February 20, 2019 | 3:06 am
।। হাসনাত শাহীন ।।
মানুষের আদিম বৃত্তির অন্যতম বৈশিষ্ট্য হলো গল্প বলা বা গল্প শোনা। গল্প বলা বা গল্প শোনার প্রবণতা মানুষের মধ্যে প্রাচীনকাল থেকে বিদ্যমান থাকলেও এর সাহিত্যরূপ পেতে বেশ সময় লেগেছে। কবিতা, নাটক, উপন্যাস এমনকি প্রবন্ধেরও পরে সৃষ্টি হয়েছে গল্প; যা এখন আমাদের কাছে ‘ছোটগল্প’ হিসেবে পরিচিত। সেই হিসেবে ছোটগল্প সাহিত্যের নবীনতম শাখা। সাহিত্যের এই নবীনতম শাখা হলেও ছোটগল্প বিভিন্ন দিক থেকে সাহিত্যের তুলনামূলক প্রাচীন শাখার চেয়ে অনেক এগিয়ে গেছে। তারই প্রমাণ মেলে এর জনপ্রিয়তা এবং বাঙালির প্রাণের মেলা ‘অমর একুশে গ্রন্থমেলা’য় বই প্রকাশ এবং বিক্রির হিসেবে।
বিগত কয়েক বছরের মতো এবারের বাঙালির প্রাণের মেলা ‘বইমেলা’র শুরু থেকে ১৯তম দিন পর্যন্ত খোঁজ নিয়ে সেই সত্যত্যাই পাওয়া গেছে। মেলায় অংশ নেওয়া বিভিন্ন প্রকাশনা সংস্থার প্রকাশকরাও বলছেন-সংখ্যাগত দিক থেকে নতুন বইয়ের মধ্যে কবিতার বই বেশি থাকলেও বিক্রির ক্ষেত্রে উপন্যাস, ছোটগল্প, নাটক, কবিতা, মহীয়সীদের জীবনী ও বৈজ্ঞানিক কল্পকাহিনী’র চেয়ে অনেক পিছিয়ে আছে। বিক্রির দিক থেকে অন্যাবারের মতো এবারও সবচেয়ে এগিয়ে আছে উপন্যাস, ঠিক এরপরেই বেশি বিক্রি হচ্ছে-ছোটগল্প। সুতরাং এটা বলা যায়, বিগত কয়েক বছরের মতো এবারের এই গ্রন্থমেলায় বই প্রকাশের দিক থেকে এখন পর্যন্ত যেমন দ্বিতীয় অবস্থানে আছে তেমনই বিক্রির দিক থেকেও আছে দ্বিতীয় অবস্থানে।
প্রকাশকরা আরও বলছেন, নতুন গল্পকারদের বইয়ের চেয়ে পুরনো ও জনপ্রিয় লেখকদের গল্পের বই বেশি বিক্রি হচ্ছে। তাদের ভাষায়, গল্পের বই এবার তেমন ভালো যাচ্ছে না। তবে, বিগত কয়েকবছরের মতো এবারও উপন্যাসের পরেই গল্পের বই বেশি বিক্রি হচ্ছে; যার অধিকাংশই চিরন্তন সব লেখকদের বই। আর এই উপন্যাস বিক্রির দৌড়ে এবারও এগিয়ে রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর, শরৎচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়, বনফুল-সহ দেশের চিরন্তন সব সাহিত্যিকরা।
এ বিষয়ে ইত্যাদি গ্রন্থ প্রকাশের অন্যতম সত্বাধিকারী আদিত্য অন্তর সারাবাংলা’কে বলেন, ছোটগল্প মেলাতে কম বিক্রি হয়। তবে, প্রতিবারের মতো এবারও আমাদের এখানেও চিরায়ত গল্পের বই ভালো বিক্রি হচ্ছে। তিনি আরও বলেন, প্রায় প্রত্যেক কথাসাহিত্যিদের ছোটগল্প দিয়ে লেখা সূচনা হলেও এসব সাহিত্যিকরা একসময় উপন্যাসের দিকে ঝুঁকে পড়েন। এবং তাদের সেই উপন্যাস ভালো বিক্রি হয়। এসময় তিনি উপমহাদেশের অন্যতম গল্পকার হাসান আজিজুল হকের উদাহরণ টেনে বলেন, হাসান আজিজুল হকের লেখার শুরুটা ছোটগল্প দিয়ে। এখন তার ছোটগল্প বাংলাসাহিত্যের ইতিহাসে অন্যতম সেরার কাতারে। কিন্তু আমার এখানে তার যেক’টা বই আছে তার মধ্যে তার উপন্যাস ভালো বিক্রি হচ্ছে।
এদিকে, মঙ্গলবার ১৯তম দিন পর্যন্ত এবারের প্রাণের মেলা গ্রন্থমেলার আয়োজন প্রতিষ্ঠান বাংলা একাডেমির জনসংযোগ উপবিভাগের তথ্যের ভিত্তিতে বইপ্রকাশের সার্বিক চিত্র। যাতে উঠে এসেছে এবারও গল্পের বই প্রকাশের দিক থেকে দ্বিতীয় স্থানে আছে। একাডেমির জনসংযোগ উপবিভাগের তথ্য মতে এবারের গ্রন্থমেলার এ ১৯তম দিন পর্যন্ত মোট নতুন বই প্রকাশিত হয়েছে ২ হাজার ৭ শত ৫৮টি। আর, এসব প্রকাশিত বইয়ের মধ্যে সংখ্যার দিক থেকে এবারের বইমেলায়ও এগিয়ে আছে কবিতা (৮৮৩টি)’র পরে আছে গল্পগ্রন্থ (৪৭১টি) এবং এর পরেই আছে উপন্যাস; যার সংখ্যা ৪৪৩টি।
মঙ্গলবারের নতুন বইয়ের সংখ্যা:
বাংলা একাডেমির জনসংযোগ উপবিভাগের তথ্যমতে, মঙ্গলবার ১৯তম দিনে মেলায় নতুন বই এসেছে ১৪২টি। এর মধ্যে গল্পের বই এসেছে ৩৪ টি, উপন্যাস ১৫টি, প্রবন্ধ ৭টি, কবিতা ৪৫ টি, গবেষণা ৭টি, ছড়া ৫টি, জীবনীগ্রন্থ ১১টি, মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক বই ৪টি, বিজ্ঞান বিষয়ক বই ২টি, ভ্রমন বিষয়ক বই ২টি, ইতিহাস ভিত্তিক ১টি, স্বাস্থ্য বিষয়ক বই ১টি, অনুবাদ বই ১টি, বৈজ্ঞানিক কল্পকাহিনি ১টি এবং অন্যান্য বিষয়ে বই এসেছে ৬টি।
এবারের বইমেলার কিছু নতুন ছোট গল্পের বই:
ইত্যাদি গ্রন্থ প্রকাশ থেকে প্রকাশত হয়েছে সুভাষ বিশ্বাসের ‘গল্পসংগ্রহ’, তৌফিকুর রহমানের ‘রুপার মাদুলি’ ও বুলবুল সিনহা’র ‘ভালোবাসার গল্প’। অনিন্দ্য প্রকাশ থেকে প্রকাশিত হয়েছে-সাদেক চৌধুরী, আসিফ চৌধুরী এবং জয় নন্দী সম্পাদিত দুই বাংলার উদীয়মান গল্পকারদের ছোটগল্প সংকলন ‘গল্পে এপার ওপার’, সাবরিনা চৌধুরী’র ‘অর্ন্তজাল’, ড. মির্জা গোলাম সারোয়ার পিপিএম-এর ‘জীভন নদীর বাঁকে’, আহমেদ আব্বাসের ‘আত্রাই নদীল বাঁকে বাঁকে’, সাইফুল আলম ও আজহারুল হক ফরাজী’র সম্পাদিত ‘শেষ হইয়াও হইলো না শেষ’, শাহাদাত রাসএলের ‘জীবন এক সুস্বাদু হেমলক’, মাহবুব ময়ূখ বিশারদের ‘তর্কশয্যায় মৃত্যু’ ও মেহেদি হাসান গালিবের ‘সদ্য বিবাহিত ব্যাচেলর’। ঐতিহ্য থেকে প্রকাশিত হয়েছে কবি সব্যসাচী সৈয়দ শামসুল হকের ‘কানার হাটবাজার ও অন্যান্য’, জাকির তালুকদারের ‘গল্পের জার্নাল’, নাহিদা নাহিদের ‘পুরুষপাঠ’, মেহেদী উল্লাহ’র ‘অনুমেয় উষ্ণ অনুরাগ’ ও মেহেদী ধ্রুব’র ‘মেঘ ও মানুষের গল্প’ ইত্যাদি। উৎস প্রকাশন থেকে প্রকাশিত হয়েছে চিরন্তন গল্পকার বঙ্কিমচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়ের ‘কমলাকান্তের দপ্তর’, প্রেমেন্দ্র মিত্রের ‘শ্রেষ্ঠ গল্প’ ভ্যালেন্তিনা অর্পণা গোমেজের ‘বহতা জীবনের দর্পণ’, কাউসার চৌধুরী’র ‘বায়োস্কোপ’ ও মোহাম্মদ আলী’র ‘ধবল বিলের মেঘলা বালক’।
অনন্যা প্রকাশ থেকে প্রকাশিত হয়েছে ইশরাত জাহান ঊর্মি’র ‘নিমশহরের নাদিম মাহমুদ’, রীনা গুলশানের ‘যখন নিঃশব্দে’, হোসনে আরা জাহানের ‘সোমেশ্বরী আখ্যান’, এলিজা খাতুনের ‘ভাটির টানে’ ও জাহ্নবী জাইমা’র ‘সে ও রহস্যময়ী’ ইত্যাদি। পুথিনিলয় থেকে প্রকাশিত হয়েছে-হরিশংকর জলদাসের ‘অনার্য-অর্জন’, ইভান অনিরুদ্ধের ‘মুক্তিযুদ্ধের পেনশন চেক ও ঘুষের গল্প’, ড. মোহাম্মদ আমীনের ‘কন্দর্পের বান ও কলিযুগের গল্প’, সুভাষ সব্ববিদ্যা’র ‘মধ্যরাতের কান্না’-সহ বেশ কয়েকটি গল্পগ্রন্থ। ইন্তামিন প্রকাশনী থেকে প্রকাশিত হয়েছে- মালেক মুস্তাকিমের ‘নগর মানুষ’, মোস্তাক আহমেদের ‘সাত রঙ’, কুমার অরবিন্দের ‘অসমাপ্ত বিকেল’, নিশাত জাহান সাচি’র ‘‘একমুঠো ভাত’ এবং ‘অগ্নি নারী’’ ও মো. খোরশেদ আলম বিপ্লবের ‘বান ডাকা জল’-সহ বেশ কয়েকটি ছোটগল্পের বই। রোদেলা থেকে প্রকাশিত হয়েছে নূর কামরুন নাহারের ‘শিস দেয়া রাত’। প্রকাশনা সংস্থা তাম্রলিপি থেকে প্রকাশিত হয়েছে লাজ্বাতুল কাওনাইনের ‘নোনা জলের বদ্বীপ’ ও আশরাফুল আলম সাগরের ‘সাদা-কালো’-সহ বেশ কয়েকটি বই।
সারাবাংলা/এমআরপি