বিজ্ঞাপন

বীরশ্রেষ্ঠদের সমাধি মাড়িয়ে উৎসব!

April 16, 2019 | 4:28 am

স্পেশাল করেসপন্ডেন্ট

ঢাকা: পহেলা বৈশাখ উদযাপনে জাতির শ্রেষ্ঠ সন্তানদের অমর্যাদা দেখার পরে ক্ষোভের সঞ্চার হয়েছে বিভিন্ন মহলে। প্রশ্ন উঠেছে প্রশাসনের দায়িত্বে অবহেলা নিয়েও। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে বইছে নিন্দার ঝড়।

বিজ্ঞাপন

পহেলা বৈশাখে রাজধানীর মিরপুরে শহিদ বুদ্ধিজীবী কবরস্থানে তোলা বীরশ্রেষ্ঠ শহিদ ফ্লাইট লে. মতিউর রহমান ও বীরশ্রেষ্ঠ শহিদ সিপাহী হামিদুর রহমানের সমাধির তিনটি এখন ছবি ভাইরাল।

একটি ছবিতে দেখা যায়, মতিউর রহমানের সমাধির ওপর জুতা পায়ে দাঁড়িয়ে একটি শিশু। অন্য ছবিতে মতিউর রহমানের সমাধির ঠিক নাম ফলকের পাশেই স্যান্ডেল পায়ে বসে আছেন এক তরুণ। সেখানে বাদামের খোসা, কাগজ পড়ে রয়েছে। আরেকটি ছবিতে দেখা যায়, হামিদুর রহমানের সমাধির পাশেই খেলছে শিশুরা।





বিজ্ঞাপন

এ নিয়ে ক্ষুব্ধ প্রতিক্রিয়া জানিয়েছেন অনেকেই। মর্মাহত হয়েছেন শহিদ পরিবারের সদস্যরা, সচেতন নাগরিক সমাজ। শহিদ আলতাফ মাহমুদের কন্যা শাওন মাহমুদ বলেন, এই পরিবারগুলোর কেউ কি মৃত্যুবরণ করেননি? মৃত ব্যক্তিদের কবর কিভাবে পায়ে মাড়ানো যায়? পরিবারগুলো শিশুদের কি শিক্ষা দিচ্ছে?

সাংবাদিক আবু সালেহ রনি বলেন, বাংলা নববর্ষ উদযাপনের এ কী হাল! স্বাধীনতার ৩৫ বছর পর ২০০৬ সালের ২৪ জুন বীরশ্রেষ্ঠ শহিদ ফ্লাইট লে. মতিউর রহমানের দেহাবশেষ পাকিস্তান থেকে দেশে এনে রাষ্ট্রীয় মর্যাদায় মিরপুর শহিদ বুদ্ধিজীবী কবরস্থানে পুনঃসমাহিত করা হয়। প্রশাসন কী করছে? এটা তো পার্ক না! এ কোন বোধ নিয়ে বড় হচ্ছে আগামী প্রজন্ম!

সাংবাদিক নাদিরা কিরণ বলেন, আমি বাকরুদ্ধ। কী বলা যায়! আমরা এতো অশ্রদ্ধাশীল জাতিতে পরিণত হয়ে গেছি, কারো সমাধিস্থলেও আমরা ন্যূনতম শ্রদ্ধা দেখাতে পারি না। এই দেশ চেয়েছিলেন এই শ্রেষ্ঠ মানুষেরা? এই দেশ চেয়েছিলাম আমরা? প্রশাসন কি এর দায় এড়াতে পারে? ঘরে-বাইরে মূল্যবোধের চরম ঘাটতির প্রতিফলন এই ছবি। আমরা যাচ্ছি কোথায়? কতটা অকৃতজ্ঞ জাতিতে পরিণত হচ্ছি?

বিজ্ঞাপন

শহিদ মুনীর চৌধুরীর পুত্র আসিফ মুনীর সারাবাংলাকে বলেন, রায়ের বাজার বদ্ধভূমি, শহীদ মিনার, স্মৃতিসৌধ একটা বিশেষ উদ্দেশ্যে তৈরি করা হয়েছে। কিন্তু আমরা অনেক বছর ধরেই দেখে আসছি, শ্রদ্ধা জানানোর বিষয়টা দিবস কেন্দ্রিক হয়ে গেছে। এসব সমাধিগুলো সমন্বয়ের জন্য সরকারি দফতর রয়েছে। সিটি করপোরেশন, পৌরসভা, গণপূর্ত মন্ত্রণালয়, জনপ্রতিনিধি যারা, স্থানীয় ক্লাব বা সংগঠনগুলোর দায় রয়েছে সেগুলোর মর্যাদা অক্ষুণ্ন রাখার।

সিভিক এডুকেশন বা নাগরিক দায়িত্ব তৈরি করা সেই দায়ও কর্তৃপক্ষের। অনেক সময় বলা হয়, আমাদের লোকবল নেই, সেটা কোনো যুক্তি হতে পারে না। আমরা ট্যাক্স দেই। রক্ষণাবেক্ষণের জন্য নিরাপত্তারক্ষী নিয়োগ দিতে হবে। সিসিটিভি ক্যামেরা বসানো থাকবে এবং সেটা মনিটরিং করতে হবে। অনভিপ্রেত কিছু হলে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিতে হবে, বলেন আসিফ মুনীর।

এই প্রসঙ্গে মিরপুর গণপূর্ত বিভাগের নির্বাহী প্রকৌশলী আল আমিন মোহাম্মদ নুরুল ইসলাম বলেন, এই কবরস্থান দেখাশোনার দায়িত্ব ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের। বীরশ্রেষ্ঠ হামিদুর রহমান এবং বীরশ্রেষ্ঠ মতিউর রহমানের সমাধির মেইনটেনেন্সে দায়িত্ব গণপূর্ত অধিদফতরের। সমাধি যদি ভেঙে যায়, নষ্ট হয়ে যায়, সেটা আমরা মেরামত করি। তাদের মৃত্যুবার্ষিকী কিংবা বুদ্ধিজীবী দিবসে আমরা কেবল রঙ করি। তবে সার্বিক নিরাপত্তার দায়িত্ব ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের।

এ বিষয়ে কথা হয় ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের নির্বাহী প্রকৌশলী (অঞ্চল-৪) নুরুজ্জামানের সঙ্গে। তিনি বলেন, কবরস্থানের নিরাপত্তায় আনসার সদস্য নিযুক্ত রয়েছে। এ রকমটা হলে অবশ্যই আমি ব্যবস্থা নেব। যারা আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী হিসেবে নিযুক্ত রয়েছেন, তাদের এর জবাব দিতে হবে। একজন নাগরিক হিসেবে আমি দুঃখিত এবং লজ্জিত। ওটাতো আনন্দ করার কোনো স্থান নয়, নিরাপত্তাকর্মীরা কী দায়িত্ব পালন করেছে সেটা আমি জানতে চাইব এবং ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে জানাব।

বিজ্ঞাপন

সারাবাংলা/জেএ/এটি

বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন