বিজ্ঞাপন

পাটের ২ চমক: জীনতত্ত্বের নতুন জাত, জুট জিও টেক্সটাইল

March 6, 2019 | 12:14 pm

।। এমদাদুল হক তুহিন, সিনিয়র করেসপন্ডেন্ট ।।

বিজ্ঞাপন

ঢাকা: জীনতত্ত্বকে কাজে লাগিয়ে দেশে প্রথমবারের মতো পাটের নতুন একটি জাত উদ্ভাবন করেছেন বাংলাদেশ পাট গবেষণা ইনস্টিটিউটের (বিজেআরআই) বিজ্ঞানীরা। প্রচলিত জাতগুলোর তুলনায় ‘তোষা পাট-৮’ নামের এই জাতের পাটের ফলন প্রায় ৩০ শতাংশ বেশি। ১০০ দিনেই কাটার উপযোগী হয় এই জাতটি। বিজ্ঞানীরা প্রত্যাশা করছেন, কৃষক পর্যায়ে জাতটির প্রসার ঘটলে পাট উৎপাদনে নতুন দিগন্তের সূচনা হবে।

এদিকে, সম্প্রতি ‘ন্যাচারাল অ্যাডিটিভ ট্রিটেড জুট জিও টেক্সটাইল (জেজেটি)’ নামের একটি প্রযুক্তিও পাটের নতুন চমক হিসেবে আবির্ভূত হয়েছে। নদীর তীররক্ষা ও পাহাড় ধসে সিনথেটিক জিও টেক্সটাইলের পরিবর্তে এই প্রযুক্তি অত্যন্ত কার্যকর। প্রযুক্তিটির ব্যবহার নিশ্চিত করা গেলে দেশে পাটের ব্যবহার ২০ শতাংশ বাড়ানো সম্ভব বলে মনে করছেন বিজ্ঞনীরা।

আরও পড়ুন- নগরীতেই মিলছে পাটের শাড়ি-পাঞ্জাবি, জানেন না ক্রেতারা!

বিজ্ঞাপন

নতুন এই দুই চমক ছাড়াও পাট নিয়ে আরও সুখবর জানিয়েছেন সংশ্লিষ্টরা। তারা বলছেন, দেশে বেড়ে চলছে পাটের উৎপাদন, যা বর্তমানে ৯১ লাখ বেলে পৌঁছেছে। অন্যদিকে, পাটবীজের আমদানি নির্ভরতা কমানোর লক্ষ্যেও কাজ চলছে।

আজ বুধবার (৬ মার্চ) ‘জাতীয় পাট দিবস’ সামনে রেখে পাটের নতুন এসব চমক আলোচনায় এসেছে। তৃতীয়বারের মতো উদযাপিত হতে যাওয়া এবারের পাট দিবসের স্লোগান— ‘সোনালি আশেঁর সোনার দেশ, জাতির পিতার বাংলাদেশ’। পাটের সুদিন ফিরিয়ে আনতে সরকারের গৃহীত বহুমুখী কার্যক্রমের অংশ হিসেবেই এই দিবসটি উদযাপন করা হচ্ছে প্রতিবছর। আর এই দিবস ঘিরেই পাটের বিভিন্ন উদ্ভাবন ও বৈচিত্র্যময় পাটপণ্য উঠে এসেছে আলোচনায়।

আরও পড়ুন- সোনালি আঁশের সুদিন ফেরাবে সোনালি ব্যাগ

বিজ্ঞাপন

রবি-১ বা বিজেআরআই তোষা পাট-৮

পাটের জীবন রহস্য উদ্ভাবনের পর প্রথমবারের মতো জীনতত্ত্বকে কাজে লাগিয়ে ‘তোষা পাট-৮’ নামের নতুন জাতটি উদ্ভাবন করা হয়েছে। সম্প্রতি জাতটিকে অনুমোদন দিয়েছে জাতীয় বীজ বোর্ড।

বিজেআরআই জানিয়েছে, নতুন এই জাতের উচ্চতা প্রচলিত জাতের চেয়ে ৩০ থেকে ৩৫ সেন্টিমিটার বেশি। গাছের গোড়া ও আগার ব্যাসের পার্থক্য অপেক্ষাকৃত কম। গাছের ছালের ফাইবার ঘনত্বও বেশি। প্রচলিত জাতের চেয়ে এর আঁশ চিকন, বেশি উজ্জ্বল ও শক্ত। জাতটি আগাম বপন উপযোগী— বপন করা যাবে মার্চ ও এপ্রিলে। বপন করার ১০০ দিনের মাথায়ই কাটা যায় এই পাট। সেক্ষেত্রে এই জাতের গড় ফলন হেক্টরে ৩ দশমিক ০৯ টন। তবে ১১০ দিনের মাথায় কাটলে ফলন পাওয়া যাবে ৩ দশমিক ১৬ টন। আর ১২০ দিন বয়সে হেক্টর প্রতি এর গড় ফলন ৩ দশমিক ৩৩ টন।

আরও পড়ুন- পাটের সুদিন ফেরাতে কাজ করছে সরকার: পাটমন্ত্রী

বিজ্ঞাপন

বিজেআরআই পরিচালক (কৃষি) ড. মো. মুজিবুর রহমান সারাবাংলাকে বলেন, পাটের প্রচলিত জাতগুলোর গড় ফলন ২ দশমিক ২ টন। কোনো কোনো ক্ষেত্রে ফলন ২ টনেরও কম হয়। কিন্তু নতুন এই জাতের ক্ষেত্রে হেক্টরে গড় ফলন ৩ টনের বেশি। আবার এই জাতের পাট কাটাও যায় অল্প সময়ে। পাটের জীবন রহস্য কাজে লাগিয়ে উদ্ভাবিত এটিই প্রথম জাত। আমরা এই জাতটি নিয়ে খুবই আশাবাদী।

নদীর তীর রক্ষায় জিও জুট টেক্সটাইলের পাইলটিং সফল হয়

নদীর তীর রক্ষায় পরিবেশবান্ধব জেজেটি প্রযুক্তি

পাটের ব্যবহারের ক্ষেত্রে নতুন একটি উদ্ভাবন হিসেবে আলোচনায় এসেছে ‘ন্যাচারাল অ্যাডিটিভ ট্রিটেড জুট জিও টেক্সটাইল (জেজেটি)’ প্রযুক্তি। নদীর তীর রক্ষা ও পাহাড় ধ্বস রোধে বিটুমিন ট্রিটেড জিও টেক্সটাইলের পরিবর্তে ব্যবহারের উপযোগী এই প্রযুক্তি উদ্ভাবন করেছেন পাট গবেষণা ইনস্টিটিউটের মহাপরিচালক ড. মো. আসাদুজ্জামান। এরই মধ্যে পাইলটিংয়ে সাফল্যও পেয়েছে প্রযুক্তিটি।

আরও পড়ুন- ডেমরায় হচ্ছে কারখানা, উৎপাদিত হবে বহুমুখী পাটপণ্য

বিজেআরই বলছে, রাস্তার মাটির ক্ষয়রোধ, নদীর পাড় এবং বাঁধ, রাস্তা ও পাহাড়ের ঢালসহ (স্লপ) বিভিন্ন স্থানে ধস রোধ করতে প্রায় ২০ হাজার মিটার পাটের কাপড়কে প্রক্রিয়াজাত করে জুট জিও টেক্সটাইল ব্যবহার করেছে বাংলাদেশ সেনাবাহিনী ও ওয়াপদা। পাইলট প্রকল্প হিসেবে সেটি সাফল্য পেয়েছে বলেই এর বহুল ব্যবহারে আশাবাদী বিজেআরই।

জিও জুট টেক্সটাইল প্রযুক্তির ব্যবহারের মাধ্যমে নদীর তীর রক্ষা

প্রযুক্তিটির উদ্ভাবক বিজেআরআই মহাপরিচালক ড. মো. আসাদুজ্জামান সারবাংলাকে বলেন, সিনথেটিক জিও টেক্সটাইলের পরিবর্তে পরিবেশবান্ধব জেজেটি প্রযুক্তি উদ্ভাবন করা হয়েছে। এর মাধ্যম খরস্রোতা নদীর তীর রক্ষা ও পাহাড় ধস রোধ সম্ভব। একটি বহুজাতিক প্রকল্পের মাধ্যমে এর পরীক্ষামূলক কাজ শেষ হয়েছে। প্রযুক্তিটি এরই মধ্যে চট্টগ্রামের বিজিএমসি অধীন  কেএফডি জুট মিলে হস্তান্তর করা হয়েছে।

আরও পড়ুন- পাট রক্ষায় প্যাকেজিং আইন বাস্তবায়ন করতে হবে: পাটমন্ত্রী

এদিকে, জাতীয় পাট দিবসটি উপলক্ষে কেন্দ্রীয়ভাবে ঢাকায় দুই দিনব্যাপী বহুমুখী পাটপণ্য মেলার আয়োজন করা হয়েছে। আজ বুধবার সকালে বঙ্গবন্ধু আন্তর্জাতিক সম্মেলন কেন্দ্রে (বিআইসিসি) এই মেলার উদ্বোধন করবেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। এরপর সবার জন্য উন্মুক্ত করে দেওয়া হবে মেলা।

জুট ডাইভারসিফিকেশন প্রামোশন সেন্টারের (জেডিপিসি) আওতায় এই মেলায় অন্তত ১০০টি স্টল অংশ নিচ্ছে। থাকবে পাটের সঙ্গে সম্পৃক্ত সরকারি সব প্রতিষ্ঠানও। ২৮১ ধরনের বহুমুখী পাটপণ্যের প্রায় সবই তুলে ধরা হবে এই মেলায়। মেলার অভ্যন্তরের অবয়ব হবে অনেকটা নৌকা আকৃতির। আর পাট দিবসের মূল অনুষ্ঠানে প্রধানমন্ত্রী এবারও পাটের শাড়ি পড়ে আসবেন বলে সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে।

সারাবাংলা/ইএইচটি/টিআর

বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন