বিজ্ঞাপন

মানহীন বৈদ্যুতিক সরঞ্জামে ৭০ শতাংশ অগ্নিকাণ্ড

April 19, 2019 | 11:49 pm

হাসান আজাদ, স্পেশাল করেসপন্ডেন্ট

ঢাকা: মানহীন বৈদ্যুতিক সরঞ্জাম অগ্নিকাণ্ডের প্রধান কারণ। বাসা-বাড়ি কিংবা অফিসে নিম্নমানের বৈদ্যুতিক সরঞ্জাম বিদ্যুতের লোড নিতে না পারায় ‘শর্ট সার্কিট’ থেকে অগ্নিকাণ্ডের ঘটনা ঘটছে। ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্স গত চার বছরের অগ্নিকাণ্ডের তথ্য বিশ্লেষণ করে জানিয়েছে, অগ্নিকাণ্ডের প্রধান কারণ মানহীন বৈদ্যুতিক সরঞ্জামের ব্যবহার।

বিজ্ঞাপন

ফায়ার সার্ভিস অ্যান্ড সিভিল ডিফেন্সের তথ্য অনুযায়ী, গত চার বছরে সারাদেশে আগুনের ঘটনা ঘটেছে ৭২ হাজার ৯৩টি। এর মধ্যে ২৬ হাজার ৯৫৪টি অগ্নিকাণ্ড শর্ট সার্কিটের কারণে। রাজধানী ঢাকায় মোট অগ্নিকাণ্ডের ৮২৫টির উৎপত্তি শর্ট সার্কিট থেকে। রাজধানীতে বৈদ্যুতিক শর্ট সার্কিট থেকে আগুন লাগার হার ৭০ শতাংশ।

ফায়ার সার্ভিস অ্যান্ড সিভিল ডিফেন্সের মহাপরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল মো. সাজ্জাদ হোসাইন সারাবাংলাকে বলেন, ‘রাজধানীসহ দেশের বিভিন্ন এলাকায় অপরিকল্পিত ও অবৈধ বৈদ্যুতিক সংযোগ রয়েছে। বিশেষ করে রাজধানী ঢাকায় নতুন নতুন ইলেকট্রিক গেজেট, ল্যাপটপ, মোবাইল চার্জার ও অন্যান্য দাহ্য পদার্থের প্রাপ্যতা বেশি। এছাড়া, নানা অব্যবস্থাপনায় ঢাকায় অগ্নিকাণ্ডসহ অন্যান্য দুর্ঘটনার সংখ্যাও বেশি। আমাদের হিসাব অনুযায়ী, বৈদ্যুতিক শর্ট সার্কিট থেকে বেশি আগুন লেগেছে। বিদ্যুতের মানহীন যন্ত্রাংশ ও তার ব্যবহারের কারণে এটি হচ্ছে।’

মানহীন এ সব সরঞ্জামের ব্যবহার কমানো গেলে অগ্নিদুর্ঘটনা অর্ধেকের বেশি নিয়ন্ত্রণ করা সম্ভব বলে আশা করেন ফায়ার সার্ভিস অ্যান্ড সিভিল ডিফেন্সের মহাপরিচালক।

বিজ্ঞাপন

এদিকে বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের (বুয়েট) ইলেকট্রিক্যাল অ্যান্ড ইলেকট্রনিক ইঞ্জিনিয়ারিং (ইইই) বিভাগের চেয়ারম্যান অধ্যাপক ড. মোহাম্মদ শফিকুল ইসলাম সারাবাংলাকে বলেন, ‘মানহীন বৈদ্যুতিক সরঞ্জামে বাজার ভরে গেছে। এসব যন্ত্রাংশ বিদ্যুতের লোড নিতে পারে না। বিদ্যুতের ভোল্টেজ ওঠানামার সময় যন্ত্রাংশগুলো সঠিকভাবে কাজ করে না। যে কারণে শর্ট সার্কিট থেকে আগুন লাগার ঘটনা ঘটে।’

বুয়েটের এ অধ্যাপক বলেন, ‘মানহীন বৈদ্যুতিক সরঞ্জাম ব্যবহার বন্ধে তদারকির দায়িত্বে থাকা সরকারি সংস্থাগুলোকে সবচেয়ে বেশি জোর দিতে হবে। ভবন তৈরির সময় কোন ধরনের বৈদ্যুতিক সরঞ্জাম ব্যবহার হচ্ছে তার তদারকি করতে হবে। এছাড়া নিম্নমানের সরঞ্জাম উৎপাদনকারীদের বিরুদ্ধে কঠোর আইনি ব্যবস্থা নেওয়া হলেই আগুন লাগার ঘটনা নিয়ন্ত্রণে চলে আসবে।’

বিশেষজ্ঞরা বলছেন, মানহীন এসব বৈদ্যুতিক যন্ত্রাংশের উৎপাদন যেন না হয় সে জন্য বাংলাদেশ স্ট্যান্ডার্স অ্যান্ড টেস্টিং ইনস্টিটিউশনকে (বিএসটিআই) কার্যকরী পদক্ষেপ নিতে হবে। বিল্ডিং কোড অনুসরণ ও ভবন তৈরির সময় সেগুলোকে নিবিড় তদারকির আওতায় রাখতে হবে। আইনের কঠোর প্রয়োগ নিশ্চিত করতে হবে।

বিজ্ঞাপন

ফায়ার সার্ভিসের তথ্য অনুযায়ী, ২০১৮ সালে সারাদেশে অগ্নিকাণ্ড ঘটেছে ১৯ হাজার ৬৪২টি। এতে মারা গেছেন ১৩০ জন এবং আহত হয়েছে ৬৭৭ জন। এ বছরে আগুনে আর্থিক ক্ষতির পরিমাণ প্রায় চারশ কোটি টাকা।

২০১৭ সালে ১৮ হাজার ১০৫টি অগ্নিকাণ্ড হয়। এতে মারা যান ৪৫ জন, আহত জন ২৮৪ জন। আগুনের কারণে ২০১৭ সালে আর্থিক ক্ষতির পরিমাণ আড়াইশ কোটি টাকা।

২০১৬ সালে ১৬ হাজার ৮৫৮টি অগ্নিকাণ্ডে নিহত হন ৫২ জন। আহত হন অন্তত ২৬৭ জন। এ বছরে আর্থিক ক্ষতি আড়াইশ কোটি টাকা। ২০১৫ সালে ১৭ হাজার ৪৮৮টি আগুনের ঘটনায় ৬৮ জন নিহত ও আহত ২৫৪জন। আর্থিক ক্ষতি আটশ কোটি টাকার বেশি।

ফায়ার সার্ভিসের পরিসংখ্যান অনুযায়ী বাংলাদেশের সব বিভাগ থেকে ঢাকায় অগ্নিদুর্ঘটনার সংখ্যা ও ক্ষয়-ক্ষতি বেশি।

বিজ্ঞাপন

পরিসংখ্যান বলছে, ২০১৮ সালে সারাদেশে ৮ হাজার ৪৬১টি আবাসিক ভবনে আগুনের ঘটনা ঘটে। এরমধ্যে ২০৮৮টি ঢাকায়, চট্টগ্রামে ২৮৫ ও রাজশাহীতে ১১৬টি। এসব ঘটনায়  ঢাকায়ই প্রাণ হারান ১২১ জন। এক বছরে দেশে ১৬টি ভবন ধসের ঘটনার ১০টি ঘটে ঢাকায়। দেশের গার্মেন্টগুলোতে ১৭৩টি আগুনের ঘটনা ঘটেছে। এর মধ্যে ১১৫টি ঢাকায়। শিল্প কারখানায় ১১৩১টি আগুনের ঘটনার মধ্যে ৫২৬টি ঘটে ঢাকায়।

ফায়ার সার্ভিস জানিয়েছে, গত বছরের সব অগ্নিদুর্ঘটনার মধ্যে সবচেয়ে বেশি হয়েছে বিদ্যুতের শর্ট সার্কিট থেকে। এরপরই বেশি আগুন লেগেছে চুলা থেকে। বৈদ্যুতিক শর্ট সার্কিট থেকে আগুন লেগেছে প্রায় ৩৭ শতাংশ। আর চুলা থেকে আগুন লেগেছে ২৩ দশমিক ৪ শতাংশ।

সারাবাংলা/এইচএ/একে

Tags:

বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন