বিজ্ঞাপন

জিয়া স্মৃতি জাদুঘর: আন্দোলনের ঘোষণা চট্টগ্রাম বিএনপির

February 19, 2019 | 2:45 pm

।। স্পেশাল করেসপন্ডেন্ট ।।

বিজ্ঞাপন

চট্টগ্রাম ব্যুরো: সাবেক রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমানের নামে গড়ে তোলা ‘জিয়া স্মৃতি জাদুঘরকে’ মুক্তিযোদ্ধা স্মৃতি জাদুঘরে রূপান্তরের প্রতিবাদে আন্দোলনে নামার ঘোষণা দিয়েছে চট্টগ্রাম মহানগর বিএনপি। একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে পরাজয় এবং মামলা-কারাবাসের ধকল কাটিয়ে ‘জিয়া স্মৃতি জাদুঘরকে’ ইস্যু করে মাঠে নামতে চান চট্টগ্রামের বিএনপি নেতারা।

মঙ্গলবার (১৯ ফেব্রুয়ারি) সকালে এক সংবাদ সম্মেলনে চট্টগ্রাম মহানগর বিএনপির সভাপতি ডা.শাহাদাত হোসেন আন্দোলনের কর্মসূচিও ঘোষণা করেছেন। সংসদ নির্বাচনের দেড় মাস পর কারামুক্ত নগর বিএনপির সভাপতি-সাধারণ সম্পাদকসহ জ্যেষ্ঠ নেতারা এই প্রথম সংবাদ সম্মেলনে এসেছেন।

শাহাদাত হোসেন বলেন, ‘মন্ত্রিসভায় প্রস্তাবের পর জিয়া স্মৃতি জাদুঘরের নামফলকে কালি লাগিয়ে জিয়া’র নাম মুছে দেওয়া হয়েছে। এছাড়া শহীদ প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমানের ম্যুরাল কাপড় দিয়ে ঢেকে দেওয়া হয়েছে। এই জাদুঘর সংস্কৃতি মন্ত্রণালয়ের অধীন একটি সরকারি প্রতিষ্ঠান। আমরা ইতোমধ্যে জাদুঘরের দায়িত্বপ্রাপ্ত কর্মকর্তার সঙ্গে দেখা করে ম্যুরালের কাপড় সরিয়ে ফেলা এবং নামফলকের কালি মুছে জিয়ার নাম পুনঃস্থাপনের জন্য ২৪ ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত সময় বেধে দিয়েছি। অন্যথায় ২৫ ফেব্রুয়ারি থেকে আমরা আন্দোলনে নামব।’

বিজ্ঞাপন

সংবাদ সম্মেলনে ঘোষিত কর্মসূচির মধ্যে আছে, ২৫ ফেব্রুয়ারি সিএমপি কমিশনার এবং চট্টগ্রামের জেলা প্রশাসক বরাবরে স্মারকলিপি প্রদান এবং ২৬ ফেব্রুয়ারি মানববন্ধন।

মানববন্ধন থেকে পরবর্তী ঘোষণা করা হবে জানিয়ে শাহাদাত বলেন, ‘গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়ায় আন্দোলন চলবে। জিয়া স্মৃতি জাদুঘরকে মুক্তিযুদ্ধ স্মৃতি জাদুঘর করার সিদ্ধান্ত (প্রস্তাব) প্রত্যাহার করতে হবে।’

তিনি বলেন, ‘ভোট ডাকাতির নির্বাচন’ থেকে দৃষ্টি সরাতে জিয়া স্মৃতি জাদুঘরের নাম পরিবর্তনের প্রস্তাব মন্ত্রিসভায় তোলা হয়েছে দাবি করে শাহাদাত বলেন, ‘নাম পরিবর্তনের প্রস্তাব তোলার পরদিন ১২ ফেব্রুয়ারি মুক্তিযুদ্ধের স্বপক্ষের ছাত্রফোরাম নামে একটি সংগঠনের ব্যানারে কিছু চিহ্নিত সন্ত্রাসী জিয়া জাদুঘরের নামফলক থেকে প্রকাশ্যে শহীদ জিয়ার নাম মুছে ফেলে। তারা শিক্ষা উপমন্ত্রী ও চট্টগ্রামের সাবেক মেয়র এবিএম মহিউদ্দিন চৌধুরীর ছেলে ব্যারিস্টার মহিবুল হাসান চৌধুরীর ছবি-সম্বলিত ব্যানার টাঙিয়ে দেয়।’

বিজ্ঞাপন

শিক্ষা উপমন্ত্রী মহিবুল হাসান চৌধুরী নওফেলকে উল্লেখ করে শাহাদাত আরও বলেন, ‘যিনি নাম পরিবর্তনের প্রস্তাব করেছেন, তিনি চট্টগ্রামের একটি ঐতিহ্যবাহী রাজনৈতিক পরিবারের সন্তান। আমরা তার কাছ থেকে অনেক কিছু আশা করেছিলাম। কিন্তু দুঃখজনক হলেও সত্য যে, তার তত্ত্বাবধানেই সব ধরনের কর্মকাণ্ড চলছে বলে আমরা জানতে পেরেছি।’

নামফলকে জিয়া’র নামের উপর কালি লাগানো এবং ম্যুরাল কাপড়ে ঢেকে দেওয়ার জন্য দায়ীদের গ্রেফতারের দাবি জানিয়ে শাহাদাত বলেন, ‘একটি সরকারি প্রতিষ্ঠানে ঢুকে যারা এই ধরনের কর্মকাণ্ড করেছে, আমরা তাদের দুষ্কৃতিকারী হিসেবে চিহ্নিত করতে চাই। জাদুঘর কর্তৃপক্ষের উচিৎ ছিল তাদের পুলিশের হাতে তুলে দেওয়া। আমরা পুলিশকে অনুরোধ করছি- যারা এই কাজ করেছে তাদের ছবি আছে, পত্রিকায় নাম আছে। ছবি ও নাম দেখে তাদের গ্রেফতার করুন।’

প্রসঙ্গক্রমে শাহাদাত চট্টগ্রাম নগরীর বিপ্লব উদ্যানে জিয়াউর রহমানের ম্যুরাল ভেঙ্গে ফেলার প্রতিবাদ জানিয়ে বলেন, ‘এই স্থান থেকে ১৯৭১ সালের ২৫ মার্চ রাতে জিয়াউর রহমান তৎকালীন ইস্ট বেঙ্গল রেজিমেন্টে বিদ্রোহের সূচনা করেছিলেন। এটা ভেঙ্গে ফেলার মধ্য দিয়ে আওয়ামী লীগ প্রমাণ করেছে- তারা মুক্তিযুদ্ধের লেবাসধারী। আওয়ামী লীগ নেতারা মুখে শুধু মুক্তিযুদ্ধের চেতনার কথা বলেন। আসলে তারা মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় বিশ্বাস করে না। তাদের চরিত্র দেশবাসীর সামনে তুলে ধরতে হবে।’

নগরীর নাসিমন ভবনে দলীয় কার্যালয়ের সামনের চত্বরে আয়োজিত এই সংবাদ সম্মেলনে আরও বক্তব্য রাখেন নগর বিএনপির সিনিয়র সহ-সভাপতি আবু সুফিয়ান ও সাধারণ সম্পাদক আবুল হাশেম বক্কর এবং বিএনপির নেতৃত্বাধীন ২০ দলের শরিক কল্যাণ পার্টির চেয়ারম্যান সৈয়দ মুহাম্মদ ইব্রাহীম বীরপ্রতীক।

বিজ্ঞাপন

সৈয়দ মুহাম্মদ ইব্রাহীম বলেন, ‘বিতর্কিত নির্বাচনের পর প্রধানমন্ত্রী জাতির উদ্দেশে ভাষণ দিয়ে জাতীয় ঐক্যের কথা বলেছিলেন। মহামান্য রাষ্ট্রপতি সংসদ অধিবেশনের শুরুতে জাতীয় ঐক্যের কথা বলেছিলেন। জাতীয় ঐক্যের নমুনা জিয়াউর রহমানের নাম মুছে ফেলা নয়। দেশের অর্ধেক বেশি জনগোষ্ঠীকে বাদ দিয়ে জাতীয় ঐক্য হয় না। এটা হবে আওয়ামী ঐক্য।‘

জিয়া স্মৃতি জাদুঘরকে মুক্তিযোদ্ধা স্মৃতি জাদুঘরে রূপান্তরের প্রস্তাবের মধ্য দিয়ে রণাঙ্গনের মুক্তিযোদ্ধাদের ইতিহাস থেকে মুছে ফেলার চক্রান্ত হচ্ছে বলে মন্তব্য করেছেন ইব্রাহীম।

এতে আরও উপস্থিত ছিলেন বিএনপির কেন্দ্রীয় সাংগঠনিক সম্পাদক মাহবুবুর রহমান শামীম, শ্রম বিষয়ক সম্পাদক এ এম নাজিম উদ্দিন, চট্টগ্রাম জেলা আইনজীবী সমিতির সভাপতি এস এম বদরুল আনোয়ার, চট্টগ্রাম দক্ষিণ জেলা বিএনপির সিনিয়র সহ-সভাপতি শেখ মো. মহিউদ্দিন, নগর বিএনপির সহ-দপ্তর সম্পাদক মো. ইদ্রিস আলী এবং নগর মহিলা দলের সভাপতি ও কাউন্সিলর মনোয়ারা বেগম মণি।

উল্লেখ্য, গত ১১ ফেব্রুয়ারি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত মন্ত্রিসভার বৈঠকে শিক্ষা উপমন্ত্রী মহিবুল হাসান চৌধুরী নওফেল জিয়া স্মৃতি জাদুঘরকে মুক্তিযুদ্ধ স্মৃতি জাদুঘর হিসেবে রূপান্তরের প্রস্তাব তোলেন।

১৯১৩ সালে চট্টগ্রাম নগরীর কাজির দেউড়ি এলাকায় তৎকালীন বৃটিশ শাসকরা দৃষ্টিনন্দন ভবনটি নির্মাণ করে, যা পরে চট্টগ্রাম সার্কিট হাউজ হিসেবে রাষ্ট্রীয় অতিথিদের জন্য ব্যবহৃত হতো।

১৯৮১ সালের ৩০ মে চট্টগ্রাম সফরে এসে সার্কিট হাউজের চার নম্বর কক্ষে উঠেছিলেন তৎকালীন সামরিক শাসক জিয়াউর রহমান। ভোরের দিকে এক সামরিক অভ্যুত্থানে তিনি নিহত হন। ওই বছরের ৩ জুন সার্কিট হাউসকে একটি জাদুঘরে রূপান্তরের জন্য সরকারি প্রস্তাব গৃহীত হয়।

এরপর ১৯৯১ সালে জিয়াউর রহমান স্ত্রী বেগম খালেদা জিয়ার নেতৃত্বে বিএনপি রাষ্ট্রক্ষমতায় আসে। ১৯৯৩ সালের ৬ সেপ্টেম্বর সেই জাদুঘরের উদ্বোধন করা হয়। জাদুঘরে জিয়াউর রহমানের হত্যাকাণ্ডের নমুনা, ব্যক্তিগত সামগ্রী এবং স্বাধীনতা ঘোষণার ট্রান্সমিটারটি সংরক্ষিত আছে।

সারাবাংলা/আরডি/এনএইচ

Tags: ,

বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন