বিজ্ঞাপন

এফআর টাওয়ারে আগুন: দায়িত্ব পালন করেনি রাজউক-দমকল বাহিনী

April 2, 2019 | 12:54 am

স্পেশাল করেসপন্ডেন্ট

ঢাকা: অনুমোদিত নকশা অনুযায়ী নির্মিত হয়নি বনানীর এফআর ভবন। এমনকি এই ভবন নির্মাণের তদারকি প্রতিষ্ঠান রাজউক এবং ভবনের নিরাপত্তার বিষয়টি দেখভালের দায়িত্বে থাকা দমকল বাহিনী নিজ নিজ দায়িত্ব পালন করেনি। বরং এফআর ভবনের নকশা এবং ব্যবস্থাপনায় ক্রুটি রয়েছে এটা জেনেও কোনো ব্যবস্থা নেয়নি সংশ্লিষ্ট দফতরগুলো।

বিজ্ঞাপন

গত ২৮ মার্চ এফআর টাওয়ারে অগ্নিকাণ্ডের ঘটনায় সরকারের বিভিন্ন দফতরের গঠিত তদন্ত কমিটিগুলোর প্রাথমিক অনুসন্ধানে এসব তথ্য বেরিয়ে এসেছে।

এক্সটিংগুইশার-হোস পাইপ কিছুই নেই, ফায়ার বক্স খালি!

প্রাথমিক অনুসন্ধান শেষে বিভিন্ন কদন্ত কমিটির সংশ্লিষ্টরা জানান, অবৈধ ভবন নির্মাণের জন্য প্রথমভাবে দায়ী ভবন মালিক ও ডেভেলপার প্রতিষ্ঠান। এরপর যারা মনিটরিংয়ের দায়িত্বে ছিল তারাও দায়ী এই ঘটনায়। এছাড়া ভবন মালিক ও নির্মাতা প্রতিষ্ঠানসহ যারাই দায়িত্বে অবহেলা করেছেন তাদের সবার বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেওয়া হবে বলে জানিয়েছেন তদন্ত সংশ্লিষ্টরা। উল্লেখ্য, ওই ভবনটির মালিক ইঞ্জিনিয়ার এস এম এইচ আই ফারুক এবং নিমার্ণকারী প্রতিষ্ঠান ছিল রূপায়ন।

বিজ্ঞাপন

ত্রাণ ও দুর্যোগ মন্ত্রণালয়ের গঠিত তদন্ত কমিটির প্রধান ফয়জুর রহমান বলেন, ‘আমরা গত শুক্রবারই বৈঠক করে তদন্তের গাইডলাইন নির্ধারণ করেছি। বৈঠকের পর কমিটির সদস্যদের নিয়ে ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেছি। যারা ওই ভবনের অগ্নিকাণ্ডের ঘটনায় আহত হয়েছেন, চিকিৎসাধীন আছেন তাদের সঙ্গে কথা বলেছি।’

ফয়জুর রহমান আরও বলেন, ‘ভবনের কাগজপত্র রাজউক ও ভবন মালিকের কাছে চাওয়া হয়েছে। তবে রাজউক পর্যাপ্ত কাগজপত্র দেখাতে পারেনি। আমরা প্রাথমিকভাবে জানতে পেরেছি এফআর টাওয়ারের ১৮তলা পর্যন্ত অনুমোদন ছিল। ২৩ তলা কীভাবে হলো তা জানার চেষ্টা করছি। এছাড়া ভবনটিতে অগ্নি নির্বাপণের কোনো ব্যবস্থা ছিল না। এসব অব্যবস্থাপনা বিষয় ভবন নিমার্ণের পর থেকে থাকলেও রাজউক বা ফায়ার সার্ভিস থেকে কোনো ব্যবস্থা নেওয়া হয়নি।’ এছাড়া আগামী ৩ এপ্রিল চূড়ান্ত তদন্ত প্রতিবেদন জমা দেবেন বলেও জানান তিনি।

গৃহায়ন ও গণপূর্ত মন্ত্রণালয়ের গঠিত তদন্ত কমিটির সদস্য ও স্থাপত্য অধিদফতরের প্রধান স্থপতি কাজী গোলাম নাসির এ প্রসঙ্গে বলেন, ‘আমরা পুড়ে যাওয়া ভবনটি ঘুরে দেখেছি। রাজউক ও ফায়ার সার্ভিসের যে দায়িত্ব রয়েছে তা তারা পালন করেনি বলে মনে হচ্ছে।’

বিজ্ঞাপন

রাজউকের পরিচালক (আইন) ও তদন্ত কমিটির প্রধান খন্দকার অলিউর রহমান জানান, বনানী এফআর টাওয়ারের অগ্নিকাণ্ডের বিষয়ে আমরা কদন্ত করছি। কাল-পরশু আপনারা জানতে পারবেন। এর বেশি কিছু বলতে চাননি তিনি।

তদন্ত কমিটির সদস্যদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, কোনো অনুমোদন ছাড়াই এফআর টাওয়ার ১৮ তলার স্থলে ২৩ তলা করা হয়েছে। এছাড়া ভবনটিতে জরুরি নির্গমন পথ ও অগ্নি নির্বাপণের কোনো ব্যবস্থা ছিল না। এসব কারণে রাজধানী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ (রাজউক) একবার ও ফায়ার সার্ভিসের পক্ষ থেকে তিন দফা সতর্কীকরণ নোটিশ দেওয়া হয়েছিল বলে সংস্থা দুটি থেকে জানানো হয়েছে।

এছাড়া গত বছর ভূমিকম্পের সময় এফআর টাওয়ারটি কিছুটা হেলেও পড়েছে বলে জানতে পেরেছেন তদন্ত সংশ্লিষ্টরা। সংশ্লিষ্টরা বলছেন, সরকারের পক্ষ থেকে দেখভালের দায়িত্বপ্রাপ্ত সংস্থাগুলো সঠিকভাবে দায়িত্ব পালন করলে ১৮ তলার অনুমোদন নিয়ে নকশার ব্যত্যয় ঘটিয়ে ২৩ তলা ভবন নির্মাণ করা সম্ভব হতো না। একই সঙ্গে পর্যাপ্ত অগ্নিনির্বাপক ব্যবস্থা না থাকলেও ফায়ার সার্ভিস বিভাগ তার সঠিক মনিটরিং করেনি। সেই সুযোগে ভবন মালিক ও ডেভেলপার প্রতিষ্ঠান নকশার ব্যত্যয় ঘটিয়ে অতিরিক্ত পাঁচতলা নির্মাণ করেছে এবং পর্যাপ্ত অগ্নিনির্বাপক ব্যবস্থা ছাড়া ভবনের কার্যক্রম পরিচালনা করেছে।

সংশ্লিষ্টরা জানান, এফআর টাওয়ার ভবনটিকে ১৮ তলা ইমারত নির্মাণের অনুমোদন দেওয়া হয় ১৯৯৬ সালে। ২০০৫ সালে এসে রাজউককে একটা কপি দাখিল করে বলা হয় এটা ২৩ তলা হয়েছে। পরে সরকারি তদন্তে বেরিয়ে আসে, যে কপি ভবন মালিক দাখিল করেছে, তার সমর্থনে রাজউকের রেকর্ডে কোথাও কোনো তথ্য-উপাত্ত নেই। ওই তদন্ত প্রতিবেদনে বলা হয়, ২৩ তলার যে নকশা ভবন কর্তৃপক্ষ দাখিল করেছে, তা সঠিক নয় এবং মূল অনুমোদিত নকশার ব্যত্যয় ঘটিয়ে ভবনের অবৈধ অংশ নির্মাণ করা হয়েছে।

বিজ্ঞাপন

সারাবাংলা/এইচএ/এমআই

Tags: ,

বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন