বিজ্ঞাপন

বারেক সাহেবের ইউরেকা – ২

April 23, 2019 | 1:49 pm

অধ্যপক ডাঃ মামুন আল মাহতাব (স্বপ্নীল)

‘নতুন করে রাজনীতির স্কুলে ভর্তি না হলে বোধহয় আর চলছে না’, ভাবেন বারেক সাহেব। ইদানিং রাজনীতির হাবভাব বোঝা তার জন্য কেনো যেন খুব কঠিন হয়ে পড়ছে। রাজনীতির ‘অ, আ, ক, খ’ এখন দুর্বোধ্য লাগে বারেক সাহেবের কাছে। কোনটা যে ব্যক্তিগত বিষয় আর কোনটা যে রাজনীতির সেটাই মাঝে-মধ্যে গুলিয়ে ফেলেন তিনি। আজকে যেটা রাজনীতির বিষয় কালকে দেখেন সেটা ব্যক্তিগত আর গতকাল যা ছিল ব্যক্তিগত আজকে সেটা আবার রাজনীতির খোরাক। ভারতবর্ষ জয় করতে এসে এখানকার লোকজনের ভাবচক্কর দেখে মানে-মানে কেটে পরেছিলেন মহামতি আলেকজান্ডার। যাবার আগে সেনাপতি সেলুকাসকে বলে গিয়েছিলেন ভারত সফরের অভিজ্ঞতা থেকে অর্জিত তার সেই বিখ্যাত উক্তি, ‘হায় সেলুকাস কি বিচিত্র এই দেশ’। দেশ যে বিচিত্র ছিল তা-ই আছে, তার দলটা বোধকরি আরো অনেক বেশী বিচিত্র হয়ে গেছে। এখনকার দিন হলে গুগল সার্চ করে তার দলের অবস্থা দেখে এদেশে পা দেয়ার কথা বোধহয় মাথাতেও আনতেন না আলেকজান্ডার।

বিজ্ঞাপন

দেখতে দেখতে একটা বছরের বেশী সময় চলে গেল। দেশের মানুষের কথা না হয় বাদই দিলেন, দলের নেতা-কর্মীদেরওতো এ নিয়ে মাথা-ব্যাথা আছে বলে মনে হয়না বারেক সাহেবের। ইদানিংতো দলীয় সব কর্মসূচী প্রেসক্লাব আর মহানগর নাট্যমঞ্চকে কেন্দ্র করেই ঘুরপাক খায়। প্রায়ই এসব মিটিং-এ যাওয়া পরে বারেক সাহেবের। কিছু শোনেন, আর কিছুটা ঘুমান। সামনে যারা দর্শকের সারিতে তাদেরও ওই একই হাল। শোনেন আর ভাবেন বারেক সাহেব, নেতাদের একবার জিজ্ঞেস করবেন এই একটি বছরে তারা করলেনটা কি। শেষ পর্যন্ত অবশ্য জিজ্ঞাসা করা আর হয়ে উঠে না। শুনতে-শুনতে আর ঝিমাতে-ঝিমাতে কেটে যায় সময়।

টানেলের শেষে কেনো, ত্রিসিমানাতেও আলোর কোন রেশ দেখতে পান না বারেক সাহেব। বারোটা বছর কেটে গেছে ক্ষমতার বাইরে। সামনের পাঁচটা বছরও বাইরে থাকাটা নিশ্চিত। পাঁচ কি পাঁচে শেষ হবে না পঞ্চাশে, তারও কোন ঠিক-ঠিকানা নেই। দলের বড়জন যখন বড় বাড়ির একলা বাসিন্দা আর মেঝজন রাজনীতি ছেড়ে রাজনৈতিক শরণার্থী, তখন ছোটজন কিনা বলে বেড়াচ্ছেন বিষয়টা দলীয় না বরং পারিবারিক। শুনে পিত্তিটা জ্বলে যায় বারেক সাহেবের। মনটা চায় ডান কানের নীচে কষে একটা দেন। কিন্তু দেয়া আর হয়ে উঠে না। মাঝে মাঝে মনে হয় দেওয়ালে নিজেই নিজের মাথা কুটবেন, কিন্তু সেটাও হয়ে ওঠে কোথায়। কাজেই একের পর এক বেনসনে আগুন জ্বালিয়ে মনের খেদ মনেই পুষে রাখেন বারেক সাহেব।

সন্ধ্যায় ক্লাবে বসে টিভির স্ক্রলে লেখাটা দেখে ভিরমি খাওয়ার জোগার বারেক সাহেবের! দলের আঙ্গুলে গোনা যে ক’জন সাংসদ আছেন তারা নাকি সংসদে যোগ দেয়ার চিন্তা-ভাবনা করছেন। এমন চিন্তা-ভাবনার স্বপক্ষে যুক্তিও তাদের অকাট্য। বড়জনকে বড় ঘরের বাইরে বের করে আনতে এরচেয়ে ভাল আর কোনো তরিকা নাকি জানা নাই। ক’দিন আগেও বিষয়টাকে রাজনৈতিক বলে মহানগর নাট্যমঞ্চে মঞ্চস্থ করা হয়েছিল গণঅনশন। আর তার আগে-পরে এই দাবিতে প্রেসক্লাবের ভিতরে-বাইরে গলা ফাটিয়ে মাইকের ধোঁয়া ছুটিয়ে ফেলা হয়েছে কতইনা। তারপর হঠাৎই বিষয়টা হয়ে গেল পারিবারিক আর এখন আবার সাংসদীয়। তালা ভাঙতে সংসদের কোনো বিকল্পই নাকি দেখছেন না দলের নীতি নির্ধারকরা। কি জানি- সবই কেমন যেন দুর্বোধ্য লাগে তার কাছে।

বিজ্ঞাপন

মাঝরাতে নিজের চিৎকারে নিজেরই ঘুম ভাঙ্গে বারেক সাহেবের। ‘ইউরেকা’! পারলে আর্কিমিডিসের মতই লুঙ্গি-টুঙ্গি ফেলে খাট ছেড়ে দৌড় দেন আর কি! বাংলাদেশে সংসদ নির্বাচনতো কতই হয়েছে। হয়েছে যেমন নিরপেক্ষ, গণতান্ত্রিক নির্বাচন, তেমনি তাদের জামানায় হয়েছে মানুষকে বুঝ দেয়ার নির্বাচনও। গণতন্ত্রকে বেয়নেটের শুলে চড়িয়ে নির্বাচনওতো হয়েছে বেশ কয়েকটাই। এমপি হয়েছেন কয়েক হাজার। এমপি হয়ে সংসদে পা মাড়াননি এমন এমপিও হাজারের কম না। কিন্তু এমপি হয়ে শপথ নেননি এমনতো নেই একজনও। বেশ স্বস্তি পাচ্ছেন বারেক সাহেব। সবকিছু এখন তার কাছে একবারে ঝকঝকে পরিষ্কার। বেচারাদের আর দোষ দেননা তিনি। আর কিছু না হোক প্রাডোর মডেলটাতো চেঞ্জ করা দরকার। বারো বছরতো আর কম সময় না!

অধ্যপক ডাঃ মামুন আল মাহতাব (স্বপ্নীল) : চিকিৎসক ও কলাম লেখক।

বিজ্ঞাপন

Tags: , ,

বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন