বিজ্ঞাপন

‘গ্রিন সিগন্যাল’ পেলে আগামী অধিবেশনে যোগ দেবে বিএনপি

April 11, 2019 | 10:49 pm

আসাদ জামান, স্পেশাল করেসপন্ডেন্ট

ঢাকা: একাদশ জাতীয় সংসদের দ্বিতীয় অধিবেশন শুরু হচ্ছে আগামী ২৪ এপ্রিল। কারাবন্দি বিএনপির চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া ও যুক্তরাজ্যে নির্বাসনে থাকা দলটির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের ‘গ্রিন সিগন্যাল’ পেলে এই অধিবেশনেই সংসদে যোগ দেবে বিএনপি। দলটির কয়েকজন শীর্ষ নেতার সঙ্গে কথা বলে এমন আভাস পাওয়া গেছে।

বিজ্ঞাপন

সংশ্লিষ্ট সূত্রগুলো বলছে, একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে ধানের শীষ প্রতীকে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করা ২৯২ জন পরাজিত প্রার্থী চেয়েছিলেন জাতীয় ঐক্যফ্রন্ট কেউ যেন সংসদে না যায়। কিন্তু তাদের এই চাওয়া উপেক্ষা করে এরই মধ্যে ধানের শীষ নিয়ে মৌলভী বাজার-২ আসন থেকে নির্বাচিত সংসদ সদস্য সুলতান মোহাম্মদ মনসুর শপথ নিয়ে প্রথম অধিবেশনেই সংসদে যোগ দিয়েছেন। প্রথম দিনেই পেয়েছেন ফ্লোর। দিয়েছেন ঝাঁঝালো বক্তব্য।

সিলেট-২ আসন থেকে উদীয়মান সূর্য নিয়ে নির্বাচিত মোকাব্বির খান শপথ গ্রহণ পর্ব শেষ করে আগামী সংসদে যোগ দেওয়ার অপেক্ষায় রয়েছেন। সব কিছু ঠিক থাকলে একাদশ জাতীয় সংসদের দ্বিতীয় অধিবেশনেই যোগ দেবেন তিনি।

সংশ্লিষ্ট সূত্রমতে, দল ও জোটের সিদ্ধান্ত অমান্য করে সুলতান মোহাম্মদ মনসুর ও মোকাব্বির খান সংসদে গেলেও ধানের শীষ প্রতীক নিয়ে বগুড়া-৬ আসন থেকে নির্বাচিত বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর, বগুড়া-৪ আসন থেকে নির্বাচিত মোশাররফ হোসেন, চাঁপাইনবাবগঞ্জ-২ আসন থেকে নির্বাচিত মো. আমিনুল ইসলাম, চাঁপাইনবাবগঞ্জ-৩ আসন থেকে নির্বাচিত মো. হারুন অর রশীদ, ঠাকুরগাঁও-৩ আসন থেকে নির্বাচিত জাহিদুর রহমান ও ব্রাহ্মণবাড়িয়া-২ আসন থেকে নির্বাচিত আবদুস সাত্তার ভূঁইয়া সেই পথে হাঁটবেন না। বরং খালেদা জিয়া ও তারেক রহমানের গ্রিন সিগন্যালের অপেক্ষায় থাকবেন তারা।

বিজ্ঞাপন

বিএনপি-সূত্রে জানা গেছে, দলটির বেশিরভাগ শীর্ষ নেতা মনে করেন, আন্দোলন-সংগ্রাম করে বর্তমান সরকারের কাছ থেকে দাবি আদায় করা সম্ভব নয়। গত ১০ বছরে বিএনপি যে কাজ করতে পারেনি, তা আগামী ৫ বছরেও করতে পারবে না। বরং সংসদে গিয়ে খালেদা জিয়ার মুক্তির ব্যাপারে ‘জোর দাবি’ তুলে ধরতে পারলে সেখান থেকে কিছু ফল আসতে পারে।

কিন্তু ধানের শীষের ২৯২ জন পরাজিত প্রার্থীর চাওয়া এবং দলের বেশিরভাগ নেতার মত উপেক্ষা করে বিজয়ী ছয় জনের পক্ষে সংসদে যাওয়া কেবল কঠিন নয়, অসম্ভবও বটে। যদিও মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর ছাড়া বিএনপি থেকে নির্বাচিত ৫ সংসদ সদস্য-ই শপথ গ্রহণের ব্যাপারে উদগ্রীব হয়ে আছেন বলে জানা গেছে।

অবশ্য সংশ্লিষ্টরা বলছেন, দলের অভ্যন্তরে গণতন্ত্র চর্চার সুযোগ না থাকায় সবাই মিলে চাইলেও নির্বাচিত ছয় জনের সংসদে যাওয়ার বিষয়টি ঠেকে থাকবে না। শেষ কথাটি খালেদা জিয়া ও তারকে রহমান-ই বলবেন। তারা দু’জন যদি সংসদে যাওয়ার পক্ষে মত দেন, তাহলে অন্যদের চাওয়া, না চাওয়ায় কিছু আসবে যাবে না।

বিজ্ঞাপন

এ প্রসঙ্গে জানতে চাইলে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ড. খন্দকার মোশাররফ হোসেন সারাবাংলাকে বলেন, ‘দলের চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া ও ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের সঙ্গে কথা বলেই নির্বাচনের ফল প্রত্যাখ্যান ও শপথ না নেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছিল বিএনপি। দলের সর্বোচ্চ নীতি-নির্ধারণী ফোরাম এখনো সেই সিদ্ধান্তে অনড় আছে। এখন যদি দলের চেয়ারপারসন ও ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যানের পক্ষ থেকে নতুন কোনো পরামর্শ বা দিক-নির্দেশনা আসে, সে ব্যাপারে স্থায়ী কমিটির বৈঠকে আলোচনা করে সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে।’

বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর সারাবাংলাকে বলেন, ‘শপথ গ্রহণ না করা ও সংসদে না যাওয়ার যে সিদ্ধান্ত দলীয়ভাবে নেওয়া হয়েছিল, সেটা এখন পর্যন্ত বহাল আছে। পরের বিষয় পরে দেখা যাবে।’

এদিকে আগামী ২৪ এপ্রিল একাদশ জাতীয় সংসদের দ্বিতীয় অধিবেশন শুরুর ছয় দিনের মাথায় শপথ না নিলে বিএনপি থেকে নির্বাচিত ছয় প্রার্থীর সংসদ সদস্যপদ বাতিল হয়ে যাবে। যৌক্তিক কোনো কারণ দেখাতে না পারলে পরবর্তী ৯০ দিনের মধ্যে এসব আসনে উপনির্বাচন অনুষ্ঠানের বাধ্যবাধকতা রয়েছে নির্বাচন কমিশনের।

এমন এক পরিস্থিতিতে বিএনপির চেয়ারপারসন ও ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যানের সিদ্ধান্তের দিকে তাকিয়ে আছেন দলটির নির্বাচিত প্রার্থীরা। খালেদা জিয়া-তারেক রহমানের দিক থেকে ‘গ্রিন সিগন্যাল’ পেলে শপথ নিয়ে আগামী অধিবেশনেই সংসদে যোগ দেওয়ার জন্য মুখিয়ে আছেন তারা।

বিজ্ঞাপন

এ প্রসঙ্গে জানতে চাইলে ঠাকুরগাঁও-৩ আসন থেকে বিজয়ী বিএনপি প্রার্থী জাহিদুর রহমান সারাবাংলাকে বলেন, ‘দলের সিদ্ধান্ত মেনে নিয়েই রাজনীতি করতে চাই। দল চায়নি বলেই এতদিন শপথ নেইনি। কিন্তু এলাকার লোকজন চায় আমি শপথ নেই। খালেদা জিয়া ও তারেক রহমানের দিকে তাকিয়ে আছি। আশা করি, আগামী অধিবেশনের আগেই তাদের কাছ থেকে ইতিবাচক সিদ্ধান্ত আসবে।’ শপথ নিয়ে সংসদে গিয়ে জনগণের পক্ষে কথা বলার সুযোগ পাবেন বলেও তিনি আশা প্রকাশ করেন।

সারাবাংলা/এজেড/এমএনএইচ

Tags: ,

বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন