বিজ্ঞাপন

মানবিক থেকে পারমাণবিক

December 6, 2017 | 1:37 am

গত ২৫ আগস্ট রাখাইন রাজ্যে মিয়ানমার সেনাবাহিনীর হত্যা-নির্যাতন শুরুর পর থেকে প্রাণ বাঁচাতে রোহিঙ্গাদের বাংলাদেশমুখী যে ঢল নেমেছে তা কমেছে, কিন্তু বন্ধ হয়নি এখনও। কমেছে, কারণ ঢল নামার মত রোহিঙ্গা আর অবশিষ্ট নেই রাখাইনে। মিয়ানমার রোহিঙ্গাদের ফিরিয়ে নেয়ার চুক্তি করলেও তাদের আন্তরিকতা নিয়ে সংশয় রয়েই গেছে। রোহিঙ্গাদের ঢল বন্ধ করা তো দূরের কথা রোহিঙ্গারা যাতে তাদের বাড়ি না ছাড়ে সে ব্যবস্থাও করেনি তারা। এমনকি ফিরিয়ে নেয়ার ব্যাপারে যেদিন বাংলাদেশ-মিয়ানমার আনুষ্ঠানিক চুক্তি হয়েছে, সেদিনও প্রায় ১২শ রোহিঙ্গা বাংলাদেশে ঢুকেছে। তারপর থেকে প্রায় প্রতিদিনই কম বেশি রোহিঙ্গা বাংলাদেশে ঢুকছে। ১৯৭৮ সাল থেকে অন্তত চার দফায় রোহিঙ্গারা বাংলাদেশে এসেছে। বিভিন্ন সময়ে তাদের অনেকে ফিরে গেলেও সবাই যায়নি বা যেতে চায়নি। তবে সবচেয়ে বেশি রোহিঙ্গা বাংলাদেশে এসেছে এ দফায়ই- প্রায় সাড়ে ৬ লাখ। আর আগের মিলিয়ে এখন বাংলাদেশে রোহিঙ্গা রয়েছে ১০ লাখেরও বেশি। সীমান্তে কড়াকড়ি করলে বাংলাদেশ রোহিঙ্গাদের এই ঢল ঠেকাতে পারতো বা অন্তত কমিয়ে রাথতে পারতো। কিন্তু প্রাণ বাঁচাতে পালিয়ে আসা মানুষকে আশ্রয় দেয়া একটি মানবিক রাষ্ট্রের দায়িত্ব। রোহিঙ্গা সম্প্রদায়ের ওপর নির্বিচার গণহত্যা ও জাতিগত নিধনযজ্ঞ চালিয়ে মিয়ানমার বিশ্বজুড়ে যতটা নিন্দা কুড়িয়েছে, তাদের আশ্রয় দিয়ে বাংলাদেশ ততটাই প্রশংসা পেয়েছে। ছোট্ট বাংলাদেশের এখন বড় ভাবমূর্তি। মানবিক রাষ্ট্র হিসেবে বাংলাদেশ এখন বিশ্বে উজ্বল উদাহরণ। শরাণার্থীর কষ্টটা বাংলাদেশের চেয়ে হৃদয় দিয়ে আর কে অনুভব করবে? বাংলাদেশের জন্মযন্ত্রণার সাথে মিশে আছে কোটি শরণার্থীর বেদনাও। একাত্তরে কোটি বাঙালি আশ্রয় নিয়েছিল ভারতে। কিন্তু নয়মাসের রক্ষক্ষয়ী যুদ্ধে বিজয় অর্জনের পর তাদের সবাই স্বাধীন দেশে ফিরে এসেছিল। কিন্তু বাংলাদেশে আশ্রয় নেয়া রোহিঙ্গারা কবে ফিরে যাবে? কিভাবে যাবে? অবিহেলিত, নির্যাতিত, নিপীড়িত মানব সম্প্রদায় রোহিঙ্গাদের প্রতি আমাদের পূর্ণ সহানুভূতি আছে। যতদিন তারা তাদের নিজেদের দেশে ফিরে যেতে না পারবে, আমরা তাদের পাশে আছি। কিন্তু সেটা কতদিন? ঘনিষ্ঠ আত্মীয় বেড়াতে এসে বেশিদিন থাকলেও আমরা বিরক্ত হই।

বিজ্ঞাপন

রাখাইন রাজ্য থেকে আসা রোহিঙ্গাদের বেশিরভাগই মুসলমান। তবে বাংলাদেশ তাদের পাশে দাড়িয়েছে মানুষ হিসেবে। ধর্মটা হয়তো কারো কারো বিবেচনায় ছিল, তবে বেশিরভাগ মানুষই তাদের পাশে দাড়িয়েছে ধর্ম-বর্ণ-জাতি বিবেচনা ছাড়াই। এমনকি পালিয়ে আসা রোহিঙ্গাদের মধ্যে অল্পকিছু হিন্দুও আছে। মিয়ামনারে বৌদ্ধ ধর্মাবলম্বীরা রোহিঙ্গাদের ওপর অত্যাচার চালালেও বাংলাদেশে বৌদ্ধ ধর্মাবলম্বীরা নিরাপদেই ছিল। তাই রোহিঙ্গা ইস্যুতে শুধু মানবিক রাষ্ট্র হিসেবেই নয়, অসাম্প্রদায়িক রাষ্ট্র হিসেবেও বাংলাদেশের ভাবমূর্তি উজ্বল হয়েছে। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সংসদে বলেছেন, ১৬ কোটি মানুষকে খাওয়াতে পারলে, ১০ লাখ রোহিঙ্গাকেও খাওয়াতে পারবে বাংলাদেশ। এটা ঠিক ১০ লাখ রোহিঙ্গাকে খাওয়ানোর মত সক্ষমতা বাংলাদেশের আছে। কিন্তু সক্ষমতা থাকলেই আমরা কতদিন তাদের খাওয়াবো? কেন খাওয়াবো? এই প্রশ্নটি এখন জোরেশোরে উঠছে। যে সঙ্কটের সাথে আমাদের কোনো সম্পৃক্ততা নেই, সেই সঙ্কটের দায় আমরা মাসের পর মাস, বছরের পর বছর বইবো কেন? সর্বশেষ ঢল শুরুর তিন মাসের বেশি সময় পেড়িয়ে যাওয়ার পর এখন একটি প্রশ্ন অনেকেই করছেন, মানবিকতা ধুয়ে কি আমরা পানি খাবো? মানবিকতার সাথে এখন বাস্তবতার, হৃদয়ের সাথে মস্তিষ্কের, আবেগের সাথে যুক্তির মিশেল দেয়া; রোহিঙ্গা সঙ্কটের বহুমুখী ধরণ বিবেচনায় নেয়ার দাবি এখন অনেকের।

ব্যাপারটা যদি শুধু ১০ লাখ রোহিঙ্গাকে কয়েকটি ক্যাম্পে রেখে খাওয়ানো হতো, তাহলে খুব বেশি সমস্যা হতো না। অতিথি কতদিন থাকবে, তা নিয়েও মাথা ঘামাতাম না। কিন্তু বিদ্যমান রোহিঙ্গা সমস্যার বহুমাত্রিকতা আছে। রোহিঙ্গা সঙ্কট প্রভাব ফেলছে আমাদের স্বাস্থ্য পরিস্থিতি, আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি, পর্যটন সম্ভাবনা, অর্থনীতিতে। সবচেয়ে বড় ঝুকিটা হলো জঙ্গীবাদের। আর এই সমস্যা আপাতত বাংলাদেশের কাঁধে চাপিয়ে সবাই নিশ্চিন্তে থাকলেও, অতটা নিশ্চিন্তি হয়তো তাদের নাও সইতে পারে। এটা হুমকি নয়, আশঙ্কা।

প্রথম কথা হলো মিয়ানমার থেকে আসা রোহিঙ্গাদের সবাই নির্ধারিত ক্যাম্পে অবস্থান করছে না। ইতিমধ্যেই দেশের বিভিন্নস্থান থেকে রোহিঙ্গাদের আটক করা হয়েছে। কিন্তু দেশের বিভিন্নস্থানে ছড়িয়ে পড়া সব রোহিঙ্গাকেই আটক করা গেছে, এমন কোনো গ্যারান্টি কিন্তু নেই। তাই ঝুকি কিন্তু রয়েই যাচ্ছে।

বিজ্ঞাপন

রোহিঙ্গারা পৃথিবীর সবচেয়ে অসহায় ও দেশহীন জাতি। মিয়ানমার তাদের নাগরিক হিসেবেই স্বীকার করে না। মিয়ানমারে রোহিঙ্গাদের নাগরিক অধিকার তো দূরের কথা, মৌলিক অধিকারও স্বীকৃত নয়। তাদের চলাচলের স্বাধীনতা নেই। তাদের পড়ালেখা করার, স্বাস্থ্য সুবিধা পাওয়ার অধিকার নেই। চিরবঞ্চিত এই জাতি স্বাভাবিকভাবেই উগ্র, আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির প্রতি তাদের শ্রদ্ধা নেই। ইতিমধ্যেই টেকনাফ এলাকায় নানা অঘটন ঘটেছে। টেকনাফে এখন বাঙ্গালির চেয়ে রোহিঙ্গাদের সংখ্যা বেশি। নিজের গাছ কাটতে বাধা দেয়ায় রোহিঙ্গাদের হামলার শিকার হয়েছেন এক বাঙ্গালি। রোহিঙ্গাদের হামলা বাংলাদেশী শ্রমিকের মৃত্যুর ঘটনাও ঘটেছে। এমনকি পুলিশও রোহিঙ্গাদের হামলা থেকে রেহাই পায়নি। এমন অনেক ঘটনাই ঘটছে সেখানে। এই সমস্যা দীর্ঘস্থায়ী হলে টেকনাফ তথা কক্সবাজারের আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে যেতে পারে।
বাংলাদেশে দেশী-বিদেশী পর্যটকদের প্রিয় গন্তব্য কক্সবাজার আর সেন্ট মার্টিন। কিন্তু ক্যাম্পের ভেতরে বাইরে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা ১০ লাখের বেশি রোহিঙ্গার কারণে সেই পর্যটন আকর্ষণে ধ্বস নেমেছে। এখন পর্যটনের পিক মৌসুম চলছে। কিন্তু কক্সবাজারে পর্যটকদের চেয়ে দেশী-বিদেশী ত্রাণকর্মী ও সংবাদকর্মীদের ভিড় বেশি। মৌসুমের শুরুর দিকে সেন্ট মার্টিনে জাহজ চলাচল বন্ধ ছিল। পরে অবশ্য চালু হয়েছে। সাগরে জোয়ার এলেও পর্যটকদের স্রোতে ভাটার টান। রাস্তায় বেরুলেই রোহিঙ্গাদের কবলে পড়ার আশঙ্কায় পর্যটকদের চলাচলও সীমিত হয়ে গেছে। সব পর্যটকদের কাছে তো আপনি একই রকম মানবিকতা আশা করতে পারেন না।

আরেকটা বড় সঙ্কটে পড়েছে আমাদের পরিবেশ। রোহিঙ্গারা এসে নির্বিচারে গাছ কেটে, পাহাড় কেটে বসতি গড়েছে। পরিবেশের কতটা ক্ষতি হয়েছে, তার পুরো হিসাব হয়তো এখনও পাওয়া যাবে না। আর এই ক্ষতির পূরণও সম্ভব নয়। পরিবেশের ক্ষতির দায় আমাদের বয়ে বেরাতে হবে বছরের পর বছর। মানবতাকে এগিয়ে রাখতে গিয়ে ত্রাণমন্ত্রী মোফাজ্জল হোসেন চৌধুরী মায়া বলেছিলেন, ‘পাহাড় গেলে পাহাড় পাওয়া যাবে।‘ মাননীয় মন্ত্রী, বীজ বপন করলেই পাহাড় গজায় না। আর মাটি জড়ো করলেই পাহাড় বানানো যায় না। পাহাড়ের যে স্থায়ী ক্ষতি হয়েছে, তা কোনোদিনই পুরণ হবার নয়। আমার শঙ্কা আগামী বর্ষায় পাহাড় আমাদের ওপর শোধ নিতে পারে। যেভাবে নির্বিচারে পাহাড় কাটা হয়েছে, তাতে ভরা বর্ষায় পাহাড়ধ্বস হলে দায়টা কার হবে, প্রকৃতির না মানুষের?

রোহিঙ্গা সঙ্কট বদলে দিয়েছে কক্সবাজার টেকনাফের আর্থ-সামাজিক অবস্থা। সারাদেশের মানুষ যতটা মানবিকতা নিয়ে রোহিঙ্গাদের পাশে দাড়িয়েছিল, স্থানীয় মানুষ ততটা পারেনি। কারণ তারা দেখছে, রোহিঙ্গাদের কারণে তারা বঞ্চিত হচ্ছে, কোনঠাসা হচ্ছে। রোহিঙ্গারা বাঙ্গালিদের হুমকি দিচ্ছে, ‘আমাদের তো জাতিসংঘ খাওয়ায়, তোমাদের খাওয়ায় কে?’ টেকনাফবাসীর এখন নিজভূমেই পরবাসী হওয়ার জোগার। টেকনাফে এখন ইয়াবা মেলে সহজেই। স্থানীয় অনেকেই রোহিঙ্গাদের পারাপার করে বিপুল অঙ্ক কামাই করেছেন। তাদের কাছে মানবিকতা নয়, ব্যবসাটাই মূখ্য ছিল। তবে তাদের অনেককে বাধ্য হয়ে পেশা বদলাতে হয়েছে। রোহিঙ্গা সঙ্কটের কারণে নাফ নদীতে মাছ ধরা নিষিদ্ধ। তাই বাধ্য হয়েই কেউ রিকশা চালাচ্ছেন, কেউ টুকটুকি চালাচ্ছেন, কেউবা রোহিঙ্গা পারাপার করছেন। তবে রোহিঙ্গাদের ঢল কমে আসায় তাদের আনার ব্যবসায়ও এখন মন্দা।

বিজ্ঞাপন

৭৮ সালের পর থেকে বিভিন্ন সময়ে আসা রোহিঙ্গাদের অনেকেই বিভিন্ন কৌশলে বাংলাদেশের জাতীয় পরিচয়পত্র সংগ্রহ করেছেন, স্থানীয় সিমকার্ড সংগ্রহ করেছেন, পাসপোর্ট সংগ্রহ করেছেন। সেই পাসপোর্ট দিয়ে অনেকে মধ্যপ্রাচ্যসহ বিভিন্ন দেশে পাড়ি জমিয়েছেন। তারা সেখানেও নানা অপকর্মের সাথে জড়িয়েছেন, যা ক্ষুন্ন করেছে বাংলাদেশের ভাবর্মূর্তি।রোহিঙ্গাদের অনেকে স্থানীয়দের সাথে মিশে গেছেন। অনেকে জনপ্রতিনিধিও নির্বাচিত হয়েছেন। রোহিঙ্গাদের দীর্ঘমেয়াদে অবস্থান তাই বদলে দিতে পারে আমাদের জনসংখ্যাভিত্তিক রাজনীতির চিত্রও।

আরেকটি বড় সমস্য হলো- স্বাস্থ্য ঝুকি। সরকারি হিসেবেই পালিয়ে আসা রোহিঙ্গাদের মধ্যে অন্তত ৮৯ জনের শরীরে এইচআইভি-এইডস ভাইরাসের সন্ধান পাওয়া গেছে। কিন্তু এই ৮৯ জনকে আলাদা করা হয়নি। তারা সাধারণভাবেই ক্যাম্পে আছেন। ফলে এইচআইভির মত মারাত্মক ভাইরাস ছড়িয়ে পড়ার ঝুকিতে আছে বাংলাদেশে। পালিয়ে আসা রোহিঙ্গাদের মধ্যে আছে ২ লাখ শিশু, যাদের অনেকে বাবা-মা হারিয়েছে। মিয়ানমারে থাকার সময় তারা কোনো স্বাস্থ্য সুবিধা পায়নি, প্রয়োজনীয় টিকা পায়নি। এই শিশুরা সাধারণে ছড়িয়ে পড়লে দীর্ঘ সময়ে অর্জিত বাংলাদেশের টিকা কর্মসূচির টেকসই সাফল্যও প্রশ্নের মুখে পড়তে পারে। তাছাড়া এই শিশু এবং রোহিঙ্গাদের অনেকেই ভয়ঙ্কর পুষ্টিহীনতায় ভুগছেন। যারা এসেছেন, তাদের অনেকেই গর্ভবতী। ক্যাম্পেই মা হচ্ছেন তারা। কিন্তু তাদেরকেও যথাযথ স্বাস্থ্যসুবিধা দেয়া সম্ভব হচ্ছে না।

সবচেয়ে বড় নগদ সমস্যাটিকে আমরা দেখছি সবচেয়ে ছোট করে। ১০ লাখ মানুষকে মাসের পর মাস বছরের পর বছর বসিয়ে বসিয়ে খাওয়ানোটা মুখের কথা নয়। অর্থনীতিবিদরা বলছেন, রোহিঙ্গা সঙ্কট চাপে ফেলবে আমাদের অর্থনীতিতে। শ্লথ হয়ে যেতে পারে আমাদের অর্থনৈতিক অগ্রগতি। এমনকি তা চাপে ফেলতে পারে আমাদের প্রবৃদ্ধিতেও। আর পরিবেশ, পর্যটন, আইনশৃঙ্খলা, মাদক পাচার, স্বাস্থ্য ঝুকি- সব বিবেচনায় নিলে অর্থনৈতিক ঝুকিটা হিমালয় হয়ে যাবে।

তবে সবচেয়ে বড় যে সঙ্কট, সেটার ইঙ্গিত দিয়েছিলেন মিয়ানমারের নেত্রী অং সান সুচি নিজেই। ২০১২ সালে শান্তিতে নোবেল পুরস্কার গ্রহণ করতে গিয়ে সুচি বলেছিলেন, ‘যেখানেই দুঃখ-কষ্ট উপেক্ষিত, সেখানেই সংঘাতের বীজ রোপিত হয়।‘ সুচির সরকার শুধু দুঃখ-কষ্ট নয়; রোহিঙ্গাদের অস্তিত্বই উপেক্ষা করে আসছে যুগ যুগ ধরে। এখন তাদের মধ্যে যদি সংঘাতের বীজ রোপিত হয়, দায় কে নেবে? লাখ লাখ রোহিঙ্গাকে বাস্তুচ্যুত করে, দেশছাড়া করে আপনি শান্তিতে ঘুমাবেন, এমনটা তো নাও হতে পারে। বাংলাদেশ কোনো সন্ত্রাসী গোষ্ঠিকে তার ভূমি ব্যবহার করতে দেবে না। এটা শুধু মুখের কথা নয়। কিন্তু ১০ লাখ রোহিঙ্গাকে চোখে চোখে রাখাও তো সহজ নয়। আর ত্রাণ তৎপরতার আড়ালে রোহিঙ্গা ক্যাম্পে নানান সংগঠন নানান তৎপরতা চালাচ্ছে। তাদের সব তৎপরতাই যে নিছক মানবিক, এমনটা নাও হতে পারে। তাই জঙ্গীবাদ বিস্তারের সবচেয়ে উর্বর ভূমি হতে পারে রোহিঙ্গা ক্যাম্প। সুচির থিওরি অনুযায়ী, দিনের পর দিন বঞ্চনার শিকার হওয়া রোহিঙ্গাদের কারো কারো মনে যদি সংঘাতের বীজ রোপিত হয়, কেউ কেউ যদি হাতে অস্ত্র তুলে নেয়, সেটা কি অস্বাভাবিক হবে? তারা যদি হাতে অস্ত্র তুলে নেয়, সেটার দায় কি মিয়ানমার সেনাবাহিনীর ওপর বর্তাবে না? দেয়ালে পিঠ ঠেকে গেলে মানুষ স্বাভাবিক নিয়মে নাও ভাবতে পারে। রোহিঙ্গা ক্যাম্পে জঙ্গীবাদের বিস্তার ঘটলে তা তো আর শুধু বাংলাদেশের জন্য হুমকি হবে না, মিয়ানমার ভারত, এমনকি চীনও সেই হুমকির বাইরে থাকবে না তখন।

বিজ্ঞাপন

বাংলাদেশে রোহিঙ্গাদের অবস্থান দীর্ঘস্থায়ী হলে এই সমস্যাগুলো ধীরে ধীরে আরো প্রকট হবে। মানবিক রোহিঙ্গা সঙ্কট তখন পারমাণবিক বোমার মত ঝূকিপূর্ণ হবে সবার জন্য। তাই যত দ্রুত সম্ভব তাদের নিজভূমে ফিরিয়ে নিতে হবে, নাগরিকত্বসহ পূর্ণ মর্যাদা দিতে হবে। স্বাস্থ্য, শিক্ষা, চলাচলসহ সবধরনের মৌলিক এবং নাগরিক অধিকার নিশ্চিত করতে হবে। ১০ লাখ শরণার্থীকে ক্যাম্পে রেখে কেউই শান্তিতে ঘুমাতে পারবে না- না বাংলাদেশে, না মিয়ানমার, না ভারত, না চীন। ছাইচাপা দিয়ে যেভাবে আগুন নেভানোর চেষ্টা হচ্ছে, তাতে আগুন তো নিভবেই না; বরং ধিকি ধিকি জ্বলবে। আর সে আগুনের উত্তাপ সইতে হবে গোটা বিশ্বকে।

প্রভাষ আমিন
৫ ডিসেম্বর, ২০১৭
probhash2000@gmail.com

বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন