বিজ্ঞাপন

বিমান ছিনতাই চেষ্টা: প্রত্যক্ষদর্শী ও আক্রান্তের বর্ণনায়

March 22, 2019 | 10:22 am

স্পেশাল করেসপন্ডেন্ট

চট্টগ্রাম ব্যুরো: ছিনতাই চেষ্টার কবলে পড়া বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্সের উড়োজাহাজ ময়ূরপঙ্খীর পাইলট-কেবিন ক্রুসহ ৬ জনকে জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়েছে। মামলার তদন্তকারী সংস্থা কাউন্টার টেরোরিজম ইউনিট জিজ্ঞাসাবাদ করে। প্রত্যক্ষদর্শী এবং আক্রান্ত হিসেবে তাদের বর্ণনায় উঠে এসেছে ঘটনার আদ্যোপান্ত।

বিজ্ঞাপন

সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায় জিজ্ঞাসাবাদে কেবিন ক্রু’রা জানিয়েছেন- প্রথমে ব্যক্তিগত একটি সমস্যা নিয়ে প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে কথা বলতে চেয়েছিলেন পলাশ। ওই দাবি নিয়েই একহাতে পিস্তল (খেলনা) এবং আরেক হাতে বিস্ফোরক সদৃশ বস্তু নিয়ে অসংলগ্ন আচরণ শুরু করে সে। যাত্রীদের বিপদ থেকে রক্ষায় পাইলট এবং ফার্স্ট অফিসার বিভিন্ন অজুহাত দেখিয়ে কালক্ষেপণের কৌশল নেন। এরপর উড়োজাহাজটি জরুরি অবতরণ করে চট্টগ্রাম শাহ আমানত বিমানবন্দরে। নিরাপদে নামিয়ে আনা হয় যাত্রী ও বিমানকর্মীদের।

প্রসঙ্গত, গত ২৪ ফেব্রুয়ারি সন্ধ্যায় উড়োজাহাজ ময়ূরপঙ্খীর ঢাকা থেকে চট্টগ্রাম হয়ে দুবাই যাওয়ার কথা ছিল। বিকেলে ঢাকা থেকে উড্ডয়নের পর পলাশ আহমেদ নামে এক যাত্রী উড়োজাহাজ ছিনতাইয়ের চেষ্টা চালায়। বিকেল সাড়ে ৫টার দিকে বিমানটি চট্টগ্রাম শাহ আমানত আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে জরুরি অবতরণ করে। এরপর ৮ মিনিটের কমান্ডো অভিযানে নিহত হয় পলাশ এবং অবসান ঘটে ছিনতাই কাণ্ডের।

এই ঘটনায় নগরীর পতেঙ্গা থানায় একটি মামলা দায়ের করেন বেসরকারি বিমান চলাচল কর্তৃপক্ষের (বেবিচক) শাহ আমানত আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে কর্মরত প্রযুক্তি সহকারী দেবব্রত সরকার। মামলা তদন্ত করছে সিএমপি’র কাউন্টার টেরোরিজম ইউনিট। নিহত পলাশ আহমেদ ও অজ্ঞাতনামা ব্যক্তিকে মামলায় আসামি করা হয়।

বিজ্ঞাপন

মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা কাউন্টার টেরোরিজম ইউনিটের পরিদর্শক রাজেশ বড়ুয়া সারাবাংলাকে বলেন, ‘বুধবার (২০ মার্চ) পাইলট, ফার্স্ট অফিসার ও চারজন কেবিন ক্রু আমাদের কার্যালয়ে এসেছিলেন। তাদের জিজ্ঞাসাবাদ করে জবানবন্দি রেকর্ড করা হয়েছে। মূলত তাদের কাছ থেকেই আমরা ঘটনার প্রত্যক্ষদর্শী ও আক্রান্ত হিসেবে ছিনতাই চেষ্টার আদ্যোপান্ত বর্ণনা পেয়েছি।’

কাউন্টার টেরোরিজম ইউনিটের কার্যালয়ে যারা এসেছিলেন তারা হলেন- ময়ূরপঙ্খীর পাইলট গোলাম শফী, ফার্স্ট অফিসার মুনতাসির মাহবুব এবং চার কেবিন ক্রু- শফিকা নাসিম, হোসনে আরা, শরিফা বেগম ও আব্দুস শুকুর মোজাহিদ।

শাহেদুজ্জামান সাগর নামে আরেক কেবিন ক্রু সেদিন উড়োজাহাজে ছিলেন। তাকে জিম্মি করার খবরও পাওয়া গিয়েছিল। তাই সাগরকে পরে জিজ্ঞাসাবাদ করা হবে বলে জানিয়েছেন পুলিশ পরিদর্শক রাজেশ বড়ুয়া।

বিজ্ঞাপন

জিজ্ঞাসাবাদে পাওয়া তথ্য অনুযায়ী, উড়োজাহাজে যাত্রী পলাশ আহমেদ ১৭-ডি নম্বর আসনে বসা ছিলেন। উড্ডয়নের আনুমানিক ১৫ থেকে ২০ মিনিট পর পলাশ তার নির্ধারিত আসন থেকে উঠে সামনের একটি আসনে গিয়ে বসেন। সিনিয়র কেবিন ক্রু শফিকা নাসিম বিষয়টি লক্ষ্য করেন। তিনি জুনিয়র হোসনে আরাকে নির্দেশ দেন, পলাশকে যেন তার নির্ধারিত আসনে বসিয়ে দেওয়া হয়।

হোসনে আরা অনুরোধ করার সঙ্গে সঙ্গে উত্তেজিত হয়ে ওঠে পলাশ। ডান হাতে পকেট থেকে পিস্তল বের করে হোসনে আরা’র মাথায় ধরে বলে, ‘ককপিটের দরজা খুলতে বলেন। আমি পাইলটের সঙ্গে কথা বলব।’

এসময় পলাশ কয়েক দফা অস্থিরভাবে পায়চারি করে। তখন ককপিটের সামনে বসা ছিলেন পাইলট ও ফার্স্ট অফিসার। শফিকা নাসিম একটি গোপন কোড ব্যবহার করে তাদেরকে বিষয়টি জানিয়ে দেন। পাইলট ও ফার্স্ট অফিসার লাইভ স্ক্রিন অন করে সেখানে পলাশের গতিবিধি দেখতে পান। তার ডান হাতে পিস্তল এবং বাম হাতে বিস্ফোরকসদৃশ বস্তু দেখা যায়। সঙ্গে সঙ্গেই বিষয়টি শাহ আমানত আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের নিয়ন্ত্রণ কক্ষে জানিয়ে দেওয়া হয়। একইসঙ্গে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী এবং বিমানবন্দরের নিরাপত্তা টিমসহ সংশ্লিষ্ট সব যাত্রীদের রক্ষায় প্রস্তুত রাখার জন্য পাইলট বলেন।

সূত্রমতে, উড়োজাহাজটি উড্ডয়নরত অবস্থায় পাইলট এবং ফার্স্ট অফিসার পলাশের সঙ্গে কথা বলেন। পলাশ তাদের জানান, একটি সমস্যা নিয়ে তিনি প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে কথা বলতে চান। অন্যথায় তিনি ক্ষতি করবেন। পাইলট ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের সঙ্গে কথা বলে প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে যোগাযোগ করিয়ে দেবেন বলে পলাশকে আশ্বস্ত করেন।

বিজ্ঞাপন

এর মধ্যে বারবার পলাশ তাগাদা দিতে থাকে এবং পাইলট বিভিন্ন অজুহাতে সময়ক্ষেপণ করতে থাকেন। একপর্যায়ে পলাশের সঙ্গে সার্বক্ষণিক কথা বলার দায়িত্ব দেওয়া হয় কেবিন ক্রু শাহেদুজ্জামান সাগরকে। পলাশকে চা অথবা কফি খাওয়ার প্রস্তাব দেওয়া হয়।

তদন্তকারী কর্মকর্তা রাজেশ বড়ুয়া সারাবাংলাকে বলেন, ‘সময়ক্ষেপণের একপর্যায়ে নির্ধারিত সময়ের প্রায় ৭ মিনিট আগে উড়োজাহাজের জরুরি অবতরণ করান পাইলট। দ্রুত অবতরণের বিষয় বুঝতে পারেনি পলাশ। তাকে ফের প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে যোগাযোগ করিয়ে দেওয়ার প্রতিশ্রুতি দিয়ে সাগরের জিম্মায় রেখে পাইলট যাত্রীদের নামিয়ে নেওয়ার ব্যবস্থা করা হয়। এরপর নেমে যান পাইলট ও কেবিন ক্রুরা।’

উড়োজাহাজ থেকে যাত্রী, পাইলট, ফার্স্ট অফিসার ও কেবিন ক্রুরা নেমে যাওয়ার পর থেকে কমান্ডো অভিযান পর্যন্ত পলাশের কর্মকাণ্ড বিষয়ে সাগরকে জিজ্ঞাসাবাদ করা হবে বলে জানিয়েছেন রাজেশ বড়ুয়া।

এর আগে, চট্টগ্রাম শাহ আমানত আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে দায়িত্বরত বেবিচকের ব্যবস্থাপক উইং কমান্ডার সরওয়ার-ই-জাহান এবং ঘটনার সময় নিয়ন্ত্রণ কক্ষে দায়িত্বরত দুই কর্মকর্তাকে জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়েছে। এ নিয়ে মোট ৯ জনকে কাউন্টার টেরোরিজম ইউনিট জিজ্ঞাসাবাদ করেছে।

কমান্ডো অভিযান নিহত যুবক পলাশ আহমেদের বাড়ি নারায়ণগঞ্জ জেলায়। তিনি চলচ্চিত্র প্রযোজনার সঙ্গেও যুক্ত ছিলেন। চিত্রনায়িকা সিমলা’র সঙ্গে বিয়ে বিচ্ছেদের জেরে পলাশ উড়োজাহাজে এই ঘটনা ঘটিয়েছে বলে বিভিন্ন গণমাধ্যমে খবর প্রকাশ হয়েছে।

উল্লেখ্য, গত ২৫ ফেব্রুয়ারি পতেঙ্গা থানায় দায়ের হওয়া মামলায় সন্ত্রাসবিরোধী আইন, ২০১২-এর ৬ ধারা এবং বিমান নিরাপত্তাবিরোধী অপরাধ দমন আইন, ১৯৯৭-এর ১১ (২) ও ১৩ (২) ধারায় পলাশের বিরুদ্ধে অভিযোগ আনা হয়। গত ২৬ ফেব্রুয়ারি তদন্তকারী কর্মকর্তার কাছে ওই উড়োজাহাজ থেকে উদ্ধার করা পিস্তল ও বিস্ফোরকসদৃশ বস্তুসহ বেশকিছু আলামত জমা দেয় র‌্যাব ও সেনাবাহিনীর প্যারা কমান্ডো টিম। এরপর ১৩ মার্চ পুলিশের অপরাধ তদন্ত বিভাগ সিআইডি পিস্তলের ব্যালাস্টিক পরীক্ষার প্রতিবেদন দেয় কাউন্টার টেরোরিজমের হাতে। এতে বলা হয়, পিস্তলটি ছিল খেলনা।

সারাবাংলা/আরডি/এমও/জেএএম

Tags:

বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন
চবি ছাত্রকে মারধরের পর হলের ছাদ থেকে ফেলা চেষ্টার অভিযোগহিট স্ট্রোকের ঝুঁকি কমাতে স্বাস্থ্য অধিদফতরের ৪ নির্দেশনাঢাকার পয়ঃবর্জ্য-গ্যাস লাইন পরীক্ষায় কমিটি গঠনের নির্দেশরানা প্লাজা ধস: ভুক্তভোগীদের পুনর্বাসন ও মামলা নিষ্পত্তির দাবিগরমে লোকালয়ে ঢুকছে সাপ, সচেতনা সৃষ্টির প্রতিশ্রুতি ডিএমপিরব্যাংক একীভূতকরণের নামে ঋণ খেলাপিদের দায়মুক্তি দেওয়া হচ্ছেন্যাপ বাস্তবায়নের জন্য চাই রাজনৈতিক সদিচ্ছা ও আইনি ভিত্তিকাদেরকে নিয়ে মন্তব্য, যাত্রী কল্যাণের মহাসচিবের বিরুদ্ধে জিডিজাহাজেই ফিরবেন ২৩ নাবিক, চলছে কয়লা খালাসভুয়া তথ্য দিয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক হওয়ার চেষ্টা! সব খবর...
বিজ্ঞাপন