বিজ্ঞাপন

প্যারোল-জামিনের কঠিন শর্তে বাঁধা ছয় জনের শপথ

April 18, 2019 | 10:02 pm

আসাদ জামান, স্পেশাল করেসপন্ডেন্ট

ঢাকা: সরকার প্যারোলে মুক্তি দিতে চাইলেও, নিতে রাজি নন বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া। বিএনপি তার নিঃশর্ত মুক্তি চাইলেও তা দিতে রাজি নয় সরকার। আর দুই পক্ষের এমন কঠিন শর্তের কারণে শেষ পর্যন্ত ঝুলে যেতে পারে বিএনপির ছয় বিজয়ীর শপথগ্রহণও।

বিজ্ঞাপন

সংশ্লিষ্ট সূত্রমতে, খালেদা জিয়াকে নিঃশর্ত মুক্তি দিয়ে পছন্দের হাসপাতালে চিকিৎসা গ্রহণের সুযোগ দিলে শপথ নিয়ে সংসদে যাবে দলের ছয়জন বিজয়ী প্রার্থী—এটিই বিএনপির শেষ কথা। অন্যদিকে বিএনপির ছয়জন বিজয়ী প্রার্থী শপথ নিয়ে সংসদে যোগ দিলে খালেদা জিয়ার প্যারোলে মুক্তি ও বিদেশ যাওয়ার বিষয় নিয়ে আলোচনা হতে পারে—এটিই সরকারের শেষ অবস্থান!

‘একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে ভোটের আগের রাতে সিল মেরে সব আসন ছিনিয়ে নেওয়া হয়েছে’—এমন অভিযোগ ‍তুলে ফল বর্জন এবং শপথ না নেওয়ার সিদ্ধান্ত নেয় জাতীয় ঐক্যফ্রন্ট। কিন্তু এই সিদ্ধান্তে অটল থাকা সম্ভব হয়নি। এরইমধ্যে মৌলভী বাজার-২ আসন থেকে ধানের শীষ প্রতীকে নির্বাচিত গণফোরামের সুলতান মোহাম্মদ মনসুর এবং সিলেট-২ আসন থেকে উদীয়মান সূর্য প্রতীকে নির্বাচিত গণফোরামের মোকাব্বির খান শপথ নিয়েছেন।

আরও পড়ুন: সময় মাত্র ১৩ দিন, কী করবে বিএনপি?

সংশ্লিষ্ট সূত্রগুলো বলছে, বিএনপির ছয়জন বিজয়ী প্রার্থীও শপথ নিয়ে সংসদে যেতে চান। এ ছয় প্রার্থীর নির্বাচনি এলাকার জনগণও শপথ নেওয়ার পক্ষে। কিন্তু দলের চেয়ারপারসনকে কারাগারে রেখে শপথ গ্রহণ বিএনপির বিজয়ী প্রার্থীদের জন্য শুধু কঠিন নয়, অসম্ভবও বটে! এ জন্য তারা চান, যেভাবেই হোক নির্ধারিত সময়ের মধ্যে খালেদা জিয়ার কারামু্ক্তি।

বিজ্ঞাপন

কিন্তু কারামুক্তির তিনটি ফরমেটের কোনোটিই বিএনপির অনুকূলে নেই। আইনি প্রক্রিয়ায় যে কারামুক্তি সম্ভব নয়, সে বিষয়টি ব্যারিস্টার মওদুদ আহমদ বার বার বলেছেন। রাজপথে আন্দোলনের মাধ্যমে আগামী ৩০ এপ্রিলের মধ্যে খালেদা জিয়াকে কারামুক্ত করা যাবে—এমনটি ঘুণাক্ষরেও ভাবছেন না বিএনপি নেতারা। আর প্যারোলে মুক্তির সুযোগ নিতে অস্বীকৃতি জানিয়েছেন খালেদা জিয়া।

এমন পরিস্থিতিতে দলের চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া, ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান ও দলটির সর্বোচ্চ নীতিনির্ধারণী ফোরাম জাতীয় স্থায়ী কমিটির দিকে তাকিয়ে আছেন নির্বাচিত ছয় জন প্রার্থী। তাদের বিশ্বাস, নির্ধারিত সময়ের মধ্যেই একটি ইতিবাচক সিদ্ধান্ত আসবে। তারা সুযোগ পাবেন সংসদে গিয়ে কথা বলার এবং নির্বাচনি এলাকার মানুষের দাবি-দাওয়া তুলে ধরার।

এ লক্ষ্যে সম্প্রতি ঢাকায় আসেন বিএনপির ছয় সংসদ সদস্য। গত সোমবার (১৫ এপ্রিল) গুলশানে বিএনপির চেয়ারপারসনের রাজনৈতিক কার্যালয়ে চা-চক্রে মিলিত হন তারা। দলের শীর্ষ নেতাদের জানিয়ে দেন শপথ নেওয়ার ব্যাপারে নিজেদের আগ্রহের বিষয়টি।

বিজ্ঞাপন

সংশ্লিষ্ট সূত্রমতে, শপথ গ্রহণের ব্যাপারে বিজয়ী ছয় জনের আগ্রহের প্রতি ‘শ্রদ্ধা’ রেখেই বিএনপির শীর্ষ নেতারা তাদের জানিয়ে দেন, খালেদা জিয়াকে কারাগারে রেখে শপথগ্রহণ কোনোভাবেই সম্ভব নয়। অবশ্যই খালেদা জিয়া নিজে অথবা তারেক রহমানের পক্ষ থেকে যদি গ্রিন সিগন্যাল আসে, তাহলে নির্ধারিত সময়ের মধ্যেই শপথ নিতে পারবেন নির্বাচিতরা।

এ প্রসঙ্গে জানতে চাইলে ঠাকুরগাঁও-৩ আসন থেকে নির্বাচিত মো. জাহিদুর রহমান সারাবাংলাকে বলেন, ‘শপথ নেওয়ার ব্যাপারে আমরা ছয়জন-ই একমত। সবাই শপথ নিতে চাই। কিন্তু তার আগে খালেদা জিয়াকে মুক্ত করতে হবে। সেটা যেভাবেই হোক, যে প্রক্রিয়ায়-ই হোক। খালেদা জিয়াকে কারাগারে রেখে শপথগ্রহণ আমাদের জন্য কঠিন হবে।’

প্রায় একই অভিমত জানালেন বগুড়া-৪ আসন থেকে নির্বাচিত মো. মোশারফ হোসেন। তিনি সারাবাংলাকে বলেন, ‘এই দুর্যোগের মধ্যেও যারা বিজয়ী হয়েছেন, তারা সবাই চান শপথ নিতে। কিন্তু তার আগে খালেদা জিয়াকে মুক্ত করতে হবে। তাকে কারাগারে রেখে শপথগ্রহণ করে চিরদিনের জন্য মীর জাফর হতে চাই না। আমরা তার মুক্তি ও সিদ্ধান্তের অপেক্ষায় থাকব।

আরও পড়ুন: বিএনপির বিজয়ী ছয় প্রার্থীই ঢাকায়, কেন?

জানতে চাইলে চাপাইনবাগঞ্জ-৩ আসন থেকে নির্বাচিত মো. হারুনুর রশীদ সারাবাংলাকে বলেন, ‘শপথ গ্রহণের ব্যাপারে আমাদের কোনো দ্বিমত নেই। কিন্তু খালেদা জিয়াকে কারাগারে রেখে শপথগ্রহণ করা আমাদের পক্ষে সম্ভব নয়। আমরা চাই, খালেদা জিয়ার নিঃশর্ত মুক্তি। তিনি মুক্ত হলেই আমরা শপথ নেব।’

বিজ্ঞাপন

ব্রাহ্মণবাড়িয়া-২ আসন থেকে নির্বাচিত উকিল আব্দুস সাত্তার সারাবাংলাকে বলেন, ‘যাদের ভোটে নির্বাচিত হয়েছি, তারাই চায় আমরা শপথ নেই। কিন্তু দলের চেয়ারপারসন কারাগারে থাকায় শপথগ্রহণ আমাদের জন্য কঠিন হয়ে পড়েছে। দেখা যাক শেষ পর্যন্ত কী হয়।’

শপথ গ্রহণের ব্যাপারে নির্বাচিত পাঁচ জনের আগ্রহের বিষয়টি সম্পর্কে জানতে চাইলে বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেন, ‘আগ্রহ থাকাটাই স্বাভাবিক। কিন্তু শপথ গ্রহণ না করার ব্যাপারে যে সিদ্ধান্ত দলীয়ভাবে নেওয়া হয়েছে, সেটা এখনো বহাল আছে। এই মুহূর্তে আমাদের প্রধান চাওয়া খালেদা জিয়ার নিঃশর্ত মুক্তি। ‘ খালেদা জিয়ার মুক্তির পর তিনিই সব ব্যাপারে সিদ্ধান্ত নেবেন বলেও তিনি মন্তব্য করেন।

সারাবাংলা/এজেড/এমএনএইচ

Tags: , ,

বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন