বিজ্ঞাপন

বিশ্বাসই করতে পারছিলেন না রাজ্জাক

January 29, 2018 | 5:36 pm

মোসতাকিম হোসেন, চট্টগ্রাম থেকে

বিজ্ঞাপন

অনুশীলনে যখন এলেন, বিস্ময়-চমক-আনন্দের ঘোরটা কাটেনি তখনও। প্রায় সাড়ে তিন বছর আগে সর্বশেষ টেস্ট খেলেছেন, একটা সময়ে তাকে লম্বা সংস্করণে অপাংক্তেয়ই ভাবা হতো। এই ক্যারিয়ার সায়াহ্নে এসে আবার সুযোগ পেয়ে গেলেন জাতীয় দলে। আবদুর রাজ্জাক নিজেই স্বীকার করলেন, এতোটাই অবাক হয়েছেন শুরুতে বিশ্বাসই করতে পারেননি।

বিশ্বাস না করার অবশ্য কারণ ছিল। জাতীয় দল থেকে বাদ পড়ার পর পারফর্ম করে গেছেন ধারাবাহিকভাবে। জাতীয় লিগ, বিসিএলে নিয়মিত উইকেট নিয়ে গেছেন, তবে বন্ধ দরজা খোলেনি আগে। এর মধ্যে মেঘে মেঘে বেলাও হয়ে গেছে অনেক। প্রথম শ্রেণিতে ৫০০ উইকেট পাওয়ার পর তো মাশরাফিদের কাছ থেকে সংবর্ধনা পেলেন কদিন আগে। তখনও বিসিবির কাছ থেকে আনুষ্ঠানিক কোনো স্বীকৃতি অবশ্য আসেনি। এক দিন পরেই প্রধান নির্বাচক মিনহাজুল আবেদীন আভাস দিলেন, বাংলাদেশে প্রথম কোনো বোলার হিসেবে ৫০০ উইকেটের মালিক রাজ্জাক কিংবা প্রথম কোনো বাংলাদেশি ব্যাটসম্যান হিসেবে ১০ হাজার রান করা তুষার ইমরানকে বিবেচনা করা হতে পারে। কে জানত, তা শুধু কথার কথাই ছিল না!

ত্রিদেশীয় সিরিজের ফাইনালে ফিল্ডিংয়ের সময় চোট পেয়ে প্রথম টেস্টের দল থেকে ছিটকে যান সাকিব। পরে সানজামুল ইসলাম ও তানভীর হায়দারকে টেস্ট দলে অন্তর্ভুক্ত করে বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ড। রাজ্জাককেও জাতীয় দলের সঙ্গে যোগ দিতে বলা হয়। চট্টগ্রামের জহুর আহমেদ চৌধুরী স্টেডিয়ামে আগামী ৩১ জানুয়ারি শুরু হবে বাংলাদেশ-শ্রীলঙ্কা প্রথম টেস্ট।

বিজ্ঞাপন

চট্টগ্রামে যাচ্ছেন, তা রাজ্জাক জেনেছেন গতকাল। রাতেই সঙ্গী হয়েছেন দলের, আজ সকালেই নেমে পড়েছেন অনুশীলনে। তখনো তার বিস্ময় কাটেনি, ‘নিশ্চিতভাবেই ভালো লাগার তো ব্যাপার আছেই। আমি খুবই অবাক হয়েছি। আমি চিন্তাও করিনি, মাথার মধ্যেও ছিল না, হঠাৎ যখন জানতে পারলাম তখনও আমি বুঝতে পারছিলাম না সব ঠিক আছে কি না।’

কাল রাজ্জাকের ডাক পাওয়া নিয়েও কম ধোঁয়াশা হয়নি। নির্বাচকেরা শুরুতে স্বীকার না করলেও পরে তারা জানিয়েছেন, রাজ্জাক দলে আছেন। এই বাঁহাতি স্পিনার নিজে আজ জানাচ্ছেন, ‘আকরাম ভাইয়ের সাথে কথা হয়েছিল কিন্তু পরিষ্কার করে কিছু বলেননি। সজীব ভাই (বিসিবি কর্মকর্তা সজীব আহমেদ) মূলত আমাকে ফোন করেছিলেন টিকিট কনফার্ম করে। তখন আমি জানতাম না। অভিনন্দন জানানোর পর আমি বললাম, ৫০০ উইকেটের জন্য? উনি বললেন, আরে না আপনি দলে যোগ দিচ্ছেন এই জন্য। তারপর নান্নু ভাই ফোন করেছিলেন। তখন আমি কনফার্ম হলাম। ’

মানুষ ভাবে এক, আর হয় আরেক। ৩৫ পেরিয়ে এমন হবে, রাজ্জাক তা ভাবেননি। তবে আগেও যেমন বলেছেন, আজও বললেন দলের ফেরার আশা কখনো পুরোপুরি ছেড়ে দেননি, ‘আশা ছিল। কোনো লক্ষ্য না থাকলে আসলে ঘরোয়া ক্রিকেটে ভালো খেলা যায় না আসলে। প্রত্যেকটা খেলোয়াড়ের লক্ষ্য থাকে জাতীয় দলে খেলার। সেটা তো ছিলই। কিন্তু এটা এ সময়ে এভাবে এরকম ভাবে হবে আমি বুঝতে পারিনি।’

বিজ্ঞাপন

কিন্তু ডাক যখন পেলেনই, সেটা কি আগে হতে পারত না? রাজ্জাক ব্যাপারটা ছেড়ে দিয়েছেন নিয়তির ওপরেই, ‘আগে-পরে আর এখন বলবো না। ভাগ্য যখন আপনাকে ডেকে নিয়ে আসবে ঠিক তখনই ডাক পাবেন। এটা আগে-পরে বলে কথা না।’

রাজ্জাকের টেস্ট অভিষেক হয় ২০০৬ সালে, চট্টগ্রামে অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে। ২০১৪ সাল পর্যন্ত আট বছরে খেলেছেন মোট ১২টি টেস্ট। ১২ টেস্টে ২৩ উইকেট নেওয়া রাজ্জাক ২০১৪ সালে সবশেষ টেস্ট খেলেছিলেন শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে। এরপর আর দলে ফেরা হয়নি। সেই শ্রীলঙ্কার বিপক্ষেই আবারো দলে ফিরলেন। দীর্ঘ চার বছর পর জাতীয় দলে ডাক পেলেন। বিভিন্ন ‘অজুহাতে’ উপেক্ষিত থাকা রাজ্জাক প্রথম শ্রেণির ক্রিকেটে ১১৪ ম্যাচে নিয়েছেন ৫১০ উইকেট।

রাজ্জাক অবশ্য জানেন, সামনের কাজটা আরও বড়। একাদশে সুযোগ পেলে ‘বুড়িয়ে গেলেও ফুরিয়ে যাননি’ এই বার্তাটা নিশ্চয় দিতে চাইবেন!

সারাবাংলা/এএম/এমআরপি

বিজ্ঞাপন

বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন