বিজ্ঞাপন

‘নীড় ছোট ক্ষতি নেই, আকাশ তো বড়!’

February 23, 2019 | 3:05 pm

তিথি চক্রবর্তী।।

বিজ্ঞাপন

নীড় বা বাসা নির্দিষ্ট জায়গা নিয়েই হয়। কিন্তু আকাশ সীমাহীন। তবে এই ইট পাথরের শহরে আকাশকে খুব ছোট মনে হয় আমাদের। ঘরের ছোট্ট জানালা বা বারান্দা থেকে আকাশের বিশালতা কতটুকুই বা অনুভব করা যায়!

কিন্তু সাইদা আহমেদ ও হাসান তারেক চৌধুরী দম্পতির ছাদবাগান এই যান্ত্রিক শহরে আলাদা বিস্ময় এনেছে। যেখানে আকাশভরা সূর্য তারা ও প্রকৃতির রূপ উপভোগ করা যায়। অনেক বড় জায়গা জুড়েই তাদের এই ছাদবাগান। সাইদা ও তারেকের অনেক শ্রম ও প্রচেষ্টার ফল এটি।

বিজ্ঞাপন

গাছ খুব ভালোবাসেন এই দম্পতি। কখনও এমন হয় যে, গাছের সাথেও মনের কথা হয় তাদের।

ছাদবাগানের মাঝখানে টিনের ছাউনি দিয়ে তৈরি করা হয়েছে বসার জায়গা। টিনের চালে বৃষ্টির শব্দ উপভোগ করার জন্যই এই ব্যবস্থা। তবে শুধু বৃষ্টির দিনেই নয়, কাজ শেষে ঘরে ফেরার পর কখনও কখনও এই দম্পতি ছাদে যান। চা খেতে খেতে গল্প হয়, এভাবে নগর জীবনের ক্লান্তি দূর করেন নিমিষেই। এই প্রশান্তির সাথে অন্য কোনকিছুর তুলনা চলে না, জানালেন সাইদা আহমেদ।

বিজ্ঞাপন

নিজেদের পছন্দ অনুযায়ী ছাদবাগানে নানা ধরনের ফুল, ফল ও শাকসবজির গাছ লাগিয়েছেন এই দম্পতি। প্রতিদিনের শত ব্যস্ততার মাঝেও গাছের যত্ন নেন তারা।

এই দম্পতির ছাদবাগানে নানা ধরনের ফলের গাছ আছে। জাম্বুরা, লেবু, পেয়ারা, সফেদা, কামরাঙা, আম, কাঁঠাল, কমলা, বেদানা, মাল্টা, লিচু, স্ট্রবেরি, ড্রাগন ফল।

বিজ্ঞাপন

ফুলও আছে বিভিন্ন ধরনের। দেশি ফুলের মধ্যে আছে শিউলী, ঝুমকো লতা, জবা, হাজারি গোলাপ, বাগানবিলাস, কাঠগোলাপ, কামিনী, হাসনাহেনা, অ্যারোমেটিক জুঁই, শ্বেত চম্পা।

বিদেশি জাতের ফুলের মধ্যে রেখেছেন ককসিয়া, ডাকু, ক্রিপিজিনজার, হ্যাঙ্গিং ক্যাপ, বার্ড অব প্যারাডাইস, ক্ল্যামিটাস ভার্জিনিয়া, রোরো, সিজিয়াম, ক্যামেলিয়া, গার্ডেনিয়া কারিনা (গন্ধরাজের মতো গন্ধ), পাউডার পাফ সহ আরও নানা ধরনের ফুলগাছ। আছে ঘৃতকুমারী, থানকুনি, ধনে ও পুদিনা গাছ।

ছাদবাগানের একপাশে টেরাকোটা আছে। যা বাগানে এনেছে ভিন্নরকম সৌন্দর্য।

সাইদা আহমেদ বলেন, ছাদবাগান দেখাশুনার কাজ করেন মূলত হাসান তারেক চৌধুরী। তবে দুজনে মিলেই পরিকল্পনা করে সব কাজ করেন।

অনেকে মনে করেন, ছাদবাগান করতে কিংবা ঘর পরিপাটি রাখতে অনেক সময়ের প্রয়োজন। প্রতিদিনের ব্যস্ততায় এই কাজগুলো যেমন কঠিন, তেমনি ঝামেলার। কিন্তু সাইদা আহমেদ এই ভাবনার সাথে একমত না। তিনি মনে করেন, ইচ্ছা থাকলেই সময় বের করে নেওয়া যায়। আর ইচ্ছা না থাকলে সারাদিন শুয়ে বসে থেকেও সময় পাওয়া যায় না। আর দিনশেষে পরিপাটি একটি ঘরে থাকার আনন্দই আলাদা।

শুধু ছাদবাগান নয়, এই দম্পতি সুন্দরভাবে ঘর সাজাতেও পছন্দ করেন। সুন্দরের প্রতি আকর্ষণের কারণেই ছিমছাম ও পরিপাটি করে ঘর সাজাতে ভালোলাগে তাদের, জানালেন সাইদা।

হাসান তারেক চৌধুরী শখের বসে ফটোগ্রাফি করেন। বাসার সদর দরজার পাশে ও বসার ঘরের দেওয়ালে তার অসাধারণ কিছু ফটোগ্রাফি রাখা হয়েছে।

তাছাড়া নানা জায়গা ঘুরে তিনি যেসব ছবি তুলেছেন, সেগুলো অ্যালবামে যত্ন করে রেখেছেন।

সাইদা আহমেদ জানান, তিনি শারীরিকভাবে অত্যন্ত সুস্থ। এর কারণ হিসেবে তিনি বলেন, ঘরদোর ও ছাদবাগানের কাজ করার কারণে শারীরিক অনেক ব্যায়াম হয়। ফলে মুটিয়ে যাওয়া সহ অন্যান্য সমস্যাগুলো তার নেই। ঘর গোছানো, পরিষ্কার করা ও ছাদ বাগানের কাজ করে তিনি ভীষণ আনন্দ পান। পাশাপাশি শারীরিকভাবেও সুস্থ থাকেন।

শুধু ছাদবাগান নয়, বাসার সিঁড়িতেও অনেক গাছ লাগিয়েছেন এই দম্পতি।

হাসান তারেক চৌধুরী লেখালেখি করেন। বই পড়তে ভালোবাসেন। বিভিন্ন বিষয়ের ওপর লেখা বই তার সংগ্রহে আছে।

শোবার ঘরটি অনেক পরিপাটি করে সাজানো। হাসান তারেক চৌধুরী প্রচুর বই পড়েন বলে শোবার ঘরের একপাশে পড়ার জন্য চেয়ার, টেবিল রাখা হয়েছে।

বাসার বিভিন্ন জায়গায় সুন্দর করে সাজিয়ে রাখা হয়েছে নানা ধরনের শো পিস। সাইদা আহমেদ বলেন, সুন্দর শো পিস দেখলে কিনে আনেন তিনি।

ঘরের যেখানে রাখলে সুন্দর লাগবে বলে মনে করেন, সেখানে সাজিয়ে রাখেন। তবে একই জায়গায় দীর্ঘদিন না রেখে মাঝে মাঝে শো পিস জায়গা পরিবর্তন করে রাখতে পছন্দ করেন তিনি।

সাইদা আহমেদ বলেন, দামি জামাকাপড় বা শাড়ির প্রতি মোহ নেই তার। বরং ঘরের জিনিসপত্র কিনতেই ভালোবাসেন তিনি।

পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতাকে খুব গুরুত্ব দেন এই দম্পতি। তাদের বাসার প্রতিটি ঘরের মতো রান্নাঘরটিও অত্যন্ত পরিচ্ছন্ন ও সাজানো।

এই বাসায় সিঁড়ি দেখলেই বোঝা যায়, গাছপ্রেমীর বাসা এটি। সিঁড়িতে রাখা নানা ধরনের গাছ বাসার পরিবেশকেই পাল্টে দিয়েছে।

বাসায় ছোট্ট একটি বারান্দা আছে। সেখানে তাকের মতো জায়গা করে কিছু গাছ রাখা হয়েছে। গাছগুলো দেখে যেমন ভালো লাগছে, তেমনি বারান্দার খোলামেলা ভাবটিও বজায় আছে।

সাইদা আহমেদ ও হাসান তারেক চৌধুরী দম্পতির এই ছাদবাগান ও পরিপাটি ঘর নিঃসন্দেহে তাদের শৈল্পিক মনের পরিচয় দেয়।

 

আলোকচিত্র: আশীষ সেনগুপ্ত

 

সারাবাংলা/টিসি/ এসএস

বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন