বিজ্ঞাপন

মায়ের কাটা ছকে কাটে পাঁচ কন্যার দিন

March 18, 2019 | 1:41 pm

এ এক বুদ্ধিমতী মায়ের গল্প। তার আছে পাঁচ কন্যা। ওদের বয়স ২ থেকে ১০ বছর পর্যন্ত। এতটুকু এতটুকু বাচ্চাদের তিনি নিজের ঘরেই করে তুলেছেন সাবলম্বী। আর তাতে ঘর-গৃহস্থলীর সকল কাজ হয়ে যাচ্ছে। বাচ্চাদের পড়াশুনা-খেলাধুলাও চলে নিজ গতিতে। আবার ওদের আয়েই বড় হচ্ছে ওদের ব্যাংকের সঞ্চয়।

বিজ্ঞাপন

লন্ডনের ভিক্টোরিয়ায় তাদের বসবাস। মায়ের নেওয়া অভিনব এক কৌশলে সন্তানরা জনপ্রতি সপ্তাহে ১১ ডলার আয় করে নিচ্ছে। তাতে সপ্তাহে ব্যয় হচ্ছে ৭৭ ডলার। ঘরের কাজগুলো বয়স ও যোগ্যতার বিবেচনায় বণ্টণ করে দিয়েছেন। সাথে বলে দিয়েছেন, কে কোন কাজটি করবে।

সম্প্রতি এই মা তার তৈরি করা চার্টটি সামাজিক মাধ্যমে প্রকাশ করে বলেছেন- মেয়েদের কাজে তিনি খুশি।

মেয়েদের মধ্যে সবচেয়ে বড়টির বয়স ১০। এরপর নয়, এরপর সাত, ছয় ও তিন। এদের মধ্যে দু’টি সন্তান অটিজমেও ভুগছে। তবে বিস্তারিত পরিকল্পনা ও নিয়মমাফিক পরিচালনার কারণে বয়স ও অটিজম কোনওটাই আর বাধা হয়ে থাকেনি এই পরিবারে।
মায়ের সাজানো ব্যবস্থায় শিশুরা তাদের ভিন্ন ভিন্ন কাজের জন্য ভিন্ন ভিন্ন পারিশ্রমিক পাচ্ছে। যেমন কুকুরকে গোসল করানোর জন্য এক ডলার… আবার নিজের বিছানা নিজে গুছিয়ে রাখার জন্য দিনে পাঁচ সেন্ট। রান্না ঘরের বেঞ্চগুলো মুছে পরিষ্কার রাখার জন্য ৫০ সেন্ট।

ফেসবুক পোস্টে ওই মা জানিয়েছেন, তিনি কোনও কিছুই সন্তানদের ওপর চাপিয়ে দেননি। আর প্রতিটি কাজের বিনিময়ে পারিশ্রমিক কত হবে তাও ওদের সঙ্গে আলাপ করেই ঠিক করা হয়েছে।

বিজ্ঞাপন

প্রতিদিন শিশু সন্তানদের মধ্যে দিনের সেরা কর্মী কিংবা সবচেয়ে দামী ব্যক্তি (মোস্ট ভ্যালুড পারসন-এমভিপি) নির্বাচন করা হয়। অন্যের প্রতি সহযোগিতার মনোভাব দেখানো, উৎসাহ দেখানো, সদাচরণ এসবের ভিত্তিতে নির্বাচিত জনকে ২ ডলার অতিরিক্ত দেওয়া হয়।

চার্টের ওপর প্রতিদিন কাজ শেষে একটি করে ফোঁটা একে রাখে শিশুরা। পাশে তার জন্য পাওয়া অর্থের পরিমান উল্লেখ থাকে। যেমন আয়না পরিষ্কার করার জন্য ২০ সেন্ট, ধোওয়া-মোছার জন্য ৫০ সেন্ট, ভ্যাকুয়াম ক্লিনিংয়ের জন্য ১ ডলার, আবার খেলনাগুলো গুছিয়ে রাখার জন্য ১০ সেন্ট।

প্রতি রোববার বিকেলে মেয়েরা নিজেরাই নিজেদের কাজের হিসাব-নিকাশ করতে বসে। আর সে অনুযায়ী যতটুকু পাওনা হয় তা মায়ের কাছ থেকে নিয়ে নিজ নিজ বক্সে রাখে। মাসে একবার তারা ব্যাংকে যায় এবং নিজ নিজ অ্যাকাউন্টে তা জমা করে আসে।
শুধু যে কাজের হিসাব নিকাশ তাই নয়। প্রত্যেকেরই প্রতিদিন সকাল ও বিকেলে কিছু রোটিন কাজ থাকে। কখন ঘুম থেকে উঠবে, কখন স্কুলে যাবে সেগুলোও উল্লেখ রয়েছে মায়ের তৈরি এই বিশেষ বোর্ডে। এতে খেলার জন্য কতটুকু সময়, বাড়ির কাজ, খাওয়া এসবও রয়েছে।

বিজ্ঞাপন

মায়ের হিসাবে প্রত্যেককে দিনের জন্য বরাদ্দ কাজটুকু করতে একেক জনের সর্বোচ্চ ৪৫ মিনিট সময় ব্যয় হয়।

ফেসবুকে অবশ্য কেউ কেউ প্রশ্ন তুলেছেন, মাত্র ৭৭ ডলার খরচ করে এই মা তার সন্তানদের দিয়ে পুরো সপ্তাহের সব কাজ করিয়ে নিচ্ছেন। যেটা মোটেই ঠিক হচ্ছে না। বড় কেউ একজনকে দিয়ে কাজগুলো করালে অনেক বেশি অর্থ ব্যয় হতো।

কেউ একজন জানতে চেয়েছেন, এই শিশুরা তাদের আয় করা অর্থ কীভাবে ব্যয় করবে? উত্তরে মা জানিয়েছেন, তার ১০ বছরের মেয়েটি জেল পেন কিনতে চায়, নয় বছরের মেয়েটির মতে সে জমিয়ে রাখবে আর বছর শেষে তার মোট সঞ্চয় ১০০০ ডলার ছাড়াবে। সাত বছরের কন্যা বলেছে সে একটা গ্লোব কিনবে, ছয় বছরের কন্যার মতে সে জমাতেই থাকবে, খরচ করবে না, আর তিন বছরের কন্যার সখ সে একটি আইপ্যাড কিনবে।

সামাজিক মাধ্যমে একজন এই মায়ের উদ্যোগের প্রশংসা করে লিখেছেন তিনি নিজেও এমনটি করতে চান। সে জন্য আরও টিপস ও হিন্টস চেয়েছেন।

আরেকজন লিখেছেন, ভীষণ পছন্দ হয়েছে এই আইডিয়াটি। অনেক দিন ধরেই আমার চার সন্তানের কাজের একটা তালিকা করে দিতে চেয়েছিলাম। এবার এই চার্টটি বেশ সাহায্য করবে।

বিজ্ঞাপন

এবার দেখা যাক মেয়েগুলো কোনও একটি দিনে কি কি কাজ করে-

১০ বছরের কন্যাটি ডিশওয়াশারে থালাবাসন দেওয়া ও তুলে রাখা, দুটি বাথরুম পরিষ্কার করা, হলওয়ের দেয়াল মুছে রাখা, নিজের সকল খেলনা ও বই গুছিয়ে রাখা, নিজের বিছানা গুছিয়ে রাখা ও ছোট দুই বোনের বিছানা গোছানো, এবং ঘরের যেসব জিনিস রিসাইক্লিংয়ে দিতে হয় সেগুলো নিয়ে যাওয়ার কাজগুলো করে।

নয় বছরের জন রান্নাঘর ও বাথরুমের মেঝে ঝাঁট দিয়ে মব করে, কিচেনের থালাবাসনগুলো মুছে রাখে, নিজের খেলনা ও বইগুলো গুছিয়ে রাখে, নিজের বিছানা পরিপাটি রাখে ও প্রত্যেকের দুপুরের খাবার তৈরি করে।

সাত বছরের কন্যাটি বাচ্চাদের ঘরের ও লাউঞ্জের দেয়ালগুলো পরিষ্কার করে, নিজের বিছানা গুছিয়ে রাখে, ময়লা বাইরে গারবেজ বক্সে ফেলে আসে, নিজের খেলনা ও বইগুলো গুছিয়ে রাখে ও দুটি টয়লের ধুলো-ময়লা পরিষ্কার করে।

ছয় বছরের জন লন্ড্রি করে (মা ভাবছেন এই কাজের পারিশ্রমিক আরেকটু বাড়াবেন), নিজের খেলনা ও বই গুছিয়ে রাখে, খেলার ঘরের দেয়াল ও শোবার ঘরের দরজাগুলো ধুলা ঝেড়ে পরিষ্কার করে রাখে।

তিন বছরের কন্যা তার নিজের খেলনা গুছিয়ে রাখে, আর পেছনের সিঁড়ি ও কাপড় ধোয়ার ফ্লোরটি ঝাঁট দেয়।

সারাবাংলা/এমএম

Tags: , ,

বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন