বিজ্ঞাপন

‘সব হাসপাতাল-মর্গে ঘুরেছি, আব্বুর লাশটা পাইনি’

February 23, 2019 | 11:02 am

।। স্পেশাল করেসপন্ডেন্ট ।। 

বিজ্ঞাপন

ঢাকা মেডিকেল কলেজ  মর্গে একটি ছবি হাতে দাঁড়িয়ে আছে  এক কিশোরী । চোখ দিয়ে অনবরত পানি ঝড়ছে। হাতে শকত্ করে ধরে রেখেছে একটি ছবি। এটা কার ছবি -জানতে চাইলে কিশোরী বলে, ‘আমার আব্বু এটা’। সেদিন  আব্বু  ওষুধ কিনতে বাসা থেকে বের হন। আব্বুকে  বলেছিলাম তাড়াতাড়ি বাসায় ফিরতে, আব্বুও বলেছিল-আচ্ছা। কিন্তু আব্বু আর বাসায় ফেরে নি। তাই তাকে খুঁজতে এসেছি। কিশোরী মেয়েটি যখন এসব কথা বলছে তখন পাশে দাঁড়িয়ে এক নারী কাঁদছেন, কাঁদছেন অন্য স্বজনরাও।

কিশোরী মেয়েটির নাম ফারিহা তাসনীম রিচি। অগ্রনী স্কুল অ্যান্ড কলেজের ষষ্ঠ শ্রেণির শিক্ষার্থী। পাশে দাঁড়িয়ে কাঁদছেন রিচির বোন ফাহিমা তাসনীম সূচি, মা ফাতেমা আক্তার, ফুপাতো ভাই নজরুল ইসলাম সহ অন্যরা।

রিচি বলেন, আমাদের বাড়ির কয়েকবাড়ি পরেই আগুন লাগে। আম্মু আমাকে বলে, তোমার আব্বুকে ফোন দাও, সঙ্গে সঙ্গে আমি ফোন দেই আব্বুকে, কিন্তু তখন থেকেই তার ফোন বন্ধ পাই। তারপর থেকে সব হাসপাতালে, সব মর্গে দেখেছি, কিন্তু কোথাও দেখিনি, কোথাও আমরা আব্বুর লাশটা পাইনি।

বিজ্ঞাপন

আরও পড়ুন: ‘কেমিক্যাল অবশ্যই ছিল, অগ্নিনির্বাপক ব্যবস্থা ছিল না’

তাই তারা বাবার লাশটা শনাক্ত করতে এসেছি মর্গে। মা আর দুই বোন মিলে ডিএনএ টেস্টের জন্য স্যাম্পল দিচ্ছি এখন।

নজরুল ইসলাম বলেন, গত ২১ ফেব্রুয়ারি রাতে পুরান ঢাকার চক বাজারে অগ্নিকাণ্ডের ঘটনার পর থেকে রিচির বাবা মো. ফয়সাল সারোয়ার নিখোঁজ রয়েছেন। ঢাকার সব হাসপাতাল, মর্গ খুঁজে কোথাও পান নি তাকে। তাই আজ মা আর দুই মেয়ে এসেছেন ডিএনএ টেস্টের জন্য নমুনা দিতে।

বিজ্ঞাপন

ফারিহার বাবা পুরনো ঢাকার চাঁদনী ঘাটে প্লাস্টিক পণ্যের ব্যবসা করতেন। ফারিহা বলেন, সেদিন রাতে আমি আব্বুকে বলেছিলাম, তুমি তাড়াতাড়ি বাসায় আইসো, আব্বুও আচ্ছা বলেছিল। কিন্তু আব্বু আর আসেনি।

বাবা কেন বেরিয়েছিলে জানতে চাইলে ফারিহা বলেন, ওষুধ কেনার জন্য বেরিয়েছিল।

ফারিহার ফুপাতো ভাই নজরুল ইসলাম বলেন, তার ছোট ভাইয়ের বিয়ের কথা চলছে, সে বিষয়ে পারিবারিক আলোচনার জন্যই সেদিন তার তাদের বাসাতেও যাবার কথা ছিল, কিন্তু আর কথা হয়নি তার সঙ্গে।

বিজ্ঞাপন

উল্লেখ্য, প্রসঙ্গত, বুধবার (২০ ফেব্রুয়ারি) রাত সাড়ে ১০টার দিকে আগুন লাগে চুড়িহাট্টার হাজী ওয়াহেদ ম্যানসনে। প্রত্যক্ষদর্শীদের কারও কারও দাবি, ওয়াহেদ ম্যানসনের সামনে দাঁড়িয়ে থাকা একটি পিকআপের সিলিন্ডার বিস্ফোরণ থেকে আগুনের সূত্রপাত।

কেউ বলছেন, আগুনের সূত্রপাত হোটেল আমানিয়া থেকে। কেউ মনে করছেন, ওই ভবনের দ্বিতীয় ও তৃতীয় তলার কেমিক্যালের গোডাউন থেকেই শুরু আগুনের। তবে কেমিক্যালের গোডাউনে আগুন লাগার পর তা মুহূর্তের মধ্যে ছড়িয়ে পড়ে আশপাশের কয়েকটি ভবনে।

বৃহস্পতিবার (২১ ফেব্রুয়ারি) দুপুরে এ অগ্নিকাণ্ডে ফায়ার সার্ভিসের উদ্ধার অভিযান সমাপ্ত ঘোষণা করেন ঢাকা দক্ষিণ সিটির মেয়র সাঈদ খোকন।

উদ্ধার পরবর্তী সময়ে ৬৭ জনের মারা যাওয়ার তথ্য নিশ্চিত করেছে ফায়ার সার্ভিস ও ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ। আহত হয়েছেন আরও ৪১ জন।

সারাবাংলা/জেএ/জেডএফ

বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন