বিজ্ঞাপন

আমাদের আরও বেশি মানবিক হওয়া উচিত: আলাপচারিতায় অরুন্ধতী

March 6, 2019 | 2:32 am

।। হাসনাত শাহীন ।।

বিজ্ঞাপন

অরুন্ধতী রায় একজন ভারতীয় ঔপন্যাসিক এবং রাজনৈতিক সক্রিয়তাবাদী। ১৯৯৭ সালে প্রকাশিত হয় তার প্রথম গ্রন্থ ‘দ্য গড অব স্মল থিংস’ উপন্যাস। ১৯৯২ সাল থেকে ১৯৯৬ পর্যন্ত লেখা এই উপন্যাসটি ১৯৯৮ সালে ‘ম্যান বুকার পুরস্কার’ লাভ করলে সারা বিশ্বে খ্যাতির শিখরে ওঠেন। এরপর তার দ্বিতীয় উপন্যাস ‘দ্য মিনিস্ট্রি অব আটমোস্ট হ্যাপিনেস’ও আলোচনার ঝড় তোলে। বিশ্বখ্যাত এই লেখক গত ৩ মার্চ ‘ছবিমেলা’র আমন্ত্রণে মেলার একটি সেশনে কথা বলার জন্য ঢাকায় আসেন। নানা জটিলতা কাটিয়ে মঙ্গলবার (৫ মার্চ) সন্ধ্যায় ‘ছবিমেলা’র একটি সেশনে কথা বললেন ম্যান বুকার পুরস্কারজয়ী ভারতীয় এই লেখক।

অনুষ্ঠানে সাম্রাজ্যবাদের কঠোর সমালোচক ও খ্যাতিমান এই লেখক বলেন, ‘পানি ও নদীর কোনো বাধায় আমি বিশ্বাস করি না। চাই না কোনো প্রতিবন্ধকতা। তাই এগুলো নিয়ে নতুন করে ভাবতে হবে। ভারতের অনেক নদীতে বাঁধ নির্মাণ করতে গিয়ে হাজার মানুষের কয়েক শত জমি নষ্ট হয়েছে। বাঁধগুলো নির্মাণের ফলে অসংখ্য আদিবাসী ভূমিহীন হয়েছে। আমাদের আরও বেশি মানবিক হওয়া উচিত।’

ছবিমেলায় কেন এসেছেন, অনুষ্ঠান সঞ্চালকের এমন প্রশ্নের জবাবে অরুন্ধতী বলেন, ‘তোমার জন্য এসেছি। তোমাদের জন্য এসেছি। এখানে নতুন প্রজন্মের একঝাঁক মানুষকে দেখতে পাচ্ছি; যারা আলোকচিত্র নিয়ে কাজ করছে। তাদের কাজগুলো দেখতে খুব ভালো লাগছে।’

বিজ্ঞাপন

‘দ্য গড অব স্মল থিংস’ উপন্যাসের জন্য বিশ্বের আলোচিত ম্যান বুকার পুরস্কার অর্জন করেন অরুন্ধতী। এখন পর্যন্ত বইটি ৪২টি ভাষায় ৬ মিলিয়ন কপি বিক্রি হয়েছে। বইটির বিষয়ের জিজ্ঞেস করা হলে লেখিকা বলেন, ‘যদি কুড়িজন পাঠকও এটি পড়তো তাহলেও আমার উপন্যাসটি একইরকম থাকতো। দীর্ঘ একটা সময় নিয়ে আমি বই লিখেছি। প্রথম লেখা বই এতটা আলোচিত হওয়ায় অনেকেই বলেছে, এটি নিয়ে আমার উচ্চাশা ছিল। তবে নিজের ভেতরে একটা উচ্চাকাঙ্ক্ষা ছিল যে বইটি যেন বেশি মানুষ পড়ে।’

লেখক হিসেবে যখন তিনি রীতিমতো তারকায় পরিণত হয়েছেন তখন সে অবস্থান তিনি ঝুঁকলেন রাজনীতিবিষয়ক লেখালেখিতে। এ বিষয়ে তিনি বলেন, “বুকার জেতার পর ভারতের প্রতিটি ম্যাগাজিনে আমার ছবি ছাপা হয়েছে। একটা সময়ে বিজেপি ক্ষমতায় এলো। তার পরপরই একটি পারমাণবিক পরীক্ষার ঘটনা ঘটলো। সবাই খুব উচ্ছ্বসিত। সবার ভেতরে জাতীয়তাবোধের বীজ আরো উসকে উঠলো। সে সময় আমি প্রথম লিখেছিলাম রাজনীতিনির্ভর প্রবন্ধ ‘দ্য এন্ড অব ইমাজিনেশন’। আমার কাছে মনে হলো, আমরা নতুন এক ঔপনিবেশিক যুগে ধাবিত হচ্ছি। ক্রমশ সংকুচিত হচ্ছে আমাদের চিন্তার জগত।”

শৈশবের স্মৃতিচারণে অরুন্ধতী বলেন, “আমার বয়স যখন চার কিংবা পাঁচ তখন আমার বাবা-মার বিচ্ছেদ হয়। সেসময় আমি একটি মিশনারি স্কুলে ভর্তি হই। সেখানে মিস মিটেন নামের এক শিক্ষিকা আমাদের পড়াতেন। তিনি আমাকে আঙুল গুণে গুণে সংখ্যার যোগ-বিয়োগ শেখাতেন। একদিন আমাকে দশ সংখ্যার বেশি একটি যোগ অংক করতে দিলেন। যেটা তিনি নিজের পায়ের আঙুলের উদাহরণ দিয়েও বুঝাতেন। আমি সেরকম কিছু না করে সঠিক উত্তর দিলাম। তিনি আমাকে জিজ্ঞেস করলেন, তুমি এটা কিভাবে করলে? জবাবে বললাম, আমার মাথা থেকে। যতদূর মনে পড়ে, আমার লেখা প্রথম পূর্ণাঙ্গ বাক্য ছিল ‘আই হেট মিস মিটেন’।”

বিজ্ঞাপন

ভারতের চলচ্চিত্র, সাহিত্য, চিত্রকলাসহ শিল্প-সাহিত্যেও নানা অঙ্গনের মানুষদের নিয়ে আর্টিস্ট ইউনাইট নামের একটি প্ল্যাটফর্ম নিয়ে কাজ করছেন অরুন্ধতী। ওই কাজেরই অংশ হিসেবে একবার প্রচুর বলিউড তারকাও সেখানে অংশ নেয়। এ কার্যক্রমের বিষয়ে তিনি বলেন, ‘২০১৫-১৬ সময়কালে সাহিত্য-সংস্কৃতি অঙ্গনের মানুষরা নানাভাবে আক্রান্ত হচ্ছিল। কিন্তু এই মানুষগুলো ছিল একেবারেই নিরপরাধ। রাজনীতি এবং রাজনীতিবিদদের ক্ষমতার কাছে এই মানুষগুলো একেবারেই অসহায় ছিল। এ কারণেই সেই উদ্যোগ নিয়েছিলাম।’

বর্তমান সময়ের গণতন্ত্রের বিষয়ে লেখিকা বলেন, “উপমহাদেশে আশি শতকের দিকে গণতন্ত্রের যে ধারাটি ছিল সেটি এখন শুধুই নির্বাচনকেন্দ্রিক। এই অঞ্চলের এখন গণতন্ত্র মানেই যেন নির্বাচন। এসময় তিনি ‘লাইফ আফটার ডেমোক্রেসি’ নামের একটি লেখা থেকে পাঠ করেন।”

এই সময়ের উন্নয়নের প্রসঙ্গ টেনে বলেন, ‘বিশ বছর আগে যখন উন্নয়নের প্রয়োজনীয়তার কথা বলা হতো তখন মানুষকে বোঝানো হতো উন্নয়ন হলে মানুষ চাকরি পাবে, কর্মসংস্থান হবে, দারিদ্র্য দূর হবে। কিন্তু খোদ ভারতে লক্ষ লক্ষ মানুষ বেকার। উন্নয়ন মানেই বিনিয়োগের লভ্যাংশ সর্বোচ্চ পরিমাণ বাড়ানো। এই উন্নয়নের পুঁজিবাদী অর্থনীতিতে সামান্যসংখ্যক মানুষ লাভবান হলেও সংখ্যাগরিষ্ঠদের ভাগ্যের পরিবর্তন ঘটছে না।” উদাহরণ দিয়ে তিনি আম্বানি পরিবার ও তাদের ব্যবসার ক্রমাগত বিস্তৃতির কথা তুলে ধরেন।

বিজ্ঞাপন

ধানমন্ডির মাইডাস সেন্টারের ইএমকে কনফারেন্স কক্ষে লেখালেখি, বিশ্বের চলমান রাজনীতি, পানিবণ্টন, সংস্কৃতিসহ আরও বিবিধ বিষয়ে কথা বলেন অরুন্ধতী রায়। তবে সবার সুযোগ হয়নি এতে অংশ নেওয়ার। শুধুমাত্র নিবন্ধনের মাধ্যমে সৌভাগ্যবান কিছু শ্রোতা উপভোগ করেছেন এই আয়োজন। আলাপচারিতার পর্বটি সঞ্চালনা করেন ছবিমেলার উৎসব পরিচালক শহীদুল আলম।

সারাবাংলা/এমও

বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন