বিজ্ঞাপন

‘চিকিৎসকরা ফেসবুকে যে ভাষায় লেখালেখি করেন সেটা গ্রহণযোগ্য নয়’

May 10, 2019 | 7:33 pm

স্পেশাল করেসপন্ডেন্ট

চট্টগ্রাম ব্যুরো: সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুকে ‘অশ্লীল-অশ্রাব্য’ ভাষায় চিকিৎসকদের কথা বলা দুঃখজনক বলে মন্তব্য করেছেন স্বাস্থ্য প্রতিমন্ত্রী মুরাদ হাসান। সম্মানিত ব্যক্তিদের নিয়ে চিকিৎসকরা ফেসবুকে যে ভাষায় লেখালেখি করেন সেটাও গ্রহণযোগ্য নয় বলে জানিয়েছেন তিনি।

বিজ্ঞাপন

শুক্রবার (১০ মে) বিকেলে চট্টগ্রাম সরকারি জেনারেল হাসপাতাল পরিদর্শনের পর সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে প্রতিমন্ত্রী এসব কথা বলেন।

ক্রিকেট তারকা সংসদ সদস্য মাশরাফি মর্তুজাকে নিয়ে ফেসবুকে চিকিৎসকদের মন্তব্য এবং পরবর্তী ঘটনাপ্রবাহের বিষয়ে প্রতিমন্ত্রী বলেন, ‘মাশরাফি একজন মাননীয় সংসদ সদস্য। ওনার মতো মানুষ যদি কোনো একটা কথা বলেই ফেলেন, একজন চিকিৎসক হিসেবে তার প্রতিবাদ কি আমি ফেসবুকে করব? নিশ্চয় একজন চিকিৎসক এভাবে প্রতিবাদ করবে না। চিকিৎসকরা সেবা দেওয়ার মানুষ। সেবা করতে গিয়ে নির্বাচিত জনপ্রতিনিধিদের আক্রমণ করা অত্যন্ত দুঃখজনক।’

তিনি বলেন, ‘যেসব চিকিৎসক এটা করেছেন তাদের শোকজ করা হয়েছে। এটার সমাধান আমরা অবশ্যই করব। তবে সমাধান মানে এই নয় যে, ঢালাওভাবে চিকিৎসকদের শাস্তি দেবো।’

বিজ্ঞাপন

ফেসবুকে চিকিৎসকদের লেখালেখির প্রসঙ্গ টেনে প্রতিমন্ত্রী বলেন, ‘ফেসবুকে একজন চিকিৎসকের অশ্লীল-অশ্রাব্য ভাষায় কথা বলা অত্যন্ত দুঃখজনক। এটা কোনোভাবেই গ্রহণযোগ্য নয়। তাদের সংশোধন হতে হবে, সতর্ক হতে হবে। সম্মানিত-শ্রদ্ধেয় ব্যক্তিকে নিয়ে একজন চিকিৎসক কেন এমন ভাষায় লিখবে? কারণ তারা তো সবচেয়ে মেধাবী, তাদের কাছে তো জাতির প্রত্যাশা অনেক। তাদের কাছ থেকে তো আমরা আরও অনেক সহ্য-ধৈর্য প্রত্যাশা করি।’

উল্লেখ্য, নড়াইল-২ আসনের সংসদ সদস্য ও জাতীয় ওয়ানডে ক্রিকেট দলের অধিনায়ক মাশরাফি গত ২৫ এপ্রিল নড়াইল সদর হাসপাতাল পরিদর্শনে গিয়ে কোনো চিকিৎসককে পাননি। এমনকি নার্সও ছিলেন মাত্র দু’জন। তিনি হাজিরা খাতায় বেশ কয়েকজন চিকিৎসকের হাজিরাও দেখতে পাননি। অনুপস্থিত কয়েকজন চিকিৎসকের সঙ্গে তিনি তাৎক্ষণিক মোবাইল ফোনে কথা বলেন। কিন্তু তারা কেউ সদুত্তর দিতে পারেননি।

পরবর্তীতে ২৯ এপ্রিল কর্তৃপক্ষের অনুমতি ছাড়া প্রায়ই কর্মস্থলে অনুপস্থিত থাকার অভিযোগে ওই হাসপাতালের চার চিকিৎসককে সাময়িকভাবে বরখাস্ত করা হয়। এই ঘটনার পর মাশরাফির সমালোচনা করে অশালীন ভাষায় পোস্ট দেওয়ার অভিযোগে গত ৮ মে দেশের বিভিন্ন হাসপাতালের ৬ চিকিৎসককে কারণ দর্শানোর নোটিশ পাঠায় স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ মন্ত্রণালয়।

বিজ্ঞাপন

এদিকে, জেনারেল হাসপাতাল পরিদর্শনের পর স্বাস্থ্য প্রতিমন্ত্রী মুরাদ হাসান চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের চিকিৎসা কার্যক্রম সরেজিমনে দেখেন। এরপর তিনি চমেকের শাহআলম বীরউত্তম মিলনায়তনে বাংলাদেশ মেডিকেল অ্যাসোসিয়েশন চট্টগ্রাম শাখা এবং স্বাধীনতা চিকিৎসক পরিষদের নেতাকর্মীদের সঙ্গে মতবিনিময় করেন।

মতবিনিময় সভায় স্বাস্থ্য প্রতিমন্ত্রী সাম্প্রতিক সময়ে হাসপাতালে বায়োমেট্রিক পদ্ধতিতে চিকিৎসকদের উপস্থিতি নিশ্চিতের সিদ্ধান্তের ব্যাখ্যা দেন। তিনি বলেন, ‘বায়োমেট্রিক করা হয়েছে, কারণ সব জায়গা থেকে একটি অভিযোগই শুধু আমরা শুনতে পাই যে ডাক্তার নেই। বায়োমেট্রিক চালু করছি ডাক্তারদের অসম্মানিত করার জন্য নয়। ডাক্তারদের বিদেশ গমনে বাধা দেওয়া বা পদোন্নতি আটকে দেওয়ার জন্য এটা নয়।’

অন্য পেশার সঙ্গে চিকিৎসা পেশার তুলনা না করার অনুরোধ করে প্রতিমন্ত্রী চিকিৎসকদের উদ্দেশে বলেন, ‘চিকিৎসকের দায়িত্ব হচ্ছে মানুষের জীবন বাঁচানো। আর কোনো পেশায় জড়িতদের কাজ জীবন বাঁচানো না। মানুষ তার জীবনের সবচেয়ে অসহায় অবস্থায়, বাঁচার তাগিদ নিয়ে চিকিৎসকের কাছে আসে। সেজন্য আল্লাহতালার পরে ডাক্তারদের বিবেচনা করে মানুষ।’

বিজ্ঞাপন

স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের প্রতিমন্ত্রী হিসেবে চিকিৎসকদের জন্য অনেককিছু করণীয় আছে মন্তব্য করে মুরাদ হাসান বলেন, ‘আমি কাজের মাধ্যমে নিজেকে প্রমাণ করতে চাই। ফেসবুকে তথাকথিত প্রতিবাদ, আন্দোলন আর বিদ্রোহ করে সময় নষ্ট করতে চাই না। ডাক্তারদের শ্রদ্ধা-সম্মান কিভাবে বাড়ানো যায়, সেটা নিয়ে আমি কাজ করছি। পেশার জায়গায় ডাক্তারদের নিরাপত্তা এবং এই পেশার সর্বোচ্চ সম্মান নিশ্চিত করতে আমি বদ্ধপরিকর।’

এর আগে চমেক হাসপাতাল পরিদর্শন শেষে স্বাস্থ্য প্রতিমন্ত্রী সাংবাদিকদের জানান, চমেক হাসপাতালে শয্যার সংখ্যা বাড়ানোর উদ্যোগ নেওয়া হচ্ছে। চট্টগ্রামে মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয় হলে সংকট অনেকটাই কেটে যাবে জানিয়ে প্রতিমন্ত্রী বলেন, ‘বিশ্ববিদ্যালয় হলে পেডিয়াট্রিকসহ সব ধরনের সার্জারি এখানে হবে। অত্যাধুনিক আইসিইউ, সিসিইউ হবে। বেডের সংখ্যাও বাড়বে।’

এসময় প্রতিমন্ত্রীর সঙ্গে চমেক হাসপাতালের পরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল মোহসীন উদ্দিন চৌধুরী ও চমেকের অধ্যক্ষ সেলিম মোহাম্মদ জাহাঙ্গীর এবং বিএমএ ও স্বাচিপের নেতারা ছিলেন।

সারাবাংলা/আরডি/এমও

Tags: , , , ,

বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন