বিজ্ঞাপন

ধেয়ে আসছে আরও গরম, দেখা মিলবে না বৃষ্টির

April 22, 2019 | 10:26 am

স্টাফ করেসপন্ডেন্ট

ঢাকা: এপ্রিল মাসকে নিষ্ঠুর উপমা দিয়ে কবিতা লিখেছিলেন ইংরেজ কবি টি এস এলিয়ট। তাপপ্রবাহের তীব্রতার কারণে গ্রীষ্মের এই সময়টিকে বাংলাদেশের মানুষও চাইলে এমন আখ্যা দিতে পারেন। কারণ সূর্য কিরণের নির্দয় প্রাবল্যে এ দেশের বেশিরভাগ মানুষেরই এখন প্রাণ যায় যায় অবস্থা! আশঙ্কার কথা, রোদের এই তীব্র তাপ থেকে সহসাই নিস্তার পাওয়ার আশা নেই। বরং গত কয়েক বছরের রেকর্ড ছাড়াতে পারে এবারের এপ্রিল মাস।

বিজ্ঞাপন

আবহাওয়া অধিদফতর জানাচ্ছে, সূর্য এই মুহূর্তে বাংলাদেশের ঠিক ওপরে লম্বভাবে অবস্থান করছে। থাকবে এ মাসের পুরোটাই। ফলে এ মাসের শেষ পর্যন্তও বাড়তে থাকবে তাপমাত্রা।

আবহাওয়াবিদ আবদুল কালাম মল্লিক সারাবাংলাকে বলেন, যশোর, পাবনা, রাঙ্গামাটি, রাজশাহী, কক্সবাজারসহ দেশের প্রতিটি জেলাতেই বিচ্ছিন্নভাবে তাপমাত্রা বাড়তে থাকবে। এপ্রিলজুড়ে আমরা কোনো বৃষ্টির সম্ভাবনা দেখছি না। তাপমাত্রা ৩৬ ডিগ্রি সেলসিয়াস থেকে থেকে ৩৮ ডিগ্রি সেলসিয়াসের মধ্যে থাকতে পারে।

বিজ্ঞাপন

এই আবহাওয়াবিদ আরও জানান, এখন পর্যন্ত এ মাসে দেশের সর্বোচ্চ তাপমাত্রা ছিল গতকাল শনিবার (২০ এপ্রিল) রাঙ্গামাটিতে, ৩৭ দশমিক ৭ ডিগ্রি সেলসিয়াস। আজকের দিনের সর্বোচ্চ তাপমাত্রাও রেকর্ড হয়েছে রাঙ্গামাটিতে, ৩৬ দশমিক ৮ ডিগ্রি সেলসিয়াস।

আবহাওয়া অফিসের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, ২০১৪ সালের পর এবারই প্রথম এপ্রিলের তাপমাত্রা চরম আকারে ঊর্ধ্বমুখী। ২০১৪ সালের ২৪ এপ্রিল দেশে ৪০ দশমিক ২ ডিগ্রি সেলসিয়াস তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয়েছিল। বেশিরভাগ আবহাওয়াবিদ বলছেন, আর কয়েকদিন বৃষ্টি না হলে ২০১৪ সালের রেকর্ড এবার ভেঙে যেতে পারে।

এদিকে, তীব্র গরমে বিপর্যস্ত হয়ে পড়েছেন রাজধানীবাসী। সবচেয়ে বেশি দুর্ভোগের মধ্যে পড়েছেন মধ্যবিত্ত ও সাধারণ খেটে খাওয়া মানুষ।

বিজ্ঞাপন

শাহবাগ মোড়ের ফুল বিক্রেতা সাদেক মিয়া বলেন, গত কয়েক বছরে এমন গরম পড়েনি। শরীরে কাপড় পড়ে থাকলে মনে হয় চামড়ায় ছোট পোকামাকড় কামড়াচ্ছে। হঠাৎ করে কেন গরম এত বেড়ে গেল, তা তো জানি না। তবে গরমে স্বাভাবিক কাজ করা খুব কষ্টকর হয়ে পড়েছে।

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্র-শিক্ষক কেন্দ্রে (টিএসসি) চা বিক্রি করেন রুবেল। তিনি বলেন, আগের গরম আর এখনকার গরম এক লাগে না। এখন একটু বেশি গরম পড়লেই হাঁসফাঁস করতে হয়। আগে এমনটা ছিল বলে মনে পড়ছে না!

কেন বাড়ছে গরম, বদলে গেছে তাপপ্রবাহের পুরনো চরিত্র— এমন প্রশ্নের উত্তরে আবহাওয়াবিদ ড. আবুল কালাম মল্লিক বলেন, প্রকৃতিকে আমরা অনেক বেশি দূষিত করে ফেলেছি। ঘর ঠান্ডা করার জন্য আমরা এয়ার কুলার (এসি) ব্যবহার করছি, খাবার ঠান্ডা করার জন্য ব্যবহার করছি রেফ্রিজারেটর। এ ধরনের পণ্য ঘর বা খাবার ঠান্ডা রাখে ঠিকই, তবে বাইরের তাপমাত্রা বিচ্ছিরি রকমের বাড়িয়ে দেয়। সেইসঙ্গে গাড়ির কালো ধোঁয়া, ঢাকার চারপাশের ইটভাটা ও শিল্প কারখানাগুলো প্রচুর সিএফসি (ক্লোরোফ্লুরোকার্বন) মিশিয়ে দিচ্ছে বাতাসে। ফলে সব বয়সী মানুষের জন্যই গরম অসহ্য অনুভূতি ও অস্বস্তির কারণ হচ্ছে।

বিজ্ঞাপন

ড. মল্লিক আরও বলেন, এখন রাতের তুলনায় দিনের ব্যাপ্তি অনেক বড়। সূর্যের লম্ব কিরণের কারণে যে তাপমাত্রা বাংলাদেশের বায়ুমণ্ডলে প্রভাবিত হয়, সেটি রাতে পুরোপুরি স্বাভাবিক হতে পারে না। ফলে গরম থেকে যায়। এছাড়াও দক্ষিণ দিক থেকে আসা বাতাসে প্রচুর জলীয় বাষ্প থাকায় গরম বাড়ছে। জলীয়বাষ্প সাধারণত বেশি সময় তাপ ধারণ করে রাখে।

এ মাসের শেষ দিনগুলোতে কেমন হবে দেশের আবহাওয়া— এ প্রশ্নের জবাবে ড. মল্লিক বলেন, আবহাওয়া এখন অনেক বেশি অপ্রত্যাশিত আচরণ করছে। তবে এখনো পর্যন্ত বৃষ্টির কোনো সম্ভাবনা দেখছি না। সে ক্ষেত্রে সূর্যকিরণ বাড়বে, তাপমাত্রা হয়ে পড়বে আরও বেশি নির্দয়!

প্রসঙ্গত, ১৯৬০ সালের ৩০ এপ্রিল ঢাকায় তাপমাত্রা ছিল ৪২ দশমিক ৩ ডিগ্রি সেলসিয়াস। ১৯৭২ সালের ১৮ মে রাজশাহীতে ৪৫ দশমিক ১ ডিগ্রি সেলসিয়াস তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয়। এখনো পর্যন্ত স্বাধীন বাংলাদেশের ইতিহাসে সেটিই সর্বোচ্চ তাপমাত্রার রেকর্ড। চলতি এপ্রিলে ২০১৪ সালের তাপমাত্রার রেকর্ড ভাঙার সম্ভাবনা দেখলেও ‘৭২-এর সেই রেকর্ড ভাঙার সম্ভাবনা দেখছে না আবহাওয়া অধিদফতর। অসহ্য গরমের যন্ত্রণায় এতটুকুই যা সান্ত্বনা।

ছবি: হাবিবুর রহমান

সারাবাংলা/টিএস/টিআর

Tags: , , , ,

বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন