বিজ্ঞাপন

মুমিনুল মৌতাতে শেষ বিকেলের আক্ষেপ

January 31, 2018 | 5:37 pm

মোসতাকিম হোসেন, চট্টগ্রাম থেকে

বিজ্ঞাপন

‘ক্রিকেট ইজ আ ফানি ওল্ড গেম’ পুরনো হয়ে যাওয়া কথাটা যেন আজ নতুন করে মনে করাল বাংলাদেশ। যে দিনটা হতে পারত স্বপ্নের মতো, সেটার শেষই হলো হতাশার। যে উইকেটে মনে হচ্ছিল সারাদিন কাটিয়ে দেওয়া যাবে, সেটাই হঠাৎ করে হয়ে উঠল বোলার মৃগয়া। ৪ উইকেটে ৩৭৪ রানে দিন শেষ করে এখনো এগিয়ে আছে বাংলাদেশ, কিন্তু এমন শেষের পর আক্ষেপ না থেকে পারে না!

অথচ সবকিছুই হচ্ছিল চিত্রনাট্যের মতো। চট্টগ্রামে সারাদিন রানের গন্ধে ‘ম ম’ করল, সেটা তো আক্ষরিক অর্থেই। মুমিনুল হক ও মুশফিকুর রহিম যে মৌতাত ছড়ালেন, তাতেই আচ্ছন্ন হয়ে রইল জহুর আহমেদ চৌধুরী স্টেডিয়াম। মুমিনুল এখনো আছেন, ক্যারিয়ারের প্রথম ডাবল সেঞ্চুরি হাতছানি দিচ্ছে তাকে। কিন্তু মুশফিকও যখন সেঞ্চুরির সুবাস পাচ্ছেন, তখনই অঘটন।

নতুন বল পাওয়ার পরও সুরঙ্গা লাকমলকে খুব একটা দুর্বোধ্য মনে হয়নি। ৮৪তম ওভারে লাকমলের বলটা অফ স্টাম্পের একটু বাইরেই ছিল। কিন্তু সামনে এগিয়ে এসে খেলতে গিয়ে মুশফিকের ব্যাট আলতো ছুঁয়ে গেল বলটা, জমা পড়ল নিরোশান ডিকভেলার গ্লাভসে। ৯২ রানে আউট হয়ে গেলেন মুশফিক, টেস্ট ক্রিকেটে তৃতীয়বার কাটা পড়লেন নব্বইয়ের ঘরে। ক্রিজ থেকে ড্রেসিংরুমে ফেরার পথে যেভাবে ধিরে পায়ে এগুলেন, তাতে তার কাছে তা অনন্ত মনে হওয়াই স্বাভাবিক।

বিজ্ঞাপন

তবে সেটা একটা অঘটন হিসেবে ধরা যেত। কিন্তু লিটন দাস যা করলেন, সেটার কোনো ব্যাখ্যা হওয়া কঠিন। এবারও স্টাম্পের ওপরে বলটা ছিল খুবই সাধারণ, কিন্তু কোনো এক অজ্ঞাত কারণে লিটন তা ছেড়ে দিলেন। প্রথম বলেই বোল্ড, হুট করেই হ্যাটট্রিকের সামনে লাকমল। নাইটওয়াচম্যান না নেমে কেন লিটন চারে নামলেন, সেই প্রশ্ন উঠতেই পারে। তবে লিটন যা করেছেন, তাতে এই প্রশ্ন আপাতত আড়ালে চলে যাচ্ছে।

মুমিনুল হক তখন অন্য প্রান্তে, হুট করেই দেখলেন দল একের পর এক পা হড়কাচ্ছে। মাহমুদউল্লাহর অধিনায়ক হিসেবে প্রথম কয়েকটা মুহূর্ত কাটল বেশ স্নায়ুচাপে, শেষ পর্যন্ত অবশ্য আউট হননি। তার চেয়েও বড় কথা, অন্য প্রান্তে মুমিনুল এখনো আছেন। বেঁচে আছে ক্যারিয়ারের প্রথম ডাবল সেঞ্চুরির আশাও।

রেকর্ডবুকে তার আগেই নিজেকে নতুন করে লিখিয়ে ফেলেছেন। বাংলাদেশের হয়ে সবচেয়ে কম ইনিংসে দুই হাজার রান, টেস্টে বাংলাদেশের হয়ে দ্বিতীয় দ্রুততম সেঞ্চুরি… এসব তো হয়ে গেছেই। মুশফিকের সঙ্গে মিলে তৃতীয় উইকেটে প্রথমবারের মতো বাংলাদেশের হয়ে ২০০ও করেছেন। তবে এসব তো শুধু সংখ্যায়, মুমিনুল আজ মাঠে যা করেছেন সেসব তো আর পরিসংখ্যানের পাতায় লেখা থাকবে না।

বিজ্ঞাপন

ডাউন দ্য উইকেটে এসে চার মেরে সেঞ্চুরির মুহূর্তের যেন অপেক্ষায় ছিলেন। নিজে এমনিতে স্বল্পবাক, উদযাপনেও সবসময় লাগাম ধরে রাখেন। কিন্তু আজ মুমিনুল যেন বাঁধনহারা। দুই হাত ছুঁড়ে মুঠো পাকালেন বাতাসে, যেন ছুটেই চলে যাবেন ড্রেসিংরুমে। শরীরের আগ্রাসী ভাষার সঙ্গে কার দিকে যেন আঙুলও তুললেন। এক বছর আগে এই শ্রীলঙ্কার সঙ্গেই তার টেস্ট ক্যারিয়ার নিয়ে উঠেছিল প্রশ্ন, তাহলে কি শ্রীলঙ্কা কোচ চন্ডিকা হাথুরুসিংহেকে একটা বার্তাও দিলেন!

যেভাবে খেলছিলেন, তাতে কখনই মনে হয়নি আউট হতে পারেন। শুরু থেকেই ছিলেন দারুণ আগ্রাসী। প্রথম সেশনে শুধু একটাই আফসোস থাকতে পারে, ইমরুল কায়েসকে ওই রিভউটা নিতে যদি জোর করাতেন! সান্দাকানের বলটা প্যাডে লাগার পর আঙুল তুলে দিলেন আম্পাউয়ার। মুমিনুলের সঙ্গে আলাপ করেও রিভিউ নিলেন না ইমরুল, ফিরলেন ৪০ রানে। অথচ রিপ্লেতে দেখা গেছে, বল স্টাম্পে লাগেইনি। ১২০ রানে তখন ২ উইকেট হারিয়েছে বাংলাদেশ, একটা দ্রুত শুরুর পর তামিম ৫২ রান করে ফিরে গেছেন তার আগেই।

সেখান থেকেই মুমিনুল আর মুশফিকের আক্রমণের শুরু। মুমিনুল তো বলের সঙ্গে পাল্লা দিয়েই রান তুলেছেন, দিন শেষে ২০৩ বলে ১৬টি চার আর একটি ছক্কায় ১৭৫ রান বলছে সে কথাই। মুশফিক বরং একটু লাগাম টেনে ছিলেন, ৯২ রান করার জন্য খেলেছেন ১৯২ বল। কিন্তু যতক্ষণ ছিলেন, প্রতিটা বল খেলেছেন শ্যেন দৃষ্টিতেই। ২০০৬ সালের পর প্রথমবারের মতো বিশেষজ্ঞ ব্যাটসম্যান হিসেবে নেমে একটুর জন্য দিনটা পারলেন না স্মরণীয় করতে।

তবে মুমিনুল আছেন এখনো, সঙ্গে আছেন অধিনায়ক মাহমুদউল্লাহ। শেষের ধাক্কার পরও বাংলাদেশের রান ৩৭৪, টেস্টের প্রথম দিনে এটাই সবচেয়ে বেশি রানের রেকর্ড। কাল রানের পাহাড়ে শ্রীলঙ্কাকে চাপা দেওয়ার জন্য মঞ্চটা প্রস্তুত, এখন শুধু তা কাজে লাগানোর অপেক্ষা।

বিজ্ঞাপন

সংক্ষিপ্ত স্কোর:
বাংলাদেশ: ৯০ ওভার (তামিম ৫২, ইমরুল ৪০, মুশফিক ৯২, লিটন ০, মুমিনুল ১৭৫*, মাহমুদউল্লাহ ৯*; লাকমল ৪৩/২, দিলরুয়ান পেরেরা ৯৮/১, সানদাকান ৫৮/১, হেরাথ ১০০/০)

সারাবাংলা/এএম/এমআরপি

বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন