বিজ্ঞাপন

তালা ভাঙতে ৬ সেকেন্ড, চুরি করতে ১৫ মিনিট

March 13, 2019 | 5:12 pm

।। স্পেশাল করেসপন্ডেন্ট ।।

বিজ্ঞাপন

চট্টগ্রাম ব্যুরো: মাথায় টুকরি নিয়ে ফেরিওয়ালার বেশে ঘুরে বেড়ায়। তালাবদ্ধ বাসার দরোজার তালা ভাঙতে সময় নেয় মাত্র ছয় সেকেন্ড। বাসায় চুরি শেষ করতে লাগে সর্বোচ্চ ১৫ মিনিট। গত চার বছর ধরে চট্টগ্রাম নগরীতে চুরি করে বেড়ানো এমন এক পেশাদার চোর প্রথমবারের মতো ধরা পড়েছে কোতোয়ালী থানা পুলিশের হাতে।

মঙ্গলবার (১২ মার্চ) রাতে নগরীর কোতোয়ালী থানার পুরাতন স্টেশন এলাকায় অভিযান চালিয়ে জাহাঙ্গীর আলম (৪০) ওই চোরকে গ্রেফতার করা হয়েছে।

পরে জাহাঙ্গীরের দেওয়া তথ্য অনুযায়ী স্টেশন রোডে চোরাই মালামালের গুদামে অভিযান চালায় পুলিশ। সেই গুদাম থেকে ১৪৫টি মোবাইলসহ বিভিন্ন চোরাই পণ্য উদ্ধার করা হয়েছে। গ্রেফতার করা হয়েছে চোরাইপণ্য হেফাজতকারী রেহেনা বেগম (৪৫) নামে এক নারীকেও।

বিজ্ঞাপন

কোতোয়ালী থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মোহাম্মদ মহসীন সারাবাংলাকে বলেন, ‘পুরাতন কাপড় বিক্রেতার বেশে বিভিন্ন আবাসিক ভবনে ঘোরাঘুরি করে জাহাঙ্গীর। মূলত সে কোনো বাসার দরোজায় তালা আছে, সেটা দেখে নেয়। সুযোগ বুঝে ওই বাসার সামনে গিয়ে তালা ভেঙ্গে ঢুকে চুরি করে দ্রুত পালিয়ে যায়। ফেরিওয়ালার বেশে থাকায় কেউ তাকে সন্দেহও করে না।’

গত ৪ বছর ধরে চট্টগ্রাম নগরীতে জাহাঙ্গীরের চুরির তথ্য দিয়ে ওসি জানান, এইসময়ের মধ্যে সে প্রায় ২৫০ বাসায় চুরি করেছে বলে প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে জানিয়েছে। এতদিন ধরে পুলিশ তাকে আটক করতে পারেনি।

নগরীর চান্দগাঁও আবাসিক এলাকা এবং পাঁচলাইশের বিভিন্ন আবাসিক ভবনেই জাহাঙ্গীর অধিকাংশ চুরি করেছে বলে তিনি জানিয়েছেন।

বিজ্ঞাপন

ওসি মহসীন বলেন, ‘মাত্র ৬ সেকেন্ডে জাহাঙ্গীর তালা ভাঙতে পারে। একইভাবে স্টিলের আলমিরার তালাও ভাঙতে পারে। সাধারণত নগদ টাকা-মোবাইল, ল্যাপটপ সে চুরি করে। তবে সুযোগ বুঝে টেলিভিশনসহ মূল্যবান আসবাবপত্রও নিয়ে যায়। একটি বাসায় চুরি করতে লাগে সর্বোচ্চ ১৫ মিনিট।’

জাহাঙ্গীর চট্টগ্রামের চন্দনাইশ উপজেলার পশ্চিম কেশুয়া গ্রামের নুরুল ছফার ছেলে। তবে সে থাকে পার্শ্ববর্তী আনোয়ারা উপজেলার হাজীগাঁও গ্রামে।

কোতোয়ালী থানার পরিদর্শক (তদন্ত) মো. কামরুজ্জামান সারাবাংলাকে বলেন, ‘চুরিই জাহাঙ্গীরের মূল পেশা। আনোয়ারা থেকে চট্টগ্রাম নগরীতে এসে চুরি করে আবারও বাড়ি ফিরে যায়। সকাল ১০টা থেকে দুপুর ১২টার মধ্যে অথবা বিকেল থেকে সন্ধ্যার আগ পর্যন্ত হচ্ছে জাহাঙ্গীরের চুরির সময়। মাসে ১-২টি কিংবা তার চেয়েও বেশি চুরিও সে করে কখনো কখনো।

‘চুরির পর মালামাল নিয়ে রাখে রেহেনার বাসায়। ওই বাসার একটি কক্ষকে জাহাঙ্গীর চোরাই জিনিসের গুদাম হিসেবে ব্যবহার করতো। পরে সেগুলো স্টেশন রোডে ও রিয়াজউদ্দিন বাজারের চোরাই মার্কেটে বিক্রি করতো।’ রেহেনার বাসা নগরীর স্টেশন রোডে বাগদাদ হোটেলের পেছনে একটি কলোনিতে। রেহেনার বাড়ি পটিয়া উপজেলায়।

বিজ্ঞাপন

পুলিশ পরিদর্শক কামরুজ্জামান সারাবাংলাকে বলেন, ‘চুরির কাজে জাহাঙ্গীরের কোনো সহযোগী নেই। এছাড়া সে শহরে নিয়মিত থাকে না। এজন্যই গত চার বছরে জাহাঙ্গীর একবারও ধরা পড়েনি। চুরি যাওয়া মোবাইলের সন্ধানে নেমে আমরাই প্রথম জাহাঙ্গীরের বিষয়ে তথ্য পেয়েছি।’

জাহাঙ্গীরের গুদাম থেকে ১৪৫টি মোবাইল সেট, ১০৬ জোড়া বিভিন্ন সাইজের জুতা, ৩৯টি রান্নার সরঞ্জাম এবং পোশাক উদ্ধার করা হয়েছে বলে জানিয়েছেন অভিযানে থাকা কোতোয়ালী থানার উপপরিদর্শক (এসআই) সজল কান্তি দাশ।

সারাবাংলা/আরডি/এমআই

Tags: ,

বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন