January 26, 2018 | 6:16 pm
মোসতাকিম হোসেন
একেকটা ফাইনাল যেন অনন্ত আক্ষেপ, এত কাছে এসেও এত দূরে থাকার গল্প। মাঠ থেকে স্বপ্নভঙ্গের বেদনা খুব কাছ থেকেই দেখেছেন মাশরাফি বিন মুর্তজা। হৃদয় খুঁড়ে বেদনা জাগাতে কে-ই বা ভালোবাসে? বাংলাদেশের ওয়ানডে অধিনায়কও সেই তিন ফাইনালের দুঃস্মৃতি তাই ভুলে যেতেই চাইলেন।
২০০৯ সালে প্রথমবার কোনো ত্রিদেশীয় সিরিজের ফাইনালে উঠল বাংলাদেশ। ১৫২ রান এমন কোনো পুঁজি নয়, তবে সেটা তাড়া করে প্রতিপক্ষ ৬ রানে ৫ উইকেট হারালে তো হয়ে যায় অনেক বড় কিছু। শিরোপাটা যখন প্রায় হাত ছোঁয়া দূরত্বে, একজন অতিমানব হয়ে ওঠায় দূরে সরে গেল। ১০ ওভারে ১৮ রান দিয়ে নিজের কাজটা সেদিন ঠিকমতোই করেছিলেন মাশরাফি, কিন্তু সব অর্থহীন করে দিলেন এক মুরালিধরন। ২ উইকেটের হারে শিরোপা অধরা থেকে গেল বাংলাদেশের।
তিন বছর পরেও তো নিজের পক্ষ থেকে সবকিছু দিয়েই চেষ্টা করেছিলেন। এবার মঞ্চ এশিয়া কাপের ফাইনাল, স্বপ্নের কয়েকটা দিনের পর ফাইনাল যেন বাংলাদেশকে বরণের অপেক্ষায়। সবকিছু হচ্ছিল ঠিক মতোই, কিন্তু শেষে এসে সব যেন হয়ে গেল ওলট পালট। সাকিব-মুশফিকের সেই কান্না অনেকদিনই রোদনভরা বসন্ত হয়ে ছিল বাংলাদেশের জন্য। মাশরাফি সেদিনও ছিলেন, ৪৮ রানে ২ উইকেট নেওয়ার পর ব্যাট হাতেও প্রায় শেষই করে আসছিলে। কিন্তু ১৫ বলে ১৮ রানে আউট হওয়ার ওই দুঃখ ভুলতে অনেকদিনই সময় লাগবে তার।
দুই বছর আগে এশিয়া কাপে অবশ্য তীরে এসে তরী ডোবানোর বেদনা আর ছিল না। ভারত এবার আর সুযোগই দেয়নি বাংলাদেশকে। এবার অবশ্য মাশরাফিও কিছু করতে পারেননি, ২ ওভারে দিয়েছিলেন ১৬ রান।
শেষেরটা টি-টোয়েন্টির বটে, তবে শেষ পর্যন্ত তো ফাইনাল। আরেকটি ফাইনালের আগে তাই স্মৃতির দরজায় তা কড়া না নেড়ে পারে না। তবে সময় যেমন সব ভুলিয়ে দেয়, মাশরাফিও তা ভুলেই গেছেন, ‘এইটা আসলে আমার মাথায় ছিল না। মনে না করাইলেই পারতেন। আমি হয়তো তিনটা ফাইনালে ছিলাম, মুশফিক ছিল, সাকিব ছিল, তামিমও ছিল হয়তোবা। তো এটা আমাদের জন্য নতুন আরেকটা সুযোগ।’
মাশরাফি তাই সামনের দিকেই তাকাচ্ছেন, ‘ ওই ম্যাচগুলো নিয়ে ভাবার দরকার মনে করছি না। তবে হার-জিত তো থাকবেই, একদল জিতবে আর একদল হারবে। এটা নিয়ে না ভেবে আমার মনে হয় ইতিবাচক ক্রিকেট খেলাটাই উচিত।’
কাকতালীয়ই বটে, তার আগে পরে বাংলাদেশ আর কোনো টুর্নামেন্টের ফাইনালে উঠতে পারেনি। ‘অভিশপ্ত’ মিরপুরে চতুর্থ পরীক্ষার আগে বাড়তি কি চাপ হয়ে যাচ্ছে? মাশরাফি স্বীকার করলেন, কিছুটা চাপ আছেই, ‘ফাইনাল ম্যাচে জেতার জন্য আমরা উদগ্রীব হয়ে আছি। এটা সত্যি কথা। প্রথমবারের মতো হবে যদি হতে পারি। তবে এটা হওয়ার আগ পর্যন্ত বেশি চিন্তা করলে চাপ এসে দাঁড়ায়। ফাইনাল ম্যাচে চাপ থাকেই।’
বরং মাশরাফি মনে করিয়ে দিচ্ছেন, কালকের ম্যাচটা অমনভাবে হারার পর চাপটা কিছুটা কমে এসেছে। বরং শুরুটা ভালো করার ওপরেই জোর দিচ্ছেন, ‘সব কিছু নির্ভর করছে কেমন শুরু করব তার উপর। কালকে প্রথম ১০ ওভারেই কিন্তু খেলা ওদের দিকে চলে গিয়েছিল, যেখান থেকে আমরা ফিরে আসতে পারিনি। এমন পরিস্থিতি যেন তৈরি না হয়, বুদ্ধি করে যেন খেলতে পারি।’
বাংলাদেশ নিশ্চয় চাইবে না, মিরপুরে এসে আরেক বার স্বপ্নভঙ্গ হোক!
সারাবাংলা/ এএম/জেএইচ