বিজ্ঞাপন

বে-টার্মিনাল দৃশ্যমান ২০২১ সালে, মিরসরাইয়ে হবে আরেক বন্দর

April 25, 2019 | 9:04 am

স্পেশাল করেসপন্ডেন্ট

চট্টগ্রাম ব্যুরো: ২০২১ সালের মধ্যে নগরীর পতেঙ্গায় বে-টার্মিনাল (ছোট বন্দর) দৃশ্যমান হবে বলে জানিয়েছেন চট্টগ্রাম বন্দরের চেয়ারম্যান রিয়াল এডমিরাল জুলফিকার আজিজ। এছাড়া মিরসরাইয়ে বঙ্গবন্ধু শিলনগরীতে আরেকটি বন্দর নির্মাণের কাজ আগামী পাঁচ বছরের মধ্যেই শুরু হবে বলেও জানিয়েছেন তিনি।

বিজ্ঞাপন

চট্টগ্রাম বন্দর দিবসকে সামনে রেখে বুধবার (২৪ এপ্রিল) গণমাধ্যম কর্মীদের সঙ্গে এক মতবিনিময় সভায় জুলফিকার আজিজ এসব তথ্য জানান।

বন্দর চেয়ারম্যান জানান, বে-টার্মিনালের জন্য সরাসরি ক্রয়পদ্ধতির প্রস্তাবনা (ডিপিপি) আগামী সপ্তাহে মন্ত্রণালয়ে পাঠানো হবে। ডিপিপি অনুমোদনের পর টেন্ডার আহ্বান করা হবে এবং কাজ শুরু হবে। তিনি বলেন, ‘সুনির্দিষ্টভাবে সময় বলা সম্ভব নয়। প্রথমে ডিপিপি অনুমোদন হবে, তারপর টেন্ডারিংয়ে যাব। এরপর কাজ শুরু হবে। তবে ২০২০ অথবা ২০২১ সালের মধ্যে বে-টার্মিনালের কাজ দৃশ্যমান হবে।’

বন্দর চেয়ারম্যান আরও জানান, বে-টার্মিনালের দু’টি অংশ থাকবে। একটি হচ্ছে টার্মিনাল, আরেকটি কনটেইনার ইয়ার্ড। ইয়ার্ডে ১০ লাখ কনটেইনার রাখা যাবে। বে-টার্মিনাল নির্মাণের পর বন্দরে জাহাজের গড় অবস্থানকাল একদিনে নেমে আসবে। কনটেইনার হ্যান্ডরিং করা যাবে ৭ হাজার টিইউই।

বিজ্ঞাপন

এছাড়া সেখানে একটি ট্রাক টার্মিনাল নির্মাণ করা হবে, যেখানে ৬ হাজার ট্রাক রাখা যাবে। এই টার্মিনাল নির্মাণের পর চট্টগ্রাম শহরের রাস্তায় আর বন্দরের পণ্যবোঝাই ট্রাক চলবে না বলে জানিয়েছেন বন্দরের চেয়ারম্যান।

বে টার্মিনাল হলে চট্টগ্রাম বন্দরের সক্ষমতা তিনগুণ বাড়বে উল্লেখ করে বন্দর চেয়ারম্যান জানান, বর্তমানে বন্দর জেটিতে জোয়ারের সময় সর্বোচ্চ ৯ দশমিক ৫ মিটার ড্রাফটের (জাহাজের পানির নিচের অংশ) ১৯০ মিটার লম্বা জাহাজ ভিড়তে পারে। বে টার্মিনালে এর চেয়ে বেশি ড্রাফটের বড় বড় জাহাজ জোয়ারের অপেক্ষা ছাড়াই ২৪ ঘণ্টা ভিড়তে পারবে।

মতবিনিময়ে জানানো হয়, প্রকল্প এলাকার ৬৭ একর জমি বন্দরকে বুঝিয়ে দিয়েছে জেলা প্রশাসন। এর বিপরীতে ৩৬৪ কোটি টাকা জেলা প্রশাসনকে দিয়েছে বন্দর কর্তৃপক্ষ। সম্প্রতি কেন্দ্রীয় ভূমি বরাদ্দ কমিটিতে ৮০৩ একর খাস জমি বরাদ্দের অনুমোদন দেওয়া হয়েছে।

বিজ্ঞাপন

মিরসরাই ইকোনমিক জোন বা বঙ্গবন্ধু শিল্পনগরীতে আরেকটি বন্দর নির্মাণের বিষয়ে বন্দর চেয়ারম্যান বলেন, ‘সেখানে বন্দর নির্মাণের সিদ্ধান্ত আমাদের আছে। তবে সেই জমির মালিক বেজা। তারা দেশি-বিদেশি যেসব শিল্পপ্রতিষ্ঠানকে সেখানে বিনিয়োগের জন্য আনছে, তারাও বলছে সেখানে একটি বন্দর করা যায়। আমরা ফিজিবিলিটি স্টাডি শেষ করেছি। সেখানে যত শিল্পায়ন হবে, বন্দর নির্মাণের প্রক্রিয়াও এগিয়ে যাবে। আশা করছি, আগামী দুই, চার, পাঁচ বছরের মধ্যে সেখানে বন্দর নির্মাণের বিষয়টি চূড়ান্ত হবে।’

প্রতিষ্ঠাবার্ষিকীতে বন্দর চেয়ারম্যান আরও জানিয়েছেন, তারা একটি গ্রিন পোর্ট নির্মাণের ধারণা নিয়ে এগিয়ে যাচ্ছেন। তিনি বলেন, ‘পরিবেশবান্ধব গ্রিণ পোর্ট আজ বিশ্বব্যাপী সমাদৃত। চট্টগ্রাম বন্দরও গ্রিণ পোর্ট ধারণা গ্রহণ করেছে। এর অংশ হিসেবে বন্দরের সংগৃহীত সকল ইকুইপমেন্টে ইউরোপিয় ইমিশন স্ট্যান্ডার্ড অনুসরণ করা হচ্ছে। বন্দরের জেটিতে অবস্থানরত সব জাহাজে শোর পাওয়ার সরবরাহের পরিকল্পনাও আমরা করেছি।’

আমদানি পণ্য দ্রুত খালাস ও রফতানি পণ্য দ্রুত জাহাজিকরণের জন্য পতেঙ্গার লালদিয়ায় মাল্টিপারপাস টার্মিনাল নির্মাণের উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে বলেও জানিয়েছেন বন্দর চেয়ারম্যান।

তিনি জানান, মোট এক হাজার মিটার দীর্ঘ স্থানজুড়ে ৫টি জেটি এবং এক হাজার মিটার দৈর্ঘ্যের এবং তিন’শ মিটার প্রস্থের ব্যাকআপ ইয়ার্ড নির্মাণ করা হবে এই টার্মিনালে। পতেঙ্গায় ১৪ ও ১৫ নম্বর খালের মাঝামাঝি স্থানে নির্মিত হবে এই টার্মিনাল। এখানে কর্ণফুলী নদীর গভীরতা বেশি থাকায় ১০ মিটার ড্রাফটের জাহাজ ভেড়ানো যাবে। এর কাজ ২০২১ সালে শেষ হবে। ২০২২ সালে অপারেশনে যাবে এসব জেটি।

বিজ্ঞাপন

পাঁচটি জেটির মধ্যে চারটি কার্গো একং তেল খালাসের জন্য নির্মাণ করা হচ্ছে বলে জানিয়েছেন বন্দর চেয়ারম্যান।

বিভিন্ন আধুনিক সরঞ্জাম যুক্ত হওয়া কনটেইনার পরিবহনের গতিশীলতা ৩০ শতাংশ বেড়েছে উল্লেখ করে বন্দর চেয়ারম্যান জানান, ২০১৭ সালে ২০ ফুট দীর্ঘ ২৬ লাখ ৬৭ হাজার কনটেইনার হ্যান্ডলিং করা হয়েছে। ২০১৮ সালে তা বেড়ে দাঁড়ায় ২৯ লাখ ৩ হাজার। প্রবৃদ্ধি ৯ শতাংশ। কনটেইনার হ্যান্ডলিংয়ের পরিসংখ্যান বন্দরের ৩০ বছর মেয়াদি প্রক্ষাপণ ছাড়িয়ে গেছে।

কর্ণফুলী খননের চলমান কাজের কথা উল্লেখ করে তিনি বলেন, গত সেপ্টেম্বরে নতুন উদ্যমে কর্ণফুলী নদীর ড্রেজিং শুরু হয়েছে। বাংলাদেশ নৌবাহিনী ৪২ লাখ ঘনমিটার ড্রেজিংয়ের এ প্রকল্পের কাজ করছে। এতে বন্দরের খরচ ২৪২ কোটি টাকা। ৪ বছরে ড্রেজিংয়ের কাজ শেষ হবে।

বন্দরের শহীদ ফজলুর রহমান মুন্সী অডিটোরিয়ামে ১৩২তম বন্দর দিবস উপলক্ষে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে বন্দরের সদস্য (প্রশাসন ও পরিকল্পনা) মো. জাফর আলম, সদস্য (প্রকৌশল) কমডোর খন্দকার আকতার হোসেন, সচিব মো. ওমর ফারুকসহ উর্দ্ধতন কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন।

২৫ এপ্রিল চট্টগ্রাম বন্দর দিবস পালিত হবে।

সারাবাংলা/আরডি/এসএমএন

Tags: ,

বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন