বিজ্ঞাপন

সীমান্তে সক্রিয় বিজিবি, ৯ মাসে স্বর্ণসহ ৩৮ কোটি টাকার পণ্য জব্দ

March 15, 2019 | 5:25 am

।। রিফাত রহমান, ডিস্ট্রিক্ট করেসপন্ডেন্ট ।।

বিজ্ঞাপন

চুয়াডাঙ্গা: চুয়াডাঙ্গায় বর্ডার গার্ড ব্যাটালিয়ন সদস্যদের চোরাচালানবিরোধী অভিযানে গত ৯ মাসে ৩৭ কোটি ৭৬ লাখ ৭৮ হাজার ৭৩ টাকার পণ্য উদ্ধার করেছে বর্ডার গার্ড বাংলাদেশ (বিজিবি)। এসময় সোনা-রূপা, ইউএস ডলারসহ ১৬ জনকে আটক করা হয়।

জানা যায়, গত ২০১৮ সালের ৬ জানুয়ারি রাতে জেলার জীবননগর উপজেলা শহর থেকে পরিত্যক্ত অবস্থায় অবৈধভাবে ভারত থেকে পাচার হয়ে আসা ২৯৬টি ভায়াগ্রা, ৫ হাজার ১৯টি অনেগ্রা, ১ হাজার ৪৯২টি সেনেগ্রা, ৫ হাজার ৬৫০টি ডিকসোমিটাসন, ১৬ হাজার ৮০০টি সিজিন, ১৭ হাজার ৪৮০টি ডেকসিন, ৭০টি মারসেক, ১ হাজার ৮৫০টি সিপ্রোহেপটাডিন, ৮ হাজার ৮৫০টি এ্যানসিক ও  ১২ হাজার ৯৬০টি সিনিক ট্যাবলেট উদ্ধার করা হয়। এসবের মূল্য ৫২ লাখ ৮৫ হাজার ২৫ টাকা।

দু’দিন পর ৮ জানুয়ারি সকাল ৬টার দিকে চুয়াডাঙ্গা জেলার দামুড়হুদা উপজেলার ডুগডুগি বাজার এলাকা থেকে পরিত্যক্ত অবস্থায় অবৈধভাবে ভারত থেকে পাচার হয়ে আসা ৫ লাখ ৮০ হাজারটি ডেক্সামেথাসন ট্যাবলেট উদ্ধার করা হয়। যার মূল্য ৪ কোটি ৩৫ লাখ টাকা।

বিজ্ঞাপন

একই বছরের ১৮ মার্চ সকাল ৭টার দিকে চুয়াডাঙ্গা জেলার দামুড়হুদা উপজেলার দর্শনায় বিশেষ অভিযান পরিচালনা করে মিজানুর রহমান (৪৮), উজ্জ্বল আহমেদ (৩১), আব্দুর রাজ্জাক (৪৫), আব্দুল হান্নান (৩৮), আনিসুর রহমান (২৯), আতিকুল রহমান ( ৩১),  হেদায়েত আলী (৩০) ও আল আমিনকে ( ২৮) আটক করে বিজিবি। এসময় তাদের ব্যাগ তল্লাশি করে ২ লাখ ১৬ হাজার ২০০ ইউএস ডলার উদ্ধার করা হয়। যা বাংলাদেশি মুদ্রায় ১ কোটি ৮৭ লাখ ৩ হাজার ৩১৬ টাকা।

এরপর একই বছরের ২৫ এপ্রিল দুপুরে স্বর্ণ পাচারের খবর পেয়ে অভিযান চালায় বিজিবি। এসময় একজন চোরাকারবারী ব্যাটালিয়ন সদস্যদের উপস্থিতি টের পেয়ে স্বর্ণগুলো পানিতে ফেলে ভারতে পালিয়ে যায়। এরপর বিজিবি সদস্যরা পানি থেকে ৩৭ কেজি ৩২৪ গ্রাম ওজনের স্বর্ণের ৩২০টি বার উদ্ধার করে, যার মূল্য ১৬ কোটি টাকা।

বিজ্ঞাপন

২৭ এপ্রিল সকালে চুয়াডাঙ্গা থেকে খুলনাগামী একটি যাত্রীবাহী বাস তল্লাশি করে ব্যাটালিয়ন সদস্যরা। সে সময় শাহীন মিয়া (৩২) নামে একজনের কাছ থেকে ৮১৫ গ্রাম ওজনের ৭টি স্বর্ণের বার উদ্ধার করা হয়। যার মূল্য ৩৬ লাখ ৫৯ হাজার ১৬৬ টাকা।

২ জুলাই ভোরে উপজেলার লোকনাথপুর তেলপাম্পের কাছে অভিযান চালিয়ে ব্যাটালিয়ন সদস্যরা ইদ্রিস আলীকে (৪৫) আটক করে। তার কাছ থেকে ৭টি স্বর্ণের বার উদ্ধার করা হয়, যার মূল্য ৩৫ লাখ ২ হাজার টাকা।

৬ আগস্ট সকালে আব্দুল আলিম (৩৮) নামে আরও একজনের কাছ থেকে ১৩ কেজি ৪৬০ গ্রাম ওজনের রূপোর গয়না জব্দ করা হয়। সেসব গয়নার মূল্য ২২ লাখ ৭৭ হাজার ২০০ টাকা। ২৮ আগস্ট আনুমানিক সন্ধ্যায় পাসপোর্টধারী যাত্রী হোসেন মোহাম্মদ সাব্বিরকে (৩০) আটক করে বিজিবি। তার কাছ থেকে অবৈধ ১৭ হাজার ২০০ ইউএস ডলার উদ্ধার করা হয়। যার মূল্য ১৪ লাখ ৩০ হাজার ৬৯৬ টাকা।

২৯ আগস্ট সকালে ১০টার দিকে একই স্থানে পাসপোর্টধারী যাত্রী হেলাল উদ্দিনকে (৩২) বিজিবি সদস্যরা আটক করে। তার কাছ থেকে ১৭ লাখ ৯৩ হাজার ৩২০ ভারতীয় রুপি উদ্ধার করা হয়, যার মূল্য ২১ লাখ ৭৩ হাজার ৭২০ টাকা।

বিজ্ঞাপন

৩০ আগস্ট সকালে বিজিবি সদস্যরা অভিযান চালিয়ে পরিত্যক্ত অবস্থায় ১৮ কেজি ৭০০ গ্রাম রূপার গয়না উদ্ধার করে, যার মূল্য ২৮ লাখ ৮৫ হাজার ৪০০ টাকা। এরপর ৭ অক্টোবর সকালে খাইরুল বাশারকে (৪২) ওই গ্রামের বসতিপাড়া থেকে বিজিবি সদস্যরা আটক করে। তার কাছ থেকে ২৭ কেজি ওজনের রূপার গয়না উদ্ধার করা হয়। যার মূল্য ৪৫ লাখ ৩২ হাজার ২০০ টাকা।

৩১ অক্টোবর ভোরে দর্শনাগামী যাত্রীবাহী বাসে তল্লাশী করে সেলিম মিয়াকে (১৯) আটক করে বিজিবি। তার কাছ থেকে ১ কেজি ৬৪৮ গ্রাম ওজনের ১০টি স্বর্ণের বার উদ্ধার করা হয়। যার মূল্য ৬৩ লাখ ৫৭ হাজার ৬০০ টাকা

এরপর ২১ ডিসেম্বর সকালে আনোয়ারুল ইসলামকে (৩৪) একটি মোটরসাইকেলসহ আটক করা হয়। তার কাছ থেকে ৩০ কেজি ১৫৫ গ্রাম ওজনের ২৬০টি স্বর্ণের বার উদ্ধার করা হয়। যার মূল্য ১২ কোটি ১ লাখ ২০ হাজার টাকা।

এছাড়া ২০১৯ সালের ১২ জানুয়ারি বিজিবি সদস্যরা পরিত্যক্ত অবস্থায় ৪ কেজি ২১১ গ্রাম রূপা ও ৩ কেজি গাঁজা উদ্ধার করে, যার মূল্য ১ লাখ ৭৪ হাজার ৫০০ টাকা। ৯ ফেব্রুয়ারি দুপুরে উজ্জ্বল হোসেন (৩৪) আটক করে। তার কাছে ২৯ কেজি উন্নতমানের রূপার গয়না ও ১৬ কেজি ৫০০ গ্রাম নিম্নমানের রূপা এবং ১ কেজি ইমিটেশনের গয়না উদ্ধার করা হয়। উদ্ধারকৃত গয়না ও রুপার আনুমানিক মূল্য ৩১ লাখ ৯৭ হাজার ২৫০টাকা।

চুয়াডাঙ্গা-৬ বর্ডার গার্ড ব্যাটালিয়নের পরিচালক ইমাম হাসান জানান, বাংলাদেশ-ভারত সীমান্তে ব্যাটালিয়ন সদস্যদের দিয়ে চোরাচালানবিরোধী তৎপরতা বাড়ানোর কারণেই এসব চালান আটক করা সম্ভব হয়েছে।

ইমাম হাসান আরও জানান, চোরাচালান প্রতিরোধে বিজিবি ২০১৮ সালে বাংলাদেশ-ভারত ব্যাটালিয়ন কমান্ডার পর্যায়ে ১৪টি, কোম্পানি কমান্ডার পর্যায়ে ১০৯টি ও বিওপি কমান্ডার পর্যায়ে ৩২৮টি বৈঠক করেছে। চুয়াডাঙ্গা-৬ বিজিবি আওতাধীন চুয়াডাঙ্গা ও মেহেরপুর ১১৩ কিলোমিটার সীমান্ত এলাকার ঠাকুরপুর বিওপি সংলগ্ন ১ কিলোমিটার বেড়াবিহীন জায়গা সৌর বিদ্যুতের আওতায় আনা হয়েছে। এতে করে বিজিবি সদস্যরা রাতে নির্বিঘ্নে টহল দিতে পারছে।

এছাড়া মুন্সীপুর বিওপি’র ৬ কিলোমিটার ও সুলতানপুর-বারাদী বিওপি’র ২ কিলোমিটার সৌর বিদ্যুতের আওতায় আনা গেলে চোরাচালান রোধে বিজিবি সদস্যরা আরো গতি বাড়াতে পারবে। তাছাড়া সীমান্তে চোরাচালান, নারী ও শিশু পাচারসহ বিভিন্ন অপকর্ম প্রতিরোধে বিজিবি যথেষ্ট তৎপর রয়েছে বলেও জানান তিনি।

সারাবাংলা/এমও/এমএইচ

Tags: , ,

বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন