বিজ্ঞাপন

বারেক সাহেবের ফুরফুরে মন

June 8, 2019 | 12:52 pm

অধ্যাপক ডাঃ মামুন আল মাহতাব (স্বপ্নীল)

ঢাকা থেকে চট্রগ্রাম যাওয়া যাবে ৫ ঘন্টায় আর কুমিল্লায় ৩ ঘন্টায়। টিভি টকশোতে এসব কথাবার্তা এখন আর বারেক সাহেবকে নাড়া দেয় না। গত ১০ বছরে এমনি হাজারো জিনিস দেখতে দেখতে আর হাজারো কথা শুনতে শুনতে চোখ-কান সওয়া হয়ে গেছে বারেক সাহেবের। প্রথম দিকে ভাবতেন এসব সরকারের স্ট্যান্টবাজি। মানুষকে আরেকদফা ভাওতা দেওয়ার চেষ্টা। তাদের জমানায়তো এমন ভাওতাবাজির ঘটনা ঢেড় ঘটেছে। সংসদে দাড়িয়ে যোগাযোগ মন্ত্রী মেট্রোরেল, বুলেট ট্রেন কত কিছু বলেইতো গলা ফাটিয়েছেন। কাজের কাজ কিছুই হয়নি। শুধু কি তাই? বারেক সাহেব যতদুর জানেন এসব প্রজেক্ট নিয়ে সেসময়কার সরকারের আদৌ কোন মাথাব্যথা ছিল না। বারেক সাহেবের তাই ধারণা ছিল পদ্মা, রূপপুর, পায়রা- সবই আসলে ভেলকিবাজি।

বিজ্ঞাপন

ধীরে ধীরে অবশ্য ধারণা বদলেছে তার। যতই দিন গেছে বুঝতে পেরেছেন এইদিন আর সেইদিনের মধ্যে পার্থক্য অনেক। এরা শুধু গলাবাজি করতে আসেনি। এরা আসলেই ভেলকি জানে। এদের ভেলকিতে অসম্ভবও সম্ভব হয়। পদ্মায় শুধু সড়ক সেতুই তৈরি হয় না, তাতে জুড়ে দেয়া হয় রেললাইনও। প্রথম প্রথম গা জ্বললেও এখন সবই গা সওয়া হয়ে গেছে বারেক সাহেবের।

ইদানিং একটা কথা প্রায়ই মাথায় ঘোরে বারেক সাহেবের। তাদের  নেতা তো বলেছিলেন রাজনীতিতে রাজনীতিবিদদেরে জন্য কঠিন করে ছেড়ে দেবেন। করেছিলেনও তাই। নির্বাচনকে পাঠিয়েছিলেন ক্যান্টনমেন্টে আর রাজনীতিকে ঢুকিয়েছিলেন ব্যবসায়ীর ড্রইংরুমে। সেই কঠিন রাজনীতিরই প্রোডাকশন বারেক সাহেবরা। কিন্তু কেন যেন মনে হয় সেই কঠিন রাজনীতিকে আরো কঠিন করে দিচ্ছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।

এই প্রধানমন্ত্রীর পয়সা-কড়ির আসক্তি নেই। নিজের নাম পৃথিবীর সেরা ধনকুবেরদের তালিকায় তুলে নয়, বরং বিশ্বের সবচেয়ে প্রভাবশালী কিন্তু হতদরিদ্র রাষ্ট্রনায়কদের তালিকায় নিজের নাম লিখিয়েই সন্তুষ্টি তার। এখন মাথাই যখন এরকম, গোড়ায় আর পচন থাকবে কতদিন?

বিজ্ঞাপন

কত কি যে নখড়া শুরু হয়েছে দেশে। টেন্ডারের আগে যোগ হয়েছে ‘ই’। সবকিছুই এখন ডিজিটাল। টেন্ডারবাজি, টেন্ডারের বাক্স টানাহেচড়া আর ছিনতাই- সবই এখন অতীত দিনের স্মৃতি। ঘরে বসেই এখন দেয়া যায় টেন্ডার। আর ওই যে স্মার্ট কার্ড- পকেটে টাকা রেখে কি আর শান্তিতে ঘুমানোর জো থাকবে। এই এক স্মার্ট কার্ড দিয়ে এখন কাউন্টার টেরোরিজম জঙ্গী দাবড়ে বেড়াচ্ছে আর সামনে এন.বি.আর. পাকড়াও করবে কর খেলাপিদের।

শেখ হাসিনাতো রাজনীতিকে তার মতো রাজনীতিবিদদের জন্য শুধু কঠিন না বরং অসম্ভব বানানোর পথে হাঁটছেন। এখনইতো তার দলের কোনো দেখা নেই। দেখা নেই গুলশানে, দেখা নেই রাজপথেও। মাইক্রোস্কোপে খুজে পাওয়া যায় জাতীয় সংসদে। তার নেতা যখন রাজনীতিকে রাজনীতিবিদদের জন্য কঠিন বানিয়ে তৃপ্তির ঢেকুর তুলেছিলেন তখন কি তিনি একবারও ভেবেছিলেন যে এইদিনও একদিন আসবে?

আবার মনে মনে একটু খুশিও হন বারেক সাহেব। ভাবেন কষ্টে বরং আছে সরকারী দলের রাজনীতিবিদরা। রাজনীতিতো দিনে-দিনে নিরামিষই হতে থাকবে। ‘এই যে সামনে কোরবানী ঈদ’, হঠাৎ মনে পড়ে বারেক সাহেবের। ‘এবার থেকেতো আওয়ামী লীগের নেতাদের ঢাকায় সকালে একটা কোরবানী দিয়ে দুপুরে আরেকটা দিতে হবে চট্টগ্রামে। আর শুধু একবার শেষ হোক না পদ্মা ব্রিজটা- শান্তি শেষ হবে দক্ষিণবঙ্গের আওয়ামী নেতাদেরও’।

বিজ্ঞাপন

মনটা হঠাৎ করেই ফুরফুরে হয়ে যায় বারেক সাহেবের।

অধ্যাপক ডাঃ মামুন আল মাহতাব (স্বপ্নীল) : চিকিৎসক ও কলাম লেখক।

Tags: , ,

বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন