপারটি নিয়ে কেউ তাদের ওপর দায় চাপাক— এমনটা চাইছে না। জামায়াত নিষিদ্ধের জাতীয় ও বৈশ্বিক বিভিন্ন যুক্তি সরকারের কাছে থাকলেও ‘প্রতিপক্ষের রাজনীতি সরকার বন্ধ করেছে’— ক্ষীণস্বরে হলেও দেশ-বিদেশে এমন অভিযোগ উঠতে পারে— এমন চিন্তায় সরকার ধীরে চলো নীতিতে এগুচ্ছে। জামায়াতের বিচার ও জামায়াতের রাজনীতি নিষিদ্ধ যেখানে আইনি প্রক্রিয়া ও বিচারিক ধারায় সম্ভব, সেখানে সরকার ওই পথেই যাচ্ছে।

জামায়াত নিষিদ্ধের গণদাবি ও আলোচনা যখন জোরদার, যখন একাত্তরের মানবতাবিরোধী অপরাধের দায়ে আইন সংশোধনের মাধ্যমে জামায়াত দলীয়ভাবে বিচারের সম্মুখীন হওয়ার অপেক্ষায়, তখন দলটির দরকার ছিল এই আলোচনার মোড় ঘুরানো।  আর সেজন্যই হঠাৎ করেই বিভিন্ন গণমাধ্যমে জামায়াতের মধ্যে সংস্কার নিয়ে আলোচনার খবরগুলো আসতে লাগল। এবং এটা জামায়াতের নেতাদের ‘নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক’ সূত্রে। অথচ রাজনীতি সচেতন নাগরিকমাত্রই জানেন, আর যাই হোক জামায়াত তাদের অভ্যন্তরীণ বিষয় কারও সঙ্গে শেয়ার করে না। কিন্তু আশ্চর্যজনকভাবে এটা করল! এবং এটা যে তাদের পরিকল্পনার অংশ ছিল সেটা বলাই বাহুল্য। আর এই আলোচনা চলমান থাকাকালের একটা পর্যায়ে তাদের সহকারী সেক্রেটারি জেনারেল ব্যারিস্টার আব্দুর রাজ্জাক পদত্যাগই করে বসলেন। আব্দুর রাজ্জাকের এই পদত্যাগে যে একাত্তর বিষয়ে এতখানি গুরুত্ব দেওয়া হলো, সেই একাত্তরের ভূমিকার কারণেই দলটি বর্তমানে নাজুক পরিস্থিতিতে। পদত্যাগীর এই বক্তব্য দিয়ে জামায়াত  বলতে চাইছে দলটির মধ্যে থাকা অনেকেই একাত্তরের ভূমিকার জন্য অনুতপ্ত। এতে করে তাদের লাভ হচ্ছে— সাধারণ মানুষদের অনেকেই বিভ্রান্ত হবেন; অনেকেই ভাববেন জামায়াতের মধ্যেও অনেক একাত্তরপক্ষের লোক রয়েছেন।

বিজ্ঞাপন

জামায়াতের এই কৌশলে ব্যারিস্টার আব্দুর রাজ্জাককে সামনে আনা হয়েছে। কারণ মানবতাবিরোধী অপরাধীদের প্রধান আইনজীবী হিসেবে দেশ-বিদেশে তার পরিচিতি। যুদ্ধাপরাধীদের প্রধান আইনজীবী হিসেবে আদালতে গণহত্যার দায় অস্বীকার করেও আব্দুর রাজ্জাকও চান একাত্তরের ভূমিকার জন্য জামায়াত ক্ষমা প্রার্থনা করুক। এর মাধ্যমে তারা বদলে গেছে— এমন একটা বার্তা প্রচার করতে চায়। এতে করে কিছু লোক বিভ্রান্ত হয়ে পড়বে। আর এই বিভ্রান্তিই আপাত তাদের মূলধনের অংশ করতে চায় তারা। এজন্যই ব্যারিস্টার আব্দুর রাজ্জাক দেশত্যাগের পর হুট করে আলোচনায় চলে এসেছেন, বা তাকে সামনে নিয়ে আসা হয়েছে।

এখানে জামায়াতের রাজনৈতিক কৌশল কাজ করছে। তারা চায় এই মুহূর্তে দলটির নিষিদ্ধের যে প্রক্রিয়া চলমান, তাতে কিছু বিভ্রান্তি মিশিয়ে গতি শ্লথ করা। এখানে তারা সফল হলে জামায়াতের রাজনীতি আরও কিছুদিন টিকবে, পাশাপাশি ব্যারিস্টার আব্দুর রাজ্জাকও রাজনৈতিক ও পেশাগত পুনরুজ্জীবন লাভ করবেন।

যে একাত্তরের গণহত্যাকারীদের পক্ষে আদালতে দাঁড়িয়ে এতদিন বাংলাদেশের স্বাধীনতাযুদ্ধের শহীদদের  রক্তের সঙ্গে বিশ্বাসঘাতকতা করেছেন, সেই একাত্তরকেই এখন জামায়াতে ইসলামীর জন্যে ঢাল ও নিজের পুনর্বাসনের সিঁড়ি হিসেবে ব্যবহার করছেন ব্যারিস্টার আব্দুর রাজ্জাক। এটা জামায়াত ও তার একটা কৌশল ছাড়া আর কিছু নয়। জামায়াতে তার তিন দশকের রাজনীতি যেখানে একাত্তরকে বিরোধিতা আর গণহত্যাকারী যুদ্ধাপরাধীদের সমর্থন করেই কাটল, সেখানে চার পৃষ্ঠার একটা পদত্যাগপত্রের কয়েকশ শব্দে সবকিছু মিথ্যা হয়ে যাবে— এমনটা ভাবার কারণ নেই। আব্দুর রাজ্জাকের কথাগুলো আমার কাছে তাই কৌশলী এক বিভ্রান্তিপত্র, আর জামায়াতে ইসলামীকে বাঁচিয়ে রাখার আরও এক প্রচেষ্টা বলেই মনে হয়।

লেখক:  সাংবাদিক

Tags:

বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন