বিজ্ঞাপন

এসেছে বৈশাখ, রমনায় শুরু বন্দনা

April 14, 2019 | 6:28 am

রাজনীন ফারজানা

ঢাকা: স্বাগতম বাংলা নববর্ষ-১৪২৬ । রমনার বটমূলে শুরু হয়েছে বৈশাখ বন্দনা। বাংলা নববর্ষের প্রথম দিনে সূর্য ওঠার সঙ্গে সঙ্গে রাগললিত পরিবেশন করেন শিল্পী অসিত কুমার দে’র সুরের মাধ্যমে শুরু হয় বৈশাখ বন্দনার গান। কেন্দ্রীয় ছায়ানটের আয়োজনে সেখানে এ অনুষ্ঠান চলছে। বর্ষবরণ অনুষ্ঠানে ছায়ানটের এবারের প্রতিপাদ্য শুভবোধ জাগানোর আহ্বান।

বিজ্ঞাপন

বর্ষবরণ অনুষ্ঠানে শিল্পীরা এককভাবে ১৩টি গান পরিবেশন করবেন। এছাড়া দুটি কবিতা আবৃত্তি করবেন ছায়ানটের শিল্পীরা। সবশেষে জাতীয় সঙ্গীতের মাধ্যমে শেষ হবে ছায়ানটের এই আয়োজন। এর আগে ছায়ানটের সভাপতি সনজীদা খাতুন বক্তব্য দেবেন।

ধর্ম-বর্ণ নির্বিশেষে বাঙালির প্রাণের উৎসব এই পহেলা বৈশাখ। সূর্যোদয়ের সঙ্গে সঙ্গে প্রতিটা বাঙালির অন্তরে বেজে ওঠে তাপস নিঃশ্বাস বায়ে, মুমূর্ষুরে দাও উড়ায়ে’র আহ্বান।

পহেলা বৈশাখের এবারের প্রতিপাদ্য- ‘মস্তক তুলিতে দাও অনন্ত আকাশে’। সমস্ত শাসন আর শোষণের পালা শেষ করে স্বাধীনতা এসেছে প্রায় অর্ধশতাব্দী আগে। এখন সময় জাতি হিসেবে, মানুষ হিসেবে মাথা তুলে দাঁড়ানোর। সারা পৃথিবীর কাছে মাথা উঁচু করে নিজের বাঙালি জাতিস্বত্তাকে পরিচিত করানোর।

বিজ্ঞাপন

সারাবছর জুড়ে জমা হওয়া যত আবর্জনা আর ক্লেদ দূর করে নতুন করে জেগে ওঠার দিন পহেলা বৈশাখ। তাই নববর্ষের নতুন সূর্যের রশ্মি আমাদের প্রাণে জাগায় শুদ্ধতা ও নতুন করে বেঁচে ওঠার প্রেরণা। বৈশাখ মানেই তো সব ভেঙ্গেচুড়ে নতুন করে গড়া, নতুন চোখে দেখা আর নতুন করে অনুভব করা।

পহেলা বৈশাখ

বিজ্ঞাপন

পহেলা বৈশাখই সেই দিন, যেদিন আমরা বৈশ্বিক সমস্ত প্রভাব কাটিয়ে সামগ্রিকভাবে বাঙালিয়ানার উদযাপন করি। পরি দেশি পোশাক শাড়ি-পাঞ্জাবি-ফতুয়া, খাই দেশি খাবার ভাত-মাছ-ভর্তা ইত্যাদি। আমরা সারাদিন ধরে মেলায় ঘুরে, নগর জুড়ে চলা সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান দেখে, নাগরদোলায় চড়ে, ফুচকা, চটপটি আর মাটির সানকিতে নানা পদের ভর্তা আর ইলিশ পান্তা খেয়ে উদযাপন করি বছরের প্রথম দিনটি।

কীভাবে শুরু হল পহেলা বৈশাখ উদযাপন? ইতিহাস বলে, ব্রিটিশ শাসনামলে প্রথম মহাযুদ্ধে ব্রিটিশদের বিজয় কামনা করে পহেলা বৈশাখের দিন হোমকীর্তন ও পূজার ব্যাবস্থা করা হয়। ১৯৩৮ এর পহেলা বৈশাখেও ছিল একই আয়োজন। এরপর বঙ্গভঙ্গের পর দুই বাংলা আলাদা হয়ে গেলেও ভাটা পড়েনি ঘটা করে পহেলা বৈশাখ উদযাপনে।

একসময়, পূর্ব বাংলা হয়ে যায় পাকিস্তানের অংশ। নতুন নাম হয়, পূর্ব পাকিস্তান। আর পূর্ব পাকিস্তানিদের উপর পশ্চিম পাকিস্তানিদের শোষণের অন্যতম হাতিয়ার ছিল বাঙালি সংস্কৃতির মূলে কুঠারাঘাত করা। সেই উদ্দেশ্যে তারা রবীন্দ্র সঙ্গীতের ওপর নিষেধাজ্ঞা আরোপের চেষ্টা চালায়। সেই সময় সাংস্কৃতিক সংগঠন ছায়ানটের শিল্পীরা ১৯৬৭ সালের পহেলা বৈশাখের দিন সূর্যোদয়ের সঙ্গে সঙ্গে সম্মিলিত কন্ঠে গান গেয়ে আহ্বান জানান নতুন বছরকে। যে জায়গায় তারা গান গেয়েছিলেন সেটা রমনার বটমূল বলে পরিচিত হলেও আসলে সেটি একটি বিশাল অশ্বত্থ গাছ।

পহেলা বৈশাখ

বিজ্ঞাপন

ছায়ানটের অনুষ্ঠানের পাশাপাশি সকাল ৯টার দিকে পহেলা বৈশাখের অন্যতম প্রধান আকর্ষণ মঙ্গল শোভাযাত্রা বের হবে চারুকলা অনুষদ থেকে। মঙ্গল শোভাযাত্রা ইতোমধ্যেই ইউনেস্কো ঘোষিত বিশ্ব ঐতিহ্যের অংশ যা জাতি হিসেবে আমাদের জন্য আরও একটি গর্বের অর্জন।

এছাড়াও বাঙালির প্রাণের উৎসব পহেলা বৈশাখ-১৪২৬ উদযাপন উপলক্ষে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের বিভিন্ন বিভাগ ও বাংলা একাডেমি সকালে সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের আয়োজন করেছে। দিবসটি উপলক্ষে বইমেলাসহ বৈশাখী মেলার আয়োজন করা হয়েছে বাংলা একাডেমি চত্বরে।

পহেলা বৈশাখ

বাংলা নববর্ষ উপলক্ষে শিল্পকলা একাডেমি, বাংলাদেশ শিশু একাডেমি, বাংলা একাডেমি, গণগ্রন্থাগার অধিদফতর, আরকাইভস ও গ্রন্থাগার অধিদফর, জাতীয় জাদুঘর, কবি নজরুল ইনস্টিটিউট, কপিরাইট অফিস, জাতীয় গ্রন্থকেন্দ্র ও বিসিক নববর্ষ মেলা, আলোচনাসভা, প্রদর্শনী, কুইজ, রচনা ও চিত্রাঙ্কন প্রতিযোগিতাসহ নানা অনুষ্ঠানের আয়োজন করেছে।

বাংলাদেশে রাষ্ট্রীয়ভাবে উদযাপিত হয় এই উৎসব। থাকে সরকারি ছুটি। রাজধানী ঢাকাসহ সারা দেশজুড়ে সরকারি ও বেসরকারি দুইভাবেই উদযাপিত হয় বাঙালির প্রাণের এই অসাম্প্রদায়িক উৎসব।

পহেলা বৈশাখ

বাংলা নববর্ষ উপলক্ষে রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদ ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা পৃথক বাণীতে দেশবাসীসহ বাঙালিদের আন্তরিক শুভেচ্ছা ও অভিনন্দন জানিয়েছেন। জাতীয় সংবাদপত্রগুলো বাংলা নববর্ষ নিয়ে বিশেষ ক্রোড়পত্র বের করবে। সরকারি ও বেসরকারি টিভি চ্যানেলগুলোতে নববর্ষকে ঘিরে প্রচারিত হবে নানারকম অনুষ্ঠান।

বাংলা নববর্ষের প্রথম দিন দেশের সব কারাগার, হাসপাতাল ও এতিমখানায় ঐতিহ্যবাহী বাঙালি খাবার পরিবেশন করা হবে। শিশু পরিবারের শিশু ও কারাবন্দিদের পরিবেশনায় সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান এবং কয়েদিদের তৈরি বিভিন্ন জিনিসের প্রদর্শনীর ব্যবস্থাও করা হয়েছে। নববর্ষ উপলক্ষে দেশের সব জাদুঘর ও প্রত্নস্থান সর্বসাধারণের জন্য উন্মুক্ত রাখা এবং শিশু-কিশোর, ছাত্র-ছাত্রী, প্রতিবন্ধী ও অটিস্টিক শিশুদের বিনা টিকিটে প্রবেশ করতে পারবে।

এ উপলক্ষে বিশেষ আয়োজন থাকছে বিদেশে অবস্থিত বাংলাদেশ মিশনগুলোতেও। বাংলার ঐতিহ্যবাহী খাবারের আয়োজন থাকবে হোটেল এবং রেস্টুরেন্টগুলোতে।

ছবি: আশীষ সেনগুপ্ত ও হাবিবুর রহমান

সারাবাংলা/আরএফ/একে

Tags:

বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন