বিজ্ঞাপন

বরগুনার ২০ ভাগ বিদ্যালয়ের ভবনই ঝুঁকিপূর্ণ!

April 16, 2019 | 6:53 am

রুদ্র রুহান, ডিস্ট্রিক্ট করেসপন্ডেন্ট

বরগুনা: বছরের পর বছর সংস্কার না হওয়ায় বরগুনার প্রাথমিক বিদ্যালয়ের বড় একটি অংশ পাঠদানের অনুপযোগী হয়ে পড়েছে। সংখ্যার হিসাবে তা প্রায় ২০ শতাংশ। কয়েকটি বিদ্যালয়ের ভবন পরিত্যক্তও ঘোষণা করা হয়েছে। তা সত্ত্বেও ঝুঁকিপূর্ণ ভবনেই চলছে পাঠদান। সম্প্রতি একটি বিদ্যালয়ে পলেস্তারা খসে এক শিশুর মৃত্যু ও কয়েকজনের আহত হওয়ার ঘটনা ঘটলেও অভিভাবকদের অভিযোগ, এখনো টনক নড়েনি কর্তৃপক্ষের।

বিজ্ঞাপন

শিক্ষক-অভিভাবকরা বলছেন, বিভিন্ন সময় ভবন সংস্কারের জন্য কর্তৃপক্ষকে বলা হয়েছে। তারপরও এ ব্যাপারে কার্যকর কোনো পদক্ষেপ নেওয়া হয়নি। এসব কারণে স্কুলে শিক্ষার্থীদের উপস্থিতির হারও কমতে শুরু করেছে।

প্রাথমিক শিক্ষা কার্যালয়ের তথ্যমতে, বরগুনা জেলায় প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সংখ্যা ৭৯৮টি। এর মধ্যে ১৫১টি বিদ্যালয়ের ভবন জরাজীর্ণ ও ঝুঁকিপূর্ণ, ১৫টি বিদ্যালয় পরিত্যক্ত ঘোষণা করা হয়েছে। এসব ভবনের পিলারে বড় ফাটল, কোথাও কোথাও পলেস্তারা ধসে রড বের হয়ে পড়েছে। বর্ষা মৌসুমে ছাদ চুঁইয়ে পানি পড়ে শ্রেণিকক্ষ ও অফিসের আসবাবপত্রও নষ্ট হয়ে গেছে।

বিজ্ঞাপন

এর আগে, গত ৬ এপ্রিল ক্লাস চলাকালীন বরগুনার তালতলী উপজেলার ছোটবগী প্রাথমিক বিদ্যালয় ভবনের পলেস্তারা ধসে মানছুরা নামের তৃতীয় শ্রেণির এক শিক্ষার্থীর মৃত্যু হয়। একদিনের ব্যবধানে শহরের আমতলা পাড় এলাকার একটি বিদ্যালয় এবং পরের দিন আমতলী উপজেলার তক্তাবুনিয়ায় আরও একটি বিদ্যলয়ের শ্রেণিকক্ষের পলেস্তারা ধসের ঘটনা ঘটে।

জেলার ছয়টি উপজেলার শিক্ষা কর্মকর্তাদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, বরগুনা সদরের ২৩০টি স্কুলের মধ্যে ৫০টি ঝুঁকিপূর্ণ ও ১৫টি পরিত্যক্ত। এর মধ্যে বেতাগী উপজেলায় ১২৭টির মধ্যে ১৯টি, বামনা উপজেলায় ৬২টির মধ্যে ৬টি, পাথরঘাটায় ১৪৯টির মধ্যে ৪২টি বিদ্যালয় ঝুঁকিপূর্ণ। এর মধ্যে ২০টি বিদ্যালয় অধিক ঝুঁকিপূর্ণ বলেও চিহ্নিত করা হয়েছে।

এছাড়া আমতলীর ১৪২টির মধ্যে ৬টি, তালতলীর ৭৮টির মধ্যে ২৮টি বিদ্যলয় ঝুঁকিপূর্ণ হিসেবে চিহ্নিত করা হয়েছে। বিকল্প কোনো ব্যবস্থা না নেওয়ায় এসব বিদ্যালয়ে নিয়মিত পাঠদান অব্যাহত রয়েছে বলেও শিক্ষা কর্মকর্তারা জানান।

বিজ্ঞাপন

সরেজমিনে সদর উপজেলার গৌরীচন্ন ইউনিয়নের মনসাতলী ধুপতি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে দেখা যায়, গোটা ভবনের ভেতর ও বাইরের বিভিন্ন অংশের পলেস্তারা খসে পড়েছে। বিদ্যালয়ের মূল পিলারগুলোর অধিকাংশরই পলেস্তারা খসে গেছে। শ্রেণিকক্ষের ভেতরের মূল পিলারেরও পলেস্তারা ধসে পড়েছে। ফাটল ধরেছে ভবনের বিভিন্ন স্থানে।

ওই বিদ্যলয়ের প্রধান শিক্ষক সামসুন্নাহার মুনমুন বলেন, ‘বিদ্যালয় চলাকালীন সময়ে দুঃশ্চিন্তায় থাকতে হয়। মনে হয় এই বুঝি কোনো দুর্ঘটনা ঘটল। আমরা শিশুদের নিরাপত্তা দিতে পারছি না। অন্যদিকে ক্লাসও বন্ধ রাখা যাচ্ছে না। বগীর ঘটনার পর শিক্ষার্থীদের উপস্থিতিও কমেছে।’

পূর্ব ঢলুয়া, ক্রোক ও গুলিশাখালী প্রাথমিক বিদ্যালয় ঘুরেও একই অবস্থা দেখা যায়। এসব বিদ্যালয়ের পিলারের ইট-সুরকি খসে ভেতরের রড বেরিয়ে আছে। ছাদ চুঁইয়ে পানি পড়ে দেয়ালের আস্তরণ খসে যাচ্ছে। অনেক ভবনের মেঝেও দেবে গেছে।

বিজ্ঞাপন

স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদফতরের সূত্রমতে, ১৯৯৪-২০০২ সালের মধ্যে এসব বিদ্যালয় ভবন নির্মাণ করা হয়। তবে এরপর আর কোনো সংস্কার করা হয়নি। ফলে বিদ্যলয়গুলোর ভবন জরাজীর্ণ হয়ে গেছে।

জেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তা মিজানুর রহমান বলেন, ‘পরিত্যক্ত ও ঝুঁকিপূর্ণ ভবনের তালিকা তৈরি করে মন্ত্রণালয়ে পাঠানো হয়েছে। নতুন ভবন নির্মাণ ছাড়া বিকল্প কোনো উপায়ে পাঠদান চালিয়ে নেওয়া অসম্ভব। সর্বাধিক ঝুঁকিতে থাকা ও পরিত্যক্ত ভবনের আশপাশে সাময়িক টিনশেডের অবকাঠামো নির্মাণ করে পাঠদান অব্যাহত রাখার প্রক্রিয়া চলছে।’

তিনি আরও বলেন, ‘জীবনের নিরাপত্তা বিবেচনায় ঝুঁকিপূর্ণ ভবনে পাঠদান সাময়িক বন্ধ রাখতে সংশ্লিষ্ট শিক্ষা কর্মকর্তাদের নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে।’ পাশাপাশি জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে নতুন ভবন নির্মাণের ব্যাপারে কর্তৃপক্ষের সঙ্গে যোগাযোগ করা হয়েছে বলেও জানান তিনি।

সারাবাংলা/এমও

Tags: , ,

বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন