বিজ্ঞাপন

দ্বীপের ২০ হাজার মানুষ নিরাপদে, সরানো যায়নি পাহাড়ের বাসিন্দাদের

May 3, 2019 | 8:39 pm

স্পেশাল করেসপন্ডেন্ট

চট্টগ্রাম ‍ব্যুরো: ঘূর্ণিঝড় ফণী ভারতে আঘাত হানার পর দুর্বল হয়ে যাওয়ার খবর ছড়িয়ে পড়ার পর জেলা প্রশাসনের তোড়জোড় স্বত্ত্বেও সাইক্লোন সেন্টারে যাচ্ছে না চট্টগ্রামের উপকূলীয় এলাকার মানুষ। এরপরও দ্বীপ উপজেলা সন্দ্বীপসহ কয়েকটি এলাকা থেকে ২০ হাজার মানুষকে ঘর থেকে সরিয়ে নিরাপদ আশ্রয়ে নেওয়া গেছে বলে জানিয়েছে জেলা প্রশাসন। চট্টগ্রাম নগরীতে পাহাড়ে ঝুঁকিপূর্ণভাবে বসবাসরতদেরও সরানো যায়নি।

বিজ্ঞাপন

চট্টগ্রামের ভারপ্রাপ্ত জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ দেলোয়ার হোসেন সারাবাংলাকে বলেন, ‘লোকজনের অবস্থা এমন যে বাতাস-বৃষ্টি শুরুর পরও ঘর ছেড়ে যেতে চায় না। চট্টগ্রামে সারাদিন যে তীব্র রোদ ছিল, তাতে তো মানুষ ভাবছে ঘূর্ণিঝড় আসবে না। এছাড়া সেটি দুর্বল হয়ে যাবার খবরও পেয়েছে। লোকজনকে সরাতে খুব কষ্ট হচ্ছে। এরপরও আমরা চারটি উপজেলায় ২০ হাজারের মতো মানুষকে সরিয়ে সাইক্লোন সেন্টারে নিয়েছি।’

তিনি আরও জানান, সন্দ্বীপের একেবারে চরাঞ্চলে অতি ঝুঁকিতে থাকা প্রায় ১০ হাজার মানুষকে শুক্রবার (০৩ মে) সন্ধ্যা পর্যন্ত চেষ্টা চালিয়ে স্থানীয় প্রশাসনের কর্মকর্তারা সরিয়ে নিয়েছেন। এছাড়া বাঁশখালী, আনোয়ারা ও সীতাকুণ্ডের সাগর তীরবর্তী এলাকার আরও প্রায় ১০ হাজার বাসিন্দাকে সরানো হয়েছে।

বিজ্ঞাপন

উপকূলীয় এলাকাগুলোর বাসিন্দাদের নিরাপদ আশ্রয়ে চলে যেতে অব্যাহতভাবে মাইকিং করা হচ্ছে বলে জানিয়েছেন ভারপ্রাপ্ত জেলা প্রশাসক।

নগরীর পাহাড়ে বসবাসরতদের সরানোর বিষয়ে দেলোয়ার হোসেন সারাবাংলাকে বলেন, ‘গতকাল (বৃহস্পতিবার) থেকে মাইকিং করে তাদের সরে যেতে বলছি। বিদ্যুৎ সংযোগ বিচ্ছিন্ন করা হয়েছে। কিন্তু সারাদিন রোদ দেখে কেউ সরেনি। তারপরও আমাদের টিম প্রস্তুত রেখেছি। যদি দেখি, বৃষ্টিপাত বেশি হচ্ছে, তখন জোর করে সরিয়ে নেব।’

বিজ্ঞাপন

ঘূর্ণিঝড় পরবর্তী পরিস্থিতি মোকাবিলায় জেলা প্রশাসনে একটি কেন্দ্রীয় নিয়ন্ত্রণ কক্ষ খোলা হয়েছে। এছাড়া, প্রত্যেক উপজেলায়ও আলাদা-আলাদা নিয়ন্ত্রণ কক্ষ খোলা হয়েছে। চট্টগ্রাম জেলায় দুই হাজার ৭৩৯টি সাইক্লোন সেন্টার প্রস্তুত রাখা হয়েছে। এর সঙ্গে সার্বক্ষণিকভাবে প্রস্তুত রাখা হয়েছে স্বেচ্ছাসেবক।

তবে নগরীর বিভিন্ন এলাকায় অনেক সাইক্লোন সেন্টার তালাবদ্ধ দেখা গেছে। এ বিষয়ে জানতে চাইলে ভারপ্রাপ্ত জেলা প্রশাসক বলেন, ‘যেহেতু লোকজন এখনও সেভাবে আসছে না, সে জন্য হয়ত তালা দিয়ে রাখা হয়েছে। লোকজন আসা শুরু করলে খুলে দেওয়া হবে।’

এদিকে, চট্টগ্রামের সিভিল সার্জন আজিজুর রহমান সিদ্দিকী সারাবাংলাকে জানিয়েছেন, চট্টগ্রামে ২৮৪টি মেডিকেল টিম গঠন করা হয়েছে। এর মধ্যে ১৪ উপজেলায় ৫টি করে ৭০টি, ২০০ ইউনিয়নে ১টি করে মোট ২০০টি, চট্টগ্রাম জেনারেল হাসপাতালে ৫টি এবং নগরে আরও ৯টি আরবান ডিসপেনসারি টিম গঠন করে তাদের প্রস্তুত রাখা হয়েছে।

বিজ্ঞাপন

প্রতিটি টিমে ডাক্তার, নার্স, ফার্মাসিস্ট মিলিয়ে তিনজন করে সদস্য রাখা হয়েছে। মোট ৮৫২ জন টিমের সদস্যকে সম্ভাব্য দুর্যোগসহ যেকোনো পরিস্থিতি মোকাবেলায় প্রস্তুত থাকার জন্য বলা হয়েছে।

এছাড়া, ৯ লাখ পানি বিশুদ্ধকরণ ওষুধ এবং সাড়ে ৪ লাখ ওরস্যালাইনও মজুদ আছে বলে জানিয়েছেন সিভিল সার্জন।

চট্টগ্রাম জেলা সিভিল সার্জনের কার্যালয়ে একটি নিয়ন্ত্রণ কক্ষ খোলা হয়েছে। কক্ষের নম্বর- ০৩১-৬৩৪৮৪৩।

চট্টগ্রামের ফায়ার সার্ভিসের সহকারী পরিচালক জসিম উদ্দিন সারাবাংলাকে জানিয়েছেন, ঘূর্ণিঝড় পরবর্তী পরিস্থিতি মোকাবিলায় সর্বাত্মক প্রস্তুতি নিয়েছে ফায়ার সার্ভিস। তাদের প্রস্তুত রাখা সরঞ্জামের মধ্যে আছে- ২৭টি বাইশ ইউনিটের পানিবাহী গাড়ি, ৩০টি টানা গাড়ি, ৭২টি টু-হুইলার, আটটি অ্যাম্বুলেন্স। এছাড়া ৫১৬ জন ফায়ার সার্ভিসের কর্মী এবং ১০০০ স্বেচ্ছাসেবক যে কোনো পরিস্থিতি মোকাবেলায় প্রস্তুত রাখা হয়েছে।

এদিকে, ঘূর্ণিঝড় ফণী’র আঘাতের আশঙ্কায় চট্টগ্রাম নগরবাসীর যেকোনো সহযোগিতায় প্রস্তুতি নিয়েছে নগর পুলিশও। নগরীর ১৬টি থানাকে সার্বক্ষণিকভাবে প্রস্তুত থাকার নির্দেশ দিয়েছেন সিএমপি কমিশনার মো. মাহাবুর রহমান। থানার পাশাপাশি সিএমপি সদর দফতরেও নিয়ন্ত্রণ কক্ষ খোলা হয়েছে। যে কোনো প্রয়োজনে ০১৬৭৬-১২৩৪৫৬, ০১৬৭৯-১২৩৪৫৬, ০১৯৮০-৫০৫০৫০, ০১৭৩৩-২১৯১১৯, ০৩১-৬৩৯০২২, ০৩১-৬৩০৩৫২,০৩১-৬৩০৩৭৫- এই নম্বরে যোগাযোগের অনুরোধ করা হয়েছে সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে।

এদিকে নগরীতে ঘূর্ণিঝড় পরিস্থিতি মোকাবেলায় নিয়ন্ত্রণ কক্ষ খুলেছে চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশন (চসিক)।

চসিকের দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা স্ট্যান্ডিং কমিটির সদস্য কাউন্সিলর জহরলাল হাজারী সারাবাংলাকে জানান, নিয়ন্ত্রণ কক্ষে সার্বক্ষণিকভাবে স্ট্যান্ডিং কমিটির সদস্য এবং কর্মকর্তা-কর্মচারীরা অবস্থান করছেন। নগরবাসীকে যে কোনো প্রয়োজনে ৬৩০৭৩৯, ৬৩৩৪৬৯ নম্বরে যোগাযোগের অনুরোধ করা হয়েছে।

তিনি আরও জানান, সিটি করপোরেশনের পক্ষ থেকে ১১টি মেডিকেল টিম গঠন করা হয়েছে। ৩০০ জন নিজস্ব স্বেচ্ছাসেবক ও রেড ক্রিসেন্টের ৬০০ জন স্বেচ্ছাসেবক প্রস্তুত রাখা হয়েছে। সিটি করপোরেশনের সকল স্কুলগুলোকে লোকজনের নিরাপদ আশ্রয়ের জন্য খুলে দেওয়া হয়েছে। সেখানে স্থানীয় কাউন্সিলরের নেতৃত্বে পরিচ্ছন্নকর্মীরা দায়িত্ব পালন করছেন।

শুক্রবার বিকেলে মেয়র আ জ ম নাছির উদ্দীন নগরীর দামপাড়া এলাকায় সিটি করপোরেশনের নিয়ন্ত্রণ কক্ষ পরিদর্শন করেছেন। এরপর মেয়র নগরীর পতেঙ্গা এলাকায় গিয়ে লোকজনকে ঘরবাড়ি ছেড়ে সাইক্লোন সেন্টার অথবা নিরাপদ আশ্রয়ে চলে যাওয়ার অনুরোধ করেন।

ঘণ্টায় ১৮০ থেকে ২১০ কিলোমিটার গতিবেগের ফণী এখন ঘণ্টায় ১০০ কিলোমিটারের ঘূর্ণিঝড়ে রূপ নিয়েছে। তবে গতি কমলেও রয়েছে বাংলাদেশের উপকূলীয় অঞ্চলে রয়েছে জলোচ্ছ্বাসের আশঙ্কা। শুক্রবার (৩ মে) বাংলাদেশ সময় দিবাগত মধ্য রাতে এই ঘূর্ণিঝড়টি খুলনা-সাতক্ষীরা অঞ্চলে আঘাত হানতে পারে।

শুক্রবার সন্ধ্যা পৌনে ৭টার দিকে সচিবালয়ে দুর্যোগ ও ত্রাণ ব্যবস্থাপনা মন্ত্রণালয়ের এক ব্রিফিংয়ে এসব তথ্য জানিয়েছেন আবহাওয়া অধিদফতরের পরিচালক সামছুদ্দিন আহমেদ। ব্রিফিংয়ে মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক মন্ত্রী আ ক ম মোজাম্মেল হক, দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ প্রতিমন্ত্রী ডা. এনামুর রহমান, প্রধানমন্ত্রীর মুখ্যসচিব মো. নজিবুর রহমানসহ অন্যরা উপস্থিত ছিলেন।

ব্রিফিংয়ে আবহাওয়া অধিদফতরের পরিচালক বলেন, ফণীর প্রভাবে সারাদেশ এখন মেঘাচ্ছন্ন। বৃষ্টি ও ঝড়ো হাওয়া রয়েছে বিভিন্ন জেলায়। মধ্যরাতে এই ঝড়ো হাওয়ার গতি বাড়বে। এসময় ফণীর কেন্দ্র বাংলাদেশের খুলনা-সাতক্ষীরা অঞ্চলে আঘাত হানতে পারে আমরা আশঙ্কা করছি।

সারাবাংলা/আরডি/একে

Tags: , ,

বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন