বিজ্ঞাপন

পাহারা-বহিষ্কার, তবু ‘সিনিয়র আতঙ্কে’ জাবি’র নবীনরা

April 28, 2019 | 8:58 am

তহিদুল ইসলাম, জাবি করেসপন্ডেন্ট

জাবি: এ বছর ৪৮ ব্যাচের নবীন শিক্ষার্থীরা বিশ্ববিদ্যালয়ে প্রবেশের সময় থেকে র‌্যাগিং প্রতিরোধে কঠোর পদক্ষেপ নেয় জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয় (জাবি) প্রশাসন। আবাসিক হলে দিনে ও রাতে শিক্ষকদের ‘পাহারা’র ব্যবস্থা করা হয়। ‘র‌্যাগিংয়ের উদ্দেশ্যে নবীন শিক্ষার্থীদের নির্জন স্থানে ডেকে নেওয়া’র এক ঘটনায় বিশ্ববিদ্যালয়ের পাবলিক হেলথ অ্যান্ড ইনফরমেটিকস বিভাগের ৭ শিক্ষার্থীকে সাময়িক বহিষ্কারও করে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন। এসব কারণে নতুন শিক্ষাবর্ষের শুরুতে র‌্যাগিংয়ের প্রবণতাও ছিল একটু কম। তবে ‘বড় ভাই’দের ‘বিধিনিষেধ’ আর ‘নিয়মে’র আড়ালে স্বস্তিতে নেই নবীনরা। ব্যক্তিগত পছন্দ-অপছন্দের চর্চা তো দূরের কথা, হলের মধ্যে স্বাভাবিক চলাফেরা পর্যন্ত তারা করতে পারছেন না। ‘সিনিয়র’দের নিয়ে রীতিমতো আতঙ্কে রয়েছেন তারা। অথচ এসব বিষয়ে কর্তৃপক্ষ নির্বিকার।

বিজ্ঞাপন

প্রথম বর্ষ, অর্থাৎ বিশ্ববিদ্যালয়ের ৪৮ ব্যাচের শিক্ষার্থীরা জানান, হলে ওঠার সময় দ্বিতীয় বর্ষের শিক্ষার্থীরা কিছু ‘নিয়ম-কানুন’ ও ‘বিধিনিষেধ’ আরোপ করেন তাদের ওপর। প্রতিদিন এসব মেনেই তাদের চলতে হয়। আর এগুলো পালন করতে গিয়ে ‘পান থেকে চুন খসলেই’ নেমে আসে কড়া শাস্তির খড়গ। শারীরিক ও মানসিক নির্যাতন চালানো হয় তাদের ওপর।

নবীনদের ভাষ্য, হলে নির্দিষ্ট বলয়ের সিনিয়র ছাড়া অন্য কোনো সিনিয়রের সঙ্গে দেখা করা বা কথা বলতে পারেন না তারা। বিশ্ববিদ্যালয়ের ৪৭ ব্যাচের শিক্ষার্থীদের অনুমতি ছাড়া তারা আবাসিক হলের কোনো রুমে যেতে পারেন না, টেলিভিশন রুম বা কমন রুমে যেতে পারেন না, এমনকি হলের ডাইনিং-ক্যান্টিন-দোকানেও খেতে যেতে অনুমতি নিতে হয় তাদের।

এ তো গেল চলাফেরার বিধিনিষেধ; এর সঙ্গে ৪৮ ব্যাচের নবীন শিক্ষার্থীরা কী পোশাক পরবেন বা না পরবেন, তা নিয়েও ‘নিয়ম’ চালু রেখেছেন ৪৭ ব্যাচের শিক্ষার্থীরা। সেই ‘নিয়ম’ অনুযায়ী লুঙ্গি পরে ওয়াশরুমে যাওয়া যাবে না, হলে টি-শার্ট পরে চলাচল করা যাবে না, শার্টের হাতা গুটিয়ে রাখা যাবে না, সবসময় ফুল হাতা শার্ট পরে থাকতে হবে! এতসব নিয়ম মানতে গিয়ে ৪৮ ব্যাচের আতঙ্কিত শিক্ষার্থীদের প্রাণ ওষ্ঠাগত।

বিজ্ঞাপন

জানা যায়, এ বছর ৪৮ ব্যাচের নবীন শিক্ষার্থীরা বিশ্ববিদ্যালয়ে প্রবেশের সময় থেকে র‌্যাগিং প্রতিরোধে খানিকটা কঠোর হয় জাবি প্রশাসন। আবাসিক হলে দিনে ও রাতে শিক্ষকদের ‘পাহারা’র ব্যবস্থা করা হয়। র‌্যাগিংয়ের অভিযোগে পাবলিক হেলথ অ্যান্ড ইনফরমেটিকস বিভাগের সাত শিক্ষার্থীকে সাময়িক বহিষ্কারও করে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন। এসব কারণে প্রথম দিকে বিশ্ববিদ্যালয়ে র‌্যাগিংয়ের ঘটনা কমে যায়। তবে ৪৮ ব্যাচের শিক্ষার্থীরা বলছেন, তাদের প্রথম থেকেই ‘সিনিয়র’দের বেঁধে দেওয়া নিয়মনীতি পালন করতে হচ্ছে। র‌্যাগিং প্রতিরোধে প্রশাসনের নজরদারির দুর্বলতার সুযোগ নিয়ে বিভিন্ন ছাত্র হলে নিয়মিতই র‌্যাগিং দেওয়া হচ্ছে। আর রাতে ‘গেস্টরুমে’, তথা র‌্যাগিংয়ের সময় কঠোরভাবে সারাদিনের বিধিনিষেধের ব্যত্যয়ের হিসাব নেওয়া হচ্ছে।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক ৪৮ ব্যাচের এক শিক্ষার্থী সারাবাংলাকে বলেন, হলে ওঠার পর পড়ালেখার বিষয়ে বিভাগের এক সিনিয়রের কাছে নিয়মিত যেতাম। তবে একদিন এক ‘ভাই’ দেখে ফেলায় আর তার কাছে যাওয়া হয় না। ভাই বলেছেন, এরপর কারও রুমে যেতে দেখলে যেখানেই পাবেন সেখানেই পেটাবেন। আগে বাংলা ভার্সনে পড়ালেখা করেছি। এজন্য এখন ভার্সিটিতে এসে ইংরেজি ভার্সনের পড়া বুঝতে কষ্ট হয়। সিনিয়র ওই ভাইয়ের কাছে যেতে পারছি না বলে পড়া বুঝতে আরও বেশি কষ্ট হচ্ছে।

৪৭ ব্যাচের এক শিক্ষার্থীও স্বীকার করে নিলেন জুনিয়রদের ওপর আরোপিত এসব বিধিনিষেধের কথা। তিনি বলেন, ৪৭ ব্যাচের নির্দিষ্ট বলয়ের কিছু শিক্ষার্থী এসব নিষেধাজ্ঞা জারি করেছে। গতবার আমাদের এসব নিয়ম মানতে হয়েছে। এবার ৪৮ ব্যাচের শিক্ষার্থীদের সেই একই নিয়ম মানতে হচ্ছে। তবে এরা শুধু জুনিয়রদের সঙ্গেই কেবল অমানবিক আচরণ করছে না, অনেক সময় অন্য কোনো ব্যাচের শিক্ষার্থীদেরও গণরুমে নবীন শিক্ষার্থীদের সঙ্গে কথা বলতে দেখলে তারা দুর্ব্যবহার করছে।

বিজ্ঞাপন

এসব অভিযোগ স্বীকার করে নিলেন বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান হলের প্রভোস্ট ফরিদ আহমেদও। তিনি সারাবাংলাকে বলেন, এটা ১০ বছর ধরে দেখে আসছি। তবে এটা অমানবিক। এগুলো স্পষ্টতই র‌্যাগিং। আমরা শুক্রবার (২৬ এপ্রিল) প্রভোস্ট কমিটির মিটিংয়ে বসেছিলাম। সেখানে বিভিন্ন বিষয় নিয়ে আলোচনা হয়েছে। আমরা শিগগিরই কঠোর পদক্ষেপ নিতে যাচ্ছি। এ বিষয়ে আমরা জিরো টলারেন্স দেখাব।

প্রভোস্ট আরও বলেন, সবগুলো হল একসঙ্গে পদক্ষেপ না নেওয়ার কারণে এসব কর্মকাণ্ড বন্ধ করা যায় না।

এ বিষয়ে হল প্রভোস্ট কমিটির সভাপতি অধ্যাপক সোহেল আহমেদ বলেন, গত বৃহস্পতিবার উপাচার্য মহোদয় র‌্যাগিং বিষয়ে সিন্ডিকেট থেকে ফোন করেছিলেন। আমরাও শুক্রবার প্রভোস্ট কমিটির মিটিং করেছি। সেখানে বিভিন্ন বিষয় নিয়ে কথা হয়েছে, অনেকগুলো বিষয়ে সিদ্ধান্তও হয়েছে। আশা করছি, শিগগিরই এসব সমস্যার সমাধান হবে।

সারাবাংলা/টিআই/টিআর

বিজ্ঞাপন

Tags: ,

বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন