বিজ্ঞাপন

ট্রাইব্যুনালের এক দশক: ৩৫ রায়, ৫২ জনের মৃত্যুদণ্ড

March 25, 2019 | 8:19 am

আব্দুল জাব্বার খান, সিনিয়র করেসপন্ডেন্ট

ঢাকা: একাত্তরে মানবতাবিরোধী অপরাধের বিচারে গঠিত আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের এক দশক পূর্ণ হলো। এখন পর্যন্ত ১০ বছরে ট্রাইব্যুনাল থেকে ৩৫টি মামলার রায় হয়েছে। এসব মামলায় আসামি ছিল ৮০ জন। এর মধ্যে ৫২ জনকে মৃত্যুদণ্ড, ২৪ জনকে আমৃত্যুকারাদণ্ড, একজনকে যাবজ্জীবন কারাদণ্ড এবং বাকিদের বিভিন্ন মেয়াদে সাজা দিয়েছেন ট্রাইব্যুনাল।

বিজ্ঞাপন

অপ্রতুল জন সংখ্যা ও অবকাঠামোগত সংকট নিয়েও স্বল্প সময়ে এতোগুলোর মামলার রায় ঘোষণাকে বড় সাফল্য হিসেবে দেখছেন ট্রাইব্যুনাল সংশ্লিষ্টরা। বিপুল সংখ্যক মামলার জট কমাতে ট্রাইব্যুনালের সংখ্যা বাড়ানোর দাবিও জানিয়েছেন তারা।

মানবতাবিরোধী অপরাধের বিচার করতে ২০১০ সালের ২৫ মার্চ ট্রাইব্যুনাল গঠন করে আওয়ামী লীগ নেতৃত্বাধীন মহাজোট সরকার। প্রথমে একটি ট্রাইব্যুনাল থাকলেও বিচার কাজে গতি আনতে ২০১২ সালের ২২ মার্চ আরেকটি ট্রাইব্যুনাল গঠন করা হয়। এরপর দু’জন বিচারপতির নেতৃত্বে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল- ১ ও ২ নাম নিয়ে কার্যক্রম পরিচালনা শুরু হয়। কয়েক বছর পরে ট্রাইব্যুনালে মামলার সংখ্যা কমে এলে ২০১৫ সালের ১৫ সেপ্টেম্বর দু’টি ট্রাইব্যুনালকে একীভূত করে ফের একটি করা হয়। এরপর থেকে একটি ট্রাইব্যুনালে বিচার কাজ চলছে।

আইন সংশোধনের পরে জামায়াতের বিচার শুরু হবে

আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের ১০ বছরে পর্দাপন বিষয়ে প্রসিকিউটর জেয়াদ আল মালুম সারাবাংলাকে বলেন, বিচারপ্রার্থী, শহীদ পরিবার এবং বাংলাদেশের আপামর জনগণ এ বিচারের অপেক্ষায় ছিল। প্রতিষ্ঠাকাল থেকে সেই বিচারের কাজটি করে যাচ্ছে ট্রাইব্যুনাল।

বিজ্ঞাপন

তিনি বলেন, অবকাঠামোগত সীমাবদ্ধতা, জনবল সংকট নিয়েই ট্রাইব্যুনাল যাত্রা শুরু করে। এসব প্রতিকূলতার মধ্যেও প্রসিকিউশন দক্ষতার সঙ্গে তাদের দায়িত্ব পালন করে যাচ্ছে। এর প্রমাণ হলো, ট্রাইব্যুনাল থেকে এখন পর্যন্ত প্রসিকিউশনের অদক্ষতায় কেউ খালাস পায়নি।

তিনি বলেন, আমরা যদি আন্তর্জাতিক অঙ্গণের দিকে তাকাই তাহলে দেখবো, যেসব দেশে যুদ্ধাপরাধের বিচার হচ্ছে যুগস্লোভিয়া, কম্বোডিয়ার আদালতের তুলনায় বাংলাদেশের সম্পদ সীমিত। সীমাবদ্ধতা, প্রতিকূলতা সত্ত্বেও ট্রাইব্যুনাল ৩৫টি মামলা নিষ্পত্তি করতে সক্ষম হয়েছে। অথচ আন্তর্জাতিক আদালতে ১৫ থেকে ২০ বছরে মাত্র ৫ থেকে ৬টি মামলার রায় হয়েছে এমনও নজির আছে।

প্রসিকিউটর জেয়াদ আল মালুম বলেন, একাত্তরে স্বজন হারানো বিচারপ্রার্থীদের বিচার পাওয়ার অধিকার রয়েছে। তাদের এ অধিকার নিশ্চিত করতে এবং দ্রুত মামলা নিষ্পত্তি করতে একাধিক ট্রাইব্যুনাল চালু করার দরকার। সাক্ষীদের বয়স হয়ে যাচ্ছে, আসামিদেরও বয়স হয়ে যাচ্ছে। এসব মামলা নিষ্পত্তি করতে দেরি করলে দেখা যাবে, কয়েক বছর পর আসামিও থাকবে না- সাক্ষীও খুঁজে পাওয়া যাবে না।

বিজ্ঞাপন

গত ১০ বছরে ৩৫ মামলার রায় হয়েছে। নিঃসন্দেহে এটা আমাদের সফলতা। তবে সামগ্রিক বিবেচনায় এই সংখ্যা অপ্রতুল। সংগঠন হিসেবে জামায়াতের বিচারের জন্য আইনের সংশোধন প্রয়োজন। আইন সংশোধনের পরে জামায়াতের বিচার শুরু হবে।

তদন্ত সংস্থার হাতে ৬৮২টি অভিযোগ

তদন্ত সংস্থার প্রধান আব্দুল হান্নান খান সারাবাংলাকে বলেন, ট্রাইব্যুনাল প্রতিষ্ঠার পর থেকে এখন পর্যন্ত শতভাগ সক্ষমতার সঙ্গে কাজ করে যাচ্ছে তদন্ত সংস্থা।

তিনি বলেন, আমাদের দেওয়া প্রত্যেকটি মামলার প্রতিবেদন অনুযায়ী আসামিদের সাজা হয়েছে। শুধু তাই নয়, শতভাগ সাজা হয়েছে। এটাই আমাদের তদন্ত সংস্থার অর্জন। আমরা প্রতিনিয়ত শিখছি এবং সফলভাবে আমাদের সদস্যরা কাজ করে যাচ্ছে। ১০ বছরে ট্রাইব্যুনালের অর্জন দেশের মানুষ বিবেচনা করবে। তবে ট্রাইব্যুনাল সংখ্যা বাড়ানো হলে মামলার সংখ্যা আরও অনেক নিষ্পত্তি করা সম্ভব হতো।

এখনো তদন্ত সংস্থার হাতে ৬৮২টি অভিযোগ রয়েছে জানিয়ে তিনি বলেন, প্রসিকিউশনের কাছে বেশ কিছু মামলার প্রতিবেদন দেওয়া আছে। এসব মামলা নিষ্পত্তি করতে ট্রাইব্যুনালের সংখ্যা বাড়ানো একান্ত প্রয়োজন। তা না হলে বিচার প্রার্থীদের বিচার পাওয়া বিলম্বিত হবে।

বিজ্ঞাপন

এছাড়া সাক্ষী সুরক্ষা আইন হওয়াটা সময়ের দাবি বলেও উল্লেখ করেন তদন্ত সংস্থার প্রধান।

আপিল শুনানির অপেক্ষায় ২৬ মামলা

প্রসিকিউশন সূত্রে জানা গেছে, ট্রাইব্যুনাল গঠনের পর এখন পর্যন্ত ৩৫টি মামলার রায় হয়েছে। যাতে আসামির সংখ্যা ৮২। এর মধ্যে সাজাপ্রাপ্ত আসামি ৮০ জন। ৩৫টি মামলার মধ্যে মাত্র ৯টির আপিল নিষ্পত্তি হয়েছে। এর মধ্যে ৬ জন আসামির মৃত্যুদণ্ড কার্যকর হয়েছে। ৩৩টি মামলা ট্রাইব্যুনালে বিচারাধীন। আপিল শুনানির অপেক্ষায় আছে ২৬টি মামলা।

একাত্তরের মানবতাবিরোধী অপরাধের বিচার শুরু হলে তদন্ত সংস্থার কাছে মোট ৭২৮টি অভিযোগ এসেছিল। এর মধ্যে তদন্ত সম্পন্ন হয় ৬৮টির। তদন্ত চলছে ২৫টি অভিযোগের।

সর্বোচ্চ আদালত হয়ে এ পর্যন্ত যাদের মামলা নিষ্পত্তি এবং দণ্ড কার্যকর হয়েছে তারা হলেন, আব্দুল কাদের মোল্লা (যাবজ্জীবন কারাদণ্ড) পরবর্তীতে আপিলে মৃত্যুদণ্ড, মৃত্যুদণ্ড কার্যকর, মাওলানা দেওয়ার হোসাইন সাঈদী (মৃত্যুদণ্ড) পরবর্তীতে আপিলে আমৃত্যু কারাদণ্ড, মো. কামারুজ্জামান (মৃত্যুদণ্ড) দণ্ড কার্যকর, গোলাম আযম (৯০ বছরের কারাদণ্ড), আলী আহসান মুহাম্মদ মুজাহিদ (মৃত্যুদণ্ড) দণ্ড কার্যকর, সালাউদ্দিন কাদের (সাকা) চৌধুরী (মৃত্যুদণ্ড) দণ্ড কার্যকর, আব্দুল আলীম (আমৃত্যু কারাদণ্ড), মতিউর রহমান নিজামী (মৃত্যুদণ্ড) কার্যকর, মীর কাশেম আলী (মৃত্যুদণ্ড) কার্যকর।

সারাবাংলা/এজেডকে/এটি

Tags: , ,

বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন