বিজ্ঞাপন

শুঁটকি হবে নিরাপদ-স্বাস্থ্যসম্মত, চলছে গবেষণা

April 3, 2019 | 7:36 am

জোসনা জামান, স্টাফ করেসপন্ডেন্ট

ঢাকা: নিরাপদ ও স্বাস্থ্যসম্মত শুঁটকি উৎপাদনে বিশেষ গুরুত্ব দিচ্ছে সরকার। এ জন্য ‘বিসিএসআইআর ঢাকা ও চট্টগ্রাম কেন্দ্র নিরাপদ ও স্বাস্থ্যকর শুঁটকি মাছ প্রক্রিয়াকরণ এবং ইনডোর ফার্মিং গবেষণা সংক্রান্ত সুবিধাদি স্থাপন’ নামের একটি প্রকল্প হাতে নিচ্ছে বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি মন্ত্রণালয়। এটি বাস্তবায়নে খরচ ধরা হয়েছে ৮৯ কোটি টাকা।

বিজ্ঞাপন

পরিকল্পনা কমিশনের একাধিক দায়িত্বশীল কর্মকর্তা সারাবাংলাকে জানান, এরই মধ্যে প্রকল্পটির প্রক্রিয়াকরণ শেষ হয়েছে। জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদের নির্বাহী কমিটির (একনেক) আগামী বৈঠকে প্রকল্পটি উপস্থাপন করা হবে। অনুমোদন পেলে আগামী জুলাই মাস থেকে শুরু করে ২০২১ সালের জুনের মধ্যে প্রকল্পটি বাস্তবায়ন করবে বাংলাদেশ বিজ্ঞান ও শিল্প গবেষণা পরিষদ।

বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি মন্ত্রণালয় সূত্র জানায়, বাংলাদেশে উপকূলীয় অঞ্চলে প্রচলিত পদ্ধতিতে বছরে তিন থেকে চার মাস শুঁটকি মাছ তৈরি হয়ে থাকে। মাছ শুকাতে চার থেকে সাত দিন সময় লাগে। এতে ব্যবহার করা লবণ, ডিডিটিসহ কীটনাশক জনস্বাস্থ্যের জন্য মারাত্মক হুমকি। কিন্তু স্বল্প বিদ্যুৎসাশ্রয়ী ড্রায়ার ব্যবহার করে মাত্র একদিনে মাছ শুকানো যায়। এতে মাছের আমিষমান এবং ওমেগা ফ্যাটি এসিড অক্ষুণ্ন থাকে। ভ্যাকুয়াম প্যাকেজিং করা হলে শুঁটকি মাছ ১২ মাস পর্যন্ত সংরক্ষণ করা যায়।

মন্ত্রণালয় বলছে, জলবায়ু পরিবর্তনের বিরূপ প্রভাব যথা তাপমাত্রার বৃদ্ধি, পানির স্তর নিচে নেমে যাওয়া, পানি অক্সিজেন শূন্য হয়ে পড়া, দ্রবীভূত অ্যামোনিয়ার পরিমাণ বৃদ্ধি প্রভৃতি কারণে মাছের আবাস তথা প্রজনন স্থল কমে যাচ্ছে। তাই রেণু পোনা তৈরির প্রাকৃতিক পরিবেশ ধ্বংস হয়ে যাচ্ছে। অকাল বন্যা, মাছের খাবারের দাম বৃদ্ধি, সারাবছর উন্নত জাতের পোনার অপ্রাপ্তিতাসহ বিভিন্ন কারণে পুকুর  খাল বিলে মাছ চাষ প্রতিবছর কমে যাচ্ছে। এসব সমস্যা পরীক্ষিত সমাধান ক্লোজড কনটেইনমেন্ট অ্যাকুয়াকালচার, যা পরিবেশবান্ধব। সারাবছর ৯৫ শতাংশ পানির পুনঃব্যবহার করে পুকুরের দশভাগ কম জায়গায় দশগুণ বেশি মাছ উৎপাদন করা যায়।

বিজ্ঞাপন

বাংলাদেশে মানসম্মত ও কেমিক্যালমুক্ত মাছ তৈরির অন্যতম বাধা প্রোটিন সমৃদ্ধ ও ভাসমান খাবারের অভাব। মাছের খাবার তৈরিতে প্রয়োজন হয় ৬২ শতাংশ আমিষ। কিন্তু বাংলাদেশে যেসব উৎস হতে মাছের খাবার তৈরি হয় তাতে আমিষের পরিমাণ চার ভাগের এক ভাগ। ফার্মেন্টশন প্রযুক্তি ব্যবহার করে আলু, কসাগ ও ভুট্টা থেকে তৈরি করা যায় আমিষ সমৃদ্ধ অর্গানিক মাছের খাবার।

দেশের সার্বিক উন্নয়নের অন্যতম চালিকাশক্তি খাদ্য। জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে দিন ও রাতের তাপমাত্রার ব্যাপক পার্থক্য, অতিবৃষ্টি, ফসলহানিকর পোকামাকড় ও অণুজীবের আক্রমণ বৃদ্ধির কারণে কাঙ্ক্ষিত উৎপাদনের জন্য কৃষি ক্ষেত্রে অতিমাত্রায় কীটনাশকের ব্যবহার বাড়ছে। তাই দরকার ইনডোর একুয়াপোনিক সবজি চাষ ও আমদানি নির্ভর নিউট্রিয়েন্ট দেশীয়ভাবে উৎপাদন গবেষণা।

বিজ্ঞাপন

বিসিএসআইআর চট্টগ্রাম কেন্দ্রে গবেষণার মাধ্যমে বিদ্যুৎ সাশ্রয়ী মাছ শুকানো প্রযুক্তির উন্নয়ন ও এডাপসন, ভাইরাসমুক্ত পোনা তৈরি, কেমিক্যালমুক্ত ও প্রোটিনসমৃদ্ধ মাছ উৎপাদনে আরএএস প্রযুক্তির ওপর গবেষণা, একুয়াপোনিক সবজি চাষ গবেষণা, ইনডোর বৈদেশিক প্রযুক্তি সুবিধাদি এ দেশের আবহাওয়া উপযোগী ও ব্যয় সাশ্রয়ী করার জন্য প্রকল্পটি বাস্তবায়নের প্রস্তাব করা হয়েছে।

প্রকল্পের প্রধান কার্যক্রম হচ্ছে— ২৬০০ বর্গমিটার ভবন নির্মাণ, ১ হাজার ৮৭২ বর্গমিটার স্টিল স্ট্রাকচার শেড নির্মাণ, বিভিন্ন ধরনের বৈজ্ঞানিক যন্ত্রপাতি, কেমিক্যালস, আসবাবপত্র সংগ্রহ এবং স্থানীয় ও বৈদেশিক প্রশিক্ষণ।

এ বিষয়ে পরিকল্পনা কমিশনের আর্থ-সামাজিক অবকাঠামো বিভাগের ভারপ্রাপ্ত সদস্য আবুল কালাম আজাদ পরিকল্পনা কমিশনের মতামত দিতে গিয়ে বলেন, ‘এই প্রকল্পের মাধ্যমে মৎস্য চাষ প্রযুক্তি গবেষণা ও প্রশিক্ষণ কেন্দ্র প্রতিষ্ঠা করা সম্ভব হবে। পাশাপাশি কীটনাশকমুক্ত মাছ, সামুদ্রিক আগাছা ইত্যাদি শুকনো ও সংরক্ষণ প্রযুক্তির ওপর গবেষণা, একুয়াপোনিক সবজি উৎপাদন বিষয়ে গবেষণা করা হবে যা আমাদের অর্থনীতিতে ইতিবাচক ভূমিকা রাখবে।’

সারাবাংলা/জেজে/একে

বিজ্ঞাপন

Tags: ,

বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন