বিজ্ঞাপন

ওয়াজা’র সদস্যপদ না থাকায় পশুপাখি আমদানিতে ভোগান্তি

May 24, 2019 | 3:25 pm

গোলাম সামদানী, স্পেশাল করেসপন্ডেন্ট

ঢাকা: জাতীয় চিড়িয়াখানার অবকাঠামো ও ব্যবস্থাপনায় ঘাটতি থাকায় প্রতিষ্ঠার ৫৮ বছরেও ওয়ার্ল্ড অ্যাসোসিয়েশন অব জু অ্যান্ড অ্যাকুরিয়ামসের (ওয়াজা) সদস্য হতে পারেনি বাংলাদেশ। আন্তর্জাতিক এ সংস্থাটির সদস্যপদ না থাকায় বিভিন্ন দেশ থেকে পশুপাখি আমদানি করতে ভোগান্তির মুখে পড়তে হচ্ছে। শুধু তাই নয়, সংশ্লিষ্ট সূত্রগুলো বলছে, ওয়াজা’র সদস্যপদ না থাকায় চিড়িয়াখার কর্মকর্তারা আন্তর্জাতিক প্রশিক্ষণ থেকেও বঞ্চিত হচ্ছেন।

বিজ্ঞাপন

ঢাকা চিড়িয়াখানার কিউরেটর ডা. এস এম নজরুল ইসলাম তার কার্যালয়ে সারাবাংলাকে বলেন, ‘ওয়াজার সদস্যপদ না থাকায় বিভিন্ন দেশ থেকে পশুপাখি কিনতে সমস্যা হয় আমাদের। নানা ধরনের তদবিরের পর টেন্ডারের মাধ্যমে আনতে হয় পশুপাখি। এছাড়াও সদস্যপদ না থাকায় পশুসম্পদ মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তারা বিদেশে প্রশিক্ষণ নিতে পারছেন না।’

আরও পড়ুন- ঈদে ১১ অতিথিকে বরণ করতে প্রস্তুত চিড়িয়াখানা

তবে বর্তমানে ওয়াজা’র সদস্যপদ পাওয়ার মতো পরিবেশ চিড়িয়াখানায় তৈরি হয়েছে বলে জানান নজরুল ইসলাম। তিনি বলেন, ‘এরই মধ্যে চিড়িয়াখানা আইন মন্ত্রিসভায় পাস হয়েছে। এখন সংসদে পাস হলেই আইনটি কার্যকর হবে। আশা করি, পরবর্তী তিন থেকে চার মাসের মধ্যে আইনটি সংসদে পাস হয়ে যাবে। আর আইনটি পাস হলে ওয়াজা’র সদস্যপদ পেতে কোনো বাধা থাকবে না।’

বিজ্ঞাপন

চিড়িয়াখানা সূত্র জানায়, বিশ্বের বিভিন্ন দেশের প্রাণী ও পশুপাখি বিশেষজ্ঞদের তালিকা ওয়াজা’র কাছে রয়েছে। কোনো দেশ বা চিড়িয়াখানার পশুপাখি বেচাকেনা বা বিনিময়ের প্রয়োজন পড়লে ওয়াজাকে অবহিত করলে তারাই এ বিষয়ে সহযোগিতা করে। বাংলাদেশ ওয়াজা’র সদস্য না হওয়ায় পশুসম্পদ মন্ত্রণালয় চাইলেও সহজেই অন্য দেশ থেকে পশুপাখি কিনতে পারে না। এতে বর্তমানে চিড়িয়াখানার জন্য পশুপাখি কিনতে হলে ঠিকাদারকে কার্যাদেশ দেওয়ার পর সে তার মতো করে ম্যানেজ করে প্রাণী সরবরাহ করছে। আবার অনেক সময় ঠিকাদার চাহিদামতো প্রাণীও সরবরাহ করতে পারে না।

আরও পড়ুন- নিঃসঙ্গ জীবন: ঘোড়ার সঙ্গী গাধা, গণ্ডারের সঙ্গী ভেড়া

সূত্র জানায়, ওয়াজা’র সদস্য হতে প্রতিটি চিড়িয়াখানাকে নির্দিষ্ট কিছু শর্ত মানতে হয়। বাংলাদেশের ক্ষেত্রে আন্তর্জাতিক সংস্থা ওয়াজা’র অভিযোগ— ঢাকা চিড়িয়াখানার অবকাঠামোগত অবস্থা সন্তোষজনক নয়। খাঁচার বিন্যাস, সার্বিক পরিবেশ ও প্রাণিবৈচিত্র্যের সুযোগ-সুবিধা মানসম্মত নয়। জাতীয় চিড়িয়াখানার নিজস্ব জু-অ্যাক্ট বা চিড়িয়াখানা বিষয়ক আইন নেই। এতে চিড়িয়াখানায় পশুপাখিদের প্রদর্শন আয়ুষ্কাল শেষ হলেও মৃত্যু না হওয়া পর্যন্ত প্রদর্শন করা হচ্ছে। অথচ বিভিন্ন দেশে বার্ধক্যপীড়িত প্রাণীদের মেরে ফেলা হয়। আমাদের দেশে সংশ্লিষ্ট আইন না থাকায় এ ধরনের কোনো ব্যবস্থা নেওয়া যাচ্ছে না। শেষ পর্যন্ত আবদ্ধ খাঁচায় অসহায়ভাবে মৃত্যুর কোলে ঢলে পড়তে হয় প্রাণীদের। এসব সীমাবদ্ধতার কারণেই বাংলাদেশ ওয়াজা’র সদস্য হতে পারছে না। ফলে চিড়িয়াখানার জন্য পশুপাখি আমদানি করতে পারছে না। আবার চিড়িয়াখানার কর্মকর্তারা দেশ-বিদেশে প্রশিক্ষণও নিতে পারছেন না।

বিজ্ঞাপন

চাহিদামতো আসছে না নতুন পশুপাখি

বাংলাদেশের বিনোদন কেন্দ্রগুলোর মধ্যে চিড়িয়াখানার অবস্থান শীর্ষে। প্রতিবছর গড়ে প্রায় ৪০ লাখেরও বেশি দর্শনার্থীর সমাগম হয় চিড়িয়াখানায়। সেই অনুপাতে তাল মিলিয়ে আধুনিকায়ন হয়নি চিড়িয়াখানার। আসেনি পর্যাপ্ত পরিমাণে নতুন নতুন পশুপাখিও। বরং পুরনো পশুপাখির অনেকে প্রতিনিয়ত মারা যাচ্ছে। এর মধ্যে আবার গত তিন-চার বছরে চিড়িয়াখানায় থাকা বেশ কয়েকটি দুর্লভ প্রাণী মারা গেছে। শিম্পাজি, টাপির, চিতা, গণ্ডার, হায়েনার মতো কয়েকটি প্রাণী মারা যাওয়ায় বর্তমানে চিড়িয়াখানায় শিম্পাঞ্জি, টাপির, চিতা একেবারেই নেই।

আরও পড়ুন- ৫৮ বছরেও লাভের মুখ দেখেনি ঢাকা চিড়িয়াখানা

সর্বশেষ ২০১২ সালের এপ্রিল মাসে জাতীয় চিড়িয়াখানা আটটি পশুপাখি  আনা হয়। সেগুলো মধ্যে ছিল দুইটি গণ্ডার, দুইটি সাদা সিংহ ও চারটি হায়েনা। এদের অধিকাংশই মারা গেছে। এছাড়াও ২০১২ সালের শুরুতে উপহার হিসেবে দু’টি জিরাফ পায় জাতীয় চিড়িয়াখানা। সর্বশেষ ২০১৮ সালে দুইটি উট ও কয়েকটি উট পাখি আনা হয়েছে। ফলে দীর্ঘ দিন ধরেই চিড়িয়াখানায় পশুপাখির সংখ্যা বাড়ছে না, বরং কমছে।

বিজ্ঞাপন

এদিকে, ২০১৪-১৫ ও ২০১৫-১৬ অর্থবছরে নতুন করে ৩১০টি পশুপাখি কেনার আরেকটি প্রকল্প হাতে নিয়েছিল মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ মন্ত্রণালয়। কিন্তু ওয়াজা‘র সদস্যপদ  না থাকায় এসব পশুপাখি আনা সম্ভব হয়নি।

দর্শনার্থীদের বিনোদন, দুর্লভ ও বিলুপ্ত বন্যপ্রাণী সংগ্রহ ও প্রজনন, শিক্ষা, গবেষণা প্রাণিবৈচিত্র্য সংরক্ষণ এবং এ বিষয়ে সচেতনতা বাড়ানোর জন্য ১৯৬১ সালে রাজধানীর মিরপুরে জাতীয় চিড়িয়াখানা প্রতিষ্ঠা করা হয়। ১৮৬ দশমিক ৬৩ একর জমির ওপর প্রতিষ্ঠিত চিড়িয়াখানাটি ১৯৭৪ সালের ২৩ জুন দর্শনার্থীদের জন্য উন্মুক্ত করে দেওয়া হয়।

সারাবাংলা/জিএস/একে

Tags: , , ,

বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন