বিজ্ঞাপন

রোদ দেখে ‘ঘর ছেড়েছে’ মানুষ, মুখর বিনোদন কেন্দ্র

June 6, 2019 | 7:10 pm

স্পেশাল করেসপন্ডেন্ট

চট্টগ্রাম ব্যুরো: দিনভর মেঘলা আকাশ, মাঝে মাঝে কোথাও গুড়িগুড়ি বৃষ্টি- এমন গুমোট আবহাওয়ার মধ্য দিয়েই ঈদুল ফিতরের দিনটি পার হয়েছে চট্টগ্রামে।কিন্তু বৃহস্পতিবার পাল্টে গেছে আবহাওয়ার চিত্র। সকাল থেকেই চট্টগ্রামের রোদের তেজ, সঙ্গে আছে গরমও।

বিজ্ঞাপন

মেঘ কেটে গিয়ে আকাশে রোদের উঁকি দেখেই ঈদের আনন্দে ঘর ছেড়েছে চট্টগ্রামের মানুষ। শুধু নগরী নয়, আশপাশের জেলা-উপজেলা থেকেও দলে দলে মানুষ এখন ভিড় করছে চট্টগ্রামের বিভিন্ন বিনোদন কেন্দ্রে। গরমের কাছ থেকে নিজেকে বাঁচিয়ে কিছুটা শীতল পরশ পেতে মানুষের আগ্রহের কেন্দ্রবিন্দুতে পানিভিত্তিক স্পটগুলো।

আবহাওয়া প্রতিকূল থাকলেও বুধবার (০৫ জুন) দিনেও চট্টগ্রাম নগরীর বিভিন্ন বিনোদন কেন্দ্রে মানুষের আনাগোনা ছিল। তবে বৃহস্পতিবার পতেঙ্গা সমুদ্র সৈকত, ফয়’সলেক অ্যামিউজমেন্ট পার্ক, ওয়াটার পার্কজুড়ে দিনভর ছিল প্রাণের উচ্ছ্বাস। চট্টগ্রাম চিড়িয়াখানা, শিশুপার্কগুলোতেও আছে দর্শনার্থীদের ভিড়।

বিজ্ঞাপন

সকাল থেকে বিনোদন স্পটমুখী বাস, অটোরিকশাসহ বিভিন্ন গণপরিবহনে মানুষের ভিড় দেখা গেছে। মোটর সাইকেল, প্রাইভেট কার কিংবা ভাড়া করা দলবেঁধে ছুটতে দেখা গেছে মানুষকে। বিভিন্ন পাড়া থেকে কিশোর-তরুণরা ট্রাকে করে সাউন্ড বক্সে গান বাজিয়ে দলে দলে গেছেন নেভাল, পতেঙ্গা সমুদ্র সৈকত, পারকি সৈকতসহ চট্টগ্রাম নগরীর আশপাশের বিনোদন স্পটগুলোতে।

দুপুরে ফয়’সলেকে গিয়ে দেখা গেছে, সেখানে হাজার হাজার মানুষের মিলনমেলা সৃষ্টি হয়েছে। দর্শনার্থীদের মধ্যে কিশোর, তরুণ-তরুণী, শিশুদের সংখ্যা বেশি। অনেক মা-বাবাও গেছেন সন্তানদের সঙ্গে।

বিজ্ঞাপন

বিকেল সাড়ে ৪টা পর্যন্ত ফয়’সলেকে প্রায় ৪ হাজার ২০০ দর্শনার্থী প্রবেশ করেছেন বলে জানিয়েছেন ফয়’সলেক কনকর্ড অ্যামিউজমেন্ট পার্কের উপ-মহাব্যবস্থাপক বিশ্বজিৎ ঘোষ।

তিনি সারাবাংলাকে বলেন, স্বাচ্ছন্দ্যে এবং নির্বিঘ্নে যাতে মানুষ আনন্দ উৎসব করতে পারে, সেজন্য পুরো রমজান মাসজুড়ে অনেক কাজ করেছি। রাইড-বোটস সবই মেরামত করা হয়েছে। নতুনভাবে রঙ করা হয়েছে। এবার মানুষ গতবারের চেয়েও বেশি হবে বলে আমরা আশা করছি।

সী ওয়ার্ল্ডে পানিভিত্তিক রাইডগুলোতে ভিড় দেখা গেছে বেশি। কিশোর-তরুণরা জলকেলিতে মেতে উঠেছেন। ওয়েবপুল, ফ্যামিলিপুল, মাল্টিস্লাইড, ড্যান্সিং জোন লোকে লোকারণ্য হয়ে উঠেছে।

বিশ্বজিৎ বলেন, যেহেতু গরম পড়ছে, পানিভিত্তিক রাইডগুলোতে দর্শনার্থীদের আগ্রহ বেশি। টিন এজের যারা এসেছেন, তারা সী-ওয়ার্ল্ডে চলে যাচ্ছেন। পরিবার নিয়ে যারা এসেছেন তাদের আগ্রহও এবার সী ওয়ার্ল্ডের দিকে।

বিজ্ঞাপন

স্ত্রী ও দুই ছেলেকে নিয়ে সী ওয়ার্ল্ডে ঘুরতে যাওয়া আবাসন প্রতিষ্ঠানের কর্মকর্তা আবু আহমেদ সারাবাংলাকে বলেন, ‘প্রতিবারই আমরা আসি। এবার কয়েকটি রাইডের দাম কমিয়েছে। এখানে বাচ্চারা নিজের মতো করে আনন্দ করতে পারে।’

সকাল থেকে মানুষের ভিড় লেগেছে পতেঙ্গা সমুদ্র সৈকতেও। প্রতিবছরই নেভাল একাডেমির আশপাশ এবং পতেঙ্গাকে ঘিরে ঈদের বন্ধে জনসমাগম বেশি হয়। তবে এবার ঈদের দিনও প্রচুর মানুষ ভিড় জমিয়েছিল এই সৈকতে। বৃহস্পতিবার দুপুর থেকে সমুদ্র সৈকত এলাকা লোকে লোকারণ্য হয়ে উঠেছে।

তবে এবার নেভাল একাডেমির চেয়ে পতেঙ্গা সমুদ্র সৈকতে ভিড় বেশি। সৈকতের দৃষ্টিনন্দন উন্নয়ন এবং পাশ দিয়ে নির্মাণাধীন আউটার রিং রোডের কারণে মানুষ সেখানে স্বাচ্ছন্দ্যে ঘুরতে পারছে। দর্শনার্থীরা ঘুরে ফিরে হেঁটে, সেলফি তুলে, খেয়েদেয়ে সময় পার করছেন। প্রাইভেট কার-মাইক্রোবাস থেকে ভেসে আসছে উচ্চস্বরের গান। সৈকতে বসানো অস্থায়ী রেস্টুরেন্টে চলছে দেদারসে বিক্রি। তবে কাঁকড়া ভাজা বিক্রিতে নিষেধাজ্ঞা আছে পুলিশের।

চট্টগ্রামের একটি বেসরকারি কলেজের সহকারি অধ্যাপক সিয়াম আহমেদ সারাবাংলাকে বলেন, ‘চট্টগ্রাম তো পাহাড়-নদী-সাগরের শহর। এর মধ্যে সাগর আমাদের বেশি টানে। ঈদের ছুটিতে প্রতিবছর কক্সবাজার যাই। এবার যেতে পারিনি। সেজন্য পতেঙ্গায় এসেছি।’

পতেঙ্গা থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) উৎপল কান্তি বড়ুয়া সারাবাংলাকে বলেন, ‘সৈকতে আমরা একটি অস্থায়ী কন্ট্রোল রুম করেছি। শতাধিক পুলিশ সদস্য মোতায়েন আছে। কেউ যাতে উত্যক্তের শিকার না হন, চুরি-পকেটমার রোধে আমাদের বিশেষ নজরদারি আছে।’

চট্টগ্রাম চিড়িয়াখানায় বৃহস্পতিবার বিকেল তিনটার মধ্যে প্রবেশ করেছে প্রায় ১১ হাজার দর্শনার্থী। বিকেল থেকে চিড়িয়াখানার মূল ফটকে রীতিমতো মানুষের মেলা বসেছে।

চট্টগ্রাম চিড়িয়াখানার ভারপ্রাপ্ত তত্তাবধায়ক ডা.শাহাদৎ হোসেন শুভ সারাবাংলাকে বলেন, ঈদের দ্বিতীয় দিন আমরা ১৫ হাজার টিকেট বিক্রির ব্যবস্থা করেছি। কিন্তু বিকেল তিনটার আগেই ১১ হাজার বিক্রি হয়ে গেছে। এখনও দলে দলে মানুষ আসছে।

নগরীর পশ্চিম বাকলিয়া থেকে চিড়িয়াখানায় যাওয়া মো.শাহীন সারাবাংলাকে বলেন, টিকেট কিনতে গিয়ে সমস্যা হচ্ছে। এত লম্বা লাইন, কাউন্টার পর্যন্ত পৌঁছাতে ১৫-২০ মিনিট সময় লেগেছে। এরপর ঢুকতে সময় লাগছে আরও কমপক্ষে ১৫ মিনিট।

ঈদের বিকেল থেকেই নগরীর কাজীর দেউড়ি এলাকার শিশুপার্কে ভিড় জমতে শুরু করে। গভীর রাত পর্যন্ত বাচ্চাদের নিয়ে মা-বাবার আনাগোনা। বৃহস্পতিবার সকাল থেকেও মানুষের কমতি নেই। বিকেল থেকে তো রীতিমতো লোকে লোকারণ্য হয়ে উঠেছে এই শিশুপার্কটি।

বাংলাদেশ স্টিল রি-রোলিং মিলসের (বিএসআরএম) কর্মকর্তা এস এম আবু ইউসুফ তার দুই বছরের মেয়েকে নিয়ে যান শিশুপার্কে। তিনি সারাবাংলাকে বলেন, শহরের একেবারে মূল পয়েন্টে হওয়ায় এই শিশুপার্কে মানুষের ভিড় বেশি।   আমাদের কর্মব্যস্ত জীবনে শিশুদের জন্য তো মুক্ত পরিবেশে বা খেলাধূলার জন্য কোথাও নিতে পারি না। ঈদের বন্ধে সেই সুযোগ পেয়েছি, তাই এসেছি।

দৃষ্টিনন্দন স্থাপত্যশৈলীতে নতুনভাবে নির্মিত আগ্রাবাদ জাম্বুরি পার্ক, পতেঙ্গায় বাটারফ্লাই পার্ক, আগ্রাবাদ শিশুপার্ক, সিআরবি, তৃতীয় কর্ণফুলী সেতু, অভয়মিত্রঘাট, নেভাল-টু, ও বহদ্দারহাটে স্বাধীনতা পার্কসহ চিরচেনা স্পটগুলো এখন মানুষের পদচারণায় মুখর।

চট্টগ্রামের মিরসরাইয়ের মহামায়া লেক, আনোয়ারায় পারকি সমুদ্র সৈকত, ভাটিয়ারি পাহাড় পার্ক, সীতাকুণ্ডের বেড়িবাঁধের পাশে সমুদ্র সৈকত, বাঁশখালী ইকোপার্ক ও সমুদ্র সৈকত, রাঙ্গুনিয়া এভিয়ারি পার্কসহ জেলার গ্রামাঞ্চলের বিভিন্ন বিনোদন স্পটেও প্রাণ ফিরে পেয়েছে।

চট্টগ্রামের পুলিশ সুপার নুরে আলম মিনা সারাবাংলাকে বলেন, ঈদের পরদিন থেকে উপজেলার বিনোদন স্পটে ভিড় বাড়বে, এটা মাথায় রেখে আমরা নিরাপত্তা পরিকল্পনা করেছি। আমাদের যেসব অতিরিক্ত পুলিশ সদস্য ঈদ জামাতের নিরাপত্তার জন্য থানায় স্ট্যান্ডবাই রাখা হয়েছিল অথবা জামাতকেন্দ্রিক বিভিন্ন স্পটে মোতায়েন করা হয়েছিল, তাদের সবাইকে বিনোদন স্পটে পাঠানো হয়েছে।

সারাবাংলা/আরডি/জেডএফ

Tags: , ,

বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন